Ad Code

অতঃপর বৃষ্টি

লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

একদফা দমকা হাওয়া থেমে গিয়ে ধরিত্রী জুড়ে বৃষ্টির নাচ শুরু হলো টুপটাপ ছন্দে।ইরা ব্যস্ত হয়ে পরলো ওড়নায় নিজেকে আরো কিছুটা মুড়িয়ে নিতে।পরপর দুই এক বার হালকা কেশে নিলো।কি হলো ব্যাপারটা, বৃষ্টি থেমে গেলো আচমকা।দূরে দৃষ্টি দিতেই বোধ হলো,বৃষ্টি তো থামেনি।তারপর ফিল করলো তার পাশ ঘিরে একজন আগন্তুক দাঁড়িয়ে।আগন্তুকের ছাতা খানাই খানিক ভাগ দিয়েছে মিস ইরাকে।আগন্তুক বলতে লাগলো,

-একটাই তো ছাতা।ভিজে আর লাভ কি বলুন।তাই দুজনেই এটে গেলাম।কথায় আছেনা - "যদি হও সুজন, এক চাদরে দুজন।"
ইরা মনে মনে ভাবলো, "কি বজ্জা*ত লোক।আমি কি ছাতার শেয়ার চেয়েছিলাম।মেয়ে দেখলেই পাশে দাঁড়ানোর শখ জাগে, সেটা বললেই পারে।"
একচুয়ালি,আমি পাশের ঐ টং দোকানেই চা খাচ্ছিলাম।দেখালাম আপনি ভিজে যাচ্ছেন।হালকা কাশছেন।তাই এলাম।
ইরা আরেকবার ভাবলো, "দ্যাট মিনস উনি আমাকে আরো আগে থেকেই ফলো করে।মতিগতি ভালো ঠেকছেনা।এখান থেকে কা*টতে পারলেই বাঁচি।"
ভাবনার মাঝেই ডাক ভেসে এলো।
-চলুন না চা খাই একসাথে।না মানে, আপনার ঠান্ডার জন্য ভালো হতো।না, বললেন না প্লিজ। (আবদারের সহিত বললো)
এই বলেই পা বাড়িয়ে দিলো আগন্তুক লোকটি।আর কি করা যায়।ইরারও পা মিলাতে হলো।একটাই তো ছাতা।এমনি ঠান্ডা লেগে অবস্থা কাহিল।তাই আর অমত করা গেলোনা।চা খেতে খেতে আগন্তুক বললো,
-আমি সানাফ।মাস্টার্স করছি।সময় হলেই এখানে এসে বসি।চা খাই।আমি আবার চা খোর বুঝছেন।এখান থেকে মিনিট পাঁচেক সূর্য অস্ত যাওয়ার পথে হাঁটলেই আমার বাসা।
ইরা এ বেলায় একটু চোখ তুলে তাকালো প্রশ্নাতুর চাহনীতে?
সানাফ প্রশ্নটা বুঝলো, "আসলে পশ্চিমে"।
সানাফ এর কথার মাঝখানেই বৃষ্টির রেশ কমে এলো।চা এর কাপ ও শুন্য হলো।ইরা উঠে দাঁড়ালো।সানাফ বললো,আচ্ছা এবার তাহলে যেতে পারেন।ইরা মাথা নেড়ে হ্যাঁ বাচক শব্দ বুঝিয়ে হাঁটা দিলো।সানাফ একটু আলতো হাসলো।মেয়েটাকে সে রোজ দেখে।একটা মেয়ে এতো শান্ত হয় কি করে।আর সুন্দরের উপমা কি দিবো।নারী মানেই তো সৌন্দর্যের আরেক নাম।
শ্রাবণ চলছে।একদম ঘোরতর বরষা।বিরামহীন, বিশ্রামহীন টানা বৃষ্টি হতে থাকে।জানালায় দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই সানাফ ইরাকে দেখতে পেলো।কলেজ থেকে ফিরছে।এক মূহুর্তও দেরি করলোনা।তার যথাস্থানে চলে এলো।সাথে ধোঁয়া উঁড়া এক কাপ চা।ঠোঁট ভিজাতেই জ্বল*সে যাওয়ার উপক্রম।সানাফ ভাবছে, "না জানি প্রেমিকার ঠোঁট কেমন হবে তবে।"
ইরা আজকে পাশ কাটিয়ে ছাতা মাথায় চলে যাচ্ছে।সানাফ কিছুটা ভিমরি খেয়ে গেলো।মুখ খুলতেই সানাফ তাকে থামিয়ে দিলো।"আমি তোমাকে চিনি,ইরা।তুমি এ পাড়ার মেয়ে।তোমাকে না চিনলে কাকে চিনবো।বৃষ্টিতে রাস্তাটা ফাঁকা দেখলাম।তাই আর তোমাকে কষ্ট পেতে দিলাম না ব্যাথা নিয়ে হাঁটার।ভিঁজে চুপসে যাচ্ছো।বাসায় গিয়ে মেডিসিন খেয়ে নিবা।আর হ্যাঁ, প্রথম পরিচয়ে আপনি বলে সম্বোধন করেছিলাম।ওটা ছিলো প্রথম পরিচয়ের ভদ্রতা।এখন তুমি বলাতে অ*ভদ্র ভাবলে ভাবতে পারো।আমার কোনো সমস্যা নেই।"
গেট এর কাছে গিয়ে ইরাকে নামিয়ে দিলো সানাফ।তারপর খানিক দূরত্ব রেখে দাঁড়ালো।ইরার ভিতরে যাওয়া অবধি দাঁড়িয়ে থাকলো।ইরা কি মনে করে একবার পিছন ফিরে তাকালো।তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেলো।লজ্জায় আলতো হেসে চোখ নামিয়ে ভিতরে চলে গেলো।সানাফ বুঝলো, তার চেস্টা সফল হওয়ার পথে।ভালো তাকে বাসতেই হবে।
পরের দিন একটা ক্রাফটে ধন্যবাদ লিখে নিয়ে এলো, ইরা।আজকের আকাশটা মেঘলা হলেও বৃষ্টি নেই।সেজন্য,বৃষ্টি মহাশয়ের কোনো ওয়ে থাকবেনা তাকে অনুসরণ করার।এটা ভেবে সে নিজেই টং দোকানে গেলো।এবং সানাফ এর পাশে বসলো।সানাফ আরেক কাপ চা এর অর্ডার করলো।দোকানী যেনো বুঝতে না পারে,তাই আলগোছে এক ফাঁকে ক্রাফটটা সানাফ এর দিকে এগিয়ে দিলো।সানাফ সেটা লুফে নিলো।
এভাবে রোজকার নিয়ম হয়ে দাঁড়ালো টং দোকানে একসাথে চা খাওয়া।
এক মাস পর...
সুস্থ আকাশ দেখে নীল শাড়িতে নিজেকে আবৃত করে ইরা বের হলো।তার গন্তব্য সেই টং দোকান আর সানাফ।চুল খোঁপায় আবদ্ধ।তবে বেলীর মালা বিহীন।এই শুন্যস্থানটা প্রিয় নামে বরাদ্দ।পূরণ করার দায়িত্ব বৃষ্টি মহাশয় এর।রাস্তায় আনমনা হয়ে হাঁটছে ইরা এসব ভাবতে ভাবতে।সানাফ দূর থেকে ইরা সাইড প্লিজ,সাইড বলে দোঁড়ে আসতে লাগলো।কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা।গাড়িটা ইরার মৃ*তদেহ অতিক্রম করে চলে গেলো।ইরা জানেইনা সে অন্যমনস্ক হয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলো।সানাফ র*ক্তমাখা ইরাকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো।দেখতে পেলো পাশে নীম খামে মোড়ানো একটা চিঠি।খুলে পড়া শুরু করলো।
বৃষ্টি মহাশয়
আমি আমার ভাগ্যকে খুব বিদ্রুপ করতাম।কিন্তু আপনাকে পেয়ে নিজের ভাগ্যকে নিজেই হিংসে করতে লাগলাম।তাই দুইটা কথা জানাতে এসেছি।এক আমি কথা বলতে পারিনা,যার কারনে শ্রবণশক্তি ও নেই।আর দুই আপনাকে খুব ভালবাসি।সত্যিটা জানার পরও ভালবাসবেন আমায়? শুধু মাত্র আমায়!
ইতি
ইরা
এই চিঠির উত্তর আমি কাকে দিবো পাগলী।তুমি যে আর নেই।সব জেনেই তো,এতো করে তোমাকে চাইলাম।আর এ কারনেই আজ দূর থেকে ছুটে এলাম।কারন তুমি গাড়ির হর্ন শুনতে পাচ্ছোনা।কিন্তু পারলাম না তোমার ভাগ্যকে ভালবাসায় সিক্ত করে দিতে।মেঘলা আকাশ ঘন মেঘে গর্জে উঠলো।অতঃপর বৃষ্টি।চিঠি খানা বৃষ্টিতে ভিঁজে ইরার ভাগ্যকে বিদ্রুপ করলো শেষ বারের মতো।
পাঁচ বছর পর...
দুই কাপ চা হাতে সানাফ দাঁড়িয়ে আছে ইরার কব*রের খুব কাছে।ঠান্ডা হয়ে এলে অপর কাপও সে নিজেই খেয়ে নেয় ইরার নামে।আসলে ক*বরের এক পাশেই একটি টং দোকান খুলেছে।দুই কাপ চায়ে রোজ ভালবাসার কথা হয় তাদের।অতঃপর বৃষ্টি এলে ক*বরের পাশে ছাতা মাথায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে।


লেখিকার অন্যান্য গল্প

Post a Comment

0 Comments

Close Menu