লেখিকাঃ সাবিহা জান্নাত
আজ চারুলতার গাঁয়ে হলুদ। সবকিছুর আয়োজন করা হয়েছে। বাসা ফুলে ফুলে সজ্জিত করা হয়েছে।
আত্মীয় স্বজন সবার ভীরের মাঝেও চারুলতা নিজেকে একাকিত্ব অনুভব করছে। তার একাকিত্বের অনুভব, না পাওয়ার আক্ষেপ সবটাই তার মনকে বিষন্ন করে ফেলেছে।
তার মন বার বার ছুটে যেতে চাইছে কাব্যের কাছে , যে কি না তাকে গ্রহণ করতে অসম্মতি জানিয়েছে। লাজ - লজ্জা অভিমান সমস্ত কিছু ভুলে বেহায়ার মতো কাব্যের কাছে প্রেম নিবেদন করেছিল সে ।
কিন্তু বিপরীতে থাকা মানুষ টার মনে যে তার জন্য সুক্ষ্ম জায়গা নেই সে সেদিন ই বুঝতে পেরেছিল। তার সমস্ত আশা ইচ্ছে কে মিথ্যা প্রমাণ করে কাব্য তাকে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল ।
কাব্যের মনে তার জন্য বিন্দুমাত্র জায়গা নেই। হঠাৎ করে কাব্যের পরিবর্তন হবারই বার কারন । অনেক খুঁজেছে সে কিন্তু কোনো জবাব মেলে নি তার।
চাতক পাখির মতো তার মনটা কাব্যের হ্যা জবারের অপেক্ষায় ছিল কিন্তু সবটাই মিথ্যা। কাব্য তাকে ভালোবাসে নি। শুধুই ব্যবহার করেছিল তাকে। তার প্রতি দেখানো কেয়ার , রাগ , অধিকার সবটাই মিথ্যা।
চারুলতাকে হলুদ মাখানো শুরু করা হয়। চারু সে সময় টাতেও কাব্যের অপেক্ষা করছে। সে হয়তো আসবে তার কাছে ছুটে। কাব্য এসেছে তার কাছে কিন্তু তাকে গ্রহণ করার জন্য নয় । তার বিদায়ে হলুদ মাখাতেই এসেছিল সে ।
চারু তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস গুলো ফেলছে কাব্যের আড়ালে। কাব্যের প্রতি তার দূর্বলতা সে আর প্রকাশ করতে চায় না । কাব্য কে নিয়ে তার বেঁচে থাকার সব স্বপ্ন, ইচ্ছেকে সে মৃত ঘোষণা করে কবর দিয়ে দিয়েছে ।
তার খুব কষ্ট হলেও সে আর প্রকাশ করছে না । সে পাথরের মূর্তির ন্যায় বসে রয়েছে। কাব্যকে দেখে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। তার হৃদয় আঘাতে আঘাতে জর্জরিত হয়ে সে নিরব হয়ে গেছে। নিরবতার মাঝেই সে নিজেকে খুঁজে পেতে শুরু করেছে।
যাকে এতো ভালোবাসার পর ও তার হয়নি । তার দুঃখ কষ্ট গুলো দেখেও না দেখার ভান করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । অথচ সে তাকে তার সর্বস্ব দিয়ে ভালোবেসে ছিল সেই তাকে এখন এতোটা অবহেলা করছে।
তাহলে যাকে চিনি না জানি না তার সাথে কিভাবে কাটাবে সে । সেও কি কাব্যের মতো তাকে অবহেলা করবে না কি ভালোবাসে আগলে নিবে । কত যুগ সে তাকে ভালোবাসতে পারবে নাকি কাব্যের মতো কয়েক দশক পর আবার তাকে ছেড়ে দিবে।
সব নিয়মকানুন, অনুষ্ঠান আয়োজন শেষ করে আজ চারুলতার বিয়ে।বিয়ের সাজে চারুকে অপরুপ সুন্দরী লাগছে । কোনো কিছুর ই ক্ষামতি নেই।
