Ad Code

সেই তুমি (সিজন - ২) পর্ব - ৭

 লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা

ভাইয়া তার আলমারি খুলে একটা শাড়ি বের করে আমার হাতে দিলেন।

-- যা এটা পড়ে আয়। ওই মশারি আর পড়তে দেবো না তোকে।
-- আপনি শাড়ি কোথায় পেলেন?
-- সেদিন শপিং এ কি এমনি এমনি গিয়েছিলাম! সবার অগচোড়ে তোর জন্য সব কিনে নিয়েছি। এই শাড়িটাও। আর আমি শিউর এটা তোর উপর অনেক মানাবে।
ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। সত্যি এই মানুষটার থেকে বেশি কেউ আমাকে বেশি ভালোবাসতে পারবে না। শাড়িটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমের সামনে থেকে আবারো ফিরে এসে ভাইয়ার কাঁধে দুই হাত রেখে পা উঁচু করে দাড়ালাম।
-- যতোই পা উঁচু করে দাড়াস, তুই পুচকি পুচকিই থাকবি।
-- আবার পুচকি বলছেন! যাক বলুন। আদর করে পুচকিই বলিয়েন। শুনুন, আমরা কি এখন গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড?
--না মোটেও না। তোর মতো পুচকি আমার গার্লফ্রেন্ড হতেই পারে না।
-- তাহলে আমি কি আপনার!
-- আচ্ছা তোর বয়স কতো বলতো?
-- ১৭! কেনো জানতেন না বুঝি!
-- আমার বয়স জানিস? ২৫ বছর আমার। তোর থেকে গুণে গুণে ৮ বছরের বড় আমি। আর এতো ছোট, বাচ্চা একটা মেয়েকে গফ কিভাবে বানাবো??
-- মানে কি!
-- মানে হলো এই যে তোকে আমি বউ বানাবো। লাল বেনারসি শাড়ি তোর গায়ে জরিয়ে দিয়ে এই ঘরে নিয়ে আসবো।
-- হ্যাঁ। তখন আর লুকিয়ে আমার ঘরে গিয়ে আমাকে কিস করতে হবে না। আমার সামনেই করতে পারবেন।
-- কিহ!
-- হুম। রোজ রাতে লুকিয়ে আমার ঘরে গিয়ে আমাকে আদর করতে মনে থাকে আর পারফিউম চেঞ্জ করতে মনে থাকে না!
-- কি বলছিস এসব!
-- আচ্ছা আমি মানছি আমি ছোট সবকিছু বুঝি না। কিন্তু রাতে যে কেউ একজন লুকিয়ে আমার ঘরে আসে, সেটাও কি আমি বুঝবো না! প্রথম যেদিন আপনি আমার ঘরে এসেছিলেন সেদিন চিনতে পারি নি আপনাকে। কলেজ থেকে ফেরার পথে আমাকে ওই বখাটেদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন!! সেদিনও চিনতে পারি নি। তবে বুঝতে পেরেছিলাম এই মানুষটাই রাতে আমার ঘরে আসে। মানুষটা যে আপনি সেটা শিউর হয়েছিলাম সেদিন ছাদে। আপনি সেম পারফিউম পরেছিলেন।
-- বাহ বাহ তুই তো সেই পরিমাণ ধূর্ত! তা এখন একটু উপকার করেন আমার উপর। যান শাড়িটা পরে আসেন। ফাংশন বোধ হয় শেষ হয়ে গেলো।
-- আচ্ছা আমাকে কি একটু আদর করে দেবেন না!! এতোদিন লুকিয়ে আদর করতেন আর এখন আমি চাইছি তাই ভাব দেখাচ্ছেন।
-- কি আমি ভাব দেখাচ্ছি!!
