Ad Code

আমার প্রথম অনুভূতি ছিলে তুমি

লেখিকাঃ তানজিল মীম

বয়সটা তখন সবে ষোল! দশম শ্রেণির গন্ডি টপকাতে দু'মাস বাকি ছিল তখন। পরীক্ষার টেনশনে ফুড়ফুড়ে আমেজ। রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে পড়তে বসার নিয়মটা ছিল যেন ডেইলি রুটিনের একটা অংশ। মায়ের কড়া আদেশ পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো করতেই হবে। গ্রামের মাস্টার মশাইও ছিল খুব ধটপটে। দিনে দু'বার এসে পড়িয়ে যেতেন রোজ। তাঁর মাঝে স্কুল যাওয়া বন্ধ প্রায়, সপ্তাহে এক দু'বার বাদে আর যাওয়া হতো না তেমন। পড়তে পড়তে মাথা মস্তিষ্ক সবই ক্লান্ত তখন। কিন্তু তারপরও মাথার চারপাশে একটাই প্রশ্ন ঘুরছিল খুব পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট চাই। তো এমনই একদিন মাথার দু'পাশে দুটো বিনুনি পাকিয়ে কাঁধে স্কুল ইউনিফর্ম জড়িয়ে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল অবনীতা। এমন সময় উল্টোদিকের রাস্তা পেরিয়ে সাইকেল চালাতে চালাতে এগিয়ে আসছিল একটা ছেলে নাম নিশান্ত। পড়নে ব্ল্যাক কালার শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স। অবন্তীর থেকে গুনে গুনে চার বছরের বড় হবে সে। বর্তমানে অর্নাস সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছে। শহরে থাকে আজ দু'দিন হলো গ্রামে এসেছে। বেশ ভাবনাহীন ভাবেই এগিয়ে চলছিল নিশান্ত। এরই মাঝে হঠাৎই তাঁর চোখ গেল অল্প বয়সী তরুণী অবনীতার মুখের দিকে। আর তাঁকে দেখতে গিয়েই সাইকেলের পায়ে পেডেল দিতে ভুলে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সে পাশের ক্ষ্যাতের কর্নারে থাকা কাঁদা পানির মধ্যে। আকস্মিক এমন কান্ডে অবনীতা উচ্চস্বরে হেঁসে ফেললো। সে দেখেছে সামনের ছেলেটি তাঁর দিকে তাকাতে তাকাতেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে নিচে। অবনীতা উচ্চ স্বরে হেঁসে যেতে যেতে বললো,

Facebook

' ওমনে তাকাইয়া থাকলে সাইকেল তে তো পড়তে হইবোই সাইকেল বাবু।'
বলতে বলতে চলে গেল অবনীতা। আর নিশান্ত জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো মেয়েটির যাওয়ার কি বজ্জাত মেয়ে। ওর জন্যই তো পড়ে গেল। ছিঃ ছিঃ মান সম্মান সব গেল। ভাগ্যিস আশেপাশে কেউ ছিল না। বলতে বলতে কাঁদা মিশ্রিত শরীরটা নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো নিশান্ত। সাইকেলটাকেও টেনে তুললো সে। তারপর আস্তে আস্তে সরু রাস্তায় উঠলো। তারপর যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিল সেখানে না গিয়ে বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো নিশান্ত।
' ধুর! কার মুখ দেখে যে এই সময় বাড়ি থেকে বের হলাম কে জানে।'
বলতে বলতে চললো নিশান্ত।'
এরপর কেটে গেল মাস কয়েক। এর মাঝে নিশান্ত অবনীতার আর দেখা হয় নি। তবে অবনীতা নিশান্তের সেই পড়ে যাওয়ার দৃশ্যের কথা ভেবে এখনো মাঝে মাঝে মুখ চেপে হাসে।'
বর্ষার কাল! গ্রামের আনাচে কানাচে কাঁদা পানিতে থই থই। মাঠ-ঘাট শীতল ভেজার পঞ্চমুখ। দশম শ্রেণির গন্ডি টপকে ইন্টারে ভর্তি হয়েছে অবনীতা। পড়াশোনার চাপটা খুব অল্প কিছুটা, আপাতত নেই বললেও চলে। গ্রামের আনাচে কানাচে ঘুড়ে বেড়ানোই হচ্ছে বর্তমানে তাঁর মুখ্য কাজ।'
বহুদিন পর, নিশান্ত আজ আবার গ্রামে এসেছে। সেকেন্ড সেমিস্টার কমপ্লিট তাঁর। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে এগিয়ে চলছিল সে বাড়ির পথে। সারাদিন বৃষ্টি, আকাশটা আবছা কালো অন্ধকারে ঘেরা, হিম শীতল বাতাস বইছে চারিধারে। পাখিরা উড়ছে মন খুলে, মাঠ জুড়ে সবুজ ঘাসের বৃষ্টি ভেজা পানিতে টুইটুম্বর। নিশান্ত জোরে নিশ্বাস ফেললো, এই গ্রাম তো তারই। শহরের আমেজে এখন বেশিক্ষণ থাকা পড়লেও এই গ্রামটাকে যেন রোজই মিস করে নিশান্ত। নানা কিছু ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলছিল নিশান্ত। এমন সময় কুচকুচে কালো রঙের একটা পিচ্চি ছাগলকে কোলে জড়িয়ে ধরে নিশান্তের অপজিট রাস্তা ধরে এগিয়ে আসছিল অবনীতা। পরনে লাল রঙের ওড়না সাদা কামিজ, লাল রঙের সেলোয়ার। চুলগুলো একদিকে বিনুনি পাকানো। নিশান্ত যেন চিনলো মেয়েদিকে। এই মেয়েটার জন্যই তো আগের বার সাইকেল নিয়ে ক্ষ্যাতের মাঝে পড়ে গিয়েছিল সে। এবার আর পড়া যাবে না তাই খুব সাবধানেই পা শক্ত করে মাটিতে পা চেপে চেপে এগিয়ে চলছিল নিশান্ত।'
অন্যদিকে, অবনীতা সেও চুপচাপ এগিয়ে চলছিল সামনে। এমনটা নয় সে চিনতে পারে নি ছেলেটি। খুব চিনেছে। ভিতর থেকে হাসিও আসছে তাঁর কিন্তু আপাতত সেই হাসিটাকে নিজের মাঝেই দমিয়ে রাখছে সে। হঠাৎই অবনীতা নিশান্তের চোখের দিকে তাকাতেই একপ্রকার ঘাবড়ে গিয়ে জটপট চোখ সরিয়ে ফেললো নিশান্ত। নিশান্তের এমন কাজে আরো হাসি পেল অবিনীতার। নিশান্তকে পিছনে ফেলে সামনে এসেই হেঁসে উঠলো সে। এই ছেলে বড্ডই লাজুক। কথাটা ভেবেই আনমনে হেঁসে ফেললো অবনীতা। অবনীতার হাসিটা যেন শুনলো নিশান্ত তবে কিছু বললো না। আনমনাই নিজের মাথাটা চুলকে এগিয়ে চললো সে বাড়ির দিকে।'
অন্ধকার রাত। বড়জোর রাত ৮ টা বাজে। বাড়িতে কারেন্ট নেই তাই হেরিকেন জ্বালিয়ে নিজের রুমে চুপচাপ শুয়ে ছিল অবনীতা। সাথে ভাবতে ছিল মেঘলাময় সেই দুপুরের ছেলেটার কথা। এক অজানাই ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে। ছেলেটার সাথে এ নিয়ে দু'বার দেখা হয়েছে তার তাহলে এত ভালো লাগা কিসের অবনীতার? উওর যেন মিললো আজ!'
এর মাঝে দরজার নক করলো কেউ। ডাকলো অবনীতার মায়ের নাম ধরে। বললো,
' শিউলি ঘরে আছিস নাকি, অবনীতা কি করছিস?'
অবনীতা যেন ধড়ফড়িয়ে উঠলো। তক্ষৎনাত বিছানা ছেড়ে উঠে গায়ে ওড়না জড়িয়ে এগিয়ে চললো সামনে। ততক্ষণে অবনীতার মাও ঘরের দরজা খুলে ভিতরে বসতে বললেন তাঁর সই হেমলতাকে। ছোট বেলার বেস্টফ্রেন্ড দুজন। ভাগ্যের জোরে দুজনেরই একই গ্রামে বিয়ে হয়েছে শুধু পাড়াটা ভিন্ন এই যা। প্রায় আসা যাওয়া চলে দুজনের। অবনীতার মা দরজা খুলে গিয়ে বসলো সামনের চকিতে তারপর হেরিকেনের আলোতে সত্তা হাতে সুপারি কাটতে কাটতে বললো,
' শুনলাম তোর ছেলে এসেছে নাকি?'
' হুম, এই দুপুরেই এলো আজ!'
' পান খাবি,
' হুম দে,
অতঃপর পান খেতে খেতে দুজনে গল্প জুড়ে দিলো। অবনীতা সামনে এগিয়ে এসে মিষ্টি হেঁসে বললো,
' কেমন আছো সইমা?'
' হুম ভালো তুই?'
' হুম ভালো।'
' তা রেজাল্ট ভালো করলি মিষ্টি খাওয়ালি না তো।'
হেমলতার কথা শুনে অবনীতা বেশ অবাক হয়েই বললো,
' কেন বাবা মিষ্টি দেয় নি তোমাদের?'
' তোর বাবা তো খাইয়েছে কিন্তু তুই তো খাওয়ালি না,
হেঁসে ফেললো অবনীতা। তারপর বললো,
' আপাতত বাবার দেওয়া মিষ্টিই খাও আমি যেদিন পড়াশোনা করে প্রথম চাকরি করবো। তখন৷ আমার প্রথম মাসের বেতনে নিশ্চয়ই খাওয়াবো তোমায়।'
উওরে মুচকি হাসলো হেমলতা বেগম।'
রাতের জোৎসা ভরা আলোতে বাড়ির উঠানে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা হইচই করছে। অবনীতা হেঁটে এসে বসলো তাদের বাড়ির সামনে থাকা সিমেন্টের চেয়ারে। কাঠের তৈরি মাচা সমৃদ্ধ দোতলা বাড়ি অবনীতাদের। বাড়ি চারপাশ কাঠ আর টিন দিয়ে হলেও নিচটা সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো সাথে বাড়ির দরজার মুখেও বসার জন্য সিমেন্টের তৈরি দুপাশে চেয়ার। আর মাথার উপর টিনের ছাউনি। অবনীতা চুপচাপ দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে তাকিয়ে রইলো বাচ্চাদের মুখের দিকে। অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর মাঝে একটা সময় সেও এইভাবে বাড়ির উঠানে বাচ্চাদের সাথে লাফালাফি করতো? ইস কত যে মিষ্টি দিন ছিল সেগুলো। পাশের বাড়ির মুনাটার বিয়ে হয়ে গেছে আজ চারদিন হলো। মুনা হলো অবনীতার বেস্টফ্রেন্ড হুট করেই মেয়েটার বিয়ে হয়ে চলো গেল। এতে মনটা বড়ই খারাপ লাগে অবনীতার। এই সময় বাড়ি থাকলে তাঁর কাছে নিশ্চয়ই আসতো।'
____
' আম্মা কি তোমাদের বাড়ি এসেছে?'
আচমকাই কোনো পুরুষালির কন্ঠ কানে আসতেই হকচকিয়ে তাকালো অবনীতা সামনের ছেলেটির মুখের দিকে। কিন্তু অন্ধকারের আবছা আলোতে খানিকটা অস্পষ্টনীয় মুখটা। অবনীতা খানিকটা বিচলিত কন্ঠ নিয়ে বললো,
' কার মা,
' আমার। হেমলতা বেগম!'
প্রতিউওরে অবনীতা কিছু বলতে যাবে এরই মাঝে ঘরের ভিতর থেকে হেমলতা নিজেই বলে উঠল,
' কে নিশান্ত এসেছিস?'
উওরে নিশান্ত বলে উঠল,
' হা আম্মা।'
' এদিকে আয়,
আর দাঁড়ালো না নিশান্ত তক্ষৎনাত ভিতরে ঢুকলো সে। ছেলেটিকে যেতে দেখে অবনীতাও কি ভেবে যেন ভিতরে গেল। এরই মাঝে কারেন্ট চলে আসলো। অবনীতা সামনের ছেলেটির মুখ দেখে চরম অবাক হলো। কতক্ষন আগেও যে ছেলের ভাবনায় মগ্ন ছিল সেই ছেলে কি না তাঁর সইমার ছেলে। অবনীতা জানতো সইমার একটা ছেলে আছে শহরে পড়াশোনা করে। সেইভাবে কখনো দেখা হয় নি। ছোট বেলাও হয়েছিল কি না মনে নেই। অবনীতাকে দেখে হেমলতা বলে উঠল,
