লেখিকাঃ সাবিহা জান্নাত
পর্বঃ ০৯
~ না। কেউ আমাকে জোর করে নি । আমি নিজ ইচ্ছায় তাকে বিয়ে করেছি।
কথাটা শ্রুতি বলতে না বলতেই তার আম্মু তার গালে সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।শ্রুতির আম্মুর এমন কাজে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
~ সোহানা কি করছো কি। এতো বড় মেয়ের গায়ে হাত তুলছো ? ভুল করছো কিন্তু তুমি .
বিভোরের বাবা শ্রুতির আম্মুর উদ্দেশ্যে কথাটা বলতেই শ্রুতির আম্মু একটু রাগান্বিত হয়ে বলে উঠে,,,
~ হ্যা ভুল করেছি আমি। আদরে আদরে মাথায় না তুলে এই থাপ্পড়টা যদি আগে দিতাম তাহলে আজকে এই দিন দেখতে হতো না।
আমাকে মাফ করবেন আপনার অবাধ্য হয়ে কথা বলার জন্য। আর যাই হোক ওই মেয়েকে আমি মেনে নিতে পারবো না। ওর জন্য আমার বাসায় আর কোনো জায়গা নেই।
কথাটা বলেই শ্রুতির আম্মু নিজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। উপস্থিত সবাই তাকে অনেক আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু শ্রুতির আম্মু কারো কথায় না শুনে চলে যায়।
~ কি হয়েছে মামুনি কাঁদছো কেন। আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে । তোমার আম্মু একসময় সবকিছু মেনে নিবে। তাকে মানানোর জন্য আমরা আছি তো ।তুমি কোনো চিন্তা করো না।
শ্রুতিকে কাঁদতে দেখে বিভোরের বাবা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে নিজের বুকে আগলে নেয় বাবার মতো করে।
এইসব কিছু ঘটে যাওয়া ঘটনা একমাত্র বিভোরের আম্মুর অগোচরে রয়ে গেল। সে নিজের ঘর থেকে বেরোয় নি মাত্র। মনে মনে শ্রুতির প্রতি একরাশ রাগ এবং ঘৃণার সৃষ্টি হয়।
কেন জানিনা সে জন্ম থেকেই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারে না। শুধু তাকে নয় তার আব্বু আম্মুকেও সে সহ্য করতে পারেনি। সে বিভোর কে তার থেকে দূরে রাখার জন্যই ইরার সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছিল কিন্তু বিয়ের আগেই ছেলেটা সেই অপয়া মেয়েকে ঘরের বউ করে নিয়ে এসেছে।
এতো কিছুর ভাবনার মাঝেই নিজের ছোট মেয়ের কন্ঠে আম্মু ডাক শুনতে পায় সে। সায়নী বিভোরের ছোট বোন। যে শ্রুতির ক্লাসমেট।
~ কি হয়েছে আমাকে ডাকতে এসেছো কেন? নিজের মেয়ের উদ্দেশ্যে কথাটা ছুড়ে দেন বীথি চোধুরী।
~ আম্মু...
আসলে বাবা ডাকছিল তোমাকে। খাবারের সময় তো হয়ে গেছে। সবাই অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।আর ভাইয়া আর ভাবী ও তোমার জন্য অপেক্ষা করছে ......
সায়নী মিনমিনে গলায় কথাটা মায়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠতেই বীথি চোধুরী চেঁচিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,,,,
~ আমার সামনে একদম ওই মেয়ের কথা বলবে না। আমি মানি না এই বিয়ে। আর না কখনো ওই মেয়েকে ছেলের বউ হিসেবে এই বাড়িতে মেনে নিবো আমি।
তুমি যাও এখানে থেকে। আমার জন্য কারো কোনো চিন্তা করতে হবে না। ছেলে মেয়ে হয়েছো তো সবগুলো বাবার মতো। আমার কথা শোনার মতো কেউ কি আছে এই বাড়িতে।
মায়ের ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে সায়নী চমকে উঠে। তার মায়ের কথাটা শেষ না হওয়া মাত্রই তার বাবা ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে বলে উঠে,,,,
~ হ্যা আছে তো। অনেকজন আছে এই বাসায় তোমার কথা শোনার জন্য। আর কেউ না হলে আমি তো আছি। এখন জেদ না করে খেতে চলো। ছেলে মেয়ে গুলো অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।
স্বামীর কথা শুনে বীথি চোধুরী শোয়া থেকে বসে পড়ে বিছানায়। সায়নী এতক্ষনে চলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। নিজের ভাবীর উদ্দেশ্যে।
মূলত সায়নী অনেক পছন্দ করে শ্রুতিকে কিন্তু মায়ের জন্য সে সব সময় তার সাথে দূরে থাকতো। একই ক্লাসে পড়া সত্ত্বেও কখনো সে মিশতে পারতো না তার সাথে।কখনো কোনো কথা বলতে পারার সাহস হয়নি তার।
সারাফ চৌধুরী নিজের স্ত্রীর রাগি লুক দেখে স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠে,,,
~ দেখ আমি তো তোমার কথায় বিভোর কে ইরার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি ছিলাম। তোমার বলাতেই আমি ছেলেটাকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে ছিলাম। কিন্তু ছেলেটার হয়তো ইরাকে পছন্দ হয়নি । ছেলেটার শ্রুতিকে পছন্দ ছিল, সেই জন্য একে অপরকে বিয়ে করেছে।
আমাদের ইচ্ছা অনিচ্ছা গুলো ছেলেটার উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা আমরা। লাইফটা ওর , ওর মতো করে ওকে সিদ্ধান্ত নিতে দাও। জানো তো অপছন্দের জিনিসটার প্রতি যেমন আমাদের কোনো আগ্রহ থাকে না তেমনি এটা একটা সারাজীবনের সিদ্ধান্ত।
সংসারটা তখনই সুখের হয় যখন মানুষ তার প্রিয়জনের সাথে কাটাতে পারে। কিন্তু মানুষটা অপ্রিয় হলে কখনোই সংসার মধুর হয়না বরং তা বিষাক্ত রুপ ধারণ করে।
ছেলে মেয়ে গুলো একে অপরকে ভালবাসে হয়তো ভয়ে আমাদের কে জানায় নি ।তাই এমন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আমরা সেই সংসার টা ভেঙ্গে দিতে পারি না। যা যাই হোক নিজের ছেলের সুখের কথা চিন্তা করে মেয়েটাকে মেনে নাও।
শান্ত মস্তিষ্কে স্বামীর এমন স্বাভাবিক কথা শুনে বীথি চোধুরী চুপ ছিলেন।নিজের রাগ গুলো নিজের মধ্যে পুষে রাখলেন। আর স্বামীর কথামতো খাবার খেতে চলে যান।
তিনি গিয়েই দেখতে পান ছেলে মেয়ে গুলো টেবিলে তার জন্য অপেক্ষা করছে। ছেলেটা মায়ের সাথে রাগারাগী করলেও তার পেছনে রয়েছে একরাশ ভালোবাসা।
তার আম্মু রাগ করে না খেয়ে থাকলে সে কখনো একটা দানাও মুখে তুলবে না। বিভোর সেই তখন থেকেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিল। একটা টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি সে। যা বলার তার বন্ধুরাই বাসার সবাইকে বুঝিয়েছে।
খাবার শেষে তার ফ্রেন্ডরা সবাই চলে যায়। বাসায় কিছু মেহমান এবং তারা সবাই রয়েছে। খাবার শেষ করে সবাই নিজেদের ঘরে চলে যায়। বিভোর ওর বন্ধুদের কে এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের সাথে চলে যায় ।
