লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

বাড়ি থেকে ফোন পেয়ে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পরলো, সুবাহ।এতো আর্জেন্ট বাড়ি যেতে বলা হয়েছে।বাবার শরীর ঠিক আছে কিনা? নাকি টিমটিম এর কিছু হলো।নানা রকম চিন্তার চলাফেরা চলছে।

অফিস থেকে বের হতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টিতে রিকশা,অটো সব কিছুতেই বাড়তি ভাড়া।সুবাহ,তাই বৃষ্টি মাথায় করে হাঁটতে শুরু করলো।আবহাওয়ার কারনে লোডশেডিং হলো আশেপাশের এলাকা গুলোতে।ল্যাম্পপোস্ট ও তাই আর আলো বিলোচ্ছে না।
বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে লাগলো।সাথে আঁধারের তিব্রতা।শুনশান রাস্তায় বুক ধুপধাপ কাঁপতে লাগলো।গাড়ির হেডলাইট এর আলো, রাস্তা কিছুটা আলোকিত করেই আবার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে,পিছনে অন্ধকার ঠেলে দিয়ে।
হঠাৎ, একটি গাড়ি সামনে এসে থেমে গেলো।সুবাহ,র এবার ভয় করতে লাগলো।কিছু টাকা বাঁচাতে গিয়ে আবার, না জানি কোন দূর্ঘ*টনার শি*কার হয়।আচমকাই দেখতে পেলো,মোমবাতি হাতে একজন এগিয়ে আসছে।ভালো করে না তাকিয়েই চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে স্মরণ করতে লাগলো।
-চোখ খোলো।আমি এসেছি সাঝের বাতি হয়ে।ভয় নেই তোমার।
সুবাহ,এবার চোখ খুললো।অবাক হয়ে বললো,
-আপনি?
-কেনো? আমি আসতে পারিনা?
সুবাহ'র, ছয় মাস আগের কথা মনে পরলো।সবে চাকরি পেয়েছে।পদ ছিলো বস এর পিএ।
রোদ্দুর হ্যান্ডসাম পু*রু*ষ।হাইট,হেলথ সবটাই মানানসই।কোম্পানির মালিকের ছেলে সে।ড্রেসসেন্স থেকে শুরু করে সব দিক থেকেই তার রুচিবোধ মানসম্মত।
অফিসে যে মেয়েই জবে গেছে,তার নজর রোদ্দুর স্যার এর উপরেই পরেছে।কতো কানাঘুষা শুনেছে সুবাহ।সেই সুবাদে, রোদ্দুর স্যার এর সাথে তার উঠা বসা বেশি।রোদ্দুর ক*ড়া মেজাজের হলেও, সুবাহ'র শান্ত স্বভাব আর নিরবতার মাঝে,কাঠখোট্টা মেজাজ দেখানোর প্রয়োজন পরেনা।
সুবাহ জানে,রোদ্দুর স্যার এর জন্য তার অন্তস্তলে বিশেষ অনুভূতি অংকুরিত হচ্ছে।হাত দিয়ে কপাল এর চুল গুলো সরিয়ে নেওয়া, সে আড়চোখে দেখে।স্যার, সেটা বুঝতে পারে কিনা জানেনা।তবে তার বেশ লাগে।
দু'মাস পার হতেই, রোদ্দুর স্যার এর বার্থডে এলো।বার্থডে সেলিব্রেট হবে স্যার এর বাড়িতে।দুই মাসের স্যালারিতে সংসার খরচ,বাবার প্রে*সার এর ওষুধ কিনা,পড়াশোনা বাবদ খরচ।সাথে টিমটিম এর সার্জা*রীর জন্য টাকা রেখেছে।টিমটিম তার ছোট বোন।হার্টে ফুঁ*টা আছে,রিং বসাতে হবে।নিজের জন্য কিচ্ছু নেই তাই।নিজের বলতে তো কেবল পরিবারটাই।
এই বর্ণাঢ্য আয়োজনে সবার হাতে হাতে ছিলো দামী,দামী উপহার সামগ্রী।কিন্তু সুবাহ, হাজির হয়েছিলো গোলাপ আর রজনীগন্ধার মিশ্রণে ফুলের তোড়া নিয়ে।সবার রে*পিং পেপার এ মোড়ানো উপহার রেখে, আগে তারটাই সাদরে গ্রহন করে।সুবাহ'র আশা গুলো তাতে ভরসা খুঁজে পায়।
আচমকা,ওড়নায় টান অনুভব করে।নিচে তাকাতেই দেখতে পায়, আড়াই কি তিন বছরের একটা কিউট ছেলে বেবি।সুবাহ বসে গাল দুটি আলতো টেনে দিয়ে বলে,
-কি নাম তোমার?
-মেঘ