' কি রে তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এই হলো আমার ছেলে নিশান্ত। এর আগে তো দেখা হয় না কেন বলে বলে মাথা খারাপ করে দিতিস এখন কি হলো। আমার ছেলের বউ হতে রাজি তো এখন।'
সঙ্গে সঙ্গে কাশি উঠে গেল অবনীতার এইভাবে কেউ বলে। আসলে অবনীতা প্রায় সময়ই বলতো নিশান্তের মাকে। দেখো সইমা আমি বিয়ে করলে তোমার ছেলেকেই করবো যাতে বিয়ে করে আমি এই গ্রামেই থাকতে পারি। অবনীতা তাকিয়ে রইলো নিশান্তের মুখের দিকে। নিশান্ত তাকালো, আবারও চোখাচোখি হলো দুজনের, অবনীতা কিছু একটা ফিল করলো যেন, নিশান্তের চোখের দিকে তাকানোর মাঝে কিছু একটা অনুভূতি আসলো তাঁর মাঝে। মন মাতাল করা শীতল ভেজা এক মিষ্টি বাতাস যেন ছুঁয়ে দিল তাঁকে।'
এরপর প্রায় বছর কয়েক আর দেখা হয় নাই অবনীতা আর নিশান্তের মাঝে। নিশান্তের অনুভূতি সম্পর্কে কোনো কিছু না জানলেও নিজের অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরেছিল অবনীতা কারন সে যে মাত্র কয়েকবার দেখা হওয়ার তাগিদেই ভীষণভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল নিশান্তকে কখনো প্রকাশ করা হয় নি, অবশ্য হয় নি বললে ভুল হবে অবিনীতা তাঁর অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার সুযোগই পায় নি তেমন! তবে অবনীতা জেনেছিল গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে এখন নিশান্ত চাকরিতে ঢুকেছে। একমাসই হয়েছে কেবল।'
এরপর একদিন হুট করেই বাবা ধমকের স্বরে এসে বললো অবনীতাকে,
' আমরা তোমার বিয়ে দিচ্ছি অবনীতা বাকি পড়াশোনা তুমি বিয়ের পরই করবে?'
সেদিন বাবা এতটাই রেগে কথা বলেছিল অবনীতার সাথে যে অবনীতা চেয়েও কিছু করতে পারে নি। এর আগে অনেকবারই অনেক জায়গা থেকে তাঁর বিয়ের সম্বন্ধ এসেছে কিন্তু অবনীতা নানান বাহানা দিয়ে সেসব ভেঙে দিতে পেরেছিল। কিন্তু এবার আর পারলো না।'
কথা মতো পরেরদিন ছেলের সাথে বিনা সাক্ষাতেই বিয়ে হয়ে গেল অবনীতার। সেদিনই নিজের অনুভূতি ভেঙে যাওয়ার কষ্ট নিয়ে বিয়ে করেছিল অবনীতা। সাথে ভেবে নিয়েছিল নিশান্ত হয়তো তাঁর ভাগ্যে নেই।'
কিন্তু না বাসর ঘরে ঢুকে বরের মুখ দেখেই ভয়ংকরভাবে চমকে গিয়েছিল অবনীতা। কারন তাঁর বাবা নিশান্তের সাথেই তাঁর বিয়ে ঠিক করেছিল। আসলে অবনীতা আর নিশান্তের বিয়ের বিষয়টা অনেক আগে থেকেই ভেবে রেখেছিল অবনীতা আর নিশান্তের বাবা মা। অবনীতার মা আর নিশান্তের মা ছিলেন বেস্টফ্রেন্ড। ছোট বেলা থেকেই নিজেদের ছেলে-মেয়ে হলে বিয়ে দেওয়া কথা দেয় তাঁরা। ভাগ্য ক্রমে নিশান্তের মায়ের বিয়েটা আগে হয়। বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যান তিনি। আর অবনীতারও মাও পড়াশোনা করেন। নিশান্তের যখন দু'বছর বয়স তখন অবনীতার মায়ের বিয়ে হয়। আর বিয়ের দুবছর পর অবনীতার জন্ম।'
বাসর ঘরে নিশান্তকে দেখে নিজের এক্সাইটমেন্টকে ধরে রাখতে না পেরে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে অবনীতা নিশান্তকে। চুমু কাটে বেশ কয়েকবার সাথে বলে,
' আমি তো ভাবতেই পারি নি আমার আপনার সাথে বিয়ে হবে।'
অবনীতার আকস্মিক এমন এটাকে পুরোই ভড়কে যায় নিশান্ত। পরে বলে,
' মানে?'