শ্রুতিকে বিভোরের রুমে রেখে আসা হয়। শ্রুতি ঘরে প্রবেশ করেই অবাক হয়ে যায়। পুরো ঘর সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। চারদিকে লাইটিং করা।
আমাদের বিয়ের খবর তো তারা বিকালে জানতে পেরেছে। আর এর মাঝে এতোকিছু করাও তো সম্ভব নয়। তাহলে এই বিয়েটা হবে আগে থেকেই এই বাসার কেউ জানত। সবকিছু তারা প্লান মাফিক করে রেখেছে।
শ্রুতির মনে এসব নানা চিন্তা ভাবনা ঘুরছে। সে বিরক্ত হয়ে গেছে বিভোরের প্রতি। বিয়ের বেনারসিটা সে অনেকক্ষণ ধরে পড়ে রয়েছে। সে বিভোরের বোনের দেওয়া একটা মেরুন রঙের শাড়ি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়।
ফ্রেশ হয়ে সে মেরুন রঙের শাড়ি টা পড়ে বেরিয়ে আসে। সেই মুহুর্তে বিভোর ও নিজের রুমে প্রবেশ করেই শ্রুতির অপূর্ব মুআখানির দর্শন মিলে তার।
শ্রুতি বিভোর কে দেখেও না দেখার ভান করে তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে আয়নার সামনে গিয়ে বসে পড়ে। চুলগুলো চিরনী করে নেয় সে।
বিভোর ওয়াশ রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে সে বেরিয়ে এসে দেখে শ্রুতি পূর্বের অবস্থায় স্টাচুর মতো বসে রয়েছে। বিভোরের তার দিকে আসা দেখেই শ্রতি উঠে যেতে নেয় তখনই বিভোরের সাথে ধাক্কা লেগে সে আবার পূর্বের অবস্থায় বসে পড়ে।
বিভোরের খুব কাছাকাছি আসাতে শ্রুতির অস্বস্তি যেন বেড়েই চলে। বিভোরের চুলগুলো থেকে মুক্তোর মতো পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে। তার চুলগুলো কপালে এসে বিঁধেছে। তার অপরুপ সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। বিভোরের খুব কাছাকাছি আসায় শ্রুতির নিজের আঁখিদুটি বন্ধ করে নেয়।শ্রুতিকে অবাক করে দিয়ে বিভোর পাশেই রাখা চেয়ারে রাখা তোয়ালা টা নিয়ে নিজের চুলগুলো মুছতে থাকে।
মুখ তার হাসিতে ভরপুর। শ্রুতির এমন বাচ্চামো আচরনে বিভোর মুগ্ধ হয়ে যায়। মেয়েটা আজও বড় আর হলো কই। এখনো তাকে দেখলে তার হৃদস্পন্দন বেড়েই চলে। আগে না হয় অন্যকেউ ছিলাম কিন্তু এখন তো আমি তার বর আমার প্রতি তার সেই ফিলিংস ই দেখতে পাচ্ছি না।
বিভোর বিরবির করে কথাগুলো বলতে বলতে বেলকোনিতে চলে যায়। শ্রুতি বিভোরের এমন হাসিতে তার মুখে বিরক্তি ফুটে উঠে। সে ধুপধাপ পায়ে হেঁটে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।
বিভোর আড়চোখে সবটাই লক্ষ্য করছে শ্রুতির কাজকর্ম গুলো। বিভোর তোয়ালা টা রেখে বিছানায় পাশে গিয়ে বসে পড়ে। পাশে রাখা ল্যাম্প টা নিভিয়ে দিতেই শ্রুতি লাভ দিয়ে শব্দ করে উঠে,,,
~ এই আপনি ল্যাম্প বন্ধ করছেন কেন হ্যা ? তাড়াতাড়ি ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দিন।
শ্রুতির এমন শব্দ করে বলা কথাতে বিভোর চমকে যায়। সে তাড়াতাড়ি করে ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে দেয়।
~ কি হলো এমন চিৎকার করছো কেন ? তুমি তো অন্ধকারে ভয় পাও না । তাহলে ল্যাম্প টা নিভিয়ে দিতে সমস্যা কি ?
বিভোরের কথায় শ্রুতি রাগান্বিত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,,,
~ হ্যা আমার সমস্যা আছে। প্রথমত এটা আমার রুম না। আর পরের কথা হচ্ছে আপনার সাথে এই বিছানায় আমি ঘুমাতে পারবো না।আপনি বিছানা থেকে চলে যান। শিঘ্রই বলছি চলে যান নাহলে ভালো হবে না কিন্তু বলে দিলাম ...!
শ্রুতির আঙুল বিভোরের দিকে তাক করিয়ে কথাগুলো বলে। শ্রুতির কথা বিভোরের কর্নগোচর হতেই সে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।
~ আর ইউ ম্যাড।আমি আমার বিছানায় ঘুমাবো না তাহলে কই থাকবো ( বিভোর )
~ সেইটা আপনি ভালো জানেন। সোফা আছে , ফ্লোর আছে , ছাদ আছে সেখানে খুশি সেখানে যান। আপনি আমার ধারে কাছে ঘেঁসবেন না । আর যদি ভুল করেও ঘেঁষার চেষ্টা করেন তাহলে......( শ্রুতি )
~ আমি ফ্লোরে ঘুমাবো। আমি ফ্লোরে কখনো ঘুমাইনি।আমার অভ্যাস নেই। আর সোফায় ঘুমাইলে আমার সমস্যা হয় আমি ঘুমাইতে পারবো না ।আমি বিছানায় ই ঘুমাবো ( বিভোর )
~তাহলে অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমান
আমি আপনার সাথে ঘুমাবো না ব্যাস।
শ্রুতি তার কথা থেকে কোনোভাবেই পিছপা হয়না।
~ ঠিক আছে ঘুমাতে হবে না আমার পাশে। একটা কাজ করো মাঝখানে কোলবালিশ রেখে একপাশে তুমি আর অপর পাশে তুমি ঘুমাও। আমি তোমায় কাছে যাবো না প্রমিস।
বিভোর শ্রুতির উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলতেই শ্রুতি ছ্যাত করে উঠে,,,
~ একদমই নয়। আমি যখন বলেছি তো আপনার সাথে আমি থাকবো না। আপনাকে অন্য ঘরে যেতে বললাম। আপনার যদি খুব বেশি সমস্যা হয় তাহলে আমি চলে যাচ্ছি এই ঘর থেকে।
শ্রুতির কথা শুনে বিভোর চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। অন্য ঘরে যাবে মানে, আজ বিয়ে হয়েছে তাদের। এমতাবস্থায় তাদের কেউ আলাদা আলাদা দেখলে কি ভাববে কে জানে। আর এই মেয়েটা কিনা তার কথা বুঝতেই চাইছে না।
বিভোর আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে। তার হাইট আর সোফার দৈর্ঘ্য সমান হওয়ায় তার একটু সমস্যা হচ্ছিল তবুও সে কিছু বললো না।
~ বিছানায় তো ঘুমাতে দিলে না , এটলিষ্ট ঘরের বাতি টা নিভিয়ে দাও। আমার ঘুমাতে সমস্যা হয়।
বিভোরের কথায় শ্রুতি আর কথা না বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দেয়। শ্রুতির মনে বিভোরের প্রচি একরাশ বিরক্তি কাজ করছে। সে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে জোর করে বিয়ে করেছে বিভোর কে তো সে সহজেই ক্ষমা করবে না। এসব ভাবতে ভাবতে শ্রুতির চোখে ঘুম এসে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
কিন্তু বিভোরের চোখে ঘুম নেই। তার অভ্যাস না থাকায় সে সোফায় ঘুমাতে পারছে না। সে অনেক্ষণ বেলকোনিতে পাইচারি করার পর সে ঘুমিয়ে পড়ে সোফায়।
শ্রুতির সুন্দর ভোরে সুর্যের মিষ্টি আলোয় ঘুম ভেঙ্গে যায়। ঘুম থেকে উঠেই তার চোখ যায় বিভোরের দিকে। গভীর নিদ্রায় মগ্ন সে। শ্রুতি এদিক ওদিক তাকিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে একটা শাড়ি পড়ে বেরিয়ে আসে।
বেরিয়ে এসে সে কিছুটা থমকে যায়। বিভোর সোফায় শোয়া থেকে উঠে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে। শ্রুতি স্পষ্টই বুঝতে পারছে রাতে তার ঘুম হয়নি। নাহলে বিভোর কখনোই এতো সকাল অব্দি ঘুমায় না।
শ্রুতি আর কোনো দিকে মন না দিয়ে আয়নার সামনে বসে পড়ে। চুলগুলো চিরনী করে শুকিয়ে নেয়। চোখে চুপটি করে কাজল দিয়ে নেয়। ঠোঁটে তাঁর হালকা লিপস্টিক।
শ্রুতি বেলকোনিতে গিয়ে দোলনায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে। এই চেনা জানা ঘরটায় সে কতদিন পর এসেছে। অথচ ঘরটাই ছিল তার খুব পছন্দের। তার পছন্দেই বিভোর তার ঘরটা সাজিয়েছিল।
এই দোলনায় বসে শ্রুতির কাঁধে মাথা রেখে দোল খাবে দুজনে, কতই না স্বপ্ন দেখিয়েছিল তাকে বিভোর। কিন্তু আজ সবকিছু কেমন ধোঁয়াশাই মিলিয়ে গেছে।
আমার পক্ষে তোমার সাথে রিলেশন টা রাখা সম্ভব নয়। তোমার সাথে আমার যাবে না। তুমি একরকম আমি একরকম। আমার যোগ্য তুমি নও শ্রুতি। আর তোমার বাবাও তো নেই ।
আমি মানুষের মাঝে কেমনে কি বলবো বলো তো , যে আমার বউ একজন এতিম। তার বাবা নেই । মানুষের মাঝে কি মুখ থাকবে আমার ।
আমার যোগ্য হতে তোমার অনেক সময় লাগবে। তুমি লাইফে অন্য কাউকে খুঁজে নেও। আসছি , ভালো থেকো, নিজের খেয়াল রেখো বাই ..!!
কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়েই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে শ্রুতি। অতীতের কথাগুলো মনে পড়তেই শ্রুতির চোখ মুখ শক্ত হয়ে আসে। বিভোরের প্রতি তার একরাশ বিরক্তির সৃষ্টি হয়।
পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে বিভোর তার কাঁধে স্পর্শ করেছে। শ্রুতি বিভোরের হাত তার কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে সে ঘরের ভেতরে চলে আসে।
বিভোরও শ্রুতির পেছনে পেছনে চলে আসে। শ্রুতি ঘর থেকে বেরিয়ে যাবে তখনই বিভোর তার হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
শ্রুতি বিভোরের খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে।শ্রুতি এখনো স্থীর হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বিভোর ধীরে ধীরে শ্রুতির ঘারে মুখ গুঁজিয়ে দিতেই শ্রুতি আচমকা চমকে উঠে।
বিভোরের গরম নিঃশ্বাস তার ঘারে আছরে পড়ছে। শ্রুতি তার শাড়ির আঁচল শক্ত করে মুঠো করে ধরে।সে তার চোখগুলো বন্ধ করে রয়েছে।তার চোখের সামনে অতীতের স্মৃতি গুলো ভাসতেই সে চোখ খুলে ফেলে। বিভোর কে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিতেই বিভোর কিছুটা পিছু হটে যায়।
~ ছাড়ুন আমাকে। আমাকে ভুলেও স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না।
শ্রুতির কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলা কথায় বিভোর শ্রুতির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে উঠে,,,,
~ শ্রুতি একটু বোঝার চেষ্টা করো। শুনো প্লিজ....
~ আপনি আমাকে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ছোঁয়ার চেষ্টা করবেন না। আর যদি বেশি বাড়াবাড়ি করেন তাহলে....
শ্রুতি ফল কাটার ঝুড়ি থেকে ছুড়িটা নিয়ে নিজের দিকে তাক করে রাখে।
~ শ্রুতি জাস্ট স্টপ। বন্ধ করো এসব। আমি আর তোমাকে তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করতে বলবো না। আইএম প্রমিস।
বিভোরের কথায় শ্রুতি ছুড়িটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দেয়। ঘর থেকে বেরিয়ে নিচের ঘরে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায় সে।
বিভোর শুধু তার চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রয়েছে।তার একটা ভুলের জন্য সে আজ শ্রুতিকে হারিয়ে ফেলছে। তাকে কাছে পাওয়ার চেষ্টা করে সে আরো দূরে সরে যাচ্ছে।
0 Comments