Ad Code

কোথাও কেউ নেই পর্ব - ২৫

 লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ

২৫. হাসান সাহেব শুনলেন

হাসান সাহেব শুনলেন কে যেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। বসে আছে ড্রইং রুমে। সকাল ন’টা বাজে। অফিস যাবার তাড়া। এ সমযে কেউ আসে? হাসান সাহেব কাপড় পরতে পারতে ভাবলেন দু’ধরনের লোক এ সমযে তার কাছে আসতে পারে নির্বোধ ধরনের লোক কিংবা বড় ধরনের বিপদে পড়ে লোক। প্রথমটিই হওয়ার কথা। কারণ পৃথিবীতে বড় ধবনের বিপদে পড়া মানুষের চেয়ে নির্বোধের সংখ্যা বেশি।

ড্রইং রুমে সিদ্দিকুর রহমান সাহেব বসে ছিলেন। গায়ে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি! পান চিবাচ্ছেন। ঠোঁট বেয়ে এক ফোঁটা পানের রস পড়েছে সাদা পাঞ্জাবিতে। তার দিকে তাকালে পাঞ্জাবিতে সদা হওয়া পানের পিকের দাগই সবার প্রথম চোখে পড়বে। হাসান সাহেবেরও পড়ল। তিনি ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন।

স্নামালিকুম স্যার। আমার নাম সিদ্দিকুর রহমান। আমি থাকি আপনার…

আমি চিনি আপনাকে। কি ব্যাপার বলুন! আমার অফিসের তাড়া আছে।

বলতে একটু সময় লাগবে।

Facebook

সময় লাগলে অন্য সময় আসতে হবে। এই মুহুর্তে আমার হাতে সময় নেই।

ঘটনাটা আপনার ভাই প্রসঙ্গে। বাকেরের বিষয়ে।

সেটা বাকেবের সঙ্গেই বলা উচিত। আমার সঙ্গে নয়।

ওর সঙ্গে কয়েক’দিন আগে আমায় একটা ঝামেলা হয়েছিল। তার পর থেকে একটার পর একটা ক্ষতি হচ্ছে আমার!

কি রকম ক্ষতি?

আমার গাড়ির উইন্ডশিল্ডটা চুরি গেল। একটা দোকান আছে আমার। স্টেশনারি শপ। তার কাচ-টাচ ভেঙে একাকার। তারপর একদিন…

আপনার ধারণা এসব বাকেরের কাজ?

পুলিশে কেইস করুন। আপনার সন্দেহের কথা বলুন।

এক পাড়ায় থাকি পুলিশে কেইস …?

এক পাড়ায় থাকলে পুলিশে কেইস করা যাবে না। এমন কোনো কথা নেই।

হাসান সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তার গাড়ি এসে গেছে। আর বসে থাকা অর্থহীন। তিনি সব সময় অফিসে যাবার আগে সেলিনাকে বলে যান। আজ সেটা করতে ভুলে গেলেন। গাড়িতে উঠলেন অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। সারা পথে কোন কথা বললেন না।

অফিসে তার জন্যে একটি বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। তাকে ওএসডি করা হয়েছে। অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি! মন্ত্রী সাহেব ব্যাপারটা তাহলে ভুলেননি। তার ক্ষমতা দেখিয়েছেন শেষ পর্যন্ত। হাসান সাহেবের এই মন্ত্রীর প্রতি খানিকটা সমীহ বোধ হল। এর ক্ষমতা তাহলে আছে। অধিকাংশেরই থাকে না। মাঠে বক্তৃতা দিয়েই যাবতীয় ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।

সেক্রেটারি। আমিরুল ইসলাম সাহেবের নিঃশ্বাস ফেলার সময় ছিল না। তবু তিনি হাসান সাহেবকে ডেকে পাঠালেন। শান্ত গলায় বললেন, কেমন আছেন?

স্যার, ভালই আছি।

নিন চা খান। চা খাবার জন্যে ডেকে পাঠিয়েছি।

থ্যাংক য়্যু।

খুব মন খারাপ করেছেন নাকি?

