Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ৯

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

একটি বিষাক্ত সকাল। রাত থেকে ওই যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে এখনো থামার নাম নেই। বৃষ্টি তে চারিপাশ যেন আরো স্নিগ্ধ হয়ে উঠেছে..। মোহ জানালার পাশে দারিয়ে তা দেখছে। বর্ষা আসলে বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে একটা সুন্দর গন্ধ আসে। যা মোহ'র ভীষণ পছন্দ। পড়ার টেবিলটার কোনায় একটু পোড়ামাটি আছে। মোহ সেগুলোর গন্ধও নেই। এমন সুন্দর একটা মুহূর্তে মোহ'র ফোনে একটা কল আসে। প্রভা কল দিয়েছে। মোহ কল রিসিভ করে।

TikTok

“বল প্রভা, এখন কী অবস্থা তোর?”
ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসে না। মোহ আবারো বলে,
“কী হলো কিছু বলছিস না কেন?”
ফোনের ওপার থেকে গমগমে আওয়াজে ভেসে আসে এক পুরুষালি কণ্ঠ।
“আমি প্রহর বলছি। প্রভার বড় ভাই।”
মোহ নিস্তব্ধ বনে যায়। কঠিন স্বরে উত্তর দেয়, “কেন কল দিয়েছেন আমাকে?”
প্রহর এবার কণ্ঠ শীতল করে।
“আমাকে কী আরেকটা সুযোগ দেওয়া যায় না মোহ?”
মোহ হাসে। যে হাসিতে খুশি কিংবা উচ্ছাস কোনোটাই ছিলো না। ছিলো শুধু ঘৃণা।
“আমি কোনোকিছুই পজিটিভ ভাবে নিতে পারি না। পজিটিভ বললেও আমি নেগেটিভ ভাববো আর নেগেটিভ বললেও আমি নেগেটিভই ভাববো। এখন আপনার কথার প্রেক্ষিতে আমার কী ভাবা উচিত?”
প্রহর ক্রুর হাসে।
“বদলে গেছো অনেক।”
“মোহ কারো জন্য একইরকম থাকে না। অন্যকে বিভ্রমণ করার জন্য তো বদলাতে হবেই।”
“আমাকে কী ক্ষমা করা যায় না? আমি লজ্জিত। আমার বোনের সাথে যা হয়েছে তাতে আমার ভিতর অপরাধবোধ কাজ করছে।”
মোহ আকাশের পানে তাকায়। ক্ষীণ হাসি দিয়ে বলে ওঠে, “আপনার ভিতর অপরাধবোধ কাজ করছে দেখে খুশি হলাম। কিন্তু আমার দ্বারা আপনাকে ক্ষমা করা অসম্ভব।”
প্রহর বৃষ্টির পানিতে হাত ভেজায়।
“মোহ, তোমার মনে আছে আমাদের প্রথম দেখা কিন্তু এমন এক বৃষ্টিস্নাত সকালে হয়েছিল।”
“অতীত মনে করতে চাই না।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
প্রহর এবার মোহ'র অবহেলা না নিতে পেরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
“মোহ, আমি আর নিতে পারছি না। ফিরে এসো না আমার জীবনে।”
প্রহরের কথা শুনে শুধুই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোহ। কলটাও কেটে দেয়। মোহ আবারো আকাশের পানে তাকায়। আকাশটা বোধহয় আজ একটু বেশিই কাঁদছে।
_________
“উষ্ণের উষ্ণতার মালকীন হওয়ার ভীষন শখ আমার। আমায় তোমার হৃদয়ের মনোহারিণী বানাবে?
ইতি,
তোমার প্রিয় কেউ।”
চিঠিটা শেষ করে উষ্ণ একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। কে জানে কোন পাগল এই চিঠি তাকে পাঠিয়েছে। একটু আগে চিঠি বাহক এসে তাকে এটা দিয়ে গেলো। উষ্ণ কাগজ টা রেখে বাইরে আসে। আকাশটা আজ ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। যেন কোনো খারাপ সংকেত দিতে এসেছে এরুপ বর্ষন। সাধারণত উষ্ণ এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না। তবুও এরুপ বর্ষনে তার ভীষণ ভয়। মনে হয় যে কাছের কেউ চলে যাবে। পরে আবার স্বরণে আসে তার তো কেউই নেই। কে যাবে তাকে ছেড়ে? উষ্ণ আবারো চিঠিটা হাতে নেয়। বাহিরের দিকে এক পলক তাকিয়ে ফেলে দেয় সেটা।
“ভালোবাসা আমার জন্য না। আমাকে ভালোবাসতে হয় না। আমি পাপ, আমি কলঙ্ক।”
দরজা টা বন্ধ করে উষ্ণ তার ডাইরিটা নিয়ে বসে। আজ আবারো কোনো বৃষ্টির গল্প লিখবে সে। এইযে কত দম্পতি আছে যারা বৃষ্টি নামলেই ভিজতে থাকে। বৃষ্টি বিলাশ করে। তাদের দেখে উষ্ণের খুব আফসোস হয়। তার মনেও ইচ্ছা জাগে নিজের প্রেয়সীকে নিয়ে বৃষ্টি বিলাশ করার। পরে আবার নিজেকে বুঝিয়ে নেয়। এই দুর্মূল্যের বাজারে তার পেটই ঠিক ভাবে চলে না। কয়েকটা টিউশনি করে যা টাকা পায় তাই দিয়ে মাস চালায়। লেখা শেষ করে ডাইরিটা যেভাবে ছিল সেইভাবেই রেখে দেয় উষ্ণ।
“কোন পবিত্র আত্না চাইবে আমার মতো কলঙ্কিত আত্নাকে ভালবাসতে?”


Post a Comment

0 Comments

Close Menu