লেখিকাঃ তানজিল মীম
-- ও মা, আমি কিছুতেই রিয়াদ ভাইয়াকে বিয়ে করবো না,উনি খালি মারে আমায়?'
মায়ের আঁচল ধরে নেকাকান্না জুড়ে দিয়ে কথাটা বলে উঠল তানজু তাঁর মাকে। আর তানজুর কথা শুনে তানজুর মা নির্বিকার কন্ঠে বলে উঠল,
' এখন বিয়ে করবি না কেন, আগে যখন বলেছিলাম বিয়ে নিয়ে নাচানাচি না করতে তখন মনে ছিল না।'
' ও মা বিশ্বাস করো মুই বিয়ার জন্য নাচি নাই, ওই শিফার সাথে ডেয়ার খেলছিলাম। শিফা ডেয়ার দিছিল আমি যেন তোমার আঁচল ধরে বিয়ে করমু কথাটা বলি। আমিও তাই করছি মাঝখান দিয়া তোমরা সিরিয়াস হইয়া গেলা কেন?'
' ভালো হইছে আরো বেশি বেশি ডেয়ার খেল। তোর জন্য রিয়াদই পারফেক্ট।'
' এমন কইরা কইয়ো না মা, তুমি যারে বিয়া করতে কইবা আমি তারে বিয়া করতে রাজি শুধু রিয়াদ ভাইয়া ছাড়া?'
তানজুর কথা শুনে নিজের শাড়ির আঁচলটা তানজুর হাত থেকে ছাড়িয়ে বলে উঠল তানজুর মা,
' কেন রিয়াদের কি সমস্যা তোর? কত ভালো ছেলে ও। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে এসেছে বড় ডাক্তার। দেখতেও মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর,তুই জানিস মেয়েরা ঘরে বয়ে এসে তোর খালামনির কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছেলে ভালো ভদ্র, কত সুন্দর করে কথা বলে। এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করতে পারছিস এটা তোর সৌভাগ্য বুঝলি। না হলে তোর মতো বান্দর মাইয়ারে বিয়া দিতে আমার অবস্থা খারাপ হইয়া যাইতো।'
' সৌভাগ্য না ছাই বিয়ের আগেই আমাকে মারে বিয়ে হয়ে গেলে তো মারতে মারতে আমাকে আলুভর্তা বানিয়ে দিবে। ( মনে মনে)
তানজু কিছুটা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
' এমন সৌভাগ্য আমার লাগবে না মা তুমি এই বিয়ে ক্যান্সেল করো?'
' তোর সমস্যাটা কোথায় বলতো, একটা কারন বল যে কারনে তুই রিয়াদকে বিয়ে করতে চাস না।'
' তুমি জানো না মা উনি রাত জেগে মাইয়া গো লগে বকবক করে, সাত আটটা গার্লফ্রেন্ডও আছে। এমন পোলার সাথে তুমি তোমার মেয়ের বিয়ে দিবে।'
তানজুর কথা শুনে তানজুর মা অবাক হয়ে বললো,
' তুই সত্যি বলছিস?'
' তা নয় তো কি সেদিন রাতে ওনার রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শুনেছিলাম আমি। আর শোনার জন্যই তো উনি আমায়,
বলেই পিছন দিকে তাকাতেই দরজার সামনে রিয়াদকে দেখে শুকনো ঢোক গিললো তানজু। কারন ভয়ংকর ভাবে রেগে চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে রিয়াদ তাঁর দিকে। আয় হায় তাঁর মিথ্যে কথাগুলো কি তাহলে সব শুনে ফেললো রিয়াদ।'
রিয়াদকে দেখেই তানজুর মা বলে উঠল,
' ওই তো রিয়াদ চলে এসেছে তোরা দুজন কথা বল আমি যাই।'
বলেই চলে যায় তানজুর মা। মায়ের কান্ডে আরো ঘাবড়ে যায় তানজু। এবার নির্ঘাত তাঁকে মেরেই ফেলবে রিয়াদ। তানজু শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বললো,
' ভালো আছো ভাইয়া? কখন এলে? খেয়েছো?'
