Ad Code

কাঠগোলাপ পর্ব ২

প্রিয়ন্তের মুখে তখনো মুচকি হাসি। প্রিয়ন্ত আমার হতভম্ব দৃষ্টি উপেক্ষা করে ঘরের বাতি জ্বালালো। তারপর এক ব্যাগ ভর্তি কাঠগোলাপ এনে আমার পায়ের কাছে রাখলো। আমি যেন বিস্ময়ে কথাই বলতে পারছিলাম না। তবুও কোনোক্রমে বললাম, "এত্তগুলো কাঠগোলাপ!"

প্রিয়ন্ত আমার হাত দুটো ধরে বলল, "চলো প্রেয়সী আমরা একটা কাঠগোলাপের রাজ্য বানাই। যেখানে শুধু আমি আর আমার অভিমানীনি। আমি জানি তুমি আমার উপর অভিমান করেছ। তোমার যে বড্ড অভিমান! আর তাই তো তুমি আমার অভিমানীনি! কিন্তু আমার মতো সাধারণ পুরুষরা মাঝে মাঝে চরম ভালোবেসেও তাদের অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারে না। তারা সবসময় আপনজনের পাশে থাকতে পারে না। মাঝে মাঝে তারাও ভুল বুঝে। ভালোবাসার মানুষটিকে কখনো সখনো কষ্টও দিয়ে ফেলে। মাঝে মাঝে পরিস্থিতি তাদের অসহায় করে তোলে। কিন্তু তবুও কিন্তু দিন শেষে তারা ভালোবাসে। বাইরের মুখসধারী কাপুরুষের মতো রূপ ধারণ করে না। আমাদের মতো সাধারণ পুরুষেরা রাগ করলেও বেলা শেষে নিজের প্রিয় মানুষটিকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে জানে। আমি কোনো অভিনেতা নই যে সাজিয়ে গুছিয়ে নিজের মনের কথা তোমার নিকট প্রকাশ করবো। আমি খুব এলোমেলোভাবেই বলবো। আমি ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপের রাজ্যের রাণীকে, ভালোবাসি আমার অভিমানীনিকে। নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি," বলেই আমার কপালে ভালোবাসার প্রগাঢ় স্পর্শ এঁকে দিলো প্রিয়ন্ত।

আমি শিউরে উঠলাম। খেয়াল করলাম প্রিয়ন্তের সঙ্গে এতোগুলা দিন সংসার করার পরও এই কম্পন অনুভব করিনি। এ যেন এক অন্যরকম ভালো লাগা। আমার চোখের কোণ বেয়ে একের পর এক জল গড়াতে লাগলো। এইতো আমি কাঁদছি। বহুদিন পর কাঁদছি। আমার পুরো দুনিয়াকে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে আমার কান্নারা আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে!

প্রিয়ন্ত বলল, "আজ আমি তোমাকে খুব করে কাঁদাবো প্রেয়সী। আজ ভালোবাসার উষ্ণ-শীতল জলে তোমাকে স্নিগ্ধ স্নান করাবো।"

প্রিয়ন্ত আমার হাতে একটি শপিং ব্যাগ দিলো। ব্যাগটা খুলতেই চমকে উঠলাম আমি। ব্যাগের ভিতর একটা নীল রঙের কাঁতান শাড়ি। এটা সেই শাড়িটা যেই শাড়িটা আমি একবার প্রিয়ন্তর সঙ্গে শপিং করতে গিয়ে পছন্দ করেছিলাম। কিন্তু সেদিন বাড়ির আর সবার জন্য কেনাকাটা করার পর উনার হাতে বেশি টাকা অবশিষ্ট ছিল না। খরচের কথা চিন্তা করে আমিও আর প্রিয়ন্তকে শাড়ি কেনার কথা কিছু বলিনি। শুধু দোকানদারকে শাড়ির দাম জিজ্ঞেস করে চলে এসেছিলাম। প্রিয়ন্ত বলল, "যে দোকানে শাড়িটা দেখেছিলে সেই দোকানে এই শাড়ি আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিলো। পরে পুরো শপিং মল খুঁজে বহু কষ্টে হুবহু সেইম শাড়িটা পেয়েছি। এখন শাড়িটা খোলো। এর ভিতরে আরো একটা সারপ্রাইজ আছে," বলেই রহস্য মাখা হাসি দিলো সে। উনার একেকটা হাসি, একেকটা স্টাইল, কথা বলার ধরণ একের রকমের। উনার এই প্রত্যেকটা ধরণেই আমি মুগ্ধ হই। বারংবার এই মানুষটির প্রেমে পড়ি। 

আমি বললাম, "আজ তো কোনো বিশেষ দিন নয়। তাহলে হঠাৎ এতো সারপ্রাইজ!"

