লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার
চাপা রাগ দমিয়ে বজ্র কন্ঠে আলভি বলে " একদম মিথ্যা বলবেন না!!!...."
নিজেকে ধাতস্থ করে
পুণরায় বলে " আপনারা সবাই একে অপরকে চিনেন... চিনেন বলা ভুল হবে!.... আপনারাতো
বন্ধু কলেজ লাইফ থেকেই.....কি এমন কারণ যে এই বন্ধুত্ব কে সবার আড়ালে রেখে দিলেন?!....
মি. জামশেদ এগিয়ে
এসে আলভি'র কাধ চাপড়ে বলে " মি. আলভি!!... আপনি অহেতুক সন্দেহ করছেন!... এমন কিচ্ছু
না!!...
তাচ্ছিল্যের সুরে
আলভি বলে " এই জায়গায় দাড়িয়েও এত বড় মিথ্যা!!..... হাহাহা.... বাহ!!..."
মি. জামশেদ এবার
অনেকটাই দমে যান কাচুমাচু করে একটু দূরে যেয়ে দাঁড়ান।
আলভি গলা ঝাড়া দিয়ে
বলে " কি ব্যাপার কি!!... আপনারা কিছু বলবেন??.... নাকি আমি অন্য.... "
আলভি'র কথা শেষ করার
পূর্বেই প্রিন্সিপাল সাহেব মি. শাহাবুদ্দিন চঞ্চল হয়ে বলে ওঠেন " আ... আমারাই
বলছি মি. আলভি!!... ক... কি বলিস তোরা?!!... বলে তার বন্ধুদের দিকে তাকান।
সকলে সম্মতি দিলে
মি. শাহাবুদ্দিন পুনরায় বলতে শুরু করেন,,,
সালটা ১৯৮৭...
আমরা পাঁচজন... মানে...
আমি.. বিপন.. জামশেদ... ফারহাদ আর কমলাকান্ত বোস.... সবাই ভিন্ন স্কুল থেকে... এই সেন্ট্রাল
কলেজে এসে ভর্তি হই... আমাদের খুব ভাব ছিল.... আমরা সকলে একই রুমে থাকতাম....সারাদিন
আড্ডাবাজি করতাম.... সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল... দু'বছর পর...আমাদের উচ্চমাধ্যমিক শেষ হয়ে
যায়.... এরপরে আমরা সবাই হায়ার স্টাডিজের জন্য আলাদা হয়ে যাই....
আলভি ভ্রু কোচকে
এতক্ষণ মি. শাহাবুদ্দিনের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছিল, এবার সে প্রশ্ন করে " এরপরে
কি হয়?... "
এ প্রশ্নের জবাবে
বিপন বাবু বলেন " আ... আসলে...উচ্চমাধ্যমিকের পর... আমি পাচুলিয়াতেই থেকে যাই...
এখানেই হায়ার স্টাডিজ করেছি.... হঠাৎ পাঁচ বছর পর মানে... চুরানব্বই য়ে... কমলাকান্ত
এ শহরে ফিরে আসে.... ফরেস্ট অফিসার হয়ে... এরপর থেকে এই বাড়িতেই থাকতো....
: হুম্মম্ম.... এরপর
কি হলো?!... আবারও জানতে চায় আলভি।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
মি. জামশেদ মুখ খোলেন, " হ... হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায়... আমরা খবর পাই কমলাকান্তের
বাড়িতে আগুন লেগেছে...."
: তখন আপনি কোথায়
ছিলেন?.... ঠান্ডা কিন্তু বেশ কঠিন গলায় প্রশ্ন করে আলভি।
মাথা নিচু করে মি.
জামশেদ বলেন " কোয়েন্সিডেন্টলি.... আমরা সেদিন পাশেরই একটা রেস্ট হাউজে ছিলাম.....
"
: স্ট্রেঞ্জ!!....তারপর??...
মি. ফারহাদ নিচু
গলায় বলেন " আমরা চার বন্ধু... ছুটে এসেছিলাম এই বাড়িতে...ক...কিন্তু...ততক্ষণে....সব
শেষ.....
: এবাড়ির খবর...
কিভাবে পেয়েছিলেন??
: সিকিউরিটি গার্ড
এর মাধ্যমে...
: হুম্মম্ম.... কিন্তু
এর পরে কি হল যে আপনারা নিজেদের.. সম্পর্ক বদলে ফেললেন?!!....
: আসলে... আ...আমাদের
এই বাড়তে আসা যাওয়া ছিল.... ঘুরতে এসে...সেদিনও দুপুরে আমরা এসেছিলাম.... জায়গাটা
নির্জন হওয়ায়... লোকে আমাদের সন্দেহ করতে পারে... ত...তখন আমরা সবাই কর্মজীবনে নতুন
ছিলাম... ভেবে...ক্যারিয়ারের ভয়ে সবকিছু চাপা দিয়ে...আমরা নিজেরাও আলাদা হয়ে যাই....
এরপর...এরপর থেকে আমাদের আর কোন যোগাযোগ নেই..... বিশ্বাস করুন মি. আলভি!!.....
: হুম্মম.... বেশ
তবে....একে একে কিন্তু আপনাদের সন্তানরাই টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছে.....
আলভি'র এই কথায়
তারা সকলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকি কেউ কোনো জবাব দিতে পারে না।
: আচ্ছা..... আমি
তাহলে চলি...বলে আলভি রবিন কে নিয়ে মাটির ঢিবি বেয়ে নিচে নামতে থাকে।
অপরদিকে তারা চার
জনও বড় বিপদ থেকে যেন হাফছেড়ে বাচে।
ট্যাক্সিতে চড়ে বসার
পর রবিন ব্যস্ত কণ্ঠে জানতে চায় " তুমি ইনাদের ছেড়ে দিলে কেন?!!.... "
: ইনোসেন্ট তাই!!....
: তো.. তোমার এদেরকে
ইনোসেন্ট মনে হচ্ছে?!...
: হুম্মম্ম!!....
: উফফ!!.... ভালো..গোয়েন্দা
তো তুমি আমি নই....
রবিনের কথায় আলভি
ওষ্ঠ ধরে রহস্যপূর্ণ হাসি খেলে যায়।
ইন্সপেক্টর সামসের
বাসায় পৌঁছতে তাদের প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যায়। তিনি তখনও ফেরেননি তাই সন্ধ্যাকালীন
চা পানের আসরে শুধু রবিন আর আলভি।
চিন্তিত কন্ঠে রবিন
বলে " আজকে তো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিল সারোয়ারের..... "
চায়ের কাপে এক চুমুক
দিয়ে হেঁয়ালি করে আলভি জবাব দেয় " ও তুমি ভেবোনা... আসবেনা খোঁজ নিয়ে দেখো!....
"
রবিন কিঞ্চিৎ কৌতুহল
বসত তার চেম্বারের সহোযোগি কে কল করে জানতে পারে সত্যিই আজকে যার অ্যাপয়েন্টমেন্ট
ছিল সেই রোগী অনুপস্থিত। রবিন শুরু থেকেই অস্বস্তি নিয়ে বসে আছে যা তার হাবভাবে বেশ
বোঝা যাচ্ছে কিন্তু আলভি ফোনে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে বিধায় কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছেনা।
স্মীত হেসে আলভি
নিজেই জিজ্ঞেস করে " কি হে বন্ধু!!.... কি কথা লুকিয়ে রেখেছ পেটের ভেতর?!.....
"
: হাহাহা... আসলে...বলছি...কালকে
ওভাবে ডাকাতের মতো... ফাইলের ইনফরমেশন নেয়ার কারণটা কি ছিল?!!
: তো?...কিভাবে নিতