Ad Code

আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ৮

লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার

দ্রুত কয়েকটি ছবি তুলে নেয় আলভি। যা জানার ছিলো তা পেয়ে গেছে। ফাইল টা জায়গা মত রেখে যেই ওরা বের হতে যাবে তখনই শুনতে পায় কলেজ বিল্ডিংয়ের সিকিউরিটি এলার্ম বাজিয়ে দেয়া হয়েছে। মুহুর্তে থমকে যায় দু'জন, চকিত নজরে রবিন আলভি'র দিকে তাকায়। আলভি আস্বস্ত করে চোখের ইশারায় মাথা ঠান্ডা রাখতে বলে। ডোর ভিউ তে পরিস্থিতি দেখে নিয়ে রবিন কে ফিসফিসিয়ে সব বুঝিয়ে দেয় আলভি।

Facebook

বুক ভরে দম নিয়ে " ওয়ান!.... টু!!... থ্রী!!!....." বলে এক ঝটকায় প্রিন্সিপালের কক্ষের দরজা খোলে আলভি, সাথে সাথে প্রায় দেয়ালে গা মিশিয়ে আড়ালে দাঁড়িয়ে যায় রবিন। সম্মুখ দিক থেকে দু'জন গার্ড ছুটে আসছিলো, আলভি একজন কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে তৃতীয় তলায় যাবার সিঁড়ির দিকে দৌড় দিলে গার্ডটিও তার পিছু ধাওয়া করতে চলে যায়। অপর গার্ডটি প্রিন্সিপালের কামরায় প্রবেশ করে, সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা এটা দেখতে যেই ফাইল রাখা তাকের দিকে পা বাড়ায়, রবিন তড়িৎ গতিতে কামরা থেকে বাইরে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দু কদম সামনে এগোতেই রবিন বুঝতে পারলো আরো একজন গার্ড এই করিডরের দিকে হাকডাক দিয়ে ছুটে আসছে। গা ঢাকা দেওয়ার জন্য রবিন আবার সিঁড়ির নিচে ফাকা জায়গায় যেয়ে ঘাপটি মেরে বসে পরে। আটকে পড়া লোকটির দরজা ধাক্কানোর শব্দে আগত গার্ড তাকে দরজা খুলে বের করে। বিচলিত হয়ে সে জানায় একজন লোক ওপর তলায় পালিয়েছে আর একজন তাকে এখানে বন্ধ করে রাখে।

আলভি ততক্ষণে নিজেকে হোস্টেল করিডরের এক কর্ণারে রাখা কিছু পুরাতন ফার্নিচারের পিছনে আড়াল করে নিয়েছে। কলেজ হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের মোটামুটি সকলেই রুম থেকে বেরিয়ে এসেছে ইতোমধ্যে। তিন তলায় প্রায় হই হুল্লোড় বেধে যায় চোর ঢুকেছে স্বরে। দোতলার গার্ড দু'জন উপর তলায় যেতে রবিন কিছুটা হাফছাড়ে, এদিক ওদিক লক্ষ্য করে সন্তপর্ণে বেরিয়ে আসে সিঁড়ির নিচ থেকে। একটা পিলারে সঙ্গেকরে আনা দড়ি বেঁধে সেটা বেয়ে নিচে নেমে আসে।

YouTube

অসম্ভব দ্রুত গতিতে শ্বাস উঠা নামা করছে রবিনের। কোনমতে ভাঙ্গা দেয়াল টপকে, কলেজ বিল্ডিং পেরিয়ে এসে এক গাছের নিচে গা এলিয়ে বসে পরে। যদিও আলভি ওকে ফিরে যেতে বলেছিল কিন্তু সে যায় না, অজানা এক আশঙ্কায় অস্থির চোখ দুটো কলেজ বিল্ডিং এর দিকে স্থির দৃষ্টি নিয়ে চেয়ে থাকে। হটাৎ রবিন ধরফরিয়ে ওঠে কারো পায়ের শব্দ শুনে। শব্দটা তার দিকেই এগিয়ে আসছে দেখে সে নিজেকে অন্ধকারে একটু আড়াল করে নেয়। আগুন্তক বেশ গম্ভীর স্বরে বলে " বলেছিলাম না কেল্লাফতে হয়ে যাবে!!...... "

: আ...আ...আলভি তুমি!!!

: হুম্মম....চল ফেরা যাক!!.....

-------------------------

ঘড়িতে রাত তিনটার কাটা ছুই ছুই।

আলভিরা ফিরে এসেছে মিনিট পনের হলো। নাওয়া খাওয়া করে সোফাতে বসে আছে দু'জন। ইন্সপেক্টর সামস মুখ কালো করে বেরিয়ে এলো ধৃত লোকটির কামরা থেকে বললেন " ব্যাটা খুব জেদি!!.... কিচ্ছুটি বললো না!!.... ধ্যাত!!"

মৃদু হেসে আলভি বলে " ওর কাছ থেকে আর কোন কথা বের করাও যাবে না....... "

: কেন???!!....