প্রিয়ন্তর হাসি মুখটা ম্লান হয়ে গেলো। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "প্রিয় মানুষের জন্য কোনো বিশেষ দিন তারিখের প্রয়োজন নেই। তাদের জন্য প্রতিটা দিনই স্পেশাল!"

আমি শাড়ির ভাজ খুলতেই দেখলাম বান্দরবান যাওয়ার দুটো টিকেট। আমি অবাক নয়নে উনার দিকে তাকালাম। সে তার ঠোঁটে সেই হাসিটা ধরে রেখে বলল," আমরা আজ রাতের বাসে করে নীলগিরি যাচ্ছি। সব ঠিক থাকলে কাল সকালেই ডাইরেক্ট বান্দরবান পৌঁছাবো ইন-শা-আল্লাহ।"

আমি হতবিহ্বল গলায় বললাম, "হঠাৎ বান্দরবান! না মানে তুমি তো আগে থেকে এই ব্যাপারে কিছু বলোনি, তাই বলছিলাম আরকি।"

প্রিয়ন্ত বলল, " কাল কি জানো? পূর্ণিমা!"

আমাকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে প্রিয়ন্ত আবারো বলল, "তোমার মনে আছে আমাদের বিয়ের পর পর তুমি একবার বলেছিলে যে তোমার ইচ্ছে নীলগিরি গিয়ে নীলাভ-সাদা আকাশে আমার হাতে হাত রেখে পূর্ণিমা দেখবে। বিয়ের পর পর কতোটাই না আবেগী ছিলে তুমি! আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবতাম একটা মেয়ে কি করে এতোটা আবেগী হতে পারে। কিন্তু আজ বুঝি আমি সেই সৌভাগ্যবান পুরুষদের মধ্যে একজন যার স্ত্রী তার স্বামীর জন্য এতোটা আবেগ পুষে রাখে। কিন্তু তখন পূর্ণিমা ছিল না। তাই আমি ভেবেছিলাম এই পূর্ণিমায় তোমায় নিয়ে নীলগিরি যাবো। আমি প্ল্যান মাফিক আরো তিনদিন আগেই তোমার জন্য শাড়ি কিনে রেখেছিলাম। কিন্তু ঝামেলা বাঁধলো অফিস নিয়ে। কিছুতেই ছুটি ম্যানেজ হচ্ছিল না। এজন্য আমার গত দুদিন যাবৎ ভীষণ মেজাজ খারাপ ছিল। যখনই মনে হতো এবারো তোমাকে নিয়ে কোথাও যাওয়া হবে না তখন রাগটা আরো বহু গুণ বেড়ে যেতো। তাই আজ সকালে যখন অফিসে যাবার সময় কাঠগোলাপের কথা বলছিলে তখনও আমার মাথায় সেই দুশ্চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো। জানি আমার অভিমানীনি আমার কথায় অভিমান করেছে তাই তো তার মান ভাংগাতে এতো আয়োজন!"

আমি প্রিয়ন্তর কথার মাঝপথে উনাকে থামিয়ে দিয়ে উত্তেজিত কণ্ঠে বললাম, "শেষ অব্দি তবে ছুটি পেয়েছো?"

প্রিয়ন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল, "হুম। অবশেষে!"

আমি খুশিতে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। আমার এমন কাণ্ড দেখে হাসছে প্রিয়ন্ত। বিয়ের পর এ প্রথম উনার আর আমার দূরে কোথাও জার্নি করা। কিন্তু পর মুহূর্তেই আমার এই উত্তেজনায় ভাটা পড়লো। মুখের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। আমি উসখুস করে বললাম, "আমরা তো বান্দরবান যাবো। কিন্তু......"

প্রিয়ন্ত আমার অসমাপ্ত কথা বুঝতে পেরে বলল, "তুমি মায়ের কথা ভাবছো তাই তো? ভেবো না। মা তোমাকে কিচ্ছু বলবে না। তুমি কি ভেবেছ তুমি না বললে বাড়িতে কি চলে আমি সেটা জানতে পারবো না? দিন শেষে বউ আর মা দুজনই তো আমারই! তাদের হাড়ে হাড়ে আমার চেনা। তুমি না বললেও আমি জানি মা তোমাকে নানা রকমভাবে এটা ওটা নিয়ে বলে। কিন্তু ওই যে মাঝে মাঝে আমরা বুঝেও পরিস্থিতির কাছে হার মেনে নেই। সেজন্য আমিও চুপ ছিলাম।"

আমি বললাম, "তুমি কি কিছু বলেছ মামণিকে (শাশুড়ি)?"

