লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
বেনীতে হালকা টান অনুভব করতেই চুলের গোঁড়াতে হাত দিয়ে আলগোছে ধরে পিছু ফিরে তাকিয়ে, ইচ্ছে বললো, "সমস্যা কি আপনার"?
-তৃষ্ণা লাগছে।একটু পানি খাওয়াবেন বেয়াইন।
-তাই বলে বেনী ধরে রাখবেন।মুখে বলা যায়না
-একটু বেনীই তো ধরলাম।তার জন্য এতো রাগ
-ছাড়ুন, ব্যাথা পাচ্ছি।
-আমি যে ব্যাথা পাই মনে।সেই বেলা?
-আপুকে দিয়ে পাঠাচ্ছি
-তাহলে কিন্তু ছাড়বোনা।আমার শুধু পানির তৃষ্ণাই নয়।আরো কিছু তৃষ্ণা আছে।যে কোনো একটা তৃষ্ণা মিটলেই হলো।
ইচ্ছে, খানিকটা ভিমড়ি খেয়ে গেলো।এ ছেলের বিশ্বাস নেই।যা ইচ্ছে করতে পারে।আমতা আমতা করে কন্ঠ খাদে নামিয়ে করুন স্বরে বললো,
-আমার হাত,পা নেই নাকি।আপুর আনা লাগবে কেনো।আমি নিজেই আনবো।
এবার রেহান একটু মুচকি হাসলো।বেনী ছেড়ে দিলো।ছাড়া পেতেই বড় বড় পা ফেলে দোতলার করিডোর থেকে সিড়ি ভেঙে নিচে নেমে এলো।
রিমেল এর সাথে গল্প'র বিয়ের ছ'মাস ।গল্প আর ইচ্ছে দু'বোন।ছোট ভাই কাব্য।বয়স ছয়/সাত হবে।বিয়ের নতুন অবস্থায় তেমন মন বসাতে পারছেনা গল্প।তাই ইচ্ছে'র কলেজ বন্ধ পরলেই নিয়ে আসে এ বাড়িতে।
কাঁপা কাঁপা হাতে পানির গ্লাস বাড়িয়ে দিলো।রেহান, আলতো করে গ্লাসটা ধরলো।রেহান এর হাতের পাঁচটি আঙুল ছুঁয়ে দিলো ইচ্ছে'র হাতের আঙুল।ইচ্ছে অস্বস্তিকর শিহরনে হাত ছাড়াতে জোরাজোরি শুরু করলো।কিন্তু সে অপারগ রেহান এর কাছে।জোরাজোরি গাঢ় হতেই হাতের ফাঁক গলে গ্লাস হাত থেকে পরে গেলো।গ্লাস ভাঙার শব্দে ইচ্ছে অস্ফুট শব্দ করে উঠলো।রেহাল চটজলদি মুখ চেপে ধরলো।তারপর দূরত্ব আরো সংকীর্ণ করে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো, 'আমার রুমে এভাবে চিৎকার করোনা হৃদয়হরিনী।তাহলে কিন্তু ভেঁজা শাড়ির মতো সারা অঙ্গে কলঙ্ক লেপ্টে যাবে।
ইচ্ছে আর এক মূহুর্ত দেরি করলোনা।ছুটে চলে গেলো নিজের রুমে।নিজের রুম বলতে, এ বাড়িতে আসার পর যে রুমে সে থাকে।প্রথম কোনো পুরুষের এতো কাছে আসার অনুভূতি।প্রথমে কাছে আসতে বারন।কাছে এলে অনুভূতিরা আরো যেনো কাছে টানে।প্রেমের কি এমনই শিহরন!
ইচ্ছে, 'গোসল করবিনা'?