: খাস আদমি!!....বলছি ইন্সপেক্টর সামস!!.. কাল আমার কিছু পুলিশ লাগবে.... বলা যায় না অ্যারেস্ট করা লাগতে পারে!!!.....

: বাপরে!! কাকে?!!... অবাক হয়ে জানতে চায় রবিন

: দুষ্কৃতিকারী....

: ওহ!!... বলছি আলভি!!.. তুমি কেমনে বের হলে ওখান থেকে?!.....

: আজকের মত ঘুমিয়ে পড়ো... কাল অনেক কাজ.....

তিনজনেই বেশ ক্লান্ত ছিলো। আলভি'র এ কথায় আর কোন রা' না করে অগত্যা যে যার কক্ষে চলে যায়।

TikTok

------------------------

সকাল ৮ টা।

আলভি কাউকে কিছু না বলেই বেরিয়েছে ঘন্টাখানেক হলো। ইন্সপেক্টর সামস আর রবিন চা'য়ের টেবিলে অধির অপেক্ষায় বসে আছে। দেশ - রাজনীতি এসব নিয়েই মোটামুটি তাদের আলোচনা চলছে।

" রবিন!!... তোমাকে এখন গেম খেলতে হবে!!..... "

এই অদ্ভুত বাক্যটির জন্য তারা দুজনেই মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হতচকিত হয়ে পিছন ফিরলে রবিন লক্ষ্য করে আলভি ফোন হাতে খুব গম্ভীর স্বরে কথাটা বলেছে।

: ক... কি বললে?!...

: গেম খেলবে!!....

: ম..মানে?!...

: এটাও ইনভেস্টিগেশনের পার্ট!!.... " বলে রবিনের পাশ থেকে চা'য়ের একটি কাপ তুলে এক চুমুক দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে সব বুঝিয়ে বলে আলভি। রবিন ভ্যাবাচেকা খেয়ে শুধু মাথা নাড়ায়। বেচারা রবিনের এমন অসহায়ত্ব দেখে ইন্সপেক্টর সামস নিজের হাসিকে অতি কষ্টে সংবরণ করে যাচ্ছেন।

এবার আলভি ইন্সপেক্টর সামসের দিকে মনোযোগী হয় বলে " ফোর্স রেডি তো?!!......"

: হ্যাঁ!!... একদম!!....

: আচ্ছা!!.... আমি তাহলে জানাবো ঠিকানা কোথায়....

: বেশ!!.... আমি তবে উঠি!!.... কিছু লাগলে কল দিবেন!....... বলে হাসিমুখে বিদায় নিয়ে থানার জন্য বেরিয়ে যান ইন্সপেক্টর সামস।

বেশ কিছুক্ষণ পরে রবিন অস্ফুটস্বরে বলে " শীট!!...."

আলভি মুখতুলে চেয়ে জানতে চায় " কি হলো?!...."

: হেরে গেলাম!...

: মানে?!....

: আসলে....অ্যাপ এর ডেয়ার ছিলো... আমাকে লুডু'তে ইনভাইট করছে...তাই....

: তো?...আবার কন্টিনিউ করো...

: হবে না!!.... শর্ত ছিলো... আমি হেরে গেলে... গেম ওভার!!.... দেখ এখন আবার নতুন করে খেলা শুরু হবে.... তাই ব্রেক নিচ্ছি!....

ভ্রু কিঞ্চিত কোচকে আলভি বলে " হুম্মম্ম.... মেনুয়াল চেঞ্জ!!...."

: কিভাবে?!....

: সবটাই অনুমান!!.... আচ্ছা সেদিন যে ছেলে আসছিলো...

: হ্যাঁ... হ্যাঁ... সারোয়ার...

: হুম্মম....ছদ্মবেশে ছিলো!...

: কেন?...কিছু জানো নাকি?!...

: প্রিন্সিপালের ছেলের নাম ও সারোয়ার!!....

: মাই গড!!.... তাহলে?!...

: ডেকেছি সাবাই কে..... বলে ক্রুড় হাসি দেয় আলভি

: সত্যিই!!....

: হুম্মম... চেপে রাখো কথাটা!... আচ্ছা... সারোয়ারের বিশেষ কোন কিছু মনেপরে?!...

: উম্মম্ম.... হ্যাঁ ওর বা' হাতের... মধ্যাঙ্গুলির তালুতে একটা তিল আছে....

: উম্মম... তিল!!... নেক্সট অ্যাপয়েন্টমেন্ট কবে?!...

: আজ সন্ধ্যা!....

: আচ্ছা!!... আমি উঠি তবে.... বেলা দুটোয় তৈরি থেকো.....আর ওদিকে খিয়াল রাখবে..... বলে ধৃত লোকটির কক্ষের দিকে ইশারা করে আলভি আবারো চলে যায় বাইরে।

" উফফফফ!!...." স্বল্প অস্বস্তি নিয়ে ধৃত লোকটি'র পাহারায় বসে আবারো ট্রুথ আন্ড ডেয়ার অ্যাপটি ওপেন করে রবিন।

Threads

--------------------------------

ঘড়িতে বেলা দেড় টা বাজে।

হন্তদন্ত হয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে আলভি। রবিন কে তাড়া দেয় জলদি তৈরি হয়ে যেতে। আলভি'র এমন আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গেছে রবিন তাই কথা না বাড়িয়ে দ্রুত তৈরি হয়ে বেরিয়ে যায় আলভি'র সাথে।

একটা ট্যাক্সি করে ওরা যাত্রা শুরু করে। আলভি'র চোখমুখের ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে সে হয়ত বড় কোন কিছু জেনে এসেছে, একটা চাপা উত্তেজনা ওর চেহারাতে বিদ্যমান। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে রবিন নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে জানতে চায় " আ... আলভি!!... কোথায় যাচ্ছি?!...কি হয়েছে?...."

: অতীতে!!...

: হ্যাঁ?!...

: তোমাকে যেভাবে বললাম ওভাবেই গেম স্টার্ট রাখো!!...

: স্টার্টই আছে!!... কিছুটা বিরক্তি নিয়ে জবাব দেয় রবিন।

আলভি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

ঘন্টা খানেক পর ট্যাক্সি একটা নিরিবিলি রাস্তায় এসে থামে। চারিদিকে উচু গাছ পালায় ঘেরা শীতল পরিবেশ। রবিন হা হয়ে এদিক ওদিক তাকায় দেখে নেয় চারপাশ। আলভি চোখের ইশারা করে চলতে বলে। রাস্তা দুই ধারে ঘন ঘাস লতাপাতা জড়ানো মাটির উচু ঢিবি। ডান পাশের ঢিবি পেরিয়ে ওরা ওপরে উঠতে থাকে। মিনিট পনেরো ওপরে উঠার পরে একটা পুরাতন বাড়ি দেখতে পায় ওরা। রবিনের হাত টেনে একটা মোটা গাছের আড়ালে যেয়ে দাঁড়ায় আলভি। দুজনেই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে বাড়ি টার দিকে, যদিও রবিনের কাছে পুরো ব্যাপারটাই অজ্ঞাত।

হঠাৎ আলভি'র ফোন ভাইব্রেট করে ওঠে, চাপা কন্ঠে রিসিভ করে বলে " হ্যাঁ.... ইন্সপেক্টর সামস!!!..... সারোয়ার কোথায়!!...."

ওপাশের কথা শোনা যায় না তবে আলভি পুণরায় বলে " গ্রেট!!.... আসুন তবে!!... রাখছি!...."

ক্ষানিক বাদে কিছু লোকের কন্ঠস্বর শোনা যায়, যারা কথা বলতে বলতে এই বাড়ির দিকেই এগিয়ে আসছিলো। একজনের চিন্তিত গলা শোন যায় " তা... তাহলে.... কে ডাকলো এখানে!!....."

অপরজন বলে " সেটাই তো!!... আমাদের কে কেন?!..."

এরমধ্যে একজন বেশ ভারি কন্ঠে " এত অস্থির হওয়ার কিছুই হয়নি!!.... শোন!!... আমরা এখানে এসেছি... এখানেই ভুলে যাবি...বাকি কথা পরে হবে.... কেউ দেখেও নি....কিচ্ছুনা!... চল! সব ফিরে যাই......"

সকলের কথাটি মনপুত হয় তারা ফিরে যাবার জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পায় পিছন থেকে কেউ জন বলে ওঠে,,,

" আমরা তো দেখেছি!.....গল্পটা না হয় শুনিয়ে যান মি. জামশেদ!!....."

থমকে দাঁড়ায় সকলে, বিস্ফারিত চোখে তাকায় সবাই ওদের দু'জনের দিকে।

Instagram

: আরেহ!....আমাকে চিনতে পারছেন না মি.ফারহাদ!!.... বিপন বাবু!!... আপনিও না?.... প্রিন্সিপাল সাহেব আপনি তো চিনতে পারার কথা?!!!.......

আলভি যে তাদের সবাই কে এভাবে একসাথে দেখে নিবে এটা তারা কল্পনাও করতে পারেনি। গলা শুকিয়ে কাঠ, ভয়ার্ত চোখে একে অপরের দিকে চাওয়া চায়ি করেছে তারা। কাপা ঠোটে কোন উত্তর নাই। অতি কষ্টে মি. ফারহাদ বলেন " আ... আপনি!!!..."

: হুম্মম্মম্মম!.... আমি!!.... বাহ!!.. কি দারুণ অভিনয় আপনাদের!!.....

: অ... অভিনয়!!...ক....কি বলছেন বাবু!.... বলে বিপন রায়।

চাপা রাগ দমিয়ে বজ্র কন্ঠে আলভি বলে " একদম মিথ্যা বলবেন না!!!...."

নিজেকে ধাতস্থ করে পুণরায় আলভি বলে " আপনারা সবাই একে অপরকে চিনেন... চিনেন বলা ভুল হবে!.... আপনারাতো বন্ধু কলেজ লাইফ থেকেই.....কি এমন কারণ যে এই বন্ধুত্ব কে সবার আড়ালে রেখে দিলেন...........

WhatsApp

চলমান....

( গল্প টি আপনার কেমন লাগছে কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)

আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ৯

Post a Comment

0 Comments

Close Menu