লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

সকালে চা করে দিয়ে কিচেনে নাস্তা বানাচ্ছে,মিনহা।শাড়ীর আঁচল কোমরে বন্ধি।চুল খোঁপাতে আবদ্ধ।সহসাই অনুভব হলো পিছনে কারো অস্তিত্বের।মিনহা আনমনে মা বলতে যাবে, তখনই মাহিরাদ বললো,

-চুপ,আমি।চুলে মালা গাঁথবো।সোজা হয়ে চুপচাপ দাঁড়া।
-হুম,যেমন বলবা
-তোর চুল গুলো বড্ড জ্বালাচ্ছে।চুল গুলো তোর মতোই পাঁজি।
-কেনো, এতো সুন্দর চুল গুলো তোমার কি ক্ষতি করলো?
-বলছি চুপ থাকতে।তুই এতো কথা বলিস কেনো?
চেস্টার মাঝখানেই, মিনহাকে ডাকতে ডাকতে মাহিরাদের মা রেহেনা, কিচেনে ঢুকলো,
-কিরে মিনহা,আজকে নাস্তা বানাতে এতো লেট হচ্ছে কেনো? শরীর খারাপ করলো নাকি?
মা'এর গলার আওয়াজ পেয়েই ছিটকে দূরে সরলো,মাহিরাদ।মাহিরাদকে খেয়াল হতেই রেহেনা বললেন,
-এই ভোর সকালে মেয়েটাকে না জ্বালালে হচ্ছেনা।মেয়েটা তো আর যেচেপরে তোর কাছে যায়নি।তাহলে কেনো আসছিস।নিশ্চয়ই দুইটা ক*টু কথা শুনাতে।
মিনহার মুখে লুকোনো হাসি দেখে রেহেনার কিছু একটা মনে হলো।তাই মাহিরাদকে ভালো করে দেখলেন।খুঁজে পেলেন,হাতে তার বেলীর মালা।খুশি যেনো আকাশ বাতাস বয়ে আসলো।তিনি না বুঝার ভান করে হালকা তর্জন,গর্জন করে রুমে চলে গেলেন।যাতে করে ছেলে-মেয়ে দুটো অস্বস্তিতে না পরে।রেহেনা চলে যেতেই, মালাটা মিনহার হাতে দিয়ে বললো, "নে তোর মালা তুই পর।" বলেই কিচেন ত্যাগ করলো, মাহিরাদ।
দুপুরে গোসল সেড়েই মিনহা ছাদে গেলো জামা কাপড় ছড়িয়ে দিতে।ভাবলো আগে চুল গুলো মুছে নেই।তাওয়েল দিয়ে চুল এপাশ-ওপাশ করে মুছতে লাগলো।এই অপরুপা নারীকে কেউ একজন মুগ্ধ হয়ে দেখছে ছাদের দরজার এক পাশে দাঁড়িয়ে।অথচ, সে জানেই না।পরক্ষণেই,একটু রাশভারি কন্ঠ শুনা গেলো,
-কিরে চুল মুছার জন্য কি রুম নেই।নাকি বাড়িটার আরেক তলা বাড়াতে হবে?
বলতে বলতে ভিজা জামা কাপড় গুলো তারে ছড়িয়ে দিলো, মাহিরাদ।তারপর মিনহার হাত ধরে বললো, "রুমে চল।পাশের বিল্ডিয়ের ছেলেটা যে তাকিয়ে আছে।সে খেয়াল আছে।"
মিনহা খুব খুশি হলো।মাহিরাদ কি তবে ভালবাসতে শুরু করেছে।নাহলে জেলাস আসবে কেনো?
রুমে নিয়ে বললো, "নে এবার চুল মুছ, আমি দেখবো।" মিনহা এবার সত্যি লজ্জা পেলো।তাই 'থ' হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলো র*ক্ত জবা মুখ নিয়ে।মাহিরাদ হাত টেনে নিজের পাশে বসিয়ে তাওয়েলটা নিয়ে নিলো, "আমি-ই মুছে দিচ্ছি।" আলতো ছোঁয়ায় মুছে দিতে গিয়ে বার কয়েক নিজের আবেগকে সাবধান বানী দিলো।প্রেমে পরে যাচ্ছিস মাহিরাদ।নিজেকে নিজে বললো।
-শুন চোখ কাজলে আঁক,কপালে কালো টিপ পর।আমি দেখবো।
-তোমার রুমে নেইতো ভাইয়া।আমার রুম থেকে নিয়ে আসি।
চোখ, মুখ কুঁচকে অসহায় ভঙ্গিতে বললো,
-ভাইয়া আসলো কোথা থেকে?
-তুমি-ই তো ভাইয়া ডাকতে বলছো।
-যখন বলতাম, তখন তো ডাকিসনি।এখন কি ডাকার জন্য বলেছি।ক্রে*জি গার্ল।
--------★---------
এমন ছোট ছোট খুনসুটিতে ১মাস পার হয়ে গেলো।হঠাৎ সন্ধ্যে, মিনহা রুম থেকে বের হয়ে করিডোরে হাঁটছে।মাহিরাদ, হাঁটার শব্দ পেয়ে বাইরে এলো।
-শুন, আজকে আমার সাথে ঘুমাস
বলেই উত্তরের অপেক্ষা না করে হনহন করে রুমে চলে গেলো।রাত ১২ টা ছুঁইছুঁই।মিনহার পা যেনো আটকে আছে।তাও সব লজ্জা ঝেরে ফেলে মাহিরাদ এর রুমে গেলো।
-এতো লেট করলি কেনো?
-এমনি।আর লেট কোথায় হলো।১২ টাও বাজেনি এখনো।
-ঠিক আছে শুয়ে পর
দুজন দু দিকে ফিরে শুয়ে আছে।কিছু সময় পার হতেই মিনহাকে ডাকলো,
-ছাদে যাবি
-হুম চলো
ছাদে গিয়ে মাহিরাদ কতোক্ষন আকাশ দেখলো।তারপর হঠাৎ -ই বললো,
-আমাকে ভালবাসিস মিনহা?
-তুমি জানোনা নাকি।না হলে কি আর জোর করে তোমাকে বিয়ে করতাম ফুপিকে বলে।তোমার অমতেই তো সব হলো।
-ভালবাসার একটা দলিল দিবি?
মিনহা কথাটার মর্মার্থ বুঝাতে সক্ষম হলোনা।অন্ধকারে তাকিয়ে থাকলো মাহিরাদ এর আবছায়ার দিকে।শুধু বললো, "আমি তোমারই।" ভালবাসার নামে যা চাও তাই দিতে রাজি।
মাহিরাদ একটানে মিনহাকে কাছে টেনে বললো,"তোকে চাই।" তারপর কোলে তুলে নিয়ে গেলো রুমে।
৪মাস পর...
জানতে পারলো মিনহার ভিতর আরেকটা প্রানের সঞ্চার হচ্ছে।বাসার সবাই খুব খুশি হলো।মাহিরাদ আগ বাড়িয়ে সব কিছু করে দেয়।অফিসে থাকাকালীন মনটা বাসায় পড়ে থাকে।প্রতিদিনই একটা গোলাপ,বেলীর মালা,চকোলেট আনা হয়।ছুটির দিনে কিচেনে রান্নার সময় ভালবাসার মধুর মূহুর্ত তৈরি হয়।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরা,হাতে হাত লাগিয়ে রুটি বেলে দেওয়া,তরকারি নেড়ে দেওয়া।
৯মাস পর...
হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে মাহিরাদ।তাকে কেউ থামাতে পারছেনা।চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে।চোখে, মুখে বিষন্নতা।একটু পর একটা নার্স এলো ফুটফুটে টুইন বেবি কোলে নিয়ে।একটা ছেলে বেবি, আরেকটা মেয়ে বেবি।একটু বিমর্ষ হয়ে জানালো, "বেবিদের মা'এর এখনো জ্ঞান ফিরেনি।অবজারভেশনে রাখতে হবে ২৪ ঘন্টা।এর আগে কিছু বুঝা যাবেনা।মাহিরাদ ভিতরে গেলো।কান্নারত কন্ঠে বললো, "ভালবাসার দলিল আমার কোলে।অথচ,আমার ভালবাসা শুয়ে আছে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে।" মনে পরলো মিনহার টেবিলে পাওয়া কবিতাটুকু,
কবিতা:ভালবাসার দলিল
তোমার জন্য পু*ড়ে যাই রোজ
হয়েছে রাত জাগার অসুখ,
বিষাদী গানের সুর
চোখে ঢেউ ভাঙে বিশাল সমুদ্দুর!
কিছু ভালবাসলে, মায়াতে জড়ালে
কাছে টানলে নিবিড়,
উজার করে নিজেকে
তোমাকে করবো ভালবাসার দলিল!
"আমি তো তোর সব হয়েছি।ভালবেসেছি,মায়াতে জড়িয়ে নিবিড় কাছে টেনেছি।শুধু ভালবাসার দলিল না হয়ে, ভালবাসার দলিল চেয়ে নিয়েছি।"

লেখিকার অন্যান্য গল্প