Ad Code

সেই তুমি (সিজন ওয়ান) পর্ব - ৫

 লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা

ফটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পরে তুর্য।
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তুর্য এখনও ফিরে আসে নি। কেনো জানি না আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে তুর্য কেনো ফিরে এলো না? আমি তাড়িয়ে দিয়েছি বলে কি ফিরে আসা যেতো না? কিন্তু আমি এসব কেনো ভাবছি? আমি তো তাকে ঘৃণা করি। আর কিছু ভাবতে পারছি না, মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে। ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। বেরিয়ে এসে দেখি এখনও তুর্য ফিরে নি, এখন আমার রাগ হচ্ছে। এতো কি অভিমান তার, একটু কিছু বলেছি তো কি হয়েছে? এতোটুকু তো আমি বলতেই পারি, সে আমার সাথে যা করেছে তার সামনে এই কথাগুলো কিছুই না। কিন্তু তুর্য তো আমাকে কিছুই বলে নি। আমার কেনো এতো অস্থিরতা হচ্ছে? আপন মনেই কথা গুলো ভাবছিলাম আর চুল আচরাচ্ছিলাম। তখন দরজায় নক পরলো। জানি না কেনো আমার ঠোঁট দুটো একাই একটু হেসে উঠলো, নিজের অজান্তেই আমার মন বলে উঠলো তুর্য এসেছে। একছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই আমার মুখটা আবারো মলিন হয়ে গেলো।
দরজার সামনে তাসফি দাড়িয়ে আছে। নাশতার জন্য ডাকতে এসেছে আমাকে। কেনো জানি না তুর্যর কথা জানতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সংকোচ বোধ হচ্ছে অনেক। অবশেষে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে তাসফিকে বলেই ফেললাম।
-- তোমার ভাইয়া কোথায় তাসফি?
-- ভাইয়া তো তার রুমে।
-- তার রুম মানে? এটা তাহলে কার রুম?
-- না মানে আসলে এটাও এখন ভাইয়ার রুম, আগে ভাইয়া অন্য রুমে থাকতো আর কি।
-- ওহ! তোমার ভাইয়া বের হবে না?
-- কি জানি ভাবি, বলতে পারলাম না। তুমি নিচে আসো আম্মু ডাকছে।
-- হুম চলো।
তুর্য তার আগের ঘরে কার সাথে কথা বলছিল রাতে? কেনো যেনো মনে হচ্ছে এ বাড়ির সবাই আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছে। তুর্যর বড় কোনো রহস্য আছে। কিন্তু কি?
রান্নাঘরে দাড়িয়ে আছে তুর্য, হাতে ছোট একটা প্যাকেট। যার ভিতর পাউডার জাতীয় কোনো একটা দ্রব্য আছে। সবার জন্য পায়েস বাটিতে তুলে রাখা ছিল, সেখানের একটা বাটিতে প্যাকেটে রাখা পাউডার টা মিশিয়ে দিলো তুর্য। চোখমুখ চিকচিক করছে তুর্যর, মুখে লেগে আছে ভিলেন হাসি। তুর্যর ইশারায় বাড়ির সার্ভেন্ট ঔষধ মিশানো পায়েসের বাটিটা হীরকে দিয়ে দিলো। তুর্য ডাইনিং এর পাশে দাড়িয়ে সবটা দেখছে।
খাওয়া শেষে একজন সার্ভেন্ট পায়েস দিয়ে চলে গেলো। পায়েসটা খাওয়ার একদম ইচ্ছে আমার ছিল না। কিন্তু আম্মু বারবার বলায় খেয়ে নিলাম। নাশতা করার সময়ও তুর্যর দেখা পাই নি। রুমে এসে রুমের প্রতিটা জিনিস খুটে খুটে দেখছি, উদ্দেশ্য সময় পাস করা। কিন্তু সময় যতো যাচ্ছে আমার অস্থিরতা আরো বারছে। তুর্যকে দেখতে ইচ্ছা করছে ভীষণ। হঠাত আমার গা গুলিয়ে উঠে বমি হলো। একবার না বেশ কয়েকবার হলো। এখন অবস্থা এমন যে আমি আর নরতেও পারছি না, বিছানায় পরে আছি,, অনেকটা নিস্তেজ হয়ে পরেছি। তখনই তুর্য ঘরে এলেন। তাকে দেখে এবার আমার ভীষণ রাগ হলো, সকাল থেকে তাকে খুঁজছি আর সে কি না একবারও আমার সামনে আসে নি। তুর্য আমার এই অবস্থা দেখে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে কোথায় যেনো যেতে লাগলো। শরীরে শক্তি নেই তার সাথে ঝগরা করার তাই কিছু বললাম না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছি, ডাক্তার দেখছেন, তুর্য আমার পাশেই দাড়িয়ে আছেন। ডাক্তার নার্সকে বলছেন ব্লাড নেওয়ার জন্য।
-- কিন্তু আমার তো ফুড পয়েজনিং হয়েছে মাত্র তাহলে ব্লাড নিতে হবে কেনো?
