লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
এনথা, পাখি ডাকা ভোর হতেই বেড়িয়ে পড়ে পুরো রাজ্য টহল দেওয়ার জন্য।তারপর সকালের রোদ গাঢ় হতেই ফিরে আসে।এর মধ্যে এলাইসা,সকালের নাস্তা সেরে সিংহাসনে অবস্থান করেন।এনথা, ফিরে এলে রাজ্যের কোথায়?কার কি সমস্যা সবটা শুনে নেয়।তারপর সেখানে ঘোড়ার গাড়ি করে রওনা হয়।এর মাঝেই এনথা ফিরে এলো,
-রাজকুমারী এলাইসা, রাজ্যের উত্তরে মেনান নামে এক কাঠুরে বাস করে।সে একদিন পর পর কাঠ কাটতে যায় এবং সন্ধ্যায় ফিরে আসে।তারপরের দিন কাঠ নিয়ে বাজারে বিক্রি করে।আজকে সে ফিরে আসেনি।রাতে তার স্ত্রী, একটা ছোট মেয়ে না খেয়ে ছিলো।
-তুমি কি সন্ধ্যায় এটা জানতেনা,এনথা? আমাকে বলোনি কেনো?
-ভেবেছিলাম সে একটু দেরি করে ফিরে আসবে তাই বলিনি,রাজকুমারী।
এলাইসা, এলিন নামের একজন বিশ্বস্ত সহযোগীকে ডেকে বললেন, "যাও আমার গাড়িতে ভালো ভালো খাবার আর ফলমূল তুলে নাও।"
"এলিন একজন মেয়ে।সে যুদ্ধবিদ্যায় খুবই পারদর্শী।"
ডিওডি আর এঞ্জি তখন রন্ধনশালায় সকালের জন্য অনেক খাবার এর আয়োজন করেছিলো।সাথে মিষ্টান্ন ছিল হরেক রকম।পনির,ছানা মিষ্টি, পায়েশ,হালুয়া এবং পিঠা।সব কিছু থেকেই খাবার দেওয়া হলো।
"এলাইসা, তার পছন্দের ঘোড়াটি বেছে নিলো।ঘোড়াটির নাম, ক্যাথান।সাথে নিলো তী*র,ধনু*ক আর তলো*য়ার।"
এলিন,আস্তাবল থেকে একটি শক্তিশালী ঘোড়া বেছে নিলো।তার নিজস্ব ঘোড়াটি দুই দিন ধরে ঠিক ভাবে খাচ্ছেনা।তাই তাকে রেখে গেলো।
একজন কাজের লোক দিয়ে, খাবার ভর্তি গাড়িটি পাঠিয়ে দিলো, মেনান এর বাড়ি।
রাজকন্যা আর তার সহযোগী ঘোড়ায় চড়ে আগেই পৌঁছে গেলো,মেনান এর বাড়ি।গিয়ে দেখে ছোট মেয়েটি বাবার জন্য কাঁদছে।এলাইসাকে দেখে ক্রন্দনরত অবস্থায় বললো, "তুমি রাজকুমারী? কতো সুন্দর পোশাক পরেছো।আমার বাবা এখনো ফিরে আসেনি।আমরা তো রাত থেকে না খেয়ে আছি।"
এলাইসার অনেক খারাপ লাগলো।ভাবতে লাগলো, "আমারই রাজ্য,আমি রাতে পালংকে ঘুমাই।অথচ, ওরা জঙ্গল থেকে আনা পাতা দিয়ে বানানো এই বাড়িতে থাকে।যেখানে রাতে হিংস্র পশুদের আক্র*মন।" এলাইসা বলতে লাগলো,
-হ্যা,আমি রাজকন্যা এলাইসা।তোমার জন্য অনেক খাবার নিয়ে এসেছি।
-আগে আমার বাবাকে এনে দাও।তারপর খাবো।
-আমি এখনই যাবো তোমার বাবাকে ফিরিয়ে আনতে।কিন্তু তুমি আর তোমার মা, এখন খাবার খেয়ে নিবে।নাহলে শরীর খারাপ করবে।
এর মধ্যেই গাড়ি এসে হাজির হলো।"এলিন আর কাজের লোকটি সব খাবার গাড়ি থেকে নামিয়ে ওদের ঘরে দিয়ে এলো।"
এলাইসা কাজের লোককে বললো,
-তুমি ফিরে যাও।আমাদের ফিরতে দেরি হবে।বাবাকে বলে এসেছি।
-আজ্ঞে, রাজকুমারী।আপনি যা বলবেন।
তারপর এলাইসা আর এলিন ঘোড়া ছুটিয়ে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করলো।সব দিক তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগলো।কিন্তু কোথাও কোনো মানুষের নিশ্বাসের শব্দ টুকু নেই।
হঠাৎ একটি বাঘ তাদের তাড়া করলো।তারা ঘোড়া ছুটিয়ে জঙ্গল ছাড়িয়ে গেলো।জঙ্গল ছাড়ালেই পাহাড় ঘেরা উচু-নিচু জায়গা।যা তারা আগে কখনো দেখেনি।পাহাড়ের কোল ঘেঁষে কয়েকটি ছোট ছোট টিলার মতো বাড়ি।ওরা অবাক হলো,রাজ্য ছাড়িয়ে এখানেও মানুষের বাস।আর আমরা জানতামই না।
ওরা খুব ক্লান্ত, তাই নদীর স্বচ্ছ পানি পান করলো।তারপর সবুজ ঘাসে মাথা এলিয়ে দিলো।চারদিকের শীতল বাতাসে ওরা ঘুমিয়ে গেলো।এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।হঠাৎ ভ*য়ংক*র প্রানীর গর্জন শুনে জেগে উঠলো।তারপর যা দেখলো,অবাক হয়ে গেলো!
"একটি সাধারণ সুদর্শন যুবক সিংহের সাথে লড়ছে।তার হাতে এলাইসার তলোয়ার।"
এলাইসা আর দেরি করলো না।সে তীর, ধনুক হাতে নিলো।আর এলিন তলোয়ার হাতে ঝাপিয়ে পরলো।এলাইসা,তীর ছুঁড়তে লাগলো।তাদের তিন জনের কাছে সিংহটি পরাজিত হয়ে মা*রা গেলো।
"তিন জনেই হাফ ছেড়ে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে বসে পড়লো।" এলাইসা বললো,
-তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।কে তুমি? পাহাড়ি আদিবাসী হয়ে যুদ্ধে এতো পারদর্শী কিভাবে।কার কাছে শিখেছো?
-আমি এডমাইন।আমি ছোট থেকে এখানেই বড় হয়েছি।এখানকার জঙ্গলের হিং*স্র পশুদের সাথে লড়াই করে বাঁচতে হয় আমাদের।তাই লড়তে, লড়তে শিখেছি।আর তাছাড়া আমার এক আত্নীয় আমাকে শিখিয়েছে আরো অনেক কৌশল।
"এলাইসা অবাক না হয়ে পারলোনা।ও আদিবাসী মানে,ওর আত্নীয় ও আদিবাসী।তাহলে কিভাবে এতো দক্ষতা।তার ইচ্ছে হলো তাকে দেখার জন্য।"
তার ভাবনার মধ্যেই,এডমাইন এর ডাক শুনতে পেলো,
-আপনারা এই গভীর জঙ্গল পেরিয়ে এখানে কেনো? কোথা থেকে এসেছেন? আপনাদের দেখে তো এডিডাস রাজ্যের লোক মনে হচ্ছে।আমরা আদিবাসীরা কখনো রাজ্য ভ্রমণ করিনি।তাই আপনাদের চিনতে পারছিনা।
-আমি রাজকন্যা, এলাইসা।সাথে আমার সহযোগী, এলিন।আমরা আমাদের রাজ্যের এক কাঠুরেকে খুঁজতে এসেছি।
-আপনারা অনেক ক্লান্ত।কিছু খেতেও হবে।আপনাদের আপত্তি না থাকলে, আমাদের পাহাড়ি খাবার খাওয়াতে পারবো।আর আজকে একজনকে শিয়াল এর হাত থেকে বাঁচিয়ে আমাদের কাছে রেখেছি।উনি সেই কাঠুরে কিনা, তাও দেখতে পারবেন।
"এলাইসা,ভাবলো,সত্যি কিছু খেতে হবে।এছাড়াও গেলে তার আত্নীয়কেও দেখা হবে।আর মেনান এর খোঁজ পেতে পারবো।"
এলিনকে সবটা জানালো।এলিনও সায় দিলো।তারপর তারা এডমাইন এর সাথে রওনা হলো।
0 Comments