বিয়ে নিয়ে প্রত্যেক টা মেয়েই খুব এক্সাইটেড থাকে। সে কি করবে না করবে সব আগে থেকেই পরিকল্পনা করা থাকে। কিন্তু চারু তার মনে আনন্দের ছায়া নেই। বিষন্নতা ভর করেছে তার সমস্ত টা জুড়ে।
একদিন তার জীবন পূর্ণতা পাবে হয়তো ঠিকই কিন্তু তার প্রিয় মানুষের সাথে নয়। চাইলেই কি সে ভুলতে পারবে তাকে।
যে মনে গেঁথে গেছে তাকে কি করে সে মন থেকে মুছে ফেলবে। জীবন তো কোনো পেপার আর পেন্সিল নয় যে সে চাইলেই মুছে ফেলতে পারবে ।
বর এসেছে বর এসছে বলে সবাই চলে যায়। ঘরে শুধু একা রয়েছে চারু লতা । আয়নার সামনে বসে সে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছে। সবকিছু পরিপাটি কিছু কিছু একটার সে অনুপস্থিতি অনুভব করছে।
আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবির সাথে আরেকটা প্রতিচ্ছবি দেখতে পারছে সে।আয়নায় কাব্যের চেহারাটা দেখা মাত্রই চারু ফিরে কাব্যের দিকে ফিরে তাকায়।
চারুর চোখে পানি চলে এসেছে। বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে । কাব্য চারুকে দুহাতে আগলে নেম নিজের সাথে। চারুর চোখের পানি গুলো হাত দিয়ে মুছে দেয় আলতো ভাবে।
দুজনের মাঝে পিনপিন নিরবতা। চোখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে একেঅপরের দিকে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না । কাব্য কিছু সময় চারুকে দেখে মুখে জোরপূর্বক হাঁসি দিয়ে সে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই চারুর মুখে নিজের নামটা শুনেই থেমে যায়।
~ কাব্য ভাইয়া ( চারু )
কাব্য চারু দিকে ফিরে তাকায়। চারু তার টেবিলের ড্রয়ার থেকে একটা ঘড়ি, চিঠি, ছবি অচেনা ব্যাক্তির দেওয়া সমস্ত কিছু বের করে কাব্যের দিকে এগিয়ে যায় ।
কাব্যের হাতে জিনিসগুলো তুলে দেয় চারু। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
কাব্যের বুঝতে বাকী রইল না যে, সেদিন রাতে চারুর যত্ন নেওয়া পুরুষ, অচেনা ব্যাক্তি সবটাই কাব্য ছিল এটা চারুলতা জানতে পেরেছে। কাব্যের মনে একটা প্রশ্ন উদগ্রীব হয় চারুলতা জানতে পারলো কিভাবে ?
আপনি অবাক হচ্ছেন যে আমি এগুলোর বিষয়ে কিভাবে জানলাম। যেদিন রাতে আপনি আমার ঘরে এসেছিলেন সেদিন আপনি নিজের পরিচয় গোপন রেখে আসলেও ঘড়িটা ভুল ক্রমে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন।
আর অচেনা ব্যাক্তি টা যে আপনি সেটা আমাকে সেই বলেছে যাকে সেদিন রেস্টুরেন্টে আপনার বদলে পাঠিয়েছিলেন ।
অতীত

চারু ছেলেটাকে থাপ্পড় দিয়েই চলে যায়। ছেলেটা কিছুটা অবাক হয়েছিল মেয়েটার ব্যাক্তিত্ব দেখে। পরক্ষনেই ছেলেটার ফোনে কাব্যের কল আসে । কল রিসিভ করেই ছেলেটা বলে উঠে,,,
~ বস আমাদের পরিকল্পনা ফেল । মেয়েটা শুধু কাব্যকেই ভালোবাসে । আই মিন তোমাকেই ভালোবাসে। কথাটা শোনার পর কাব্যের মুখে হাঁসি ফুটে উঠৈছিল ঠিকই কিন্তু সেটা বেশিক্ষণ চিরস্থায়ী হতে পারেন হয়তো ।
ছেলেটা কাব্যের ফ্রেন্ড ছিল ।সে চারুর বিয়ের কথা শোনামাত্রই সে সবটা চারুলতাকে ফোনে বলে দিয়েছিল। কাব্য তাকে কতটা ভালোবাসে সেই সাথে সেটাও জানিয়েছিল ।
কাব্য কথাটা শোনামাত্র সেখানে স্থীর হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। যত্ন করে মনটা এভাবে ভেঙ্গে না দিলেও পারতেন। চারুর বলা কথাটা কাব্যের হৃদয়কে নাড়া দিয়ে তোলে। তার প্রচন্ড কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও সে প্রকাশ করে না । সে চারুকে রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
তন্ময় দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা শুনতে পায়। কাব্য তন্ময় কে দেখেও কোনো প্রকার ভ্রূক্ষেপ না করেও চলে যায়।
তন্ময় চারুকে দেখতে এসেছিল , চারু তৈরি হয়েছে কি না। বিয়ের কার্যক্রম কিছু মুহূর্ত পর ই শুরু হবে। তন্ময় ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে চারুর চোখে পানি দেখতে পায়। চারু তন্ময় কে দেখেই ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা শুরু করে দেয়।
কান্নার বাঁধ ভেঙে গিয়েছে তার। কাব্য আমাকে নিষ্ঠুর ভাবে ঠকিয়েছেন। ওনি আমাকে এভাবে ঠকাতে পারলেন কিভাবে। চারুর কান্নারত কন্ঠে কথাটা শোনামাত্র ই তন্ময়ের চোখে পানি চলে এসেছে।
নিজের চোখের সামনে বোনের কষ্ট দেখে নিজের মনেও সুক্ষ্ম কষ্টের সৃষ্টি হয়েছে। তন্ময় নিজেকে খুব কষ্টে সামলে নেয়।
~যা হয়েছে ভুলে যা। নতুন জীবনের জন্য তৈরি হয়ে নে। তন্ময় চারুর চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
তুমি কাজটা মোটেও ঠিক করলে না কাব্য ভাইয়া। তন্ময়ের কথা শুনে কাব্য তন্ময়ের দিকে ফিরে তাকায়।
~ তুমি ওকে কষ্ট দিয়ে নিজে কি কখনো সুখি হতে পারবে। চারুকে যখন আপন করতেই পারবে না আশা দেখিয়েছিলে কেন ওকে। মেয়েটা ভেতরে ভেতরে পুড়ে মরছে আর তুমি....
তন্ময়ের কথা টা শেষ না করতেই কাব্য স্থীর কন্ঠে বলে উঠে,,
~ ও সুখের কথা ভেবেই ওকে আপন করি নি । আমার সাথে থাকলে ও কখনো সুখি হতে পারতো না। হয়তো আমাকে পেত কিন্তু পরিবার পেত না । ওর যেখানে বিয়ে হচ্ছে সেখানে ওর জীবনসঙ্গির সঙ্গে একটা পরিবার ও পাবে। যেখানে ও খুব ভালো থাকতে পারবে ।
কাব্যের কথাটা শোনামাত্র তন্ময় চুপ হয়ে যায়। সে কখনো তার মামা মামীর কথা ভেবে দেখেনি। সত্যি তো চারুকে কখনো কাব্যের মা বাবা বউ হিসেবে মানবে না । কিন্তু সে চাইলেই তার বাবা মা কে মানাতে পারতো।
তন্ময় এতো কিছু ভাবার মাঝে ও বলে উঠে, কিন্তু চারু কষ্ট পাচ্ছে ।
তন্ময়ের কথায় কাব্য জোরপূর্বক হেঁসে বলে উঠে,,,
~ সময়ের সাথে সাথে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কাব্য তন্ময় কে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়েই তাকে অন্যদিকে নিয়ে চলে যায়।
কিছু সময় পর কেয়া এবং তোহা চারুকে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার ঘরে আসে। চারু তার ঘরে নেই। সাড়াবাড়ি খুঁজেও চারুর দেখা মিলেনি। কথাটা চারুর পরিবারের সবার কানে যেতেই সবাই কিছুটা হতভম্ব হয়ে যায়।
বিয়েতে চারুর দাদুমুনি, কাকি এবং কাকাও উপস্থিত ছিল। চারুর পালিয়ে যাওয়ার খবর টা শুনে সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। চারুর দাদুবাড়ির সবাইও চারুর এমন কাজে হতভম্ব হয়ে গেছে। চারু পালিয়ে যাবে ভাবতেও পারে নি।
কথাটা কাব্য এবং তন্ময়ের কানে যেতেই তারা কিছুটা থমকে যায়। কথাটা বেশিক্ষণ তাদের মাঝে গোপন থাকতে পারেনি। বরপক্ষের কানে কথাটা যেতেই তারা রেগে মেগে অস্থির। তারা বর নিয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গেছে।
বলেছিলাম তো এই মেয়ে আমাদের মান সম্মান সব ডুবিয়ে চলে যাবে । হলো তাই , কি করিনি ওর জন্য। মায়ের মতো ও আমাদের পরিবারের মান সম্মান শেষ করে দিয়েছে । আর কিছু করার বাকী আছে তোমাদের। কথাটা রেগে গিয়ে কাব্যের বাবা সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠে।
সবাই চুপচাপ সবটা শুনে যাচ্ছে।কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।সবার দৃষ্টিতে চিন্তার ছাপ। নানাদিক থেকে নানাজনে যখন নানান কথা বলতে শুরু করলো । কথাটা কানাকানি শুরু হতেই ভরা মানুষের মধ্যে কাব্যের আম্মু জোর গলায় বলে উঠে,,,
~ চারুলতার কোনো দোষ নেই। চারু পালায় নি । ও কিচ্ছু করেনি বলেই কেঁদে উঠে কাব্যের আম্মু। কেয়া তার মাকে গিয়ে সামলে নেয়।
রুপন্তী রহমানের কথা শুনে সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। সবার মনেই রুপন্তী রহমানের কথাটা ভাবাতে শুরু করে । কিছু সময় চুপ থেকে রুপন্তী রহমান বলতে শুরু করে সত্য ঘটনাটি......
অতীত

কাব্য ভুল করছিস তুই। চারু মেয়েটা তোকে বড্ড ভালোবাসে ।আর তুই ও তো চারুকে ভালোবাসিস তারপর ও এই দুরত্ব সৃষ্টির কারন । বাবা মায়ের কথা ভাবছিস তুই ।যে মেনে নিবে না।
তুই আঙ্কেল আন্টি কে বোঝা বিষয়টা। এখনো সময় আছে । কথাটা কাব্যের ফ্রেন্ড বলে উঠতেই কাব্য বলে উঠে,,,
~ সম্ভব নয়।
সম্ভব নয় এই কথাটা তো আগে জেনেছিলি তাহলে মেয়েটাকে ভালোবাসার কারন। কাব্য পর্যন্ত এনাফ ছিল অচেনা ব্যাক্তি সেজে চারুর মনে জায়গা করার চেষ্টা, এসব কেন করেছিলি তুই।
~ কারন আমি জানতাম আমার পরিবারের জন্য চারু কে কাব্যকে কখনো ভালোবাসবে না তাই ওর ভালোবাসা পেতে আমি এমনটা করেছিলাম কিন্তু আমি আর ওকে কষ্ট দিতে পারবো না । ও যেখানে যাবে সেখানেই সুখি হোক .....
বাকী কথাটা বলার আগেই কাব্য থেমে যায়। ওর চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম।
~ তারপর ও মেয়েটা কাব্যকেই ভালোবেসে ছিল। আর কি চাস মেয়েটার থেকে। সব জেনে শুনেও মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছিস। তুই চারুকে সবটা বলে দে। তুই ওকে দূরে সরিয়ে দিলে আজ হোক বা কাল ওর কথা তোর মনে পড়বেই ।
কাব্যের ফ্রেন্ড অনেক বোঝানোর পর ও কাব্য রাজি হয়নি। তার পরিবারের অমতে চারু কখনো সুখি হবে না।
ঘরের ভেতরে যখন কাব্য ওর ফ্রেন্ড দের সাথে এসব কথা বলেছিল তখন আমি মা হয়ে ছেলের কষ্টটা সহ্য করতে পারি নি । আমাদের ইগোর কারনে ছেলের ভবিষ্যত শেষ করতে পারবো না । আমাদের কথা ভেবে ছেলের নিজের ভালোবাসার মানুষের বলি আমি দিতে পারি নি।
সেই জন্য শরবতের গ্লাসে ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলাম । অচেতন অবস্থায় চারুকে আমি স্টোর রুমে আটেক রেখেছিলাম। যেন বিয়েটা ভেঙ্গে যায় বলেই কাব্যের আম্মুর চোখ দিয়ে অবিরাম ধারায় অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
উপস্থিত থাকা সকলেই স্তব্ধ হয়ে যায়। কাব্য বিচলিত হয়ে চারুর খোঁজের জন্য সেখানে থেকে দৌড়ে স্টোর রুমের দিকে পা বাড়ায়। তার পেছনে পেছনে পরিবারের সবাই চলে যায়।
স্টোর রুমের দরজার কাছে যেতেই শুনতে পায় ভেতর থেকে দরজা ধাক্কানোর শব্দ। খুলতেই কাব্য থমকে যায়। চারু ভয় পেয়ে আছে অনেক। কাব্য চারুর কাছে যেতেই চারু সেন্সলেস হয়ে পড়ে যেতেই কাব্য বাহুডোরে আগলে নেয় তাকে।
কাব্য চারুকে পাঁজর কোলে তুলে নিয়ে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চারুর খালামুনি মুখে পানি দেয় । কিছু সময়ের মধ্যেই চারুর জ্ঞান ফিরে আসে।
অন্ধকার রুমে থেকে ভয়ে চারুর শরীর শীতল হয়ে গেছে। জ্ঞান ফিরতেই চারুকে ভয় পেয়ে ওর কাছেই থাকা খালামুনি কে জড়িয়ে ধরে। ভয়ে ওর শরীর কাঁপছে। ওর খালামুনি চারুকে বুকের মাঝে আগলে নিয়ে শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।
ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। চারুকে বিছানায় রেখে সাথে তোহাকে রেখে যায়। কাব্যের বাবার বলাতে বাকী সবাই নিচে চলে। রুপন্তী রহমান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে কাব্যের বাবার সামনে। অপরাধবোধ কাজ করছে তার মধ্যে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে কাব্যের বাবা বলে উঠে,,,
~ ছেলে মেয়ের যেহেতু একে অপরকে পছন্দ। আমরা আর বাঁধা দিবো কেন। আজকেই ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করো।
কাব্যের বাবার কথা শুনে রুপন্তী রহমান মাথা তুলে তাকায়। সবার মুখেই কিঞ্চিত হাঁসি ফুটে উঠেছে ।
তাদের বিয়ে ভালোভাবে সম্পুর্ন করা হয় । কাব্য এবং চারু দুজনের ই মনে খুশির আমেজ।
চারু বিছানায় বউ সেজে বসে আছে। অনেক রাত হয়ে গেছে কাব্যের অপেক্ষায় সে কিন্তু কাব্যের আসার নাম নেই। হঠাৎ ই চারু দরজায় চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পায়।
~ ভাইয়া আমাদের দাবি পূরণ না করে ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না আমাদের দাবি মিটিয়ে তারপর চলে যেও। কাব্যের ঘরের দরজায় তোহা, কেয়া এবং তন্ময় সবাই একজোট হয়ে কাব্যকে ঘিরে রেখেছে। অবশেষে কাব্য সবার দাবি মিটিয়ে ঘরে প্রবেশ করতে পারে।