-- আর নয়তো কি। নতুন বউ এর মতো লজ্জা পাচ্ছেন।
তুর্য হীরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে হীরকে বুকে জরিয়ে নেয়। হীরও পরম আবেশে তুর্যকে আঁকড়ে ধরে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর হীর তুর্যর দেওয়া শাড়িটা পরে ছাদে চলে যায়। ছাদে সবাই নাচ গানে মত্ত হয়ে আছে। বড়রা কেউই সেখানে উপস্থিত নেই। হয়তো সবাই নিচে বিয়ের আয়োজন করায় ব্যস্ত।
হিয়া, নিলি-মিলি আর নিলয় সবাই ডান্স করছে। এরপরেই হীরের নাম্বার। তুর্য মেহমানদের সামলাচ্ছে আর বারবার আড়চোখে হীরকে দেখছে। হীর নাচতে চেয়েছিল কিন্তু একয়েকদিনের ঝামেলাতে প্র্যাকটিস করতে পারে নি।
-- তুই নাচতে পারবি না! (তুর্য)
-- কিন্তু কেনো? (হীর)
-- আমি চাই না কেউ তোকে নাচতে দেখুক। কেউ তোর দিকে তাকালে আমার সহ্য হবে না।
-- সাইকোদের মতো কথা বলছেন!
-- সে তোর যা ইচ্ছা ভাবতে পারিস।
-- আচ্ছা নাচবো না। গান তো গাইতেই পারি। আর আমার গানটা আপনার জন্যই গাইবো।
-- আরেহ শোন! হীর!!
হীর তাফসির কাছে গিয়ে তুর্যর চোখের দিকে তাকিয়ে গান ধরলো,,,
🎼🎼
শোন গো দখিনো হাওয়া,
প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি
মনেতে লুকানো ছিল সুপ্ত যে পিয়াসা
জাগিল মধু লগনে বাড়ালো কি আশা
উতলা করেছে মোরে, আমারি ভালবাসা
অনুরাগে প্রেম শরীরে
ডুব দিয়েছি আমি
শোনগো মধুর হাওয়া
প্রেম করেছি আমি!!
দহনো বেলাতে আমি,
প্রেমেরো তাপসী
বরষাতে প্রেম ধারা,
শরতের শশী
রচিগো হেমন্তে মায়া,
শীতেতে উদাসী
হয়েছি বসন্তে আমি
বাসনা বিলাসী
শোনগো মধুর হাওয়া
প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা
দিক ভুলেছি আমি!!!!!
করোতালির শব্দে ধ্যান ভাঙে তুর্যর। হীরের চোখেই এতোক্ষণ হারিয়ে ছিল সে। এতো বছরের অপেক্ষার পর তার ছোট বেলার ভালোবাসাকে ফিরে পেয়েছে সে। ১৮ বছর বয়সের সেই আবেগ টা আজ পূর্ণতা পেয়েছে। হয়তো আজ তুর্যর থেকে বেশি খুশি আর কেউ নেই। আচ্ছা সে এখনই এতো খুশি তাহলে যখন হীরকে বউ বানিয়ে ঘরে তুলবে তখন কতোটা খুশি হবে!! তখনই তুর্যর মাথায় সেই ৭ বছর আগের চিন্তা টা ভর করলো। তাদের বাড়ির সবাই কি তার আর হীরের সম্পর্ক টা মেনে নেবে! তার মা কি মেনে নেবে হীরকে! নাকি ৭ বছর আগে যা করেছিল আবারো তাই করবে?