নিশান্তের মানের উওর দিতে অবনীতা প্রথম তাঁর ভালোবাসার কথা বলে। প্রপোজ করে নিশান্তকে। নিশান্তও ভালোবাসে অবনীতাকে। সেই যে সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার মুহূর্ত থেকেই ভালোবাসে সে অবনীতাকে। নিশান্ত জানতো তাঁর আর অবনীতার বিয়ের কথা আরো আগে থেকেই ঠিক করা। তাই নিশ্চিতে এতদিন পড়াশোনা কমপ্লিট করে চাকরিতে জয়েন্ট হয়েছে সে। নিশান্ত সেসব কথা চেপে গেল নিজেও অবনীতাকে নিজের বাহুডোরে চেপে ধরে বললো,
' আমিও ভালোবাসি তোমায়। ভালো বাসবে আমায়?'
উওরে মুচকি হাসে অবনীতা। মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় নিমিষেই।'
অতঃপর ভালোবাসার মাখামাখি অনুভূতি, ঝগড়া, খুনশুঁটি নিয়ে কেটে গেল পাক্কা তেত্রিশটা বছর।'
কিভাবে যে নিশান্তের সাথে এতগুলো বছর কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। এখনও মনে সেই তো কয়েকদিন আগেই যেন পরিচয় হলো নিশান্তের সাথে। সত্যি সময়গুলো যেন বড্ড তাড়াতাড়িই চলে গেল। তবে সময় যতই দ্রুত যাক না কেন, আজও নিশান্তকে দেখলে আমার সেইম অনুভূতি হয়। বার বার বলতে ইচ্ছে হয়, আজও ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। কারন,
' আমার প্রথম অনুভূতি ছিলে তুমি'! আছো তুমি আর যতদিন বাঁচবো ততদিনও তুমিই থাকবে।'
' শুভ তেত্রিশতম বিবাহ বার্ষিকী সাইকেল বাবু।'
শেষের নামটা শুনে আনমনেই হেঁসে ফেললো নিশান্ত। গোধূলি বিকেলের লগ্ন তখন। চোখের চশমা গায়ে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে বারান্দায় বসে অবনীতার লেখা চিঠিটা পড়ছিল নিশান্ত। এই অবনীতা কতই না ভালোবাসে তাঁকে। চিঠিটা বুকে জড়িয়ে ধরলো নিশান্ত। তারপর নীরব কন্ঠে বললো,
' আমিও ভীষণ ভালোবাসি তোমায়। কারন তুমিও যে আমার প্রথম অনুভূতি ছিলে। সেই মাথার দুইদিকে দুই বিনুনি করা স্কুল ইউনিফর্ম পরিধিত তরুণীর প্রেমে পড়েছিল নিশান্ত। বয়সটা বেড়ে গেছে মাথার চুলগুলোও পেঁকে গেছে নিশান্তের। ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে এখন দাদা-দাদি, নানা-নানি হয়ে গেছে তারা। জোরে নিশ্বাস ছাড়লো নিশান্ত। সত্যি সময়গুলো যেন বড্ড তাড়াতাড়িই চলে গেল তাদের।'
নিশান্তের ভাবনার মাঝেই পিছন থেকে নিশান্তকে জড়িয়ে ধরলো অবনীতা তারপর বললো,
' এখনো এখানে বসে আছো মসজিদে যাবে না আযান দিবে তো এক্ষুনি।'
খানিকটা হকচকিয়ে উঠল নিশান্ত। বললো,
' হুম যাবো তো। আচ্ছা বউ তুমি আমায় ভীষণ ভালোবাসো তাই না?'
' কোনো সন্দেহ আছে বুঝি এতে।"
' না তা নেই। জীবনের বাকিটা সময়ও কিন্তু এইভাবেই ভালোবাসবে আমায়।"
উওরে নিশান্তের পাশে বসে ওর কাঁধে মাথা নিয়ে বললো অবনীতা,
' তুমি ছিলে আমার প্রথম অনুভূতি প্রিয়।
যে অনুভূতি আসার পর আর কাউকেই মনে ধরে নি তেমন। আর জীবনে ধরবেও না তুমি নিশ্চিতে থাকো। আর এখন বুড়ি হয়ে গেছি চুলটুলও পেঁকে গেছে আর কোথায় যাবো তোমায় ছেড়ে।'
' তাও ঠিক।'
হেঁসে ফেললো অবনীতা আর নিশান্ত একসাথেই। সন্ধ্যা নামার পূর্বাভাস চলছিল তখন। পশ্চিমা আকাশ বেয়ে উড়ে চলছিল একঝাঁক পাখি। আকাশটা হয়েও যাচ্ছিল লালচে। অবনীতা আর নিশান্ত তাকিয়ে ছিল সেদিকেই। সাথে স্মৃতি বুনতে লাগলো গভীরভাবে। তাঁরা জানে না এই স্মৃতি আর কতদিন বুনতে পারবে তাঁরা তবে যতদিনই বুনতে পারুক না কেন এই স্মৃতির বাকি পুরোটা সময়ই দুজন দুজনকে ভীষণ ভালোবাসবে। কারন,
'আজও যে দুজন দুজনের অনুভূতি তাঁরা'!
~ সমাপ্ত...

ছোট গল্প
🌸

Post a Comment

0 Comments

Close Menu