লেখিকাঃ সাবিহা জান্নাত
সকাল সকাল কলেজে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে চারু। হঠাৎ পেছনে থেকে কাব্যের ডাকে দাঁড়িয়ে যায় সে। ফিরে তাকাতেই দেখে কাব্য গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারু ফিরে দু পা এগিয়ে কাব্যের কাছে যায়।
~ গাড়িতে উঠে বস।
~আমি রিক্সায় করে যেতে পারবো কাব্যের কথায় চারু গুরুত্ব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলেই কাব্য চারুর হাত ধরে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
~ তোকে গাড়িতে বসতে বলেছি আমি। কাব্যের কথায় চারু আবারো বলে উঠে, বললাম তো আমি যাবো না গাড়িতে। ছাড়ুন আমাকে, আমি রিক্সায় করে যাবো।
~ কাব্য চারুকে গাড়ির সাথে চেপে ধরে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় ওর দিকে। আমার কথা বুঝতে পারছিস না তুই। নাকি অন্য ভাবে বোঝাতে হবে। চুপচাপ গিয়ে গাড়িতে বস।
চারু কাব্যের কথায় চুপচাপ গাড়িতে সামনের সিটে বসে পড়ে। কিছু সময় পর কেয়া এসে গাড়িতে চারুকে দেখেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে বিরক্তিতে । ভাইয়া ও গাড়িতে.... কেয়া কথাটা শেষ করতে পারে না। তার আগেই চুপ হয়ে যায় কাব্যের রাগী দৃষ্টির ইশারা বুঝতে পেরে।
সিটবেল্ড বাঁধ, কাব্যের কথায় চারু কাব্যের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ সে বেল্ড বাঁধার জন্য চেষ্টা করে। কাব্য চারুর দিকে তাকিয়ে দেখে ও সিট বেল্ট বাঁধতে পারছে না।
কাব্য চারুর দিকে ঝুঁকে যায় সিটবেল্ড বাঁধার জন্য। কাব্যের খুব কাছাকাছি অবস্থান করায় চারুর অস্বস্তি হচ্ছে। গরম নিঃশ্বাস পড়ছে কাব্যের শরীরের উপর। ঘনঘন শ্বাস নিতে থাকে ও।
কাব্য সবটা বুঝতে পেরে দ্রুত সে নিজের সিটে চলে আসে । কাব্য ড্রাইভিং করছে আপন মনে। দৃষ্টি তার সামনের দিকে স্থীর।
চারুর অসস্তিবোধ হচ্ছে। কাব্যের কাছাকাছি আসলেই তার অস্বস্তি যেন বেড়ে যায়। চারুর এমন আচরণে কাব্য চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে। মনে হচ্ছে এখনি দম বন্ধ হয়ে যাবে তার। কাব্য চারুর দিকে পানির বোতল এগিয়ে দেয়।
চারু চুপচাপ বোতলটা নিয়ে দুই ঢোক পানি খেয়ে নেয়। সে যেন কিছুটা স্বস্তি অনুভব করছে। দেখতে দেখতে কলেজে পৌঁছে যায় তারা।
গাড়ি থেকে নেমে চারু তার ফ্রেন্ড কবিতার কাছে চলে যায়। চারু এবার ভার্সিটিতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাই তার আর কেয়ার ক্লাস ভিন্ন।
চারু ওর ফ্রেন্ড দের সাথে ক্যাম্পাসে কিছু সময় কাটিয়ে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাসে গিয়ে ১ম ক্লাস টায় কাব্য স্যারের । ওরা মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে থাকে। কাব্যের ক্লাসে মোটামুটি সবাই শান্ত হয়ে থাকে।
ক্লাস নেওয়ার সময় একজন লোক এসে কাব্যের সাথে কথা বলে,,
~ স্যার নীতির বাবা এসেছে আপনার সাথে কথা বলতে চায়। অফিস রুমে বসে আছে । আপনাকে জরুরি একটু যেতে বলেছে ।
~ অপেক্ষা করতে বলেন । ক্লাস শেষে বিরতির পর দেখা করতে হবে। কাব্যের কথায় লোকটি ক্লাস রুম ত্যাগ করে।
কাব্য আবার ক্লাসে মনোযোগ দেয়। ক্লাস শেষ করে বিরতির সময় নিজের ডেস্কে চলে যায়। লাঞ্চ করে ডেস্কে বসে কম্পিউটার এ কাজ করছে সে হঠাৎ কারো আগমনে সে একটু সোজা হয়ে বসে । সে লোকটির উদ্দেশ্যে বলে উঠে
~ বসুন।
লোকটি কাব্যের উদ্দেশ্যে বলে উঠে,,
~ বসতে আসিনি আমি । শুনলাম মেয়েটাকে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছো আবার আজ ক্লাসে ও ঢুকতে দাও নি । তাই আসলাম তোমার সাথে সাক্ষাৎ করতে ।আমারে তো ভালো করেই চিনো ।
সন্তান কে ভদ্রতা সভ্যতা শিখিয়ে দিতে হয়। তাদের কোনো ভুল হলে শাসন করতে হবে। কিন্তু আপনি সেটা না করে এখানে আপনার সব ভদ্রতা সভ্যতা ভুলে নেতা গিরি দেখাতে এসেছেন।
এটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যদি ভেবে থাকেন আপনি এখানে নেতাগিরি দেখাবেন আর তাতে আমি ভয় পেয়ে যাবো তাহলে এটা আপনার মনের ভুল । ভদ্রতা সভ্যতা বজায় রেখে কথা বলুন।
কাব্যের কথায় নীতির বাবা রেগে গিয়ে তার উপর কথা বলতেই যাবে তার আগেই কাব্য বলে উঠে,,
~ আপনাকে ডাকা হয়েছিল আপনার সন্তানের ভুল টা শুধরানোর জন্য। কিন্তু আপনার মাঝেই সেই ভদ্রতা সভ্যতার লেশটুকু নেই তাহলে আপনার সন্তান কে আপনি কি শেখাবেন।
আপনার মেয়ে কলেজে গিয়ে কি করছে কখনো কি সেই খোঁজ খবর রাখেন। অফিস কক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে আসুন তাহলে আপনার মেয়েকে ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হবে। আর নেক্সট টাইম আপনার মেয়ে একই ভুল করলে তাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হবে। কথাটা যেন মাথায় থাকে আপনার।
নীতির বাবা রাগান্বিত হয়ে চলে যায়। কাব্য ক্লাস শেষ করে গাড়ির কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কেয়া গাড়িতে বসে আছে। কাব্য অনেকক্ষণ ধরে এদিক সেদিক দেখছে কিন্তু চারুর দেখা নেই।
একটু পাশে গিয়ে দেখতে পায় চারু একজন মহিলার সাথে কথা বলছে । একটু চোখ বুলিয়ে দেখতেই বুঝতে পারে চারুর দাদু মনির সাথে কথা বলছে ।কিছু সময় অপেক্ষা করার পর চারুর দাদুমনি চলে যেতেই কাব্য চারুর কাছে যায়।
গাড়িতে গিয়ে বস তাড়াতাড়ি। কাব্যের কথায় চারু চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়ে। সারা রাস্তায় চারু চুপচাপ বসে ছিল। কাব্যের দিকে তাকায় নি একটি বার ও।
চারু বাসায় পৌঁছে দেখতে পারে ওর খালামুনি এসেছে। খালাতো বোন তোহা ও এসেছে । খালামুনি কে দেখেই চারুর মুখে হাঁসি ফুটে ওঠে। খালামুনির চোখের মনি সে। সে তার খালাতো বোন কে দেখেই তার সাথে তার ঘরে নিয়ে যায়।
কেয়া তাদের দেখেই তার মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে ওঠে। কেয়ার ব্যবহার রূঢ় প্রকৃতির। তার ব্যবহার , পোশাক কোনো কিছুই মার্জিত নয়। সবার সাথেই বিরক্তি নিয়ে কথা বলে সে। তার ফুপীর চোখে পড়তেই ওর ফুপী বলে উঠে,,,,
~ চারুকে না হয় পছন্দ করো না সে তোমাদের বাড়িতে থাকে সেই জন্য। ওর মা তোমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিল সেই জন্য। কিন্তু আমাদের সাথেও খারাপ ব্যাবহারের কারন টা কি। আমার মেয়ের সাথে ও এমন ব্যবহার করছো কেন। আমরাও তো উড়ে আসিনি তোমাদের বাড়িতে। আমার বাবার বাড়িতে এসেছি। একটু ভদ্রতা সভ্যতা কিছু শেখো। ভুলে যেও না সুন্দর ব্যবহার মানুষের সৌন্দর্য কে ফুটে তোলে।
কেয়া ফুপীর কথায় রেগে- মেগে তার বাবার ঘরে চলে যায়। সেখানে তার মা এবং ভাই ও উপস্থিত ছিল।
~ বাবা ওই মহিলার সমস্যা কোথায়। আমাকে বলছে কিনা আমার ব্যবহার নিয়ে কথা বলছে। এরা আমাদের বাসায় সব সময় আসে কেন। অসহ্য।
কেয়ার কথা শুনে ওর মা রাগী কন্ঠে বলে উঠে,,
~ ভদ্রভাবে কথা বলো। তোমার ফুপী হয় সে ।আর তুমি যথেষ্ট বড় হয়েছে কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় সেটা তোমাকে নিশ্চয় শিখিয়ে দিতে হবে না। যাও নিজের ঘরে যাও।

কয়েকদিন পর কলেজে বিদায় অনুষ্ঠান। চারু কাব্যের দেওয়া শুভ্র সাদা রঙের শাড়িটা পড়ে নেয়। সাথে একজোড়া সাদা ঝুমকা , সিম্পল একটা নেকলেস পড়ে নেয়। ঠোটে হালকা লিপস্টিক, চোখে কাজল দিয়ে দুই হাতে দুই জোড়া কাঁচের সাদা চুড়ি পরে নেয়। লম্বা চুলগুলো চিরনী করে ছাড়া চুলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাসা থেকে।
একটা রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে কলেজে উদ্দেশ্যে ।আজ সে একাই বেরিয়েছে। কাব্য অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে সে। চারু কলেজে যাওয়া মাত্রই কবিতা ওকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী সুরে বলে উঠে,,,
~ উফ্ চারু আজ তোকে অনেক সুন্দর লাগছে । আমি তো নিজেই ক্রাস খেয়ে গেলাম বলেই হেঁসে উঠে। তাহলে কলেজের ছেলেদের কি হবে বলতো পাখি।
কবিতার কথা শুনে চারু ভ্রু কুঁচকে ফেলে ,,
~কি সব কথা বলছিস । তোর মুখটা বন্ধ রাখ তো । আর চুপচাপ ভেতরে চল । ওরা দুজনে গিয়ে মঞ্চের সামনের চেয়ার গুলোতে গিয়ে বসে পড়ে ।
কাব্য মঞ্চে একটা চেয়ারে সব শিক্ষদের সঙ্গে বসে আছে । চারুর চোখাচোখি হতেই ও চোখ নামিয়ে নেয়।
0 Comments