লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
ইরাবতীর বিয়ে হলো ভালো পরিবার দেখে।সেখানকার রীতি,আচার-আচরণ সবই উচ্চ মর্যাদার।বিয়ের আজ প্রথম দিন।বিয়ের নিয়ম অনুযায়ী আজকে বা*স*র রাত।বড় আর মেঝো জা মিলে হাসি ঠাট্টা করতে করতে রুমে নিয়ে গেলো।বড় জা ঠাট্টার সুরে বললো,
-ভাই দেখো, আমার দেবরকে আবার বেশি রাত জাগিয়ো না
-ভাবি, কি যে বলেন।বেচারির আজ প্রথম রাত।এমনি ভ*য়ে আছে।
"পাশ থেকে মেঝো জা বলে উঠলো।"
ইরা মুখ থেকে রা শব্দও কা*ট*লো না।তার খুব ইচ্ছে ছিলো, তাজা ফুলে রুম সাজানো থাকবে।অথচ, প্লাস্টিক আর জরির ফুল দিয়ে কোনো রকম সাজিয়েছে।কোন মেয়ের না স্বপ্ন থাকে, তাজা ফুলে রুম সাজানোর।বাবার বাড়ি থেকে সব রকম ফার্নিচার এর সাথে খাটও দেওয়া হয়েছে।অথচ, তার রুমে পুরোনো একটা চৌকি।
ইরাকে রুমে দিয়ে তারা চলে গেলো।পরপরই রুমে আগমন ঘটলো,সাদাফ এর।সাদাফ তার স্বামী।সাদাফ'রা তিন ভাই এক বোন।ছোট বোন সোহেলী। তিন ভাই এর মধ্যে সাদাফ ছোট।বড় দু ভাই সুজন আর সিহাব।
ভোর সকালে উঠেই কাজে লেগে পড়েছে,ইরা।ঝা দুজন আগেই বলে দিয়েছে, নতুন বউদের দেরি করে উঠা ভালোনা।লোকে ম*ন্দ বলে।
আজকে বউ ভাত।বাবার বাড়ি থেকে ছোট দু ভাই-বোন আর আত্মীয়স্বজনরা এসেছে।তবে বেশি মানুষ আসেনি।বউ ভাতের আয়োজন অল্প করেই করেছে।অথচ, তার বাবার দু'শ মানুষ আপ্যায়ন করা লাগছে।ইরা,ভাই বোনকে দেখে জড়িয়ে কেঁদে ফেললো।অনুষ্ঠান শেষে আজকে ও বাড়িতে যাওয়ার পালা।
রাতে রুমে গিয়ে দেখে,তাজা ফুলে সুন্দর করে রুম সাজানো।দেখেন আনন্দ অশ্রু বিসর্জন করলো।মেয়ের সুখের সব রকম চেস্টা করে সকল বাবারা।এজন্যই হয়তো বলা হয়, "সব মেয়েই বাবার রাজকন্যা।"
বিয়ের এক মাস গড়ালো।বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া সকল ফার্নিচার দুই ঝা এর ঘরে।খাটটা অবশ্য শ্বশুর শ্বাশুড়ির রুমে।ইরাবতী সবটাই দেখে, দেখে দেখে কষ্ট পায়।কিন্তু মুখে কিছু বলে না।এমনিতেই উঠতে বসতে কথা শুনতে হয়।বাবা কতো টাকা যৌ*তু*ক আর ঘর ভর্তি ফার্নিচার দিয়েছে তার বিয়ের জন্য।কতো টাকা ঋ*ন হয়েছে বাবার।এখন যদি সংসারটাও না হয়,তাহলে মা-বাবা যে কষ্ট পাবে।এজন্য মুখ বুজে থাকতে হয়।দুই জা এর ছোট বাচ্চা আছে।বেশির ভাগই তার কোলে দিয়ে রাখে।টুকটাক কাজও করায়।গোসলের পর শ্বশুর- শ্বাশুড়ির জামা কাপড় ও সেই ধুঁয়ে রোদে শুকাতে দেয়।গরি*ব আর মধ্য*বিত্ত ঘরের মেয়েদের কপালে এর বেশি আর কি-ই বা জুটে।