বোনের ডাকে ভাবনারা সরে গেলো,
-হুম,করবো তো।তুমি আগে করে নাও যাও।আমি তোমার পরেই করবো।
-আমার কাজ আছে কিচেনে।তুই এ বাড়িতে মেহমান।গোসল করে সুন্দর করে সেজে গুজে থাকবি।তা না করে এক রুমে চুপটি করে বসে থাকিস।মানুষ কি বলবে বল।
-ওকে যাচ্ছি।আর সাজার কি আছে বলো।আমি এমনই ঠিক আছি।
শুভ্রতায় আজ নিজেকে মুড়িয়েছে,ইচ্ছে।ভেঁজা চুল গুলো টাওয়েলে মুছতে মুছতে রুমে যাচ্ছে।রেহান দূর থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলো।চুড়িদার এর সাথে লং কামিজ।পায়ে রূপোর নূপুর।আবেশে মনের অজান্তে ডেকে ফেললো, 'তৃষ্ণানদী, আজ চোখে কাজল পরো'।চোখ দুটো মেঘফুল লাগবে।ওটারই অভাব শুধু।
ইচ্ছে, চুপচাপ হঁটে রুমে চলে গেলো।
দুপুরের খাবার শেষে গল্প বললো,
-আজ আমাকে একটু কেনাকাটার জন্য বেরোতে হবে।তোমার ভাই মার্কেটেই থাকবে।মা-বাবা তো খালার বাসায়।খালি বাসা রেখে,তুমি কোথাও আজ বের হইওনা।
রেহান যেনো এই সময়টাই চেয়েছিলো।
-ইচ্ছে কি সাথে যাবে?
-ইচ্ছে কোথাও যাওয়া পছন্দ করেনা।তাও বলেছিলাম।বললো, যাবেনা।
-আচ্ছা, সমস্যা নেই।আমি আজ বাসাতেই আছি।
শ্রাবন মাস।আকাশ মেঘলা রুপেই ছিলো।পড়ন্ত বিকেলে ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো।বৃষ্টি দেখে ইচ্ছে নিজেকে শাসনে রাখতে পারলোনা।সাদা ড্রেসে ভেঁজাটা মানানসই নয়।সেজন্য বোনের ওয়ারড্রব থেকে আকাশী রঙের একটি শাড়ি নামিয়ে নিলো।আকাশী চুড়ি পরলো।চোখ কাজলে আঁকলো।কপালে ছোট্ট একটি কালো টিপ বসিয়ে দিলো।কোমর ছোঁয়া চুল গুলো খুলে দিলো।খালি ছাদে বৃষ্টির সাথে আলাপন হলো।বৃষ্টির ফোঁটা গুলো পরম যত্নে শরীরে মিশে যেতে লাগলো।শাড়ি ভিঁজে শরীরের কিছু অংশ ফুটে উঠলো।যে কোনো পুরুষই নিয়ন্ত্রণ হারাবে।
শাড়ির ভাঁজে উদরের বাম পাশে হাতের ছোঁয়ার মিশ্রন।যেনো বৃষ্টির ফোঁটার মতোই ছুঁয়ে আছে।মূহুর্তেই অনুভব করলো রেহান তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে আছে।এ আলিঙ্গন আরো তিব্র হতে লাগলো।হাতটা ধীরে ধীরে উদরের মধ্যভাগ ছুঁয়ে গেলো।এবং মধ্যভাগ ছুঁয়ে আরো শক্ত করে ধরে সামনের দিকে নিজের সাথে মিলিয়ে নিলো।তারপর ডান কাঁধের ভেঁজা চুল গুলো সরিয়ে অধর ডুবিয়ে দিলো ঘাড়ে।
ইচ্ছে এভাবে বেশিক্ষণ থাকতে পারলোনা।এক ঝটকায় সামনের দিক হয়ে রেহানকে জড়িয়ে ধরলো।রেহান বললো,
-এতো বৃষ্টির মাঝেও আমি খুব তৃষ্ণার্ত,তোমার তৃষ্ণায়।চুমু খেতে চাই।তোমার লাজে রাঙা ভেঁজা ভেঁজা ঠোঁট, আমার নামে লিখে নিলাম তৃষ্ণানদী।অনুমতি নয়,এ আমার আবদার।
আবদারেরা বাঁধা দিলোনা।বৃষ্টির ফোঁটারা চেয়ে চেয়ে দেখলো, দুই তৃষ্ণার্ত যুগলবন্ধীর তৃষ্ণা নিবারণ।
0 Comments