রিয়াদ চুপ। তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। থমথমে চেহারা নিয়ে শুধু তাকিয়ে আছে সে তানজুর মুখের দিকে। রিয়াদের রিয়েকশন দেখে তানজুর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। তানজু আবারো বলে উঠল,
' তুমি কি রেগে গেছো ভাইয়া?' বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে কিছু বলি নি। আসলে হয়েছে কি তোমার আমার বিয়েটা যাতে না হয় তাই বলেছিলাম।'
রিয়াদ রেগে গেছে, ভীষণ রেগে গেছে। রিয়াদ ভিতর থেকে দরজা আঁটকে দিল। রিয়াদের কান্ডে তানজু শেষ। ভয়ে ভয়ে বললো তানজু,
' তুমি দরজা কেন আটকালে ভাইয়া?'
প্রতি উওরে রিয়াদ কিছু না বলে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকে তানজুর দিকে। এবার তানজুর অবস্থা আরো খারাপ। ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বললো,
' ভাইয়া তুমি আগাচ্ছো কেন? বিশ্বাস করো ভুল হয়ে গেছে। আমি জীবনে আর কোনোদিন তোমার নামে মিথ্যে কথা বলবো না। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।'
এবার রিয়াদ মুখ খুললো। বললো,
' সত্যি আমি যা বলবো তুই তাই করবি।'
' হুম তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।'
' ঠিক আছে তাহলে তুই এক্ষুনি বাড়ির সবাইকে গিয়ে বলবি তুই এই বিয়ে করতে রাজি।'
রিয়াদের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো তানজু,
' এ না না আমি পারবো না।'
সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুখ লাল করে বললো রিয়াদ,
' কি বললি তুই?'
রিয়াদের কথা শুনে ভয়ে চুপসে গেল তানজু। বললো,
' তুমি এমন কেন ভাইয়া আমারে খালি ভয় দেখাও। তোমারে বিয়া করলে আমার জীবন তো তেজপাতা হইয়া যাইবো,
' ওইভাবে তাকিও না আমি ভয় পাই।'
' এতক্ষণ আমার নামে মামুনির কাছে যে মিথ্যে কথা বললি তখন মনে ছিল না।'
' তাঁর মানে মিথ্যে কথা বলার জন্য তুমি আমায় বিয়ে করতে চাইছো?'
প্রতি উওরে চুপ রইলো রিয়াদ। কিছুক্ষন ভেবে বললো,
' তুই সবাইকে বলবি কি না বল?'
' না কমু না, কারন আমি তোমারে বিয়া করমু না।'
' তুই বিয়ে করবি না তোর ঘাড় বিয়ে করবে।'
' তাহলে তুমি আমার ঘাড়কেই বিয়ে করো।'
এমন সময় ওদের রুমের দরজায় নক করলো অপূর্ব। অপূর্ব হলো তানজুর আপন বড় ভাই। বললো,
' এই তোরা এখনো ভিতরে কি করছিস বাবা ডাকছে তোদের তাড়াতাড়ি বাহিরে আয়।'
অপূর্বের কথা শুনে তানজুও বলে উঠল,
' এই তো আসছি ভাইয়া,
' ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আয়।'
বলেই অপূর্ব চলে গেল। অপূর্ব যেতেই রিয়াদ তানজুর হাত ধরে বললো,
' যদি নিচে গিয়ে উল্টো পাল্টা কিছু বলিস তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে বলে দিলাম।'
' খবর না ছাই যাও তো যত যাই হয়ে যাক তোমায় আমি বিয়ে করছি না।'
বলেই একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যেতে লাগলো তানজু। তানজুর কাজে রিয়াদ হাল্কা হেঁসে বললো,
' দাঁড়া?'