না ৭ বছর আগের তুর্য দুর্বল ছিল। এখন সে সাবলম্বী। হীরের আর নিজের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু নিজের মায়ের মনে সে কষ্ট দিতে চায় না। সে তার মা কে রাজী করাবে হীরকে মেনে নেওয়ার জন্য।
এদিকে তুর্যদের বাসায় তমা বেগমের সামনে বসে কাঁদছে রুহি। রুহিকে তার মা কাকলি সামলাচ্ছে আর তমা সান্ত্বনা দিচ্ছে। কিন্তু রুহির থামার কোনো লক্ষণই নেই। সকালে হীরের তাকে থাপ্পড় মারা থেকে শুরু করে তুর্য আর হীরের প্রেম করা পর্যন্ত সব কিছু আরও মশলা পাতি মিশিয়ে বলেছে তমা বেগমকে। সবকিছু শুনে তমা বেগমের মাথায় আগুন ধরে গেছে।
-- হাফসার মেয়েকে আমি আমার বাড়ির বউ কখনই বানাবো না কাকলি। আমি খুব ভালো করেই জানি হাফসা নিজের মেয়েকে আমার ছেলের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছে। তুর্যর বাবার টাকা দেখে লোভ সামলাতে পারে নি হাফসা। তাই তো একটা ১০ বছরের মেয়েকে দিয়ে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে। কি মনে করে ওরা যে আমি কিছু বুঝি না? আমি সব বুঝি। নিজের কোনো ছেলে নেই তাই মেয়েকে আমার ছেলের কপালে গছিয়ে দিয়ে পুরো সংসারের দায়িত্ব তুর্যর কাঁধে দিতে চায়। কিন্তু আমি তো এমনটা হতে দেবো না।
-- ভাবি তুমি কিছু একটা করো। তুর্য যদি হীরের প্রেমে পরে যায় আবারো! তাহলে আমার রুহির কি হবে। তুমি তো জানোই রুহানের আব্বুর যা কিছু আছে তার অর্ধেকর মালিক রুহি। আর বিয়ের পর তুর্য।
-- তুমি একদম চিন্তা করো না কাকলি। হীরের ছায়াও আমি আমার তুর্যর উপর পড়তে দেবো না। এজন্য যা করার দরকার আমি করে নিয়েছি। এখন শুধু অপেক্ষা ফলাফলের।
🍂
🍂
🍂
ফাংশন শেষে অনেক রাতে সবাই ঘরে ফিরে এলো। হীর ফ্রেশ হয়ে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাড়িয়ে আছে। আজ অনেক অনেক খুশি সে। আকাশে মেঘ করেছে। আজ হয়তো আকাশও তার খুশি দেখে হিংসে করছে। দুচোখ বন্ধ করে হীর ঠান্ডা বাতাস গায়ে মাখিয়ে নিচ্ছে। তখনই পিছন থেকে কেউ জরিয়ে ধরলো তাকে। আচমকা এমনটা হওয়াতে ঘাবড়ে গেলো হীর। কিন্তু পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলো। কারণ সে জানে কে তাকে জরিয়ে ধরেছে। তুর্যর ঘ্রাণ টাও এখন তার কাছে পরিচিত হয়ে গেছে।
-- এতো রাতে কেনো এলেন! সারাদিন কতো খাটুনি গেছে আপনার। একটু রেষ্ট নিলেই পারতেন।
-- আমার সব আরাম তো তোর কাছেই তাই চলে এলাম।
হীর পিছন দিকে ঘুরে তুর্যর বুকে মুখ লুকালো। তুর্য হীরের খোলা চুলের গভীরে মুখ গুজে দিচ্ছে। তখনই দরজায় টোকা পরলো।
-- কেউ এসেছে। আপনি যান এখান থেকে।
-- না যাবো না তুই দরজা খুল।
-- পাগলামো করবেন না যান তো। বাসায় কেউ আপনাকে দেখে ফেললে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।
-- এমন করিস না তো তোকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না রাতে।
-- বিয়ে পর্যন্ত না হয় জেগে জেগেই রাত পার করেন।
-- আজকে যাচ্ছি কিন্তু এর শাস্তি পেতে হবে।
-- শাস্তি!!
-- ভালোবাসার শাস্তি। পেলেই বুঝবি।
-- হয়েছে এখন যান তো। দরজা মনে হচ্ছে ভেঙেই ফেলবে।
তুর্য ব্যালকোনি দিয়ে নেমে গেলে আমি দরজা খুলে দিলাম। দরজায় আম্মু দাড়িয়ে আছে। একটা শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকলো আম্মু।
-- এতো দেরি করলি কেনো দরজা খুলতে?