-- ডাক্তার সাহেব কিছুটা হলেও তোমার থেকে ভালো বুঝেন তাই নিবে।
-- কিন্তু ব্লাড নিতে হলে তো ইনজেকশন দিতে হবে।
-- কেনো? ভয় পাও বুঝি?
তুর্যর কথাটা আমার ইগোতে লেগেছে।
-- আমি কি বাচ্চা নাকি যে ভয় পাবো? ডাক্তার আপনার যতোবার ইচ্ছা ব্লাড নেন। আমি ভয় পাই না।
টেষ্ট করতে দিয়ে কিছু মেডিসিন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। সারাটা বিকেল ঘুমিয়ে থেকে সন্ধ্যায় চোখ মেলতেই দেখি তুর্য আমার মাথার কাছে বসে আছে। নেশা ধরানো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সে। তার চোখ দুটো আমাকে কিছু বলতে চাইছে মনে হচ্ছে কিন্তু এই ভাষাটা আমি পড়তে পারছি না। তবুও তাকিয়ে আছি তার দিকে। জানি না কতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম এভাবে, হঠাত তুর্য উঠে সেখান থেকে চলে গেলেন। কোথায় গেলো দেখার জন্য আমিও তার পিছনে গেলাম। কাল রাতের সেই ঘর টাতে গিয়ে নিজেকে বন্দী করে নিলেন সে। আমি বেশকিছুক্ষণ সেই ঘরটার বাইরে দাড়িয়ে রইলাম। কালকের মতো কথার শব্দ আসছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না। আমার জানার অনেক আগ্রহ হচ্ছে ঐ ঘরে কে আছে যার সাথে তুর্য ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলে।
আবারো সেই একই ফটো ফ্রেমটা বুকে জরিয়ে ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে আছে তুর্য। তবে আজ আর চোখে পানি নেই। আজ দুচোখ খুশিতে চকচক করছে, মনে হচ্ছে কোনো ছোট বাচ্চা তার হারিয়ে যাওয়া খেলনার সন্ধান পেয়েছে।
"আমি পেরেছি হীর, দেখো আমি পেরেছি। আমি আমার লক্ষ্য পূরণের পথে অনেক দূর এগিয়ে এসেছি হীর। আর বেশি অপেক্ষা অবশেষ নেই, আর কিছুটা ধৈর্য ধরতে হবে তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। সব অপরাধী তার অপরাধের শাস্তি পাবে। সব হিসাব কড়ায়-গন্ডায় উসুল করা হবে। আমি শুধু সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি হীর, যেদিন তুমি আমাকে নিজের করে নিবে। সেদিন আমার ভালোবাসার চরম প্রাপ্তি হবে কলিজা।
যারা তোমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে, আমাকে তোমার জীবন থেকে সরিয়েছে তাদের তো কৈফিয়ত দিতেই হবে। এতো সহজে তাদের কিভাবে ছেড়ে দেবো? এতোদিন শুধু অপেক্ষা ছিল তোমাকে নিজের কাছে আনার। যেটা হয়ে গেছে। এখন শুরু হবে আসল খেলা। তুর্য আহমেদ চৌধুরী এতো সহজে সব ভুলে যাবে সেটা তো হবে না।"
কথাগুলো বলেই তুর্য একটা ভিলেন হাসি দিলো।
তুর্য এখনও ফিরে আসে নি। জানি না কার সাথে কথা বলে লুকিয়ে। এতোই যখন ভালোবাসা ছিল তাহলে আমার সাথে ওসব করলো কেনো? আর বিয়েই বা কেনো করলো? ভীষণ কান্না পাচ্ছে। তুর্যর এই অবহেলা আমি মেনে নিতে পারছি না। তুর্য কাছে এলেও আমার সহ্য হয় না আবার দূরে গেলেও কষ্ট হয়। আমি নিজেই নিজেকে বুঝতে পারছি না।
ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই চলছে, এতোক্ষণ তুর্যর কথা ভাবছিলাম তাই ধরি নি কিন্তু এখন সহ্য সীমার বাইরে চলে গেছে। স্ক্রিনে নাম না দেখেই রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে রায়ানের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।
-- হীর কোথায় তুই? দুদিন যাবত ফোন করছি কোনো খোঁজ নেই তোর? তুই ঠিক আছিস তো? রাহি বললো ঠিক আছিস কিন্তু আমার বিশ্বাস হয় নি। এতোবার ফোন করার পরেও রিসিভ করিস নি কেনো?
