লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা
ঘরের দরজা খুলতেই তুর্য ভেজা শরীরে বাইরে বেরিয়ে এলেন। টাওয়াল হাতে নিয়ে লম্বা চুলগুলো মুছছেন উনি। তাঁর পরনে একটা গ্রে কালারের ট্রাউজার। খালি বুকে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে, হয়তো এই মাত্র শাওয়ার নিয়ে বেরুলেন। কয়েক সেকেন্ড আগে আমি পরিকল্পনা করছিলাম ফুলদানি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করবো কিন্তু এখন লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছিনা। নিজের অজান্তেই একরাশ লজ্জা এসে চোখে জড়ো হয়েছে আমার।
তুর্য আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছেন আমি এমন অস্বাভাবিক ব্যবহার কেন করছি। উনার এই তীর্যক দৃষ্টি আমাকে আরো বেশি লজ্জিত করে তুলছে। এই লোকটা আমায় এত ঘৃণা করে তবুও আমি বেহায়ার মত তাকেই ভালোবেসে যাই। কেনো যেনো আমার সব রাগ সব ঘৃণা তার ওপর এসে শেষ হয়ে যায়। উনার সামনে আমার সর্বোচ্চ সম্পদ, আমার আত্মসম্মানও তুচ্ছ। নিজের কাছেই নিজেকে অনেক ছোট মনে হয় যখন নিজের আত্মসম্মানকে উনার সামনে বার বার বলি দিতে হয়। কিন্তু আমি কি করবো আমিতো তাকে ভালোবাসি আর ভালোবাসা সবকিছুর ঊর্ধ্বে।
আমাকে আমার ভাবনার জগত থেকে টান দিয়ে বের করে গলাখাকারি দিয়ে উঠলেন তুর্য।
-- কি হলো? ফুলদানি হাতে ওমন সং এর মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
এতক্ষণে আমার হুশ হলো যে আমি ফুলদানি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
-- কোই না তো। এমনিতেই,, ফুলদানিতে ধুলো জমে গেছিলো তাই পরিষ্কার করছিলাম।(ফুলদানিটা নিচে রাখতে রাখতে বললাম)
-- তোর কি মনে হয় না তুই একটু অন্যরকম বিহেভ করছিস?
-- অন্যরকম মানে?
-- এই যে তুই চোখভর্তি লজ্জা, মাথা নিচু করে থাকা, আবার ফুলদানি হাতে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকা যেনো আশেপাশে কি হচ্ছে কিছুই খেয়াল নেই।
-- তেমন কিছুই হয়নি আপনি একটু বেশিই চিন্তা করছেন।
-- ঠিক আছে মানলাম। নাস্তা এনেছিস?
-- হ্যাঁ এইতো বরাবরের মতো বাইরের টেবিলে রেখে দিয়েছি।
-- খাবারের ট্রে টা ভিতর রেখে যা।
-- কি বললেন আপনি? আমি ভিতরে যাবো? তাও আবার আপনার ঘরের ভিতরে?
তুর্য দুই হাত ভাঁজ করে বুকে গুজে সোজা হয়ে দাড়ালেন।
-- সহজ বাংলা ভাষা বুঝতে কি তোর অসুবিধা হয়?
-- না অসুবিধা না। আসলে এই ঘরে ঢোকার অনুমতি নেই তো আমার। তাই একটু অবাক লাগছে যে হঠাৎ আপনি আমাকে ঘরের ভিতরে যেতে বললেন। আচ্ছা এর মানে কি আমি এই বুঝবো যে আপনি আমাকে এখন আর ঘৃণা করেন না?
-- আপনার এই এক হাত বেশি বুঝার স্বভাব আর যাবে না এইতো!
-- মানে?
-- মানে হলো আমি তোকে শুধু ঘরের ভিতর ঢুকতে বলেছি। তোকে আমি ঘৃনা করি কিনা তার ডেফিনেশন দেইনি আর এরকম কোন হিন্টও দেইনি। তাহলে তুই কেনো এমনটা বুঝলি যে আমি তোকে ঘৃণা করতাম আর এখন করি না?
-- এক মিনিট! এক মিনিট! কেনো যেনো সব গুলিয়ে যাচ্ছে। আপনার কোনো কথাই আমি বুঝতে পারছিনা। একটু পরিষ্কার করে বলবেন প্লিজ?
-- তোর কিছু বুঝতে হবে না, তুই জাস্ট খাবার টা ভিতরে রেখে চলে যা।
আর কোনো কথা না বাড়িয়ে, খাবারের ট্রে টা হাতে নিয়ে তুর্যর ঘরের ভিতরে ঢুকে গেলাম।
ঘরের ভিতর বিভীষিকাময় অন্ধকার। ভাগ্যিস ব্যালকোনির পর্দা খানিকটা ফাঁকা করা ছিল, যেখান দিয়ে খুবই অল্প সূর্যের আলো তীর্যকভাবে ঘরের ভিতর প্রবেশ করছে। নয়তো এই অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পরে আমার সবগুলো দাঁত ভেঙে যেতো। পরে ভাঙা দাঁত নিয়ে তুর্য কখনই আমাকে বিয়ে করতেন না।
সাবধানতা অবলম্বন করে এগিয়ে গিয়ে খাবার ট্রে টা সেন্টার টেবিলে রেখে পিছিয়ে আসার সময় কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যেতে নিলেই কেউ একজন আমার কোমড় জরিয়ে ধরলেন। সামনে থাকা মানুষটা তুর্য ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। উনার শরীরের ঘ্রাণ আমার খুব পরিচিত। প্রতিবার এই ঘ্রাণ আমাকে মাতাল করে তোলে। জানিনা কি আছে উনার মধ্যে? কেনো আমি উনাকে ভালোবাসি? কোনো কারন নেই উনাকে ভালোবাসার। যতটা ঘৃণা উনি আমাকে করে, যতটা অপমান করেন,,,, এরপরও আমার মন তার জন্য কাঁদে। তাকে একনজর দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।
হঠাৎ তুর্যর তুড়ি বাজানোর শব্দে আমার ভাবনায় ছেদ পড়লো। উনি উৎসুক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে ছেড়ে দিয়ে দুই হাত বুকের নিচে গুজে, ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলেন,
-- আবার কি চিন্তা করছিস মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে?
-- কিছু না (বলে চলে যেতে নিলে তুর্য পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরলেন)
-- তুই এত এ্যাবনরমাল বিহেভ করছিস কেন কি হয়েছে?
-- বললাম তো কিছু না। হাতটা ছাড়ুন অনেক কাজ আছে।
-- আমার সাথে থাকতে কি তোর বিরক্তি লাগে? যখনই কাছে আসি তখনই দূরে যাওয়ার ফন্দি আটিস। নাকি অন্য কেউ কাছে এলে তোর ভালো লাগে। কোনটা? আমার সাথে খারাপ লাগে নাকি অন্য কারো সাথে ভালো লাগে। কেনো দূরে যেতে চাস বারবার? কি সমস্যা তোর? বল কেন দূরে যেতে চাস? (আমার দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে কথাগুলো বললেন তুর্য)
-- আপনি এসব কি বলছেন? আপনি আমাকে ব্যথা দিচ্ছেন। কাল রাতে এতো নির্মমভাবে মারার পরও আপনার মন শান্ত হয়নি? আমার সারা শরীরে ব্যথা করছে!
হঠাৎ তুর্য কিছু একটা খেয়াল করে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। ওনার চোখ মুখ দেখে মনে হলো হঠাৎ করেই উনি অন্য কোনো খেয়ালে চলে গেছেন। আমি পুনরায় কিছু বলার আগেই তুর্য আমার হাত ধরে তার ঘর থেকে বের করে দিয়ে, ঠাস্ করে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিলেন।
আমি বেকুবের মতো বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি হলো টা কি! উত্তর না পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সেখান থেকে চলে এলাম।
বড় বাবা কিছু জরুরি কাজে একদিনের জন্য ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। যাওয়ার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফাইল অফিসে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমার হাতে দিয়ে গেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অফিস অনেক দূরে আর একা এতোদূর কখনও যাই নি আমি। আগে তো কলেজেও তাফসির সাথে যেতাম কিন্তু আজকে তাফসি বিয়ের শপিং এর জন্য গেছে।
গালে হাত দিয়ে সোফায় বসে বসে ভাবছিলাম কি করা যায়, তখনই দেখলাম তুর্য তৈরি হয়ে গাড়ির চাবি হাতে বেরুচ্ছেন। আচ্ছা আমি যদি তুর্যকে একটু রিকুয়েষ্ট করি তবে কি সে আমাকে অফিসে পৌঁছে দেবেন? নাকি প্রতিবার যেমন করে এবারও তেমনই করবেন? কিছুক্ষণ ভেবে চট করে উঠে পরলাম।
তুর্যর ঠিক সামনে গিয়ে বললাম,
-- আপনি কি বাইরে যাচ্ছেন?
গাড়ির চাবিটা আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে তুর্য আমার দিকে তাকালেন,
-- এখন কি তোর কাছে অনুমতি নিয়ে আমার বের হতে হবে?
-- আমি কি সেটা বলেছি? শুধু জিজ্ঞেস করেছিলাম কারণ আমার একটু বাইরে যেতে হবে।
-- তো যা বাইরে। আমি কি তোর হাত পা বেঁধে রেখেছি?
-- সব সময় উল্টো কথা না বললে কি হয় না? আমাকে একটু বড় বাবার অফিসে নামিয়ে দিয়ে আসতে পারবেন?
-- আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয় নাকি আমি ভারায় ট্যাক্সি চালাই? কোনটা?
-- অনুরোধ করছি। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নেই।
তুর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে পুনরায় বলতে শুরু করলেন,
-- অফিসে তোর কি কাজ?
-- বড় বাবার অনেক ইমপোর্ট্যান্ট একটা ফাইল ম্যানেজার আঙ্কেলের কাছে দিতে হবে।
-- তা বাবা এটা তোকে কেনো বললো? অন্য কাউকে বললেই তো হতো।
-- আর কাকে বলবে? আপনি তো অফিসে যান না, আর তাফসিও বাসায় নেই। বড় মা একটু পরে তার বান্ধবীদের সাথে বেরুবেন। রইলাম বাকি আমি! তাই আমাকে বলেছেন।
-- হুম! যা ঝটপট তৈরি হয়ে নে।
-- জি।
উনার কথা মতো একদম ঝটপট কালো চুরিদার টা পরে তৈরি হয়ে নিলাম। সাথে কালো কাচের চুরি, চোখে হালকা কাজল আর চুলগুলো রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে নিলাম। ফাইলটা হাতে নিয়ে গাড়ির কাছে ছুঁটে গিয়ে, গাড়ির পিছনের সীটে বসে পরলাম।
তুর্য ড্রাইভিং সীটে বসে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।
-- আমাকে কি এতোটাই ইউজলেস মনে হয় তোর কাছে যে দৌড়ে এসে মহারানীর মতো ব্যাকসীটে বসে পরলি আমাকে ড্রাইভার বানিয়ে? তোর ড্রাইভার নই আমি। সামনে এসে বস।
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
-- আসলে বুঝতে পারি নি।
-- ফ্রন্ট সীটে এসে বসে আমাকে উদ্ধার করুন।
উনার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ গিয়ে বসলাম।
তুর্য অনেকটা রাগান্বিত হয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-- সীট বেল্ট বাঁধতে পারিস নাকি সেটাও বেঁধে দিতে হবে?
কিছু না বলে সীট বেল্ট টা বেঁধে নিলাম।
গাড়ি ছুটে চলেছে। ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে একজন আরেকজনের সাথে প্রতিযোগিতা করে সামনের দিকে ছুটে যাচ্ছে। আমরাও ইতোমধ্যে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি।
অবশেষে প্রতিযোগিতার অবসান ঘটিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। আমি গাড়ি থেকে নামতেই তুর্য গাড়ি স্টার্ট দিলেন। অফিসের নিচ পর্যন্ত এগিয়ে গিয়েও আমি দৌড়ে গাড়ির কাছে ফিরে এলাম।
-- আপনি চলে যাচ্ছেন?
-- তো কি করবো?
-- না বলছিলাম ফাইল টা দিয়ে আসা অব্দি একটু যদি ওয়েট করতেন?
-- কেনো?
-- আমি বাড়ি ফিরবো কিভাবে? আমি তো কিছুই চিনি না!
আমার কথায় যেনো তুর্য বেশ অবাক হলেন।
-- ঢাকায় আঠারো-উনিশ বছর থেকেও তুই ঢাকার রাস্তা চিনিস না?
-- কখনও এমন পরিস্থিতিতে পরতে হয় নি যে চিনবো!
তুর্য আমাকে এতোটাও অবহেলা করে না, যতোটা আমি ধারণা করি। উনার মনের কোনো এক কোণায় আমার জন্য চিন্তা কাজ করে। হয়তো কিছু সময় তার অবহেলা সহ্য করলেও একদিন না একদিন সে আমাকে ভালোবাসবে।
এসব চিন্তা করছিলাম, তখনই গাড়িতে স্বজোরে ব্রেক কষলেন তুর্য। বেখেয়ালে থাকায় সামনের দিকে ঝুঁকে কপালে হালকা ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু উনাকে বললে আবার বকা দেবেন, তাই চুপচাপ নিজেকে ঠিকঠাক করে নিলাম।
গাড়ি একটা হাসপাতালের সামনে দাড় করিয়েছেন উনি। ইতোমধ্যে হাসপাতালের নিচেও পৌঁছে গেছেন। আমাকে কড়া গলায় আদেশ করে গেছেন যাতে গাড়ি থেকে এক পা ও বাইরে না দেই। কিন্তু তুর্য হসপিটালে কেনো এসেছে জানার তীব্র ইচ্ছা কাজ করছে। যাবো না যাবো না করেও কৌতুহল মনকে থামাতে না পেরে উনার পিছু পিছু হসপিটালে ঢুকে গেলাম। তুর্য বেশিদূর আগাতে পারে নি, তার আগেই আমি তাকে দেখেছি। তুর্যর পিছু পিছু একটা কেবিনে ঢুকে পরলাম। যতোটা বোকা আমাকে দেখতে আমি কিন্তু ততোটাও বোকা না হুহ। খুব সাবধানে নিজেকে উনার দৃষ্টির আড়াল করেছি। উনি যেই কেবিনে ঢুকেছিলেন সেখানে ঢুকতেই আমার চোখ ছানাবড়া!
তুর্যর বন্ধু নিলয় ভাইয়া হাত পায়ে বিশাল বিশাল ব্যান্ডেজ নিয়ে কুপোকাত হয়ে পরে আছেন। দেখে মনে হচ্ছে গনধোলাই এর স্বীকার হয়েছেন। কিন্তু ভাববার বিষয় হলো, কাল রাতে নিলয় ভাইয়া একদম সুস্থ ছিলেন। তবে এক রাতের মধ্যে কি এমন হলো যে তার এই অবস্থা! অনেক চেষ্টা করেও ছোট্ট মাথায় কিছুই ঢুকাতে না পেরে সেখান থেকে চলে আসছিলাম। পিছন থেকে নিলয় ভাইয়া কাঁপা কাঁপা কন্ঠে আমার নাম ডেকে উঠলেন।
-- হীর!
-- জ্বি ভাইয়া? আর আপনার এই অবস্থা!
-- আমাকে ক্ষমা করে দাও হীর। আর কেউ না জানলেও তুমি তো জানোই যে আমি ভুল কিছু করি নি।
নিলয় ভাইয়া কি বলছেন সব আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!
-- তুর্য যা দেখেছে পরিস্থিতি টা আদৌ তেমন ছিল না। তুর্য আমাকে ভুল বুঝে আমার এই অবস্থা করেছে। তুমি তো জানোই আমি তেমন কিছুই করি নি।
এবারও আমার মাথায় কিছুই ঢুকলো না।
-- আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বলুন।
-- কাল রাতে তুমি আর আমি ডান্স করছিলাম, হঠাতই তুমি আমার কোলে ঢলে পরো। আশেপাশে কেউ ছিল না যার কাছে থেকে সাহায্য নেওয়া যেতো। এজন্য আমিই তোমাকে পাঁজাকোলে তুলে উপরে একটা রুমে নিয়ে শুইয়ে দেই।
নিলয়ের কথা শুনে মনে হচ্ছে যে, সে কোনো একটা মুভির কাহিনী টেনে ছিড়ে আমাকে শোনাচ্ছে। কারণ এমন কিছু হয়েছে বলে আমার একদমই মনে পরছে না। রাতে যখন তুর্য আমাকে বেঁধে রেখেছিলেন তখন তো আমি স্বজ্ঞানে ছিলাম, তাহলে নিলয় এসব কি বলছে?
নিলয় আবার বলতে শুরু করলেন,
-- তোমাকে বিছানায় শুইয়ে দেওয়ার পর আমি উঠতে গেলে বুঝতে পারি আমার শার্টের বোতামের সাথে তোমার চুল আটকে গেছে। তোমার উপর নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে চুলটা আলগা করছিলাম। ঠিক তখন কোথায় থেকে তুর্য এসে আমাকে মারতে লাগলো। তুর্যকে হাজার বার চেষ্টা করেও বিশ্বাস করাতে পারলাম না যে তোমার আর আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। আর সেই হোটেল রুমে আমরা দুজন কিছুই করছিলাম না। কিন্তু তুর্য,,, আমার উপর না হয় বিশ্বাস না ই করলো। কিন্তু তোমাকে? তোমাকে কেনো বিশ্বাস করলো না?
নিলয়ের কথা শুনে কাল রাতের সব ঘটনা আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো। তুর্যর আমাকে এতোটা অমানবিক ভাবে মারার পিছনের কারণ তাহলে এটা! তুর্যর ধারণা আমি আর নিলয় হোটেল রুমে এক সাথে,,, ছিঃ! আমাকে এতোটা নিচ মনে করেন উনি? এতোদিন রাস্তার মেয়ে বললেও গায়ে মাখাতাম না কিন্তু এখন তো উনি আমাকে চরিত্রহীন মনে করেন!
0 Comments