লেখিকাঃ ফাতেহাতুন নিলা
ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে নিদ্রিতা রাস্তার মাঝে দিয়ে বেখেয়ালি হেঁটে চলছে। এই পাশ ওই পাশ গাড়ি চলছে অথচ তার কোনো খেয়ালই নেই। এদিকে নিদ্রিতার পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসা বড় ট্রাকটি দেখে মেহরাব জোড়ে চিৎকার সাইট হতে বলে নিদ্রিতাকে।আশেপাশে থাকা লোকজন তাকে সাইট হতে বলছে। সবার শব্দ আর মেহরাবের জোড়ে চিৎকারের শব্দে যেই নিদ্রিতা ঘুরে মেহরাবের দিকে তাকিয়েছে অমনি ট্রাকটি নিদ্রিতাকে ধাক্কা মেরে চলে যাই।। এত বড় চলতি ট্রাকের ধাক্কায় নিদ্রিতা দূরে ছিটকে পড়ে। এদিকে এই দৃশ্য দেখে সবাই থমকে যায়। এটা দেখার পরে মেহরাবের পা দুইটা যেন সেখানে থেমে যায়।জোড়ে চিৎকার করে বলে, "নি........ধ "।
মেহরাব এক দৌড়ে নিদ্রিতার কাছে পৌঁছায়।র*ক্ত মাখা নিদ্রিতার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার মাথাটা বুকের মাঝে আগলে নিয়ে ডাকতে থাকে।
" নিধ, এই নিধ, নিধ কথা বলো। " এদিকে
আশেপাশের সবাই এখনো স্তব্ধ হয়ে আছে।মাএ তাদের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনা টা বুঝার চেষ্টা করছে। মেহরাবের থেকে অনেকটা পিছনে সায়ান থমকে দাঁড়িয়ে আছে। তখন মেহরাবকে এভাবে দৌড়ে বের হতে দেখে সেও পিছন পিছন বের হয়েছিল।কিন্তু এই অবস্থায় থমকে আছে। আস্তে আস্তে মেহরাবের দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত রাখে তার কাঁধে। কাঁধে কারও স্পর্শে মেহরাব পিছনে তাকিয়ে দেখে সায়ান। সায়ানকে দেখে মেহরাব বলতে থাকে, " সায়ান দেখনা নিদ্রিতা আমার সাথে কথা বলছে না। নিদ্রিতা কথা বলো। "
" নিদ্রিতাকে গাড়িতে ওঠা হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে। ওর মাথা দিয়ে রক্ত আসছে। কোলে তোল নিদ্রিতাকে। " বলেই সায়ান দ্রুত একটি আনে। মেহরাব নিদ্রিতাকে কোলে তোলে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। সায়ান ড্রাইভিং সিটে বসে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সময় চলমান। সে তার নিজ গতিতে চলে যাচ্ছে। চাইলেও তাকে আটকে রাখা যাবে না। আর না ফিরিয়ে আনা যাবে চলে যাওয়া সময়টাকে।
সেদিন নিদ্রিতার এক্সিডেন্ট এর পর আজ ছয় দিন হয়ে গেলো। চৌধুরী বাড়িটা এখন অনেকটা নিস্তব্ধ।
সায়ান মেহরাবের রুমের দরজাটা হাল্কা ধাক্কা দিয়ে খুলে ভিতরে প্রবেশ করে তার খুঁজে। কিন্তু পুরো রুম জোড়ে অন্ধকার। মেহরাবের চিহ্নটাও নেই। সায়ানের আর বুঝতে বাকি নেই সে কোথায় আছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সায়ান বের হয়ে যায় রুম থেকে। বাড়ি থেকে বের হবার সময় মনিরা বেগম সায়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়।
" সায়ান তুমি তো মেহরাবের বন্ধু। ছোটথেকে আছো একসাথে তোমরা। মেহরাবকে একটু বুঝাও ওর এই পা*গ*লামি আর ভালো লাগছে না। ওর এমন পা*গ*ল পা*গ*ল চলাচল একদম মানায় না। যে চলে গেছে সে আর আসবে না। তাকে বলো তার ভবিষ্যৎ আছে।"
মনিরা বেগমের কথায় সায়ান একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে, " ভবিষ্যৎ, আন্টি আজ যদি আংকেল এর কিছু হয়ে যেত আপনি কি পারতেন স্বাভাবিক ভাবে থাকতে। কখনোই না। যাইহোক আমাকে আসি এখন। "
বাড়ির বাইরে এসে সায়ান গাড়িতে ওঠে রওনা হয় মেহরাবের নতুন বাড়িতে যেখানে নিদ্রিতাও আছে।
**********
একটি ক*ব*রের পাশে মেহরাব বসে আছে।বিরবির করে কিছু বলে যাচ্ছে। সায়ান যে গাড়ি দিয়ে তার বাড়ির গেইট পাড়ি দিয়ে ভিতরে আসল তার কোনো খবর নেই মেহরাবের। সায়ান তা খেয়াল করে গাড়ি থেকে নেমে মেহরাবের পাশে গিয়ে বসে।
" আমি যে আসলাম তুই কি দেখতে পেয়েছিস মেহরাব? "
"........ " মেহরাব সায়ানের কথায় কোনো জবাব দিল না। মেহরাবের থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আবার বলে, " আজকে আকাশটা অনেক মেঘাছন্ন বৃষ্টি হবে খুব। এখানেই থাকবি নাকি ঘরের ভিতরে যাবি।তুই তো আর এই বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাস না।"
