লেখিকাঃ ইলমা বেহরোজ
১৩.
তিতলিকে নামিয়ে দেয়।তিতলি এক পায়ে বেশি ভর দিয়ে তাকায় সামনে।পিছনে নিঝুম।অনেক উত্তেজিত হয়ে উল্লাসে সে চিৎকার করে বললো,
--- "ওয়াও!কি সুন্দর!"
তিতলির চোখে-মুখে খুশির ঝিলিক।যেদিকে চোখ যায় সবুজের সমারোহ।চা গাছে চারপাশটা ভরপুর।দু'পাশে চা গাছ।মাঝে পাকা রাস্তা!মাঝে মাঝে এক-দুটো গাড়ি যাচ্ছে,আসছে।উপর থেকে একদম নিচ পর্যন্ত ঢালু হয়ে নেমে গেছে পাহাড়!ওরা যেখানে আছে সেটুকু জায়গা অনেক কম তবে গোল একদম।পায়ের নিচে ঘাস।এই জায়গাটা হয়তো এখানের কর্মকর্তারা এমন অসাধারণ করে রেখেছে নয়তো প্রকৃতি নিজে নিজেকে নিজে সাজিয়ে নিয়েছে!তিতলি বেশ কয়েক সেকেন্ড মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।এরপর বিভ্রম নিয়ে বলে,
--- "এতো সুন্দরর!জানেন,আমার মনে হচ্ছে সময়টা আটকে দেই।"
নিঝুম ক্যামেরা চালু করতে করতে বললো,
--- "সিলেট তো আছোই।যখন ইচ্ছে দেখে যেও।"
পায়ের ব্যাথাটা আকস্মিক বেড়েছে।তিতলি ঘাসের উপর বসে পড়লো।নিঝুম তিতলির সামনে বসে বললো,
--- "ব্যাথা বেড়েছে?"
--- "হুম।"
নিঝুম তিতলির পা দু'হাতে ধরতেই তিতলি আর্তনাদ করে উঠে।এরপর বলে,
--- "এতো জোরে ধরেছেন কেনো?"
নিঝুম আলতো করে ধরে বললো,
--- "পোল্ট্রি মুরগি একটা।"
তিতলি কথা শোনাতে চেয়েছিল। কিন্তু তাঁর আগেই যখন দেখলো নিঝুম নিজের কোলের উপর তাঁর পা রেখেছে তিতলির কথা বলার শক্তি লুটপাট হয়ে যায় যেন।তিতলি আড়ষ্টতা নিয়ে কোনোমতে বলে,
--- "পা ছাড়ুন।"
নিঝুম এমন ভান করে যেন তিতলির কথা শুনেনি।
নিঝুম অনেক্ষণ তিতলির পায়ে আলতো করে ম্যাসেজ করে।তারপর পা হালকা ঝাঁকায়।ব্যাথা লাগছে পায়ে তবুও তিতলির খেয়াল নেই।সে বিস্ময় নিয়ে অবাক নয়নে নিঝুমকে দেখছে।নিঝুমের চশমা বার বার নাকের ডগায় চলে আসছে।নিঝুম তা ডান হাতের এক আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে আবার চোখে নিচ্ছে।হাত নড়াচড়া হওয়াতে হাতঘড়িটা মৃদু দুলে আওয়াজ তুলছে টুংটাং।নিঝুম চোখ তুলে তাকায়।তিতলিকে তাকিয়ে দেখতে দেখে চোখ নামিয়ে হাসে।পা ম্যাসেজ করে দিতে দিতে প্রশ্ন করে,
--- "কি দেখছো?"
তিতলি থমথম খেয়ে যায়।আমতা আমতা করে বললো,
--- "আ আমি?"
নিঝুম আরো এক দফা নিঃশব্দভাবে হাসলো।বললো,
--- "আর কে আছে?"
--- "হে আ..আসলে আমি দেখছিলাম।"
--- "সেটাই তো কি দেখছিলে?"
--- "আপনার চশমা।"
নিঝুম ভ্রু জোড়া কুঁচকায়।
--- "চশমা?"
--- "হা তো, এইযে সারাক্ষণ পরে থাকেন।কেমনে যে থাকেন সেটাই বুঝতে পারছিনা।"
নিঝুম হাসলো।বললো,
--- "একটু উঠার চেষ্টা করো?"
--- "আচ্ছা!"
তিতলি উঠতে নিলে নিঝুম ধরে হাতে ধরে বললো,
--- "আমি হেল্প করছি।"
নিঝুমের সাহায্যে তিতলি মাটিতে আহত পা রাখে।চোখ খিঁচে পায়ে ভর দেয়।কিন্তু অদ্ভুত!ব্যাথা হচ্ছেনা!তিতলি নিঝুমকে ছেড়ে চোখ খুলে হালকা করে লাফ দেয়।বলে,
--- "ব্যাথা নেই।একদম আগের মতো হয়ে গেছে। আল্লাহ!"
--- "দয়া করে নেক্সট টাইম সাবধানে চলবেন।"
--- "ওকে..."
ফোনে টুং করে আওয়াজ হয়।নির্জন মেসেজ করেছে।মেসেজ পড়ে তিতলিকে নিঝুম বললো,
--- "শুনো তিতলি।"
--- "কী?"
--- "আমরা আজ বাড়ি ফিরতে পারবো না।"
তিতলি বুঝতে না পেরে কৌতূহল নিয়ে তাকায়।নিঝুম সমস্যার কথা খুলে বলে।খুশিতে তিতলির হেঁচকি উঠে যায়।তিতলির যখন হেঁচকি উঠে নিঝুম ভয় পায়।হেঁচকি উঠলে তিতলির চোখ বেয়ে পানি পড়ে।নাক,গাল লাল হয়ে যায়।মিনিট দুয়েকে তিতলি শান্ত হয়।তখন নিঝুম উসখুস করতে করতে বললো,
--- "তুমি কি ভয় পাবে আমার সাথে থাকতে?"
তিতলি অন্যদিকে ফিরে বলে,
--- "ভয় থাকলে চা-বাগানও আসতাম না।"
তিতলির কথা শুনে নিঝুম প্রশান্তি পায়।বলে,
--- "ক্ষুধা লেগেছে?"
তিতলি ঠোঁট উল্টে মাথা নাড়ায়।যার অর্থ তাঁর খুব ক্ষুধা লেগেছে।
--- "আচ্ছা চলো উল্টোদিকে পর্যটন যাব।পর্যটন রেস্টুরেন্ট লাঞ্চ করে রাতারগুল চলে যাবো।"
রাতারগুলের কথা শুনে তিতলি উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
--- "সত্যিইইইই।"
--- "হুম সত্যি।"
--- "আচ্ছা চলুন।"
নিচের দিকে নামতে নামতে নিঝুম বললো,
--- "গাড়িটা আনতে দাও নি।থাকলে কত সুবিধা হতো।"
--- "কচু হতো।আপনি আমাকে পিছনের সিটে বসিয়ে রাখতেন।আর আমার একা বসতে ভালো লাগে না।"
--- "তোমার কোন জিনিসটা ভাল লাগে বলবে?আর গাড়ি সাথে থাকলে তোমাকে কেন পিছনে বসাবো।পাশেই বসতে পারতে।নয়তো আমাকে তোমার ড্রাইভার ভাববে সবাই।"
তিতলি চোখ খিঁচে নিজেকে নিজে বকা দেয়।সে ভেবেছিল তাকে পিছনে বসাবে।তাই গাড়ি আনতে দেয়নি।পাশে বসতে পারবে জানলে কি আর না করতো।ওরা গেইটের বাইরে চলে আসে।অনেক্ষণ অপেক্ষা করার পর একটা খালি সিএনজি পায়।পর্যটনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।ত্রিশ-চল্লিশ মিনিটের মাথায় পর্যটন চলে আসে।খাওয়ার পূর্বে নিঝুম প্রয়োজন বোধ করে গোসলের।তিতলির শাড়ি থেকে তার শরীরেও কাদা লেগেছে।পর্যটনের হোটেলে উঠে।
রুম বুকিং করে ঘন্টাখানিকের জন্য।তাঁদের রুম নং ৫৬।
তিতলি রুমে আগে ঢুকলো।নিঝুম তিতলির হাতে চাবি দিয়ে বললো,
--- "তুমি গোসল করে নাও।দেখে মনে হচ্ছে কাদাতে কাবাডি খেলেছো।অনেকে উৎসুকভাবে আমাদের দেখছিল।"
তিতলি মুখ ভোতা করে বললো,
--- "জামা নাই তো।"
--- "শাড়ি চলবে?"
--- "চলবে, কিন্তু পাবেন কই?"
--- "ম্যাজিক করে আনবো।
--- "তবে নীল শাড়ি আনবেন।যাতে এই ব্লাউজের সাথে মিলে।"
নিঝুম 'আচ্ছা' বলে বেরিয়ে যায় আবার ফিরে এসে বলে,
--- "দরজাটা লাগিয়ে দাও।"
কিছুক্ষণের মধ্যে নিঝুম দু'টো ব্যাগ নিয়ে ফিরে।দরজায় টোকা দেয়,
--- "তিতলি?"
তিতলি নিঝুমের কন্ঠস্বর শুনেই দ্রুত দরজা খুলে।
নিঝুম রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়।একটা ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো,
--- "নাও।"
তিতলি ব্যাগটা হাতে নেয়।বললো,
--- "কই থেকে?"
--- "নিচতলায় একটা শপ আছে।কসমেটিকস আর মণিপুরী শাড়ি পাওয়া যায়।পুরো নীল পাইনি।তবে নীল রং আছে। চলবে না?"
নিঝুম রুমটা হেঁটে হেঁটে দেখে কথা গুলো বললো।তিতলি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বললো,
--- "চলবে।ধন্যবাদ আপনাকে। "
--- "যাও!ফ্রেশ হও।"
--- "তোয়ালে,সাবান?"
--- "ঘুরতে এসে গোসল করতে পারছো এই অনেক।"
নিঝুমের চোখে-মুখে দুষ্টুমি।তিতলি চোখ মুখ খিঁচে বলে,
--- "ছেঃ আমি কি খবিস নাকি!সাবান ছাড়া গোসল হয়?"
তিতলির কথায় নিঝুম মুচকি হাসে।
--- "তোমাকে সাবান ছাড়া গোসল করতে হবেনা।যাও গোসলে।সব পাবে।"
তিতলি গোসলে যায়।নিঝুম প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে ফেসবুকে লগ ইন করে।কি মনে করে সার্চ দেয় 'মুমতাহিনা তিতলি'।নিজের কাজে নিজে হতবাক নিঝুম।প্রচণ্ডভাবে অবাক হয়।তিতলি গোসল শেষে চুল মুছতে মুছতে বেরিয়ে আসে।পায়ের আওয়াজ শুনে নিঝুম ঘুরে তাকায়।তিতলিকে মণিপুরী শাড়িতে নতুন বউ লাগছে যেন।আঁচলটা কোমরে গুঁজে রাখা।লম্বা কোঁকড়া চুল সোজা হয়ে কোমর ছাড়িয়ে গেছে।নিঝুমের হাত নিশপিশ করে তিতলির চুল ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য।নিঝুম চোখ সরিয়ে নেয়।গোপনে ঢোক গিলে।
সে ভাবে,ছেলেরা সৌন্দর্যের পূজারি তাই হয়তো এমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।নিজেকে কন্ট্রোল করা উচিৎ।সৌন্দর্যে ডুবে থেকে বাড়াবাড়ি করা নিতান্তই মূর্খতা।
0 Comments