" তুমি হয়তো খেয়াল করে থাকবে অফিস থেকে ফিরে আমি কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। এখান থেকে সোজা আমি আমার মায়ের ঘরে যাই। তারপর মাকে আমাদের আজকের নীলগিরি যাবার কথাটা বলি। এতে করে মা জিজ্ঞেস করলেন বেড়াতে যাবার কথাটা কে আগে বলেছে। আমি বললাম আমি বলেছি। মা হয়তো বিষয়টা তেমন পছন্দ করেননি কিংবা আমার কথায় আস্বস্ত হতে পারেননি। সেটা মায়ের কথার ধরনেই খানিকটা টের পেয়েছি। এরপর মা যখন তোমার সম্পর্কে এটা ওটা বলছিল তখন আমি বলেছি আমার এসব শোনার দরকার নেই। আমার স্ত্রী কেমন সেই বিষয়ে আমি আগে থেকেই অবগত। আর আমি আমার মাকেও খুব ভালো করে চিনি। অবশেষে আমি মায়ের সামনে দুটো অপশন রেখেছি। নম্বর এক, সে তুমি যেমন তোমাকে তেমন মেনে নিয়েই সংসার করবেন। কারণ তোমাকে তারাই পছন্দ করে এ বাড়িতে এনেছেন। আমি আনিনি। আর নম্বর দুই, আমি আর আমার স্ত্রী এ সংসার থেকে আলাদা হয়ে যাবো। সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি বাবা-মায়ের কোনো দায়িত্ব থেকে পিছপা হবো না। দূর থেকে সব দায়িত্ব পালন করবো। এখন যদি সে তার ছেলেকে চায় তাহলে সব মেনে নিতে হবে। অন্যথায় তার ছেলেকে হারাতে হবে। এখন সিদ্ধান্ত তাদের। কারণ যেখানে আমার স্ত্রীর দিনের পর দিন অসম্মান হবে। সেখানে আমি তা কিছুতেই মেনে নিতে পারবো না। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলেও স্ত্রীর সম্মান, মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার দায়িত্ব স্বামীরই। যা অনেক মানুষই জানে না।" বলল প্রিয়ন্ত।

আমার চোখের জল তখন বেসামাল ভাবে একের পর এক বিন্দু কণা হয়ে ঝরে পড়ছে। এই মানুষটি আমার স্বামী এটা ভাবতেই আমার পুরো দুনিয়ার সুখকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। আমি কতোটা ভাগ্যবতী, তা নাহলে ক'জন মেয়ে এমন মানুষকে সারাজীবনের সঙ্গী হিসেবে পায়! আমার কান্না বেড়েই চলেছে। রীতিমতো হিঁচকি উঠা শুরু হয়েছে। তবুও প্রিয়ন্ত আমার কান্না থামানোর কোনো চেষ্টা করলো না। সে মুগ্ধ চোখে আমার কান্না দেখতে ব্যস্ত। কাঁদতে কাঁদতে আমার ফর্সা গাল রীতিমতো লালচে বর্ণ ধারণ করেছে। প্রিয়ন্ত বলল, "বলেছিলাম না আজ আমি তোমাকে খুব করে কাঁদাবো। কারণ মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষের কান্নাও যে ভীষণ স্বস্তির হয়!!"

প্রিয়ন্ত হঠাৎ আমার কাছাকাছি এসে আমার চিবুক ধরে চোখের পাতার উপর আলতো ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।আর অদ্ভুতভাবে আমার কান্নাটাও তখন থেমে গেলো। এরপর উনি আর কথা না বাড়িয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। মানুষটার প্রত্যেকটা কাজেই প্রবল ব্যক্তিত্ববোধের ছাপ। উনার গম্ভীরতাই মানুষকে বরাবরই আকর্ষণ করতে বাধ্য করে! আর উনার সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো ওই নিখাদ সুন্দর হাসি। যা মন কেড়ে নেয় এক নিমিষেই! 

আমি নীল কাঁতান শাড়ির সাথে টুকটাক গহনা আর হালকা মেকআপ করলাম। হাতে ম্যাচিং চুড়ি আর চুলটাকে নিয়ে সুন্দর করে খোপা বাঁধলাম।

প্রিয়ন্ত বান্দরবান যাবার জন্য ব্যাগ প্যাক করতে ব্যস্ত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে উনি সামনে পড়ে থাকা সিল্কি চুলগুলোকে হাত দিয়ে বারবার ঠিক করে দিচ্ছে। যেন এ ছোট কাজটিও ভীষণ যত্নের সাথে করছে সে। আমি নিঃশব্দে উনার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তারপর বললাম, "আমাকে কেমন লাগছে প্রিয়?"

প্রিয়ন্ত নিজের হাতের টিশার্টটা ব্যাগের বামপাশে রাখলো। তারপর আমার দিকে ঘুরে একবার তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বলল, "চলো আগে আয়নার সামনে দাঁড়াই। তারপর বলছি।"

তার কথামতো আমিও আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রিয়ন্ত আমার ঠিক পিছনে দাঁড়ালো। তারপর এক টানে আমার খোপা খুলে ফেললো। আর সাথে সাথে আমার কোমড় সমান লম্বা চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে পড়লো।

আমি আৎকে উঠা গলায় বললাম, "এ কি করলে তুমি! চুল খুলে ফেললে? এতো কষ্ট করে খোপা বেঁধেছিলাম।"

প্রিয়ন্ত হাত দিয়ে আমার চুল ঠিক করে দিয়ে এক পাশের কিছু চুল সামনে এনে দিলো। তারপর ব্যাগ ভর্তি কাঠগোলাপ থেকে একটা কাঠগোলাপ নিয়ে আমার কানের পাশে গুঁজে দিলো। বলল, "এখন ঠিক আছে।"

আমি আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলাম। বাস্তবিকই এখন আমাকে আগের চেয়ে বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে। আসলেই কতো খেয়াল এই মানুষটার! একবার দেখেই খুঁত বের করে ফেললো। প্রিয়ন্ত সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আমি উনার হাত ধরে ফেললাম। অদ্ভুত ঘোর লাগা মোহাবিষ্ট কণ্ঠে বললাম, "তোমাকে হয়তো কখনো বলা হয়নি। ভালোবাসি প্রিয়! ভালোবাসার পরিমাপের অংকটা জানা থাকলে এখনি হয়তো এর একটা বিশাল অংক কষে ফেলতাম!"

প্রিয়ন্ত স্বাভাবিকই ছিল। যেকোনো পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক থাকা তার চরিত্রের অন্যতম একটা বৈশিষ্ট্য। হঠাৎ আবেগপ্রবণ হওয়া তার স্বভাব বিরুদ্ধ। উনি আমার হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বলল, "প্রকাশ্যের চেয়ে অপ্রকাশ্যেই অধিক ভালোবাসি প্রিয়তমা!"

রাতের আকাশে মস্ত এক গোল চাঁদ। বাসের জানালা ভেদ করে একই সাথে শীতল হাওয়া আর চাঁদনি রাতের আলো প্রবেশ করছে। বাতাসে আমার খোলা চুলগুলো বারবার উড়ে চলেছে বেসামালভাবে। বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে আরো ঘণ্টাখানিক আগেই। আমার চুলগুলো বারবার উড়ে প্রিয়ন্তর মুখে এসে লাগছে। আর প্রিয়ন্ত নীরবে আমার মাতম চুলের ঘ্রাণে ডুব দিয়েছে। এর বেশ কিছুক্ষণ পর বাসের বাতি নিভিয়ে দিতেই সে আমাকে এক হাত দিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিলো। আমি উনার কাঁধে মাথা রেখে বললাম, "আচ্ছা প্রিয় যদি আমাদের কাঠগোলাপের রাজ্যে আরো একজন প্রবেশ করে তাহলে কেমন হয়?"

মুহূর্তেই প্রিয়ন্তর হাসিমাখা মুখে বিষাদ নামলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল, "না। আমাদের কাঠগোলাপের রাজ্যে আমি আর আমার অভিমানীনি ছাড়া তৃতীয় কোনো ব্যক্তির স্থান নেই।"

আমি মুচকি হেসে বললাম, "সে যদি সেই রাজ্যের রাজকন্যা অথবা রাজপুত্র হয়! তবুও কি তার প্রবেশ নিষিদ্ধ?"

প্রিয়ন্ত আমার কথায় চমকে আমার দিকে তাকালো। আমি মুখের হাসিটাকে আরেকটু বিস্তৃতি করে বললাম, "তুমি কি ভেবেছ সারপ্রাইজ শুধু তুমি একাই দিতে পারো। আমি পারি না! আজ রাতেই তোমাকে সব বলতে চেয়েছিলাম। তাই তো সকালে তোমাকে কাঠগোলাপ আনতে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম কাঠগোলাপে মুড়ে তোমায় খুশির সংবাদ দিবো। কিন্তু..."

