Ad Code

বৃষ্টিস্নাত কদম

লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

ঝুম বৃষ্টির রাত।খোলা জানালার কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি আমি।দমকা হাওয়া ভিঁজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আমাকে।সহনীয় ঠান্ডায়ও শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে।চুলের সিঁথি বেধ করে বৃষ্টির ফোটা গড়িয়ে কপাল বেয়ে পরে গেলো গালের কোনো এক পাশ দিয়ে।চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলাম প্রিয় অতীত,

--জানিস মেঘু, আমার না বৃষ্টিস্নাত কদম খুব পছন্দ।
--সমস্যা নাই,দুলাভাইকে বলবো বৃষ্টি এলে কাক ভেঁজা হয়ে যেনো তোর জন্য বৃষ্টিস্নাত কদম নিয়ে হাজির হয় তোর সামনে।
--বেদ্দপ মাইয়া।চুপ থাক।এসব কিছুই বলতে লাগবে না।এটা আমার জাস্ট ড্রীম, বুঝছো বেবি? আর বিয়ে করবো কবে, তার নাই ঠিক।সে দুলাভাই নিয়া স্বপ্ন দেখছে।
তারপর মেঘুর সাথে কথা বলতে বলতে বাড়ি চলে এলাম।মেঘুও চলে গেলো।ওর নাম মেঘলা।আমি আদর করে মেঘু বলে ডাকি।
বর্ষা ঋতু।বৃষ্টি লেগেই থাকে।রোজ কেউ একজন বৃষ্টিস্নাত কদম রেখে যায়।জানিনা কে? তাও কেমন মায়া জন্মাতে লাগলো।
এর মাঝে পাড়ার এক বখা*টে ছেলে দেখলেই তাকায় থাকে।কিছু বন্ধু আছে তার মতোই।দেখলেই ভাবি ডাকা শুরু করে।একদিন ছেলেটাকে ডাকলাম,
--পাড়ার বখাটে ছেলে কি সমস্যা তোমার?দেখে তো বয়সে আমার ছোটই মনে হচ্ছে।ফ্যামিলি থেকে ভদ্রতা শিখায় নাই।দেখেই মনে হয় বস্তির পোলাপান।
--প্লিজ, আমার ফ্যামিলিকে নিয়ে কথা বলবেন না।
ছেলেটার কথায় রাগ সামলাতে পারলাম না।দুই গালে দুইটা থাপ্পর লাগালাম কষিয়ে।"শুন,আর কখনো যেনো আমার সামনে না পড়িস।এখন ভাগ যা।"
ছেলেটা মাথা নিচু করে কাঁদলো।আমি পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে গেলাম।মেঘুও সাথে ছিলোনা।কিছুদূর যাওয়ার পর, পিছু ফিরে দেখি ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে।আমি আবার চলতে শুরু করলাম।
তারপর দিন ঝুম বৃষ্টি সাথে দমকা হাওয়া।কলেজ যাওয়া হলোনা।বার বার দরজা দেখি।বৃষ্টিস্নাত কদম আসেনি।এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পরলাম।ঘুম ভাঙলো বিকেলে।আম্মু এসে বললো,
--দুপুরে খাওয়ার জন্য ডেকেছি তাও উঠিসনি।এখন খেয়ে নে।ভাত প্লেট এ রাখা আছে।ঢেকে রাখছি।
--হুম,যাও তুমি।
আম্মুকে পাঠিয়ে দরজার কাছে গেলাম।আমার বৃষ্টিস্নাত কদম।সাথে একটা চিঠি।কিন্তু চিঠিটা ভিজে একাকার।পড়ার উপায় নেই।খুব মন খারাপ হলো।আমার বৃষ্টিস্নাত বালকটা কে? কি লিখেছিলো? কিভাবে জানলো আমার ভালো লাগার কথা? একটা প্রশ্নের উত্তরও আমার জানা নাই।আগ্রহরা উপচে পরছে।
"কদম এনে রেখে দিলাম।ভিঁজে চুপসানো চিঠিটাও"।
রাতে একটা চিঠি লিখলাম আমার সব প্রশ্ন গুলা তুলে ধরে।কাল বৃষ্টি এলে প্লাস্টিকের কাগজে করে দরজায় রেখে দিবো।যেনো কদম দিতে আসলেই পায়।তারপর উত্তর গুলো পাবো।আর জানতে পারবো আমাকে ভালবাসে কিনা।আমি তো ভালবেসে ফেলেছি।
সকালের আকাশটা ভালো।কলেজে গেলাম,তারপর ফিরে এলাম।সেই বখাটে ছেলেটা এমনকি তার সাঙ্গোপাঙ্গ কেউই ছিলোনা আজ।যাক বাঁচা গেলো।একদিনের শাসনে শুধরে গেছে।
বিকালে বৃষ্টি এলো।চিঠিটা রেখে এলাম যথাস্থানে।সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত এলো।আমার বৃষ্টিবালক এলোনা।কেঁদেই ফেললাম।রাতে না খেয়ে,না পড়ে ঘুমিয়ে গেলাম।এভাবে সপ্তাহ কেটে গেলো।আমার চিঠি আমারই রয়ে গেলো।
পরদিন কলেজে যাওয়ার পথে দেখি বখাটে ছেলেটার বখাটে বন্ধুরা।বিরক্তি নিয়ে তাড়াতাড়ি হাঁটা দিলাম।ওরা এসে বলবো,
--আপু, আপনি আর বৃষ্টিস্নাত কদম এর জন্য অপেক্ষা করবেন না।
"আমি ঘটনা না বুঝেই ডুকরে কেঁদে ফেললাম"।
--বখাটে গিরি না করলে ভালো লাগেনা? আমি কদম পাবোনা কেনো? আর তোমরা কি করে জানো?তোমাদের লিডার কই।সে নিশ্চয়ই এসব শিখিয়ে দিছে।
--বখাটে বলে যাকে সেদিন চড় মেরেছিলেন।সে আর বেঁচে নেই।বৃষ্টিতে ভিঁজতে ভিঁজতে জ্বব বাঁধিয়ে ফেলেছিলো।কখন যে টাইফয়েড হয়ে গেলো বুঝতে পারলো না।বাবা হারা মা'এর একমাত্র ছেলে,মা এর আঁচল শুন্য করে চলে গেলো।এই নিন চিঠি।এটা আপনার জন্য দিয়ে গেছে।
আমি বখাটে আর আমার বৃষ্টিবালককে গুলিয়ে ফেললাম।চিঠিটা পড়তে সাহস করিনি।রেখে দিলাম ডায়েরির ভাঁজে।
তিনটা বছর কেটে গেলো।চিঠিটা কতো বার যে বুকে জড়িয়েছি।ওর কব*রটাও জিয়ারত করে আসি বৃষ্টি হলেই।আমারও জ্বর বাঁধুক।টাইফয়েড হোক।
আমার জ্বর চলছে কিছু দিন যাবত।যদি ওপারের ডাক চলে আসে।তাই, আজকে চিঠিটা খুললাম।মাত্র কিছু লাইন লিখা,
নিধি
"একবার নাম ধরে ডাকলাম।কিছু মনে করবেন না।পৃথিবীর সব বৃষ্টিস্নাত কদম আপনার নামে।যেদিন আপনার ফ্রেন্ডকে বলেছিলেন বৃষ্টিস্নাত কদম পছন্দ।আমি সেদিন আপনাদের পেছনে ছিলাম।আমি বখাটে নামের আপনার বৃষ্টিস্নাত কদম হতে চেয়েছিলাম"।
ইতি
বখাটে/বৃষ্টিস্নাত কদম
বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে চোখ থেকে টুপটাপ পানি ঝরে, মুখ থেকে শুধু একটাই কথা বেরোলো,
--এমন মায়া রেখে যায় কেউ??! আমি কিভাবে থাকি আমার বৃষ্টিস্নাত কদম।

লেখিকার অন্যান্য গল্প

Post a Comment

0 Comments

Close Menu