রায়ান ভাইকে ঠিক কি বলবো বুঝতে পারছি না। মাথা পুরোই হ্যাং হয়ে গেছে। আমার উপস্থিত বুদ্ধি আগে থেকেই কিছুটা কম, এখনও তাই হয়েছে। মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছি। রায়ান ভাইয়ের প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই আমার কাছে। কি বলবো তাকে যে তুমি ঢাকার বাইরে গেছো আর আমি বিয়ে করে নিয়েছি। কেনো করেছি সেটা তাকে বোঝাতে পারবো না। তার পরিবারের জন্যই করেছি এটা, কারণ ঐমানুষগুলো আমার আপনজন। তাদের জন্য সব করা যেতে পারে। কিন্তু রায়ান কি সেটা বুঝতে পারবে?
রায়ানকে কিছু বলার আগেই কেউ আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিলো। পিছন ফিরে দেখি তুর্য অগ্নিমূর্তি হয়ে দাড়িয়ে আছে। তুর্যকে দেখে রীতিমতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে আমার।
-- আআসসললে ররায়ান ভাই ফোন দিয়েছিল দদুদিন ধরে আমার খুঁজ নেই বলে। (তুতলিয়ে কথাগুলো বললাম)
তুর্য আমার কোনো কথা কানে না নিয়ে আমার দিকে আগাচ্ছে, আর আমি পিছাচ্ছি। পিছাতে পিছাতে আলমারি ঠেকে গেছে পিঠে। এবার আর রক্ষা নেই আমার, এবার আমাকে মরতেই হবে। তুর্য যেভাবে আগাচ্ছে আমার দিকে আমি নিশ্চিত গলা চেপে মেরে দেবে।
আমার আর তুর্যর মধ্যে হয়তো এক সেন্টিমিটার দূরত্বও নেই। তুর্যর নিশ্বাস আমার মুখে আছড়ে পরছে। তুর্যর হাত দুটো আমার দিকেই আসছে এখনই হয়তো গলায় পরবে। আমি চোখমুখ খিচে ধরে আছি। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তুর্য আমার গলা চেপে না ধরে ঠোঁট দুটো চেপে ধরলো তার ঠোঁট দিয়ে। আমি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। তুর্য আমার কোমড় জরিয়ে ধরে রেখেছেন, আমি যেনো ফ্রিজ হয়ে গেছি। কিছুক্ষণ পর তুর্য আমাকে ছেড়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলেন। আমি এখনও আগের পজিশনেই দাড়িয়ে আছি। শুধু ভাবছি কিভাবে কি হলো। রাতে তুর্য আর ঘরে ফিরে নি। হয়তো সেই রুমটাতেই ছিল। পরদিন সারা দিন তুর্যকে একবারের জন্যও দেখা গেল না। না জানি কোথায় গিয়েছে। বিকেলে তুর্য বাড়ি ফিরে আসার সময় তার হাতে একটা প্যাকেট ছিল আর মুখটাও কেমন চিন্তিত, বিষন্ন ছিল। তুর্য বাড়ি ফিরে আমাদের রুমে না এসে সেই ঘরটায় ঢুকে গেলো। এখন আমি নিশ্চিত হয়তো এই লোকটার মানসিক সমস্যা আছে আর নাহয় ওই ঘরে কেউ থাকে যার সাথে সে কথা বলে লুকিয়ে লুকিয়ে। না এভাবে হাতে হাত ধরে বসে থাকলে চলবে না। আমাকে জানতেই হবে ঐ ঘরে কে থাকে যার সাথে তুর্য সারা টা রাত কাটায়।
সন্ধ্যায় তুর্য আমার ঘরে এসে একটা প্যাকেট আমার হাতে দিলেন।
-- এটা পরে রেডি হয়ে নাও আমরা ডিনার করতে বাইরে যাচ্ছি।
তুর্যকে মানা করতে গিয়েও কেনো যেনো মানা করতে পারলাম না। প্যাকেটটা খুলে দেখি একটা ব্ল্যাক থ্রিপিছ, সাথে ম্যাচিং কানের দুল। জামাটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। বেরিয়ে দেখি তুর্য চুল আচড়াচ্ছে। তুর্য কালো শার্ট পরেছে। ফর্সা শরীরে কালো শার্টটা বেশ মানিয়েছে। আমাকে বের হতে দেখে তুর্য নিচে চলে গেলেন। চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা রঙের একটা লিপষ্টিক পরে নিলাম, চুল গুলো ছেড়ে দিয়েছি। থ্রিপিছ টা অনেক সুন্দর, আমাকে ভালোই মানিয়েছে। তুর্যর পছন্দ এতোটাও খারাপ না। হ্যান্ড ব্যাগটা নিয়ে নিচে নেমে গেলাম। তুর্য নিচেই দাড়িয়ে ছিল, আমার দিকে বেশকিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। এভাবে তাকিয়ে থাকায় আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। হালকা করে একটু গলা ঝারা দেওয়াতে তুর্য যেনো হুশ ফিরে পেলো। রেষ্টুরেন্টে আমাদের সাথে তুর্যর বডিগার্ড জনও গেলো। রেষ্টুরেন্টের ভিতর ঢুকতেই উপস্থিত সবাই তুর্যর উপর হুড়মুড়িয়ে পরলো। রকস্টার তুর্যকে এভাবে দেখতে পাবে হয়তো আশা করে নি। দরজার সামনে দাড়িয়ে আছি ৩/৪ মিনিট হয়ে যায় তবুও ঢুকতে পারছি না। মেয়ে ফ্যানগুলো মনে হচ্ছে তুর্যকে খেয়ে ফেলবে। সেলফি নিচ্ছে তো নিচ্ছেই। অবশেষে তাদের সেলফি প্রোগ্রাম শেষ হলে তুর্য আমার হাত ধরে একটা টেবিলে নিয়ে বসিয়ে দিলো। এই টেবিলটা হয়তো স্পেশিয়াল ভাবে সাজানো হয়েছে। সবাই আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো আমি একটা এলিয়েন। রকস্টার তুর্যর সাথে আমাকে দেখে সবার চোখ বড়বড় হয়ে আছে। তুর্য টেবিলে বসতেই কিছু মেয়ে ফ্যান এসে তুর্যকে একটা গান শুনানোর জন্য রিকুয়েষ্ট করতে লাগলো। তুর্য তাদের হ্যাঁ সম্মতি দিলে ম্যানেজার গিটারের ব্যবস্থা করে দিলেন। এই মেয়েগুলোর আদিক্ষ্যেতা দেখে আমার গা জ্বলে যাচ্ছে। একটা মানুষ বউর সাথে ডিনার করতে এসেছে তাতেও শান্তি নেই। তুর্য গিটার হাতে নিয়ে সেন্টারে গিয়ে বললো,
-- এখন আমি যেই গান টা গাইবো সেটা আমি ডেডিকেট করতে চাই আমার লাভলি ওয়াইফকে।
তুর্যর কথা শুনে ওর ফ্যান রা মনে হচ্ছে আকাশ থেকে পরলো। সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, "বউ মানে? তুর্য আপনি বিয়ে করেছেন?"
-- Yeah. Meet my lovely wife Heer.
(আমার দিকে ইশারা করে)
সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
-- হীর শুধু আমার বউ নয়, আমার বেষ্টফ্রেন্ড, আমার ছোটবেলার সরি ছোটবেলার না টিন এজের ভালোবাসা। আমার জীবন, আমার কলিজা, আমার হীর।
এই লোকটা পারেও বটে। কতো সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা বলছে। বিয়ে করলো জোর করে আবার আমি নাকি তার ছোটবেলার সরি টিন এজের ভা
লোবাসা। একটা মেয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে তুর্যর বিয়ের কথা শুনে। আমার কেনো জানি না খুব হিংসা হচ্ছে মেয়েগুলোর প্রতি। কেমন চিপকে দাড়িয়ে আছে তুর্যর সাথে। তুর্য গিটারে সুর তুললো, আমিও তাকিয়ে আছি তুর্যর দিকে।
🎼🎼
সেই তুমি, কেন এত অচেনা হলে?