তা করেছি।

মন খারাপ করবার কিছুই নেই। ব্যাপারটা খুবই সাময়িক। আমি এটা ছেড়ে দেব এ রকম মনে করার কোনোই কারণ নেই। মন্ত্রী সাহেবের যে যোগাযোগ আছে আমার যোগাযোগ তারচে কম না।

হাসান সাহেব কিছু বললেন না। আমিরুল ইসলাম সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, ক্ষমতার মধ্যে একটা চালাচালির ব্যাপার আছে। একজন একটা চাল দেবে, অন্যজন তারচে বড় একটা চাল দেবে। এটা চলতেই থাকবে।

স্যার, আমি চাকরি ছেড়ে দেবার কথা ভাবছি।

TikTok

হোয়াই? বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সুচাগ্র মেদিনী। মহাভারত পড়েননি নাকি?

আমিরুল ইসলাম ঘর কাঁপিয়ে হাসতে লাগলেন। মুহূর্তের মধ্যে হাসি থামিয়ে শক্ত মুখে বললেন, কয়েকটা দিন বিশ্রাম করুন। আমি কেমন প্যাচ লাগাচ্ছি। দেখুন।

প্যাঁচ লাগানোর কোনো দরকার দেখছি না। স্যার।

দরকার থাকবে না মানে? অফকোর্স আছে। এদের বুঝিয়ে দিতে হবে যে আমাদের খুব কাছাকাছি আসতে নেই। একটু দূরে থাকতে হয়। পুলিশে ছুঁয়ে দিলে হয় আঠার ঘা। সিএসপি কলম দিয়ে কিছু লিখলে হয় বিয়াল্লিশ ঘা। এবং সেই ঘার কোনো এন্টিডোেজ নেই। যান এখন বাড়ি যান। আজ আর অফিসে থাকার দরকার নেই।

হাসান সাহেব অসময়ে বাড়ি ফিরলেন। বাড়ি ফিরে তার ভালই লাগল। অনেক’দিন পর ফুলের টবগুলির পেছনে কিছু সময় দিলেন। চার-পাঁচটা বিশাল বনি প্রিন্স ফুটেছে। এদের দিকে তাকালেই মন ভাল হয়ে যায়। তিনি কাচি দিয়ে খুব যত্নে গোলাপ চারার মরা পাতাগুলি কাটলেন। মাটি খুঁড়ে দিলেন। বনি প্রিন্সের জন্যে চায়ের পাতার সার নাকি খুব ভাল। তিনি ভেবে রাখলেন, সেলিনাকে জিজ্ঞেস করবেন, চায়ের পাতা দেয়া হচ্ছে কিনা।

সেলিন রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। আজ তার বিশেষ রান্না করতে ইচ্ছা হচ্ছে। হাসান সাহেবের অসময়ে ফিরে আসার ব্যাপারটা তার খুব ভাল লাগছে। কেন জানি বিয়ের প্রথমদিককার কথা মনে হচ্ছে। বিয়ের প্রথমদিকে এ রকম হত। অসময়ে সে এসে উপস্থিত। তার নাকি জুরািজ্বর লাগছে তাই চলে এসেছে। খুব মনে হয় ঐসব দিনের কথা। সুখের সময়গুলি বারবার কেন ফিরে আসে না। এই ভেবে সেলিনা একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন।

বাকের দুপুরে খেতে এসে আকাশ থেকে পড়ল। খাবার টেবিলে ভাইয়া বসে আছে। এমন অবস্থা যে উঠে চলে আসা যায় না। আবার বসাও যায় না। অসময়ে ভাইয়া কেন?

সেলিনা বললেন দাঁড়িয়ে আছ কেন, বস।

Threads

বাকের বসল। যত দূর সম্ভব নিঃশব্দে খাওয়া শুরু করল। তার লবণ নেবার দরকার ছিল কিন্তু লবণদানীটা অনেকখানি দূরে। ভাইয়ার কাছে। তাকে নিশ্চয়ই বলা সম্ভব না–ভাইয়া লবণটা দাও।

হাসান সাহেব খাবার টেবিলে কথাবার্তা একেবারেই বলেন না। আজ নিচু গলায় সেলিনার সঙ্গে দু’একটা কথা বলছেন। যেমন, বনি প্রিন্সগুলি তো চমৎকার হয়েছে। টবে কী তুমি চায়ের পাতা দিচ্ছ। এই জাতীয় কথাবার্তা। বাকেরের মনে হল ভাইয়া কোন একটা ঝামেলা নিয়ে চিন্তিত। নিজের চিন্তা ঢাকার জন্যেই আজেবাজে ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে।

বাকের!

জি ভাইয়া।

বাকেরের মেরুদণ্ড দিয়ে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। ভাইয়া তাকিয়ে আছে তার দিকেই। ব্যাপার কি?

বিছু বলবে আমাকে ভাইয়া?

হুঁ। তুই কি কারো গাড়ির উইন্ডশিল্ড ভেঙে দিয়েছিস?

বাকেরের গলায় ভাত আটকে গেল। সে হ্যাঁ-না কিছু বলতে পারল না। হাসান স্বাভাবিক স্বরে বললেন, কারো গাড়ির উইন্ডশিন্ড তোমার যদি ভাঙতে ইচ্ছা করে তুমি ভাঙবে। এটা তোমার ব্যাপার। তোমার কি করা উচিত বা উচিত নয় সেটা তোমাকে বলা আমি অর্থহীন মনে করি। উপদেশ শোনার বয়স তুমি অনেক আগেই পার হয়েছ।

হাসান সাহেব দম নেবার জন্যে একটু থামতেই সেলিনা বললেন, খাবার টেবিলে এই আলোচনা না করলেও হবে। খেতে এসেছ খাও।

অন্য সময় তো বাকেরকে পাওয়া মুশকিল, নানান কাজে সে ব্যস্ত থাকে। খাবার টেবিলটাই কথা বলার জন্যে ভাল। বাকের!

Instagram

জি।

তুই নিজের পায়ে দাঁড়ানোর একটা চেষ্টা কর।

জি আচ্ছা।

তুই আমার কথাটা বুঝতে পারছিস না। না বুঝেই বলছিস জি আচ্ছা।

বাকের অবাক হয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। হাসান সাহেব বললেন, তুই অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা কর। যাতে তোর বিরুদ্ধে কোনো কমপ্লেইন নিয়ে কেউ আমার কাছে না। আসে। তাছাড়া…

হাসান সাহেব একটু থামলেন। তাকালেন সেলিনার দিকে। সেলিনা চোখ বড় বড় করে বসে আছেন। খাবার টেবিলের এই নাটকের জন্যে তিনি একেবারেই প্রস্তুত ছিলেন না; হাসান সাহেব পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে ভাত মাখতে মাখতে বললেন, গুণ্ডা পোষার কাজটি আমি আর করতে রাজি নই।

সবাই নিঃশব্দ হয়ে গেল। সেলিনা ভাবলেন বাকের হয়ত খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যাবে। কিন্তু সে উঠল না। সেলিনা বললেন, বাকের আচারের বোতলাটা দাও তো! বাকের আচারের বোতল এগিয়ে দিল।

সন্ধ্যাবেলা বাকের তার জিনিসপত্র নিয়ে মহিউদ্দিন সাহেবের দোকানে গিয়ে উঠল। ঠাণ্ডা গলায় বলল, আপনার এখানে কয়েকটা দিন থাকব। মহিউদ্দিন সাহেব পান-খাওয়া হলুদ দাঁত বের করে প্রচুর হাসতে লাগলেন। ভাবলেন এটা একটা রসিকতা।

হাসছেন কেন?

মহিউদ্দিন সাহেবের হাসি বন্ধ হয়ে গেল।

আমি আপনার দোকানে কিছু দিন থাকলে আপনার অসুবিধা হবে?

জি না অসুবিধা কিসের?

তাহলে একটা বোতলের ব্যবস্থা করেন বন্ধুবান্ধব নিয়ে খাব। বিদেশী জিনিস আনবেন। অনেক দিন খাওয়া হয় না।

মহিউদ্দিন সাহেবের মুখ শুকিয়ে গেল। একি যন্ত্রণায় পড়লেন।

বাকের বন্ধুদের খোঁজে বেরুল। নতুন জীবনযাত্রার শুরুটা তার খারাপ লাগছে না। ভালই লাগছে।

 WhatsApp

বিয়ের কার্ড শেষ পর্যন্ত ছাপা হল। চারশ কার্ড। দাওয়াতের এত মানুষ নেই। যেহেতু কার্ডের সংখ্যা বেশি কাজেই যাদের পাওয়ার কথা নয় তারাও দাওয়াত পেতে লাগল। বাবু চল্লিশটা কার্ড নিয়ে তার ক্লাসের সব ছাত্রকে একটি করে দিয়ে এল। শওকত সাহেব তার অফিসের চার-পাঁচজনকে বলবেন ভেবেছিলেন শেষ পর্যন্ত দেখা গেল। তিনি দাওয়াত করেছেন একুশজনকে। তাতেও শেষ নয়। তার মনে হল শুধু একুশজনকে বলাটা ঠিক হল না। অন্যরা কি দোষ করল। দ্বিতীয় দিনে তিনি আরো একগাদা কার্ড নিয়ে গেলেন। যাবার পথে মুনাকে বললেন, খরচপাতি কিছু হচ্ছে হোক একটাই তো বিয়ে ফ্যামিলিতে।

মুনা গম্ভীর গলায় বলল, একটাই বিয়ে মানে? আমি কি বিয়ে করব না নাকি?

শওকত সাহেব হকচকিয়ে গেলেন। মুনা বলল, কি চুপ করে আছ কেন? তোমার কি ধারণা আমি সন্ন্যাসী হয়ে যাব?

কি যে বলিস তুই।

শওকত সাহেব হাসতে চেষ্টা করলেন। মুনার আজকাল কি হয়েছে উল্টাপাল্টা কথা বলে ফেলে। মুনা তুই মামুনকে কার্ড পাঠিয়েছিস?

মামুনকে কার্ড পাঠাব কেন?

বিয়েতে যাতে আসে সে জন্যে। সে এলে তোদের বিয়েরও একটা ডেট ফেলে দেব। শরীরের অবস্থা ভাল না। কাজকর্ম সব শেষ করে রাখতে চাই। কী বলিস?

শরীরের অবস্থা খারাপ মনে করলে তাই করা উচিত। বাবুরও বিয়ে দিয়ে দাও।

কি বললি?

বললাম, বাবুরও বিয়ে দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে দাও। ক্লাস ফোর-ফাইভে পড়ে এমন একটা মেয়ে খুঁজে বের কর। একটা বাল্যবিবাহও হয়ে যাক।

শওকত সাহেব চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলেন। মুনা বলল, কি রাজি আছ?

তোর কি মাথাটা খারাপ হয়েছে নাকি রে মুনা?

একটা প্র্যাকটিক্যাল কথা বললাম, এর মধ্যে মাথা খারাপের কি দেখলে?

মুনা তার মামাকে গভীর সমুদ্রে ফেলে চলে এল বাবুর কাছে। বাবু স্কুলে যায়নি। দুহাতে মাথা চেপে বসে আছে। তার চোখ লাল। দেখেই মনে হচ্ছে তার অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।

কি রে বাবু মাথা ধরেছে?

হুঁ।

Email

তোর বিয়ের ঠিকঠাক করে এলাম। বালিকা বধূ চলে আসবে ঘরে। মাথা ধরলে মাথা টিপে দেবে? কি খুশি?

বাবু তাকিয়ে রইল। মুনা হাসতে লাগল। বাবু বলল, একটু মাথা টিপে দেবে আপা? মরে যাচ্ছি।

মাথা টেপার সময় নেই রে, এখন যেতে হবে অফিসে। বকুলের বিয়ের কার্ড ডিসট্রিবিউট করব। সবার বন্ধুবান্ধব আসবে, আমার কেউ আসবে না। এটা খারাপ না? তুই ঘর অন্ধকার করে শুয়ে থাকে। মাথা ধরা সেরে যাবে।

মুনা নতুন শাড়ি পরল। অনেক সময় নিয়ে চুল বাঁধল। কড়া করে লিপিসিন্টক লাগল ঠোঁটে। বকুলকে বলল, কেমন লাগছে রে আমাকে? পেত্নীর মত লাগছে নাকি?

ভালই লাগছে। পেত্নীর মত লাগবে কেন?

আমার তো মনে হচ্ছে ড্রাকুলার মত লাগছে। ঠোঁট দেখে মনে হচ্ছে এইমাত্র কারোর রক্ত খেয়ে এসেছি ঠোঁটে রক্ত লেগে আছে।

কি যে তুমি বল আপা। যাচ্ছ কোথায়?

অফিসে। সবাইকে তোর বিয়ের কার্ড দেব। এই কারণেই এত সাজগোজ করলাম। এলেবেলে ভাবে গেলে সবাই মনে করবে। ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে আমার হচ্ছে না। এই দুঃখে আমি…

মুনা কথা শেষ করল না। একগাদা কার্ড নিয়ে রওনা হল। বাকেরের সঙ্গে দেখা হল পথে। মুনা হাসিমুখে বলল, বাকের ভাই আপনাকে নাকি বাড়ি থেকে গেট আউট করে দিয়েছে? বাকের চুপ করে রইল। তার মুখ শুকনো। সে ঘন ঘন থুথু ফেলছে।

কি বাকের ভাই কথা বলছেন না কেন? যা শুনছি তা কি মিথ্যা?

মিথ্যা না। সত্যি।

হাতখরচ পাচ্ছেন, না তাও বন্ধ?

হাতখরচের দরকার কি?

দিন চলছে কিভাবে? ধারের ওপর?

বাকের তার জবাব না দিয়ে বলল, তোমার কি শরীর খারাপ নাকি?

মুনা তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল, এত সেজোগুজে বের হয়েছি তারপরও বলছেন শরীর খারাপ। দেখে সে রকমই মনে হচ্ছে।

Facebook

অফিসেও সবাই এই কথা বলল। পাল বাবু চোখ কপালে তুলে বললেন, হয়েছে কি আপনার?

কি আবার হবে কিছু হয়নি।

গালটাল ভেঙে একাকার। অসুখটা কি?

কোন অসুখ নেই।

মুনা ভেবেছিল কার্ডগুলি দিয়েই চলে আসবে। কিন্তু সে অফিস ছুটি না হওয়া পর্যন্ত থাকল। সবার টেবিলে খানিকক্ষণ করে বসে হাত নেড়ে নেড়ে গল্প করল। সে ভেবেছিল অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করবে নিজের বিয়ের কার্ড নেই ছোট বোনের বিয়ের কার্ড। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কেউ সে প্রসঙ্গ তুলল না। এখনো পনের দিনের মত ছুটি আছে তার হাতে তবু সে ঠিক করে ফেলল আগামী কালই সে জয়েন করে ফেলবে। শুধু শুধু বাড়িতে বসে থাকার কোন মানে হয় না।

তার জন্যে একটা বিস্ময়ও অপেক্ষা করছিল। অফিস ছুটির পর দেখা গোল কর্মচারীদের জন্যে ঝকঝকে নতুন বাস। পাল বাবু বললেন, ইউনিয়ন ঘাড় ধরে বাস কিনিয়েছে। এখন থেকে পায়ের উপর পা তুলে অফিসে যাবেন অফিস থেকে আসবেন। হা হা হা মুনাও উঁচু গলায় হাসতে লাগল। তার বড় ভাল লাগছে। অফিস-টফিস বাদ দিয়ে বাড়িতে বসে থাকাটা খুব বোকামি হয়েছে।

শুধু বাস নয় বুঝলেন মিস মুনা, আরো আছে।

আর কি?

আন্দাজ করেন দেখি।

মুনা আন্দাজ করতে চেষ্টা করল, কিন্তু কিছু বলার আগেই পাল বাবু নিচু গলায় বললেন, কর্মচারীদের জন্যে ফ্ল্যাট হচ্ছে।

YouTube

বলেন কি?

বোর্ড মিটিং-এ পাস হয়েছে। ছমাসের মধ্যে তিনটা চারতলা ফ্ল্যাট। দু’টা বেডরুম ড্রইং কাম ডাইনিং রুম। বারান্দা।

বাহ চমৎকার তো।

এর নাম ইউনিয়নের চাপ। রাম চাপ।

চাপ তো আগেও ছিল তখন তো কাজ হয়নি।

তখন হবে না বলে এখনো হবে না? দিনকাল পাল্টে যাচ্ছে না? আগের দিন কি আছে নাকি?



Post a Comment

0 Comments

Close Menu