প্রিয়ন্ত আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, "কিন্তু তার আগেই আমার অভিমানীনির আমার উপর অভিমান জমেছে। তাই তো?"

আমি নিঃশব্দে মাথা নাড়লাম।

প্রিয়ন্ত হঠাৎ আমার পেটের উপর হাত রেখে বলল, "এটা সত্যি!"

আমি খেয়াল করলাম প্রিয়ন্তর গলা কাঁপছিলো। আমি ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বললাম, "হুম।"

প্রিয়ন্ত আমার পেটের সাথে নিজের কান ঠেকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করলো। গাড়ির শব্দে কি বুঝলো কে জানে। তবে উনার সারা শরীর কাঁপছিলো।

প্রিয়ন্ত অভিযোগের সুরে বলল, "তোমার এতো অভিমান প্রেয়সী! যে এতো বড় একটা কথা তুমি আমাকে আড়াল করে গেলে!"

বড্ড করুণ শোনালো প্রিয়ন্তর কণ্ঠস্বর। চাঁদের আলোয় একবার উনার ম্লান মুখটা দেখে চমকে উঠলাম আমি। প্রিয়ন্ত কাঁদছিলো! আমি এ যাবৎ কাল কোনোদিন প্রিয়ন্তর চোখে জল দেখিনি। উনার এতোটা আবেগমিশ্রিত কণ্ঠস্বর শুনে আমি রীতিমতো হতভম্ব। সত্যি বাবা হওয়ার অনুভূতিটা বুঝি এমনই!

প্রিয়ন্ত আমার কপালে গভীরভাবে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল, "আমার কাঠগোলাপের রাজ্যে নতুন অতিথিকে স্বাগতম। আমি ভালোবাসি আমার কাঠগোলাপ রাজ্যকে। আমি ভালোবাসি আমার রাজ্যের রাণীকে। আমি ভালোবাসি আমার সুপ্রিয় অথবা সুপ্রিয়াকে।"

আমি সাথে সাথে নাম দুটি মুখে আওড়ালাম, "সুপ্রিয় আর সুপ্রিয়া! বাহ্ দারুণ নাম তো!"

প্রিয়ন্ত বলল, "আমি ভালোবাসি আমার সুপ্রিয় আর সুপ্রিয়ার আম্মুকে!"

আমি হেসে বললাম, "ওদের আম্মুও অনেক ভালোবাসে তাদের আব্বুকে।"

প্রিয়ন্ত আমাকে সারাটা পথ বুকে আগলে রাখলো। বাসের একটু ঝাঁকুনিতেও সে আমাকে শক্ত করে ধরে রইলো। যেন আমার এতটুকুও কোনো সমস্যা না হয়। আমি প্রতিটা ঝাঁকুনিতে প্রিয়ন্তর বুকের কম্পন অনুভব করছিলাম। এ কম্পন অন্যরকম কম্পন। যা এর আগে কখনো শুনিনি। আমি প্রিয়ন্তর বুকে নির্ভার হয়ে মাথা রেখে চোখ বুজলাম। মুহূর্তেই সেই কাঠগোলাপ রাজ্যে প্রবেশ করলাম। চারদিকে কেবল সাদা আর হলুদ মিশেল কাঠগোলাপ। সেখানে শুধু আমি, প্রিয়ন্ত আর আমাদের ছোট্ট অতিথি!

____________________সমাপ্তি।_____________________

 [সত্যি বলতে এ গল্পটাতে আপনাদের এতোটা রেসপন্স পাবো ভাবিনি। আপনাদের মন্তব্য সর্বদাই আমাকে সামনে পথ চলতে অনুপ্রেরণা যোগায়। শুধু একটাই অনুরোধ সবসময় এভাবেই পাশে থাকবেন আর দোয়া রাখবেন। যেন সামনে আরো ভালো কিছু উপহার হিসেবে দিতে পারি। ভালোবাসা নিরন্তর।❤

বি.দ্রঃ ১. গল্পটা আমি কারোর মনে আঘাত দেবার জন্য বা কোনো বিশেষ চরিত্রকে ছোট করার উদেশ্যে লিখিনি। সেই অর্থে ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

২. গল্পটা পড়তে গিয়ে হয়তো অনেক নারীই তাদের জীবনের সাথে কিছু জায়গায় মিল খুঁজে পাবেন। ঐ সকল নারীদেরকে আমি কাঠগোলাপ গল্পটা উৎসর্গ করলাম যারা দিনের পর দিন আমাদেরকে ভালো রাখার জন্য নিজদের সর্বস্ব বিসর্জন দিয়েছেন।]

Download PDF

Post a Comment

0 Comments

Close Menu