লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

ছোট্ট রাজকুমারী এলাইসা খুবই মহানুভব এবং দয়ালু।রাজ্যের আনাচে-কানাচে সবার খোঁজ রাখেন।সকল প্রজারা রাজকুমারীর জন্য প্রতিদিন ভালো -মন্দ রান্না করে নিয়ে আসেন।রাজকুমারী খুশি মনে গ্রহণ করেন।এতে করে প্রজারা খুশি হয়ে আশীর্বাদ করে যান।

রাজা এডিডাস রুগ্ন শরীর নিয়ে বিছানায় পরে থাকেন।তাকে দেখার জন্য একজন সেবিকা রয়েছেন, মেরিটা।মেরিটা খুব ভালো একজন নার্স।এবং একই সাথে ভালো একজন সেফ।রাজার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার রান্না করেন নিজের হাতে।
রাজ্যের অবস্থা দিন-দিন শোচনীয় হয়ে যাচ্ছে।এলাইসার বয়স এখন ষোলো।বাবার অসুস্থতার জন্য,এই বয়সেই রাজ্যের দেখাশোনা করতে হচ্ছে।
এলাইসা শুধু রাজদরবারেই অবস্থান করেন না।দিনের অনেকটা সময় বাইরে কাটান।ঘুরে ঘুরে ফসলি জমি দেখেন।চাষ-বাষের অবস্থা দেখেন।পশুর খামার দেখেন।কোথাও ত্রুটি দেখলে সেই বিষয়ে অবগত করেন।সেই সাথে ঘোড়ার আস্তাবল দেখতে হয়।
এলাইসার একটি পাখি রয়েছে, এনথা।এনথা কথা বলতে পারে।এনথা চারদিকের সব গোপন খবর, রাজকুমারী এলাইসাকে দেয়।তাতে করে, এলাইসা বুদ্ধি খাটিয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
এলাইসা,সারা দিনের দায়িত্ব শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আগে বাবার সাথে দেখা করেন।সারা দিনের কথা তাকে জানান।তারপর নিজের রুমে অবস্থান করেন।মেরিটা খাবার এনে নিজ হাতে, এলাইসাকে খাইয়ে দেন।তারপর বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের রুমে যান।
ঘুমানোর আগে রোজ রাতেই মায়ের কথা মনে পরে।মা, হয়তো তার জন্যই বেঁচে নেই।নিজেকে দোষী ভাবতে থাকেন, রাজকুমারী এলাইসা।
অতীত
"এলাইসা জন্মের পর রানী এথিনা খুব খুশি ছিলেন।তিনি ফুটফুটে মেয়েকে নিয়ে রাজ্যের বাইরে বেড়াতে যেতে চাইলেন।রাজা এডিডাস, সফরকালীন সময়ের জন্য রাজকার্যে বহাল রেখে গিয়েছিলেন মন্ত্রী, এডওয়াডকে।
তারা সমুদ্র যাত্রা করেছিলেন এথিনার বাবার রাজ্যের উদ্দেশ্যে।সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন ঠিকঠাক।একমাত্র নাতনীকে পেয়ে, এথিনার মা-বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন।রাজ্যে আনন্দ উৎসব ছিলো পুরো সপ্তাহ জুড়ে।
মেলা বসেছিলো রাজ্যের একটা অংশ জুড়ে।সেখানে এক লোক পাখি নিয়ে বসেছিলো।কথা বলা পাখি।কাঠ কাটতে গিয়ে এই পাখিটা পেয়েছিলেন বাসার মধ্যে।তাই তিনি ভালো দামের আশায় উৎসব মেলায় বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন।ছোট্ট এলাইসা পাখিটা দেখে হাসছিলো।তখনই একশত স্বর্নমুদ্রায় পাখিটা কিনে নেন আলাইসার নানা, রাজা উইলিয়াম।
তারপর রাজা এডিডাস নিজের রাজ্যে রওনা করলেন।ফিরার সময় দিন গড়িয়ে রাত নেমে এলো।সমুদ্রে হঠাৎ স্রোতের গতি বেড়ে গেলো।মূহুর্তেই শুরু হয়ে গেলো ঝড়।তাদের জাহাজ বিধ্বস্ত হলো।রাজা, এলাইসাকে এক হাতে কোলে নিয়ে অন্য হাতে জাহাজের বিশাল এক খন্ড ধরে রাখলেন।এলাইসাকে বাঁচাতেই হবে।পাখিটাও শিশু এলাইসার কাঁধেই বসে ছিলো।ভোরের আলো ফুটতেই উদ্ধারকৃত জাহাজ এসে হাজির হলো।তাদের সেই জাহাজে তুলে নিলো।
কিন্তু রানী এথিনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।তিনি ঝড়ের কবলে কোথায় হারিয়ে গেছেন, নাকি বেচে নেই, কোনো সন্ধান মিলেনি এই নিয়ে।"
অতীতের সবটাই পাখি,এনথার কাছ থেকে শুনেছে,এলাইসা।কারন, রাজ্যে ফিরার পর থেকেই রাজা অসুস্থ হয়ে পরেন।শরীরের অবনতির কথা ভেবে তাকে আর এই ব্যাপারে জিগ্যেস করেনি কেউ।তখন থেকেই মেরিটাকে রাখা হয়।তিনি ছোট থেকে এলাইসাকে ভালবেসে বড় করেছেন।সেই সাথে সেবিকার কাজ ও করেছেন।এলাইসা আর রাজা এডিডাস এর জন্য মেরিটা ভালো রান্না করতো।
কিন্তু রন্ধনশালায় অন্যান্য রান্নার লোক রয়েছে দুজন, ডিউডি আর এঞ্জি।তারা সম্পর্কে ভাই-বোন।তারা বিদেশীয় সকল প্রকার রান্নার জন্য নামকরা সেফ ছিলো।তাদের নিজেদের রেস্তোরাঁ ছিলো রাজ্যেরই এক পাশে।খুব বিখ্যাত ছিলো সেই রেস্তোরাঁ।কিন্তু একবার কারা যেনো তাদের রান্নায় বি*ষ জাতীয় কিছু মিশিয়ে দেয়।তাদের খাবার খেয়ে অনেকেই মা*রা যায়।তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।তখন রাজা এডিডাস তাদেরকে ছাড়িয়ে এনে, নিজ রাজ্যের রন্ধনশালায় বহাল করেন।
এলাইসা সাত বছর বয়স থেকেই, মন্ত্রী এডওয়াড এর সাথে রাজ্যের সব কাজ করতেন।এভাবে তিনি পারদর্শী হয়ে উঠেন।তাই,ষোলো বছর হতেই তাকে রাজ্য শাসনের জন্য বসানো হয় রাজসিংহাসনে।