দু, তিন মাস গড়াতেই ননদ এর বিয়ে ঠিক হলো।সাদাফ এর পরিবার সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছে তারা যোতু*ক দিতে পারবেনা।তবে নিজের মেয়েকে অলংকারে সাজিয়ে দিবে।
ইরা ভাবে, "তারা নিজেরা যৌতু*ক নিয়েছে,অথচ নিজেদের বেলায় পারবেনা।একটু বিদ্রুপ হাসলো।"
কথা পাকা করে মেহমানরা চলে যেতেই ইরাকে ডাকা হয়।শ্বাশুড়ি বলে,
-বউমা, এখন তো সংসার করছো।গয়না গাটি দিয়ে আর কি করবা।পরে গড়াইয়া নিও।কিছু দিন আগেই তোমাদের বিয়ে উপলক্ষে কতো টাকা খরচা হলো।এখন হাতে তেমন টাকা নাই।
-ঠিক আছে মা।সোহেলি তো আমার ছোট বোনের মতোই।
ইরা তাড়াহুড়ো করে রুমে পা বাড়ালো।চৌকির এক কোনায় বসে কাঁদলো।বাবা কতো শখ করে নাম রেখেছে ইরাবতী।নামের কতো বা*হার।কিন্তু জীবনটা দুঃখে মোড়ানো।এর মাঝেই সাদাফ এসে কিছু না বলে চুপচাপ শুয়ে পরলো পাশ ফিরে।একটু সান্ত্বনা ও দিলোনা।বললোনা, "পরে গড়ে দিবো,কষ্ট পেয়োনা।"
ইরার খুব মনে পরলো কিশোরী জীবনের কথা।এক কালে তারও মনের মানুষ ছিলো।কতো ভালবাসার কথা হতো।এক সাথে সংসার করার কতো শত স্বাদ ছিলো।একদিন অনেক রাতে হিমেল এসে ফিসফিস করে ডাকলো,
-ইরাবতী, হাত দুইডা জানালা দিয়ে বাড়াও তো।
হাত বাড়াতেই দুই হাতে দুই মুঠো কাঁচের চুড়ি পরিয়ে দিলো।ইরা হাত দু'খানা ভিতরে এনে,গভীর আবেশে বুকে ঝাপটে রাখলো।তারপর দুই হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কাঁচের চুড়ির, ঝনঝন ঝংকার তুললো।
আবার শীতের সময় খেজুরের রস চু*রি করে এনে খাওয়াতো।ফসলি জমির আইল ধরে হাত ধরে হাওয়ায় ভা*সতো।
তার যেদিন বিয়ের পাকা কথা হলো।সেদিন এক নির্জন বিকেলে হিমেল এর সাথে শেষ দেখা হয়।হিমেল এর কথা গুলো এখনো তার বক্ষদেশে আঁ*চর কা*টে।
-তুমি আমারে দুঃখের সাগরে ভাসায় দিয়া যাইবা ইরাবতী।এক জীবনে কি এক দুঃখ কম ছিলো।
-ভালবাসলেই পাওন লাগে, কে কইছে তোমারে?
-পাওয়াটাই ভালবাসার পূর্ণতা, ইরাবতী।ভালবাসা বলতে আগে তোমারেই বুঝতাম।
-আর এহন?
-ফাঁ*কি দিয়ে আমারে একলা কইরা,তোমার চইলা যাওয়া!
চোখের জলে বুকের এলাকা প্লা*বিত হলো।ইরাবতী চৌকি থেকে উঠে জানালার ফাঁক গলে আকাশের চাঁদ দেখলো।"হিমেল, তুমি আমার আন্ধার রাইতের চান আছিলা।এহন আমি অমাবস্যায় ঢাকা পইরা গেছি!"
0 Comments