সেই আমি, কেন তোমাকে দুঃখ দিলেম?
কেমন করে এত অচেনা হলে তুমি?
কিভাবে এত বদলে গেছি এই আমি?
ও বুকেরই সব কষ্ট দু'হাতে সরিয়ে
চলো বদলে যাই
তুমি কেন বোঝনা?
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়
কত রাত আমি কেঁদেছি
বুকের গভীরে কষ্ট নিয়ে
শূণ্যতায় ডুবে গেছি আমি
আমাকে তুমি ফিরিয়ে নাও
তুমি কেন বোঝনা?
তোমাকে ছাড়া আমি অসহায়
আমার সবটুকু ভালোবাসা তোমায় ঘিরে
আমার অপরাধ ছিল যতটুকু তোমার কাছে
তুমি ক্ষমা করে দিও আমায়…
🎼🎼
করোতালির শব্দে আমার ধ্যান ভাঙলো, গালে হাত দিয়ে বুঝতে পারলাম গাল ভিজে গেছে চোখের পানিতে। তার মানে কি আমি কাঁদছিলাম? কিন্তু আমি কেনো কাঁদবো? তুর্যর দিকে ভালোমতো তাকিয়ে দেখলাম তুর্যর চোখও ভেজা। তবে কি তুর্যও কাঁদছিল? এসব কি হচ্ছে?
তুর্য সবাইকে বিদায় জানিয়ে টেবিলে এসে বসে পরলো। মুখে হাসি লেগে থাকলেও তুর্যর চোখ দুটো টলমল করছে। আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তুর্য কাঁন্না চেপে রেখেছে। কিন্তু কেনো?
ডিনার শেষে বাড়ি ফিরে তুর্য আমার রুমেই এসেছে। বারবার জানতে ইচ্ছা করছে তুর্য তখন কেনো কাঁদছিল কিন্তু সাহস কুলাতে পারছি না। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসতেই তুর্য বললো,
-- হীর!
-- হুম?
-- তুমি কি রেগুলার কোনো মেডিসিন নাও?
হঠাত তুর্যর এই প্রশ্নে আমি কপাল কুচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি। প্রশ্নটার কোনো যুক্তি খুঁজে পেলাম না।
-- কেনো বলুনতো?
-- না আসলে ডাক্তার তোমার মেডিকেল হিষ্ট্রি জানতে চায়। তোমার এমন হঠাত এতো বমি হওয়া ডাক্তারের কাছে একটু উদ্ভট মনে হয়েছে তাই সে জানতে চায় আর কি।
-- ওহ! হ্যাঁ প্রতিদিন রাতে আমি একটা ঔষধ খাই।
-- কোন রোগের ঔষধ?
-- এটা তো,,,, আসলে আমার না মনে নেই কোন রোগের কিন্তু ঔষধটা খেলে খুব ভালো ঘুম হয়।
-- তাই বুঝি?
-- হুম।
-- কালকে সকালে একটু দিও তো ঔষধটা ডাক্তার দেখবে।
-- আচ্ছা। দিয়ে দেবো। তার আগে একটা প্রশ্নের উত্তর চাই।
-- হুম বলো।
-- পূর্ব দিকে ঘরটা কার যেটাতে আপনি প্রতিদিন থাকেন?
আমার প্রশ্নে যেনো তুর্য অনেকটা বিচলিত হলেন। কেমন যেনো অস্থির অস্থির লাগছে তুর্যকে। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে বললেন,
-- ওটা আমারই ঘর। তোমার সামনে থাকলে তোমার প্রব্লেম হয় তাই ওই ঘরে থাকি।
তুর্যর প্রশ্নের উত্তরে আমি সন্তুষ্ট না, আমি নিজে তাকে কথা বলতে শুনেছি। আমি নিশ্চিত তুর্য কিছু একটা লুকাচ্ছে আমার কাছে।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu