Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ২২

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

 - "প্রভা তুই বিশ্বাস কর, আমি কখনো ভাবতেও পারিনি আমার মতো একটা ছেলে কখনো কোনো মেয়ের সাথে এমন অন্যায় করতে পারে..আমি ভাবি নি..।"

বলতে বলতেই কান্না করে দেয় প্রহর। প্রভার চোখেও পানি। তার ভাই তার বান্ধবীর সাথে এমন অন্যায় করেছে? এসব শোনার পর প্রহরের দিকে তাকাতেও প্রভার অস্বস্তি লাগছে। বিধির কী নিদর্শন! সে তার ভাই কে আদর্শ হিসেবে মানতো..আর তার ভাই? ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নেয় প্রভা। প্রহর তখনও কাঁদছে। হয়তো বোনের সামনে নিজের এতো বড় একটা অন্যায় শিকার করার আতঙ্কে নয়তো প্রিয় রমণীর সাথে এমন ঘৃণ্য অপরাধ করার আফসোস বা অপরাধবোধে..। আজ যদি মোহ তার জীবনে থাকতো তবে তার জীবন টা বোধহয় খুব সুন্দর হতো। মোহ'র মোহে পড়ে বিভ্রম তৈরী হয়েছিল তার মনে। সেই বিভ্রম একটা সময় ভালোবাসার রুপ নেয়। সেই অনুভুতি থেকে প্রণয়ে আবদ্ধ হওয়া। তারপর বিবাহ! বিবাহের পরই যেন মোহ'র জীবন টা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল..। প্রহরের কানে আজও বাজে মোহ'র সেই আর্তনাদ, বেঁচে থাকার আকুতি..। রাতে ঘুমানোর সময় সপ্নে মাঝে মাঝে মোহকে দেখে প্রহর। তার পাশে শুয়ে আছে। তাকে জড়িয়ে ধরে আছে। কিন্তু বাস্তবে তার বাড়িতে অব্দি যায়গা হতো না মোহ'র। এতো কিছু সহ্য করার পরও তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিল মেয়েটি। হয়তো প্রহর মোহ'র ভালোবাসা পাওয়ার উপযুক্ত ছিল না। নাহলে সৃষ্টিকর্তা কেন তাদের এক করেও আলাদা করবেন?
প্রভা ক্রন্দনরত প্রহরের দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই চলে যায়। মানুষের যখন তার প্রিয় কারোর জন্য মনে ঘৃণা সৃষ্টি হয় তখন হয়তো আর কোনোভাবেই ভালবাসতে পারে না। বিশেষ করে মেয়েরা..। কে যেন বলেছিল, বিচ্ছিন্ন হওয়া প্রথমা দের ভালোবাসা পেতে হলে পুরুষের সাত বার জন্মানো লাগবে। হয়তো তাই, এ জন্যই মোহ'র মতো মেয়েরা তাদের অতীতকে ক্ষমা করতে পারে না। ইশ; যদি পুরুষের সাত বার জন্ম হতো, তবে মনে হয় পৃথিবী দেখতে পেতো তারা কী ভাবে নারীদের ভালোবাসা পায়।
প্রভা ঘর থেকে বেড়িয়ে গেছে বুঝতে পেরে প্রহর কান্না থামায়। বুক টা ফেটে যাচ্ছে তার। আজ তার ছোট বোনও তার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকালো। যে বোন তার একটা হাঁচিতেও চিন্তা করতো, সে বোন আজ তার কান্না দেখেও না দেখার ভান করলো। প্রহর আকাশের দিকে তাকায়। চোখের কোণ থেকে হড়িয়ে পরে কয়েক ফোটা অশ্রু। পাশের ঘরে যদি তার অসুস্থ মা না থাকতো তবে হয়তো আজ পুরুষ মানুষের নিয়ম ভঙ্গ করতো সে। আর্তনাদ করতো, চিৎকার করে কান্না করতো..।
এ জীবনে বেঁচে থাকলে বন্ধু নামক কালসাপ দের কোনোদিনও ক্ষমা করবেনা প্রহর। নাহিদ ও মাহির যদি আজ বেঁচে থাকতো তবে হয়তো দেখতে পারতো তাদের লালসার জন্য আজ প্রহর কতটা কষ্টে আছে।
____________
একটু আগে লাইব্রেরিতে গিয়ে এক কোণায় মোহ'কে বই পড়তে দেখে সে। কৌতুহল বসত এগিয়ে যায় সে। মোহ'র পাশে বসে বই পড়তে থাকে। মোহ'র হাতে ছিলো সেই "মৃন্ময়ী" নামক বইটা। এক ধ্যানে পড়ছিল সে। বইয়ে এতটাই ডুবে ছিল যে তার পাশে কেউ এসে বসেছে সেটা সে বুঝতেই পারেনি।
উষ্ণ মোহ'র দিকে তাকায়। ততক্ষণে মোহ'র ও বই পড়া শেষ। বই রেখে অন্যদিকে তাকাতেই উষ্ণের প্রেমাত্নক চাহনি তার চোখে পড়ে। মোহ উষ্ণ কে বলে,
- "কী দেখছেন এভাবে?"
উষ্ণ আনমনে উত্তর দেয়,
- "আপনাকে।"
মোহ চোখ সরিয়ে নেয়। উষ্ণ কে উদ্দেশ্য করে বলে,
- "সাপের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে নেই, এরা কখন ছোবল মারবে তা আপনি জানবেন না।"
উষ্ণ হাসে।
- "আপনি তাহলে নিজেকে সাপ বলে দাবি করছেন?"
মোহ আগের মতোই বলে,
- "হয়তো..।"
উষ্ণ এবার হো হো করে হেসে ওঠে। পরক্ষনেই হাসি থামিয়ে দেয়। নিজেকে চিনতে পারছে না উষ্ণ। এটা কী সেই উষ্ণ যে কোনো মেয়ে দেখলে পালাতো? কোনো নারীর স্পর্শ যার সহ্য হতো না? নারীর সংস্পর্শে যাওয়ার কথা শুনে যার জর আসতো? প্রচন্ড অবাক হয় উষ্ণ। সেই আদর্শ উষ্ণ কিনা এক নারীর সাথে এতোটা সহজ হয়ে কথা বলছে। এক নারীর পাত্তা পাওয়ার জন্য পিছু ঘুরছে। নিজেকে ধিক্কার দেয় সে। আগে কোনো জুনিয়র কে এমন করতে দেখলে মেজাজ খারাপ হতো তার। আর এখন কিনা সে নিজেই....
মোহ এতক্ষন ধরে উষ্ণের কাজবাজ লক্ষ্য করছিল। এবার সে ধৈর্য্যহীন হয়ে বলে,
- "কী ভাবছেন এভাবে?"
উষ্ণ কেঁপে ওঠে। ভাবনায় বেঘাত ঘটায় কিছুটা বিরক্ত হয়। তবে সেটা প্রকাশ না করে কথা ঘুরিয়ে বলে,
- "একটা ছেলের সাথে নিস্তব্ধ লাইব্রেরীতে বসে আছেন যে? একটুও ভয় লাগছেনা?"
মোহ ওকপটে বলে,
- "আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আমার এতো ভয় নেই। আমার ভয় অনেক আগেই চলে গেছে।"
উষ্ণ উত্তর দেয় না। মোহ নিজ থেকে বলে,
- "আমার জীবনের ঘটনা শুনবেন?"
উষ্ণ অবাক হয়। এভাবে একটা অচেনা অজানা কাউকে কেউ তার জীবনের ঘটনা বলতে চায়? অবাকত্ব নিয়েই সে বলে,
- "আমি তো আপনার বিশ্বস্ত কেউ নই। যদি আপনার বিশ্বাস ভেঙে দি?"
মোহ হাসে। আবার নির্লিপ্ত হয়ে যায়। কিছুক্ষন চুপ থেকে সে বলে,
- "আমার ব্যাপারে সবাই জানে। এজন্যই তো কেউ আমার সাথে মিশতে চায় না, কথা বলতে চায় না।"
উষ্ণ অবাক হয়। বুঝতে পারে না মোহ কী বলতে চাইছে?
- "মানে? কেন?"
মোহ তার দিকে অন্যরকম দৃষ্টিতে তাকায়। পরক্ষণেই হেসে ফেলে...


Post a Comment

0 Comments

Close Menu