লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
রাজা পেলেস্টাইন কন্যা সন্তানের পিতা হলেন।রানী রিভানার রুম থেকে দাই আর দাসদাসী চলে যেতেই, রাজা ছুটলেন রানীর রুমে।একমাত্র কন্যাকে দেখার জন্য।রানীর পাশেই শিশু কন্যাকে শুইয়ে রাখা হয়েছে।কন্যাকে দেখেই তার মুখমণ্ডল আরো হাসোজ্জল হয়ে উঠলো।রুপ যেনো ঠিকরে পড়ছে।পেলেস্টাইন তাকে কোলে নিতেই খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।রাজা মেয়ের নাম রাখলেন ম্যারিনা।
ম্যারিনা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো।কিন্তু যখন হাঁটার বয়স হলো, তখন দেখা গেলো, ম্যারিনা এক পা খুঁড়িয়ে হাঁটছে।রাজা-রানী একমাত্র মেয়েকে নিয়ে খুবই চিন্তিত হলেন।রাজ্যের সকল লোক ম্যারিনাকে দেখলে কানাঘুষা করে।কেউ ম্যারিনার সাথে কথাও বলতে চায়না।এজন্য ম্যারিনার বাইরে যাওয়া নিষেধ ঘোষণা করলেন রাজা প্যালেস্টাইন।
রাজকন্যার পঞ্চমতম জন্মদিন ছিলো।রাজ্যে মহাভোজ এর আয়োজন করা হয়।নাচের আসর বসে।ম্যারিনার খুব ইচ্ছে হয় নাচে অংশগ্রহণ করার।কিন্তু তার পায়ে সমস্যা থাকার কারনে রাজা আপত্তি জানালেন।ম্যারিনা দুঃখ পেয়ে নিজের রুমে চলে যায়।নিজের পা'এর এই সমস্যাকে ইচ্ছে পূরণের অভি*শাপ ভাবতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে ম্যারিনা ঘুমিয়ে পরে।রাজকন্যার রুমের পাশেই ছিলো পুষ্পবাগ।রাতে আচমকা ঘুম ভাঙতেই বিমোহিত সুর শুনতে পেলো,ম্যারিনা।তার সাথে ঘুঙুরের আওয়াজ।
ম্যারিনা,আড়মোড়া ভেঙে জানালার পাশ ঘেঁষে এলে দাঁড়ালো।জানালা দিয়ে বাইরে দৃষ্টি রাখতেই দেখতে পেলো দুজন পরী সুরের ছন্দে ছন্দে নাচ করছে।লাল পরী আর নীল পরী।ম্যারিনা খুব খুশি হয়ে গেলো।পরীদের সাথে সাথে সেও নাচতে শুরু করলো।পা'এর জন্য একটু সমস্যা হলো ঠিকই, কিন্তু রাজকন্যা ভাবলো, ভালো কিছু পেতে গেলে একটু কষ্ট করা লাগবেই।এভাবে রোজ নাচ করতে লাগলো।কিছুদিন পার হতেই, একদিন সে গুপ্ত দরজা দিয়ে বাইরে গেলো আর পরীদের সাথে কথা বললো।তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে নিলো।তারপর থেকে ম্যারিনা আর নিজের রুমে নাচের অনুশীলন করতোনা।গুপ্ত দরজা দিয়ে পুষ্পবাগে চলে যেতো।
TikTok
রাজকন্যার বয়স এখন ষোলো।এখন সে একজন ভালো ডান্সার।দীর্ঘকালীন অনুশীলন এর কারনে পা নিয়েও আর কোনো সমস্যা হয়না।সে ভাবলো, এখন আমি অনেকটা বড় হয়েছি।কিন্তু এখনো প্রকৃতি দেখা হয়নি ভালো করে।মনে মনে খুব দুঃখ পেলো।
পরের দিন মহারাজ আর রানী দুজনেই একটা বিশেষ কাজে বাইরে বের হয়েছিলেন।সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ম্যারিনা ছদ্মবেশ ধারন করে মহল ছেড়ে বেড়িয়ে পড়লো।যেতে যেতে বনের মধ্যে চলে গেলো।দেখতে পেলো এক সুদর্শন ছেলে কাঠ কা*টছে।ম্যারিনা তার কাছে গেলো এবং তার কাজের প্রশংসা করলো।তারপর পরিচিত হলো,
-আমি রাজকন্যা ম্যারিনা
-আমি ডাম্বেল
দুজনেই পরিচিত হয়ে আনন্দ প্রকাশ করলো।ম্যারিনা খেয়াল করলো, ডাম্বেলের ঝুপড়ির পাশে একটি বাঁশি রাখা।কৌতুহল নিয়ে শুধালো,
-তুমি বাঁশি বাজাতে পারো?
-হুম, পারি তো।
ম্যারিনা, তখন তার নাচের কথা জানালো।তার নাচের কথা শুনে ডাম্বেল গাছের নিচে বসে বাঁশি বাজালো।আর বাঁশির সুরে, ম্যারিনা নাচ করলো।তার নাচে ডাম্বেল বিমুগ্ধ হয়ে গেলো।কিছুক্ষন থেকেই ম্যারিনা আবার ফিরে এলো, তার মা-বাবা ফিরার আগেই।
এভাবে রোজ ছদ্মবেশ ধারন করে বের হতে লাগলো রাজকন্যা।ডাম্বেল এর বাঁশির সুরে নাচ করা তার ভীষণ ভালো লেগে গেলো।তাই সে ডাম্বেলকে বিশ্বাস করতে শুরু করলো, নিজের প্রিয় একজন করার।
একদিন ম্যারিনা নাচ করতে করতে পায়ে ব্যাথা অনুভব করলো।তাই ডাম্বেলকে বললো,
-আমি আর পারবোনা এখন নাচ করতে।আবার কাল।
-তুমি হাঁপিয়ে গেলে কি করে হবে।কিছু দিনের মধ্যেই তো রাজ্যে নাচ প্রতিযোগিতা হবে।তোমাকে তো তখন একটানা নাচ করতে হবে।তাই এখন থামা যাবেনা।
ডাম্বেল এর কথায়, ব্যাথা নিয়েই নাচ করতে লাগলো।নাচ করতে করতে হঠাৎ করেই পা মচকে পরে গেলো ম্যারিনা।ম্যারিনা আৎকে উঠলো।পা মনে হয় ভেঙেই গেলো।কাঁদতে লাগলো সে।তার কান্না দেখে ডাম্বেল শয়*তানি হাসি দিয়ে তার ডা*ইনি রুপে ফিরে এলো।বললো, "আমি তোমার ইচ্ছে কখনো পূরণ হতে দিবোনা, রাজকন্যা।"
ম্যারিনা অবাক হয়ে গেলো।বললো,
-তুমি একটা ডাই*নি হলে ডাম্বেল কে?
-হ্যা, আমি ডাই*নি।তোমাকে ফাঁ*দে ফেলার জন্যই আমি ডাম্বেল সেজেছি।
-কিন্তু আমার অপ*রাধ?
-আমি অসুন্দর হলেও নাচ করতে ভালবাসতাম।কিন্তু তোমার বাবা, আমার এই স্বপ্নটা নষ্ট করে দিয়েছে।তার মাশুল তোমাকে দিতে হবে।তোর পা আরেকটা পা ও অকেজো করে দিবো।
বলেই ভয়ংক*র ভাবে হাসতে লাগলো ডাইনী।সেই মূহুর্তেই মহারাজ তার সৈন্য নিয়ে হাজির হলো।নিজের মেয়েকে ধরে বললো, "কেনো তোমাকে বারন করেছি তুমি জানোনা, ম্যারিনা।তুমি জন্মের আগেই অভিশ*প্ত হয়েছিলে।আমি একদিন শিকা*রে এসেছিলাম।ভুলবশত একটা তী*র গিয়ে ভেদ করে, নৃত্যরত একটা ডাই*নির পায়ে।তখন তার একটি পা স্বাভাবিক ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।ডাই*নি তখন ক্রোধে অভিশা*প দেয়।তার অভিশা*পের কারনেই তুমি পায়ে সমস্যা নিয়ে জন্মেছো।এই ডাই*নির হাত থেকে বাঁচাতেই তোমাকে নাচ করতে দেইনি।কোথাও বের হতে দেইনি।"
রাজার কথা শেষ হতেই, ডাই*নি আক্রমণ করে বসলো।সে তার যাদু দ্বারা গোলাকৃতি আগু*নের দলা ছুঁড়ে মার*লো।তখনই লাল পরী আর নীল পরী আসলো।তারা তাদের যাদু প্রয়োগ করে ডাই*নির সাথে লড়াই করতে লাগলো।লাল পরী যখন লড়াইয়ে ব্যস্ত।নীল পরী তখন ডাই*নির প্রান ভ্রমরা বাঁশিটা ভেঙে ফেললো।আর সাথে সাথে ডাই*নি গর্জন করে উঠলো এবং ছাই হয়ে হাওয়ায় মিশে গেলো।
ডাই*নির ধ্বংস হওয়ার সাথে সাথে ম্যারিনা অভিশা*পমুক্ত হলো।তার পা ভালো হয়ে গেলো।তারপর তারা রাজ্যে ফিরে গেলো।
একদিন পুষ্পবাগে পরীরা নাচের আয়োজন করলো এবং ম্যারিনাকে প্রধান হিসেবে ঘোষণা করলো।সেখানে পরীরাজ্যের সকলে এবং রাজ্যবাসী সবাই উপস্থিত হলো।ম্যারিনার নাচ দেখে রাজ্যের সকলে গর্বিত অনুভব করলো।তারা মুগ্ধ হয়ে হাততালি দিয়ে পরিবেশ মুখরিত করে তুললো।তারা তাদের আগের ব্যবহারের জন্য লজ্জিত হলো।
রাজা নাচের জন্য একটা স্কুল খুলে দিলেন,ম্যারিনাকে।যেখানে নাচের জন্য ইচ্ছুক মানুষজনকে নাচ শিখানো হবে।
(সমাপ্ত)
0 Comments