-কি লাগে তোমার? সুবাহ,রোদ্দুর স্যারকে আঙুলে ইশারা করে বলে।
-আমি মেঘ আর আমার মামা রোদ।
বলেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।সুবাহ, মেঘকে কোলে নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরলো।বাচ্চামো করে কথা বললো, হাসলো।সবাই যেখানে পার্টিতে নাচ, গানে মশগুল, সুবাহ সেখানে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ঘরময় পায়চারি করছে।ব্যাপারটা রোদ্দুরের চোখে বেশ ভালো লাগলো।
স্বল্প সময়ে সুবাহ'র সাথে মেঘ এর খুব ভাব জমে গেলো।কেক কা*টার সময় বায়না করলো,মামার সাথে সুবাহ আন্টিও কেক কা*টবে।বায়না রাখতে গিয়ে হাতে হাত রেখে কেক কাটার সময় একবার দুজন দুজনার দিকে তাকালো।তারপর একে অপরকে খাইয়েও দিতে হলো।পরপর সবাই খেলো।
অনেক রাত বেড়েছে।রোদ্দুরের দাদুর আদেশ,
-রোদ্দুর
-বলো দাদু?
-মেয়েটাকে বাড়ি পোঁছে দেওয়ার দায়িত্ব তোমার।এতো রাতে মেয়েটা একা যাবে কি করে।
পাশ থেকে সুবাহ আগ বাড়িয়ে বললো,
-আমি পারবো দাদু
তুমি কি পারবে আর না পারবে।সেটা আমি বি*চার করবো।তুমি না।দাদুর কথায় রোদ্দুর দ্বিমত পোষণ করতে পারলোনা।
ড্রাইভিং সিট এর পাশে বসেছে, সুবাহ।কিছুদূর যাওয়ার পর রোদ্দুর গাড়ি থামালো।সুবাহ'কে বললো, একটু নেমে আসুন।নামতেই রোদ্দুর বললো,
-কিছু কথা বলার আছে
-বলে ফেলুন
-কিছু মনে করবেন না, সুবাহ।আমি যতোটুকু রিয়েলাইজ করতে পেরেছি, আপনি আমার প্রতি,,,।
কথা অসম্পূর্ণ রেখেই বললো, "দেখুন এটা কখনোই সম্ভব না।আপনি অযথা কষ্ট না বাড়িয়ে এখন নিজের আবেগকে সামলে নিন।তাতে আপনি ভালো থাকবেন।দরকার হলে আপনাকে অন্য একটি পদে দিয়ে দেবো।আমার চোখের আঁড়ালে থাকলে আপনি মুভ অন করতে পারবেন তাড়াতাড়ি।"
তারপর থেকে সুবাহ, আর রোদ্দুর স্যার এর সাথে কথা বলেনি।আজ চার মাস পর সে সামনে এলো।তাও এভাবে।রোদ্দুর বলতে লাগলো,
-সেদিন তোমাকে ওভাবে বলার পর আমি নিজেই ঠিক থাকতে পারিনি।তোমার কথা না বলা,আমাকে এড়িয়ে চলা।সব কিছু আমাকে কষ্ট দিয়েছে।মিষ্টি মুখটা সবসময় ছোট্ট হয়ে চুপসে থাকতো।মনে হতো রোদের কোল ঘেঁষে কালো মেঘে আঁধার নেমেছে।
মোমবাতির আলোয় বুঝা গেলো সুবাহ, কাঁদছে।রোদ্দুর হাত বাড়িয়ে জল মুছে দিলো।বিনীত স্বরে বললো, "আমার ভুল হয়েছে।জানি,বুঝতে পারি, তোমার কতোটুকু কষ্ট হয়েছিলো সেদিন আর এই চারটা মাস।সুবার কান্নারা দলা পাকিয়ে আসলো।মুখ রুদ্ধ হয়ে আসলো।এতো দিনের জমানো সব কষ্ট, অভিমান কিছুই সে আজ পেশ করতে পারলোনা।রোদ্দুর,ডান হাতে মোমবাতি নিয়ে, বাম হাতে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ করলো কান্নারত অভিমানীকে।
এভাবে কিছুক্ষন অতিবাহিত হলো।হঠাৎ রোদ্দুর উফ! বলে শব্দ করে উঠলো।সাথে সাথে সুবাহ বললো, " কি হয়েছে? হাতে মোমবাতি গ*লে পরেছে?"
-পরুক।আমার অভিমানীনি তো কথা বলেছে।
-হাতটা দেখি
-উহু,এইটুকুতে কিচ্ছু হবেনা।আগে বাড়ি চলো।সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষারত।
তারপর তারা গাড়িতে গিয়ে বসলো।একটা শুভ পরিণয়ে আবদ্ধ হতে বাড়ি যাওয়ার তাড়া।

লেখিকার অন্যান্য গল্প