এবারের কথাতেও মেহরাব চুপ হয়ে আছে।মেহরাবকে চুপ থাকতে দেখে তার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে, " কথা বলছিস না কেন মেহরাব? কিছুতো বল। দেখ তুই যদি এভাবে চুপ হয়ে থাকিস তাহলেও আমিও কিন্তু নিদ্রিতার মতো তোকে রেখে চলে যাব। "
এবারের কথাটা শুনে মেহরাব তার দিকে তাকাই। দুই চোখ পানিতে ছলছল করে ওঠে। সায়ানকে জড়িয়ে ধরে মেহরাব শব্দ করে কেঁদে ওঠে।
" তোরা সবাই সার্থপর। সবার সার্থের জন্য আমাকে একা করে দিস। ওই দিন নিদ্রিতা আমাকে কাগজে লিখেছিল আমাকে ছেড়ে ও অনেক দূরে চলে যাবে। দেখ না সায়ান ও ওর কথা রেখেছে। আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। সায়ান ওকে বল না ( নিদ্রিতার ক*ব*রের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে) ওই জায়গাটা থেকে ওঠে আসতে। নিদ্রিতাকে বল না আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে। ওই দিন না ও বলে ছিল আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে। বল না আসতে ওকে। আমি এক নাগাড়ে নিদ্রিতাকে ডেকে বলেছি একবার আসতে। আমি একমুহূর্তের জন্য তাকে ছাড়ব না। কিন্তু আমার কথাতে ও কোনো সাড়া দেই নাই। সায়ান তুই বল না একটু দেখবি তোর কথা শুনবে। আমার ওপর রাগ করে আছে তাই সাড়া দেই না।একটু বল সায়ান আমার কষ্ট হচ্ছে অনেক নিদ্রিতাকে চুপ করে থাকতে দেখে।আজ পাঁচ দিন হয়ে যাচ্ছে আমি ওর একটু কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি না। একটু বল আমি ওকে একটু দেখব।" বলেই ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে মেহরাব।এদিকে মেহরাবের কথা শুনে সায়ানের চোখ বেয়ে পানি পড়ে।চোখ বন্ধ করে পুনরায় মনে করে সেই পাঁচ দিন আগের দৃশ্যগুলো। মেহরাবের করা সেই পাগলামো গুলো। যখন বলা হয়েছিল নিদ্রিতা আর বেঁচে নেই। তখন মেহরাব পারেনি ডাক্তার টাকে মে*রে ফেলতে। তখন মেহরাব শুধু একটা কথায় বার বার বলেছিল " বাবা বলো না নিদ্রিতাকে এখান থেকে উঠতে। ও এখানে এভাবে শুয়ে আছে কেন? এই নিধ, নিধ ওট না এখান থেকে। কথা বল নিধ। আমি ডাকছি যে তোকে। এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছিস না আমি যে ডাকছি।আমাকে রাগাস না নিধ। এই তুই না কিছুক্ষণ আগে বলেছিলি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরতে চাস।আমার বুকে একটু মাথা রাখতে চাস।তাহলে এভাবে শুয়ে আছিস কেন? রাখবি না বুকে মাথা? কি হলো বলছিস না কেন কথা? কথা বল নিধ। "
সেদিন মেহরাবের এমন হাজারো পাগলামো দেখেছিল সবাই। ভালোবাসার মানুষটা এভাবে চলে যাওয়া চোখের সামনে থেকে এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল সেদিন। সায়ান চোখ দুটি খোলে মেহরাবের দিকে তাকাই যে কিনা এখনো ঠোঁট চেপে কেঁদে চলছে। যেই ছেলে এত এত আঘাত পেয়েও চোখ থেকে এক ফোটা পানি পড়েনি সেই ছেলে আজ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে।
সায়ানের ভাবনার মাঝে মেহরাব ওঠে গিয়ে বাড়ির ভিতর থেকে একটা ডাইরি নিয়ে আসে। যেই ডাইরিটার মধ্যে মেহরাবকে নিয়ে হাজারো বাক্য লিখে রেখেছে।অনুভূতি, অভিযোগ সব কিছু লিখে রাখা হয়েছে এই ডাইরির প্রতি পৃষ্টায়।
মেহরাবের হাতে একটা ডাইরি দেখে সায়ান প্রশ্ন করে, " কি এটা? "
" ডাইরি এটা। আমার প্রেয়সি এটার মধ্যে আমাকে নিয়ে তার সব #প্রেমবাণী লিখে রেখেছে। এই পুরোটা জুড়ে শুধু আমার কথা লিখা। আমার প্রতি তার অনুভূতি, অভিযোগ সব লিখা আছে। কিন্তু পূর্ণতা নিয়ে কিছু লিখা নেই। নিদ্রিতা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে কিন্তু রেখে গেছে তার এই অসম্পূর্ণ ডাইরিটা। জানিস এই ডাইরির শেষে কি লিখা আছে। "
" কী "
"তুমি আমার এক অসম্পূর্ণ গল্পের এক অসম্পূর্ণ ডায়রী ,,,
যেইখানেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অজস্র কাহিনী,,,
শূণ্যের পাতায় পূর্ণতা চাই,,
তাইতো বার বার তোমার কাছে ফিরে যাই,,
শুধু মাত্র বিন্দু পরিমান ভালোবাসার আশায়,,,!!"
0 Comments