চারু দরজা খোলার শব্দ শুনেই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য এসেছে। চারু লজ্জায় নিজেকে যথাসম্ভব গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কাব্য ধীর পায়ে চারুর দিকে এগিয়ে যায়। বিছানায় গিয়ে চারুর সামনে বসে পড়ে।
চারু লম্বা ঘোমটা টেনে বসে আছে। কাব্যের সামনে কখনো এভাবে পড়তে হবে সে ভাবেনি। লজ্জায় তার মুখ লাল বর্নে ছেয়ে গেছে। কাব্য ধীরে ধীরে চারুর ঘোমটা তুলেই দেখে চারু লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে।
কাব্য চারুর থুতুনিতে ধরে মুখটা উঁচু করে। চারু লজ্জায় রক্তিম বর্ন ধারন করেছে। কাব্য মুখে কিঞ্চিত হাঁসি নিয়ে চারুর কপালে চুমু এঁকে দেয়। চারু কাব্যের এতোটা কাছাকাছি আসাতে তার সারা শরীরে শিহরন বয়ে যাচ্ছে।
কাব্য চারুর আর একটু কাছে যেতেই চারু নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারুর এমন কাজে কাব্য হাঁসি দিয়ে উঠে। হাসি মাখা মুখ নিয়ে কাব্য চারুকে রেখে ফ্রেশ হতে যায়।
কাব্য ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে দেখে চারু ওইভাবেই বসে রয়েছে বিছানায়। আমার হয়ে গেছে , তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসো। চারু কাব্যের কথামতো বিছানা ছেড়ে উঠে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
কাব্য চারুর জন্য ই অপেক্ষা করছিল চারুকে শাড়ি পড়ে ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেই ওর চোখ আটকে যায় চারুর প্রতি । এই অপরুপ চাহনীর প্রেমে পড়েছিল সেদিন যেদিন প্রথম চারু লতা এই বাসায় এসেছিল।
তার অপরুপ চাহনী, শান্ত দৃষ্টি যে কেউ তার মায়ায় আটকে যাবে। চারু ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো চিরনী করে নেয়। কাব্যের আচমকা স্পর্শে সে কেঁপে উঠে।
পিছনে ফিরতেই কাব্যের মুখোমুখি হয় সে। কাব্য চারুকে নিজের সাথে মিশে নিয়ে আচমকা চারুকে কোলে তুলে নেয়। চারুকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুমের বাতি নিভিয়ে সে চারুর পাশে শুয়ে পড়ে।
কাব্য চারুর কাছে মুখ নিতেই চারু অভিমানে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়।
কাব্য চারুর অভিমানের কারণটা বুঝতে পেরেছে। আসলে আমরা তাদের উপরই সবচেয়ে বেশি রাগ করি যাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিছু কিছু রাগের পিছনে ভালোবাসাও লুকিয়ে থাকে। সব ভালবাসা তো আর মুখে বলা যায় না। কাব্য হাত বাড়িয়ে অভিমানি চারুর গাল স্পর্শ করে নিজের দিকে ঘুরিয়ে এনে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। চারু চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললো।
চারু দম নিতে পারছে না। কাব্যকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতেই কাব্য হাতের ভাজে হাত শক্ত করে ধরলো। এতোক্ষণে চারু হাঁপিয়ে উঠেছে ঘাড় কাত করে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিতে লাগলো। আরেকটু হলে সে মরেই যেত। কাব্যের তপ্ত নিশ্বাস এখন তার গলায় আছড়ে পড়ছে। সাড়া শরীর প্রতি নিশ্বাসে শিউরে উঠছে।
কাব্য চারুর কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললো, আই প্রমিস, এরপর থেকে শুধু তোমার কাছেই থাকবো । চারু লজ্জায় মাথা নুইয়ে ফেললো। বুকের ভিতরে হৃদ স্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গেছে।কাব্য আস্তে আস্তে চারুর কাঁধে মুখ গুঁজিয়ে দিতেই চারু লজ্জায় কাব্য কে জড়িয়ে ধরলো। কাব্য তার প্রিয়দর্শিনী কে নিজের দুই বাহুতে আগলে নিলো।
0 Comments