তানজু দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,
' হুম বলো,
রিয়াদ তাঁর ফোনটা পকেট থেকে বের করতে করতে বললো,
' তুই সত্যি এখন সবাইকে গিয়ে বলবি তুই বিয়ে করবি না।'
উওরে তানজুও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
' হুম।'
' ঠিক আছে তবে আমিও না হয় তোর এই আমসত্ত্বা চুরি করার ছবিগুলো সবাইকে দেখিয়ে দেই। নানুকে দেখালে সবচেয়ে বেশি ভালো হবে।'
বলেই ছবিগুলো দেখালো রিয়াদ তানজুকে। ঠিক দু'দিন আগের ঘটনা রান্না ঘরে সবাইকে লুকিয়ে আমসত্ত্বা চুরি করে খেয়েছিল তানজু। আমসত্ত্বাগুলো নানুর খুব ফেভারিট ছিল। নানু বারনও করেছিল আমসত্ত্বা না খেতে কারন ওগুলো তিনি তাঁর ছোট মেয়ের শাশুড়িকে পাঠাতে চেয়েছিল। কিন্তু তানজু শোনে নি লুকিয়ে লুকিয়ে সব খেয়ে ফেলে। নানুর সাথে ঝগড়া লেগেছিল তানজুর তাই রাগ করে এমনটা করে সে। এইভাবে ধরা খেয়ে যাবে ভাবে নি। তানজু একবার মোবাইল তো একবার রিয়াদের দিকে তাকালো। নানুর হাতের সেই লাঠির মারের কথা মনে পড়তেই তানজু চেঁচিয়ে বাহিরে যেতে যেতে বলে উঠল,
' ও মা আমি বিয়া করমু।'
বলেই বেরিয়ে গেল তানজু। আর তানজুর কান্ডে রিয়াদ হাসতে হাসতে শেষ।'
অতঃপর সামান্য আমসত্ত্বা চুরির জন্য বাধ্য হয়ে বিয়ে করা লাগলো তানজুর রিয়াদকে।'
বাসর ঘরে চুপচাপ বসে আছে তানজু। সামনেই টেবিলের ওপর দুধের গ্লাসটার দিকে তাকালো সে। পুরো লাল টকটকে হয়ে আছে গ্লাসটা। এমন সময় রুমের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলো রিয়াদ। রিয়াদ এসেছে বুঝতে পেরেই হকচকিয়ে উঠলো তানজু। হাল্কা নড়েচড়ে ঠিক মতো বসলো সে। পা টা ব্যাথা করছে তাঁর। তবে সেই ব্যাথাটাকে পুরোই উপেক্ষা করে বসে রইলো তানজু।'
রিয়াদ আশেপাশে কোথাও না তাকিয়ে এগিয়ে আসলো তানজুর দিকে। বসলো তানজুর সোজাসুজি তারপর বললো,
' কিরে বিয়ে করবি না বলে।'
' ওভাবে তাকাস না প্রেমে পড়ে যাবো তো।'
রিয়াদের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে ফেলে তানজু। তানজুর রিয়েকশনে হাসলো রিয়াদ। এভাবে কিছুক্ষন যাওয়ার পর হঠাৎই তানজু টেবিলের উপরে থাকা দুধের গ্লাসটা এগিয়ে দিল রিয়াদের দিকে। তারপর বললো,
' এটা তোমার জন্য, শিউলি আপু দিতে বলেছিল?'
রিয়াদ পুরো গ্লাসটায় চোখ বুলালো। বললো,
' ওটা এতো লাল কেন?'
'দুধের মধ্যে গুঁড়ামরিচ দিলে লাল তো হবেই চান্দু' -- কথাটা মনে মনে ভেবে। বলে উঠল তানজু,
' আমি কি জানি শিউলি আপু যেভাবে দিয়ে গেছে আমিও সেভাবেই দিলাম।'
রিয়াদের খটকা লাগলো। তবে বেশি না ভেবে গ্লাসটা হাতে নিতে নিলো সে। কিন্তু তানজু দিল না। বললো,
' শিউলি আপু বলেছে নিজ হাতে তোমায় খাইয়ে দিতে।'
' ওহ এই ব্যাপার।'
' হুম।'
' ঠিক আছে খেতে পারি কিন্তু আমি খাওয়ার আগে তোমায় খেতে হবে বউ,
রিয়াদের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তানজুর। বলে,
' না না আমি এটা খাবো না।'
' কেন খাবে না?'
রিয়াদের কথা শুনে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বললো তানজু,
' ওটা তোমার জন্য আনা তুমি খাও না।'
' তা বললে শুনছি না তোমায় তো খেতেই হবে বউ।'
বলেই তানজুকে জোর করে খাওয়াতে লাগলো রিয়াদ। প্রথম দুই চুমুক খেতেই তানজুর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। কান দিয়ে ধুমা বের হওয়ার উপক্রম তাঁর। তানজু আর খেতে না পেরে তক্ষৎনাত গ্লাসটা সরালো। তারপর কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে বললো,
' ও মা আমি বিয়া করমু না।'
তানজুর কথা শুনে উচ্চস্বরে হেঁসে বললো রিয়াদ,
' তোমায় আর বিয়ে করতেও হবে না জানেমন। বিয়ে তো অলরেডি হয়েই গেছে।


0 Comments