-- ঘুমিয়ে পরেছিলাম তাই।
-- শোন। কালকে এই শাড়িটা আর গয়নাগুলো পড়ে তৈরি হয়ে নিবি। তাফসির বিয়ের পর পরই তৈরি হয়ে নিবি।
-- আরেহ বিয়ের পর কেনো তৈরি হবো বিয়ের আগেই তৈরি হবো।
-- আজকে কিশোর আর ওর বাবা মা এসেছিল। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
-- সত্যি বলছো মা! যাক এবার তাহলে হিয়ার বিয়েটা হয়েই যাবে। এক হিসেবে ভালোই হবে হিয়া কিশোর ভাইয়াকে অনেক পছন্দ করে। শাড়িটা খুলে দেখি হ্যাঁ।
-- না না এখন দেখতে হবে না। তুই এখন ঘুমিয়ে পর। সকালে উঠতে হবে। চোখের নিচে কালো দাগ পরে থাকলে ভালো দেখাবে না। আমি যাই তুই শুয়ে পর।
আম্মু চলে গেলে ব্যাগটা আলমারিতে রেখে আমি শুয়ে পরলাম। এতো খুশি লাগছে বলার মতো না। এখন হিয়ার বিয়ে হয়ে গেলে আমার আর তুর্য ভাইয়ার লাইন ক্লিয়ার। তারপর আমাদের বিয়ে। এতোগুলো দিন কিভাবে কাটবে আমার!!! কথা গুলো চিন্তা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি কে জানে!
🍁
🍁
অন্ধকার ঘরে বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে হিয়া। ছোটবেলা থেকে দেখে আসা স্বপ্নটা আজ ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই কিশোরকে জীবন সঙ্গী হিসেবে চেয়েছে সে। হয়তো এতোটা কষ্ট হতো না যদি না সেই মানুষটা তার ছোট বোনেই স্বামী হতো। হিয়ার মনটা আজ কয়েকশত টুকরো হয়ে ভেঙেছে যখন শুনেছে কিশোর হীরকে পছন্দ করে আর বিয়ে করতে চায়।
তুর্যর সাথে হীরের মেলামেশা বন্ধ করতে হীরের মা বিয়েতে রাজি হয়ে গেছেন। কিশোর ছেলে হিসেবে ভালো, হীরকে পছন্দ করে আর সবচেয়ে বড় কথা হীরের বিয়ে হয়ে গেলে তমা বেগমের আক্রোশ কিছুটা হলেও কমে যাবে। গত ৭ বছর ধরে পদে পদে হাফসা বেগম যেই অপমান সহ্য করে আসছেন, তার জবাব হবে এই বিয়ে। তাই তো কিশোরের বাবার প্রস্তাবে বিনা বাক্যে রাজী হয়ে গেলেন। তাফসির বিয়ের দিনই পারিবারিক ভাবে হীরের আকদ্ করিয়ে রাখবেন কিশোরের সাথে।
কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে হিয়ার। এমনটা হয়ে গেছে ভাবতেই হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যতোবার কিশোর তাদের বাড়িতে এসেছে সে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখতো তাকে। প্রতিবার এক নতুন স্বপ্নের জাল বুনেছে সে কিশোর কে নিয়ে। আর আজ তার সেই স্বপ্নের পুরুষ তার ছোটো বোনের স্বামী হতে যাচ্ছে। নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর। বাড়ির বড় মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও আগে তার ছোট বোনের বিয়ে হচ্ছে। সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না। কারণ সে যে তার বাবা-মায়ের আদর্শ সন্তান। কখনও তাদের মুখের উপর কথা বলে নি। আজ কিভাবে বলবে! পরিস্থিতি তাকে একদিন এখানে এনে দাড় করিয়ে দেবে কে জানতো!! এক বুক কষ্ট নিয়ে রাতটা পাড় করে দেয় হিয়া।
🍂
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই ফ্রেশ হয়ে শপিং ব্যাগটা হাতে নিলাম। কোনো গিফ্ট পেলে সেটা না দেখে আমি আবার থাকতে পারি না। শপিং ব্যাগটা খুলতেই আমার হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো। মুহূর্তেই সেখানে চিন্তা এসে ভর করলো। লাল বেনারসি আর বিয়ের গয়না!! এগুলো আম্মু আমাকে কেনো পড়তে বলেছে? বাইরের আবহাওয়া ঠান্ডা কিন্তু তবুও আমার কপাল বেয়ে চিকন ঘাম দিচ্ছে। কেনো যেনো মনে কূ ডাকছে। এমন কিছু হতে চলেছে যেটা আমি চাই না!! ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ছুট লাগালাম বাইরে।
আশ্চর্য! বিয়ে তাফসি আপুর কিন্তু আমাদের বাসায় হঠাৎ এতো আয়োজন কিসের! কেমন যেনো কিছু ঠিক মনে হচ্ছে না। প্রথমে বেনারসি আবার এখন এতো আয়োজন। আমার বুকটা অত্যন্ত দ্রুত বিট হচ্ছে।
আম্মুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হিয়ার মুখটাও কেমন মলিন। চোখ দুটো ফুলে আছে। হিয়া কি কান্না করেছে?? হঠাত কোথা থেকে আম্মু এসে আমাকে আমার ঘরে নিয়ে এলেন টেনে। আমার কিছু জিজ্ঞাসা করা আগেই আম্মু হলুদ জাতীয় কিছু একটা আমাকে লাগিয়ে দিতে এগিয়ে এলেন।
-- এসব কি? আর এই লাল বেনারসি, গয়না এসব কেনো? তুমি আমাকে এগুলো পড়তে বলেছো কেনো?
-- এতো প্রশ্ন করিস কেনো? পড়তে বলেছি পড়ে তৈরি হয়ে যাবি।
-- না আম্মু আমাকে জানতে হবে। বাসায় এতো আয়োজন কিসের? হিয়াকে দেখতে এসেছিল! বিয়ে কি ঠিক হয়ে গেছে? কবে বিয়ে? আর এই শাড়ি আমাকে কেনো দিয়েছো? বলো না আম্মু চুপ করে আছো কেনো?
-- কিশোর হিয়ার জন্য না তোর জন্য এসেছিল। তোকে পছন্দ করে আর আজকে আকদ্ করতে চায়। তাই আজকেই তাফসির বিয়ের পর তোর আর কিশোরেরও আকদ্ টা সেড়ে ফেলবো। পরে না হয় ধুমধাম করে বিয়ে হবে।
আম্মু কথায় যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। আজকে সন্ধ্যায় আমার বিয়ে দিচ্ছেন তারা আর আমি এসবের কিছুই জানি না। না না আমি তুর্যকে ছাড়া অন্য কারো কথা স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারবো না।
-- এসব কি বলছো তুমি আম্মু! আমার বিয়ে! কিশোর ভাইয়ার সাথে! তাও আবার আজকে!! তুমি মজা করছো আমার সাথে তাই না! আমি জানি তুমি মজা করছো।
-- আমার আর তোর মজা করার সম্পর্ক নয় হীর। আমি যা বলছি তা সবই সত্যি।
-- তোমরা এটা করতে পারো না আমার সাথে। আমার জীবনের এতোবড় ডিসিশন তোমরা এভাবে নিতে পারো না।
-- তোর মা বাবা হিসেবে এতোটুকু অধিকার তো আমাদের আছেই তাই না। সেই অধিকার থেকেই তোর বিয়ে ঠিক করেছি।
-- না আম্মু প্লিজ এ বিয়ে ভেঙে দাও আমি পারবো না। আমি পারবো না অন্যকারো হতে। আমি যে,,, আমি যে তুর্য ভাইয়াকে ভীষণ ভালোবাসি।
কথাটা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু হাফসার হীরকে চড় মারতে দেরি হয় নি।
-- নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার। লজ্জাও করে না নিজের মায়ের মুখের উপর এসব কথা বলতে!
-- আম্মু তুমি আমাকে আরো মারো কিন্তু আমি সত্যি তুর্যকে অনেক বেশি ভালোবাসি। তুর্য ছাড়া হীরের কোনো অস্তিত্ব নেই। আমি মরে যাবো তুর্যকে ছাড়া।
-- তুই জন্মের পরেই মরে গেলে ভালো হতো। তোর মতো মেয়েকে পেটে ধরেই আমি ভুল করেছি। ৭ টা বছর ধরে এতো অপমান সহ্য করতে হয়েছে আমাকে একমাত্র তোর জন্য। এ বাড়ির প্রতিটি মানুষের ঘৃণা সহ্য করতে হয়েছে আমাকে আর তোর বাবাকে। বড় ভাবি, নিলির আম্মু-আব্বু, কাকলি এরা সবাই এখন পর্যন্ত আমাকে দায়ী করে পরিবার ভাঙার কারণ হিসেবে। আমাকে কথা শুনায় এমন চরিত্রহীন মেয়ে পেটে ধরার জন্য।
আমি জানি ৭ বছর আগে যা হয়েছিল সেটা তোর দোষ না। পুরোটাই তুর্যর পাগলামি ছিল। কিন্তু ভাবি একবারও নিজের ছেলের দোষ ধরে নি। সবার চোখে আমার মেয়েকে দোষী করেছে। তোর কি মনে হয় এগুলো আমি ভুলে যাবো!! কখনই না। এসব আমি বেঁচে থাকতে ভুলতে পারবো না। তুর্য বাড়ি ফেরার পর আবার সেই পাগলামি শুরু করেছে। আর এইবার তুর্যর সাথে তুইও যোগ দিয়েছিস। কিন্তু আমি সেটা হতে দেবো না। আজকেই তোর আর কিশোরের বিয়ে হবে।
-- মা আমি মানছি এতোবছর তুমি অনেক অপমান সহ্য করেছো। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তুর্যকে অনেক ভালোবাসি। তুর্যকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। নিজেদের ঝগড়ার রেশ ধরে আমাদের এতো বড় শাস্তি দিও না। আমি সত্যি মরে যাবো। এমন করো না মা।
-- তোর কাছে দুইটা পথ খোলা আছে হীর। হয় নিজের ইচ্ছায় কিশোরকে বিয়ে করে নিবি না হয় আমার আর তোর বাবার মরা মুখ দেখবি। তোর জন্য বড় ভাবির পায়ে ধরার চেয়ে আমাদের মরে যাওয়া অনেক ভালো।
-- এভাবে বলো না আম্মু। আমার জন্য তোমরা আর তুর্য একসমান গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো একজনকে ছাড়া থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি তুর্যকে অনেক ভালোবাসি আম্মু। আর তুর্যও আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। তুর্য ঠিক বড় চাচিকে রাজি করিয়ে নেবে।
-- আমাদের মরা মুখ দেখতে চাইলে তুই এখনি তুর্যর কাছে চলে যা। আর যদি তোর বাবা আর আমাকে জীবিত দেখতে ইচ্ছা হয় তবে তৈরি হয়ে নিস।
কথাটা বলেই হীরের মা ঘর ছেড়ে চলে গেলেন। যাওয়ার সময় দরজা টা বাইরে থেকে লক করে গেলেন। ভিতরে হীর জোড়ে জোড়ে কাঁদছে। মেয়ের কান্না সে শুনছে। তারও খুব কষ্ট হচ্ছে এভাবে নিজের মেয়েকে কষ্ট দিতে কিন্তু সে খুব ভালো করেই জানে তমা বেগম কখনই হীরকে মেনে নেবেন না। তমা বেগম শুরু থেকেই মনে করতেন হীরকে তুর্যর গলায় ফাঁসিয়েছে টাকার জন্য। তুর্যকে লন্ডন পাঠানোর পরও তমা বেগম থেমে থাকেন নি। পদে পদে হেনস্তা করেছেন হাফসা আর তার মেয়েদের। এতোকিছুর পর হাফসা কিছুতেই হীরকে তুর্যর হাতে দেবে না। কিছুতেই না।
বন্ধ দরজার ওপাশে হীর কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হিচকি উঠে গেছে। বারবার মিনতি করছে এ বিয়ে থামাতে। তুর্যর থেকে আলাদা না করতে। কিন্তু তার কান্না তার মিনতি চার দেয়ালের মধ্যেই মিশে যাচ্ছে। কেউ চাইলেও কিছু করতে পারছে না। পারিবারিক দন্দ্বের রেশ ধরে ঘুটে ঘুটে মরে যাচ্ছে হীর আর তুর্যর ভালোবাসা। কোনো উপায় না পেয়ে হীর তুর্যকে ফোন লাগায়। বারবার ফোন নট রিচেবল বলছে। ধৈর্য ধরতে পারছে না হীর। সময় আর বেশি নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো সব শেষ হয়ে যাবে।
কোথায় আপনি তুর্য!! আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া বাঁচতে। আমাকে নিয়ে যান তুর্য। আমি আপনাকে ছাড়া মরে যাবো তুর্য। ভালোবাসি আপনাকে আমি। কোথায় আপনি!! আপনার হীরের আপনাকে প্রয়োজন। প্লিজ আমার কাছে আসুন।।।।।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu