Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ২১

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

 - "মোহ, তুমি তোমার বাড়িতে কেন ফিরে যাচ্ছো না?"

প্রহরের কথায় মোহ'র হাসিমাখা আদল টা মলিন হয়ে যায়। প্রহরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় সে। প্রহর মোহ'র চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারে সে বাড়ি ফিরতে চাচ্ছে না। মোহ'র একহাত জড়িয়ে সে বলে,
- "বাড়ি ফিরে যাওয়া উচিৎ তোমার। যতই হোক উনি তোমার বাবা। বাবার উপর রাগ করে থাকতে নেই জান। আর তটিনী? সেও হয়তো তোমায় অনেক মিস করছে। ফিরে যাও প্লিজ।"
মোহ গভীরভাবনায় থাকায় প্রহরের কোনো কথায় তার মস্তিষ্কে ঢোকে না। মোহ'কে অন্যমনস্ক হয়ে থাকতে দেখে প্রহর তাকে ডাকে,
- "ভৃঙ্গলতা...
প্রহরের আদরমাখানো ডাকে তার ধ্যান ভাঙে। মোহ প্রহরের পানে তাকিয়ে বলে,
- "যদি না মেনে নেয়?"
প্রহর মোহ কে অভয় দিয়ে বলে,
- "মেনে নেবে না কেন? তুমি তাদের মেয়ে না? অবশ্যই মেনে নেবে। গিয়ে তো দেখো।"
মোহ হেসে বলে,
- " আমার বাবার সম্পর্কে কিছু জানো তুমি?"
প্রহর আরো শক্ত করে তার প্রেয়সী'র হাত ধরে। কানের কাছে চাপা কণ্ঠে বলে,
- "তোমার জন্মের পর থেকে কী কী হয়েছে, কে তোমার কে হয় সব কিছুই আমার নখদর্পনে ভৃঙ্গলতা..।"
কিছুটা অবাকই হয় মোহ। প্রহর তার ব্যাপারে এতোকিছু কীভাবে জানে? প্রহরের সাথে কাটানো সময় টা নষ্ট করতে চায় না বলে এ নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। কথা ঘুরিয়ে বলে,
- "আমরা বিয়ে করবো কবে?"
প্রহর মোহ'কে কথা ঘোরাতে দেখে একটুও অবাক হয় না। মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মোহ'কে জড়িয়ে ধরে বলে,
- "আমার মাস্টার্স কমপ্লিট হলে।"
মোহ হাসে। হাতঘড়ি টা দেখে বলে,
- "আর বেশি সময় নেই। আমি অফিসে যাবো। বাই সোনা।"
প্রহর মোহ'র গালে একটা চুমু খায়। হেসে বলে,
- "বাই জান।"
__________________
প্রহর ভার্সিটি তে ঢোকা মাত্রই মাহির ও নাহিদ এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। প্রহর তাদের নিজের কাছ থেকে ছাড়াতে গেলে মাহির বলে ওঠে,
- "রাগ করে থাকিস না দোস্ত। আমার ভুল হয়ে গেছে। অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে। আমি এরপর থেকে আর কোনো মেয়েকে অসম্মান করবো না। আই প্রমিস।"
নাহিদ ও মাহিরের সাথে তাল মিলিয়ে বলে,
- "হ্যাঁ প্রহর। ওকে ক্ষমা করে দে। ও আর কোনোদিন এমন করবে না। ও নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।"
প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের এমন আকুতি আর চোখের পানি দেখে প্রহর আর শক্ত থাকতে পারে না। মাহির কে জড়িয়ে ধরে। মাহির ও জড়িয়ে ধরে প্রহরকে। এমন মুহুর্তে প্রহর খেয়াল করে ভার্সিটির ছেলেমেয়েরা দৌড়ে লেক এর দিকে যাচ্ছে। প্রহর কিছু না বুঝলেও নাহিদ আর মাহির একে অপরের দিকে তাকিয়ে রহস্যজনক হাসি দেয়। প্রহর এমন দৌড়াদৌড়ি দেখে বলে,
- "আজ কী ম্যারাথন?"
প্রহরের এমন ফালতু প্রশ্ন শুনে মাহির ও নাহিদ দু'জনেই হাসি মুখ টা চুপসে যায়। নাহিদ প্রহরের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,
- "ওরে আহাম্মক। ম্যারাথনে কেউ এভাবে দৌড়ায়?"
মাহির ওদের থামিয়ে বলে,
- "চল গিয়ে দেখে আসি কী হচ্ছে।"
ওরা তিনজন সবার পিছন পিছন লেক এর ধারে যায়। লেক এর পাশে বড় একটা ভীড় ছিল। সবাই যেন মনোযোগ দিয়ে কী যেন দেখছিল। প্রহর ভীড় ঠেলে সামনে যায়। লেক এর দিকে চোখ পড়তেই আঁতকে ওঠে সে। জিহাদের ক্ষতবিক্ষত লাশ পানিতে ভাসছে। ছেলেটার হাতের কবজি থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। গলায় গভীর পোচ দেওয়া হয়েছে। বুকেও অনেক আঁচড়ের দাগ। লাশটা দেখে অনেকেই ভয়ে কান্না করে দিয়েছে। ইশ, কী নির্মম মৃত্যু হলো ছেলেটার। প্রহরের পিছনে নাহিদ ও মাহির সকলের অগোচরে হাসে।
জীবন বোধ এমনই, এ সমাজে দোষ করলে দোষীর কোনো শাস্তি হয় না। কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলে তার সাথে এমন নির্মম কিছুই হয়। হয়তো, এটাই নিয়ম..।
প্রহর ঘটনাস্থল থেকে সরে আসে। বন্ধু জিহাদের এমন অবস্থা সে দেখতে পারছে না। বুকের ভিতর জালাপোড়া হচ্ছে। এইতো কালকেও ছেলেটা প্রেমিকার অসম্মান দেখে এগিয়ে এসেছিল। আর আজ সে পানিতে ভাসছে। ইতিমধ্যে পুলিশ চলে এসেছে। পুলিশদের দেখে নাহিদ ও মাহির প্রহরের কাছে আসে। প্রহরকে কিছুটা শান্তনা দিয়ে সেখান থেকে সরে যায় তারা।
______________Instagram
প্রহরের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না জিহাদ খুন হয়েছে। সে যেন একটা ঘোরের ভিতর রয়েছে। এমন অবস্থায় নাহিদের ডাকে প্রহরের ধ্যান ভাঙে। নাহিদ তাকে মাহিরের ফোনের দিকে ইশারা করে। মাহিরের ফোনের দিকে তাকাতেই প্রহর আরেক বার ধাক্কা খায়। তার মোহ..। তার ভৃঙ্গলতা আরেক পুরুষের কাছে নিজের ইজ্জত বিসর্জন দিচ্ছে। সেই ভিডিওই এখন প্রহরের সামনে চলছে।
বোকা প্রহর ঘোরে থাকায় একবারো বুঝলো না ভিডিও টা তার ভৃঙ্গলতার ছিল না..।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu