Ad Code

বিরহে বরষা

লেখিকাঃ  আশা রোজমেরি

সময়টা আষাঢ় মাস

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার তোড়জোড় করছে প্রকৃতি।
শ্যামকন্যা কৃষ্ণবর্ণ শাড়ি আবর্তন করে আচ্ছাদিত করে রেখেছে পুরো অন্তরীক্ষ।তারই বক্ষে বিজলির খেলা।বিরামহীন, বিশ্রামহীন ডেকে যাচ্ছে।জলধরের বুক চিড়ে বরষারা ধরিত্রীতে টুপ করে পরে যাবার পূর্ব সংকেত।একটানা দমকা প্রভঞ্জন তারই নজির।এমন ক্ষনে,মনে ভাটিয়ালি গান বাজে।প্রণয়ে হয়ে উঠে চঞ্চল।দূরের কদম গাছটা শ্যামল সৌন্দর্যে মেঘের সঙ্গী হয়েছে।একজোড়া কপোত-কপোতী মিলেমিশে একাকার তারই মগডালে।তাই দেখে প্রণয়াকাঙ্ক্ষা মন আরো ব্যাকুল করে।
রাস্তায় কোনো জনমানব নেই।রাখাল বালকেরা আজ ঘরে আবদ্ধ।মাঠে খেলার উৎসব নেই।উঠানে বউ ঝিদের ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছেনা।সন্ধ্যা আরো ঘনঘোর হয়ে আসছে।তবে প্রকৃতির বুকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার অনেক পূর্বেই যেনো আজ সন্ধ্যা হয়ে এসেছে।সন্ধ্যার রূপ আজ কারো চোখে পরলো না।মৃত্তিকার প্রদীপ সেতো এক দফা হাওয়াতেই মিলিয়ে যাবে।সন্ধ্যা, সন্ধ্যা করে তাই লন্ঠন জ্বেলেছে বিভা।
"ঘরের ভেতর আঁধারের আলপনা।বিভা,ছোট ভাই বাবুকে নিয়ে নিভু, নিভু লণ্ঠনের আলোতে পড়তে বসেছে।বইয়ের ভাঁজে চিঠি।এক লাইন পড়লেই বুকে কাঁপন ধরে।অক্ষিযুগল এলোমেলো হয়ে পরে।চোখ ফের আবদ্ধ করে বইয়ের পাতায়।
"বুবু তুই ঠিক মতো পড়িসনা।বাজানরে কইয়া দিমু"। আমি ইট্টু বিষ্টিতে ভিজলেই মাইর খাওয়াস।
"তুই আমার পড়ার কি বুঝবি।ঠিক কইরা তোর পড়া পড়"।বিষ্টিতে ভিইজ্জা জ্বর,ঠান্ডা বাঁধাস।এতো ট্যাহা কই ডাক্তার দেহানের।
বিভা দুয়ারডা খোল!
"মনে হয় বাজান আইয়া পরছে"।বিভা দরজা খুলে দেয়।
"তোর মা কই"?
"মার শরীরডা ভালা না বাজান।মনে অয় ঘুমাইতাছে"
তয় তুই-ই দুইডা বাসনে ভাত দে।শিমুলরে নিয়া আইছি।এমন ঝড়,তুফান দিয়া আর বাইত যাইতে দেই নাই।আমার লগে খাইয়া আবার এক লগেই গাঙ্গে যাইবো।
"বিভা, ভাত খেতে দিয়ে দরজার দ্বার প্রান্তে দাঁড়িয়ে গহন অক্ষিপটে শিমুলের পূর্ণাবয়ব অবলোকন করছে"।
ঢালা কাপড়ের আঁচল খানা মেঝেতে শান্তির পরশ দিচ্ছে।শিমুলের চোখ সেখানেই নিবদ্ধ হচ্ছে ক্ষনে ক্ষনে।
ক্ষানিক দাঁড়িয়ে থেকে বিভা চলে গেলো।তার পরপরই ডাক পরলো।
বিভা,আইজ মেলা মাছ পরছে।আর দেরি করমু না।দুয়ারডা বন্ধ কইরা দে।তোর মা'রে লইয়া দুইডা খাইয়া ঘুমাইছ।
শিমুল একটু থেমে গেলো।এই সুযোগে হাতে একটা কাগজ গুঁজে দেয়, বিভা।" এইডা চিঠির উত্তর মাঝি"!
"চিঠি বিনিময়ে হাতের এক ঝলক স্পর্শ দুজনকে আদৃত করলো"।যাই বিভু,খাইয়া লইও তুমি।
রাত বাড়লো।ধীরে ধীরে অন্ধকার গাঢ় হয়ে আসলো।বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।বৃষ্টির ফোঁটা দেখা যাচ্ছেনা।চারদিক ঝাপসা।পাশের কদম গাছটিও আর দেখা যাচ্ছেনা।ব্যাঙের একটানা ডাক কানের কাছে বাঁশি বাজাচ্ছে।মাঝেমধ্যে শিয়ালের হাঁক।ঝুম বৃষ্টির ঝুপঝাপ শব্দ মিলিয়ে গিয়ে মুষলধারে বৃষ্টির ঘোষণা দিচ্ছে।মনে কেবল হাহাকার।কি যেনো নাই, কিসের যেনো অভাব! এই গৃহ, খড়ের গাদা,গোয়ালে গরু সবই আছে।তবু কেনো এতো নাই নাই লাগে?
"প্রত্যুষে বিভার বাবা ডালা ভর্তি মাছ নিয়ে ফিরলো"।কিন্তু তাকে বিমর্ষ লাগছে।
"আজ আর গঞ্জে যামুনা।গাঙ সর্বভুকরে, মা।সব গ্রাস কইরা নেয়।মেলা মাছ নিয়া ফিরলাম।কিন্তু শিমুলরে নিয়া ফিরতে পারলাম না।" কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন তিনি।
বিভার মনের আকাশে ঘন মেঘ গরজে উঠলো।বরষার সাথে তাল মিলিয়ে আঁখিযুগলে বিরহে বরষা নামলো!!
লেখিকার অন্যান্য গল্প

Post a Comment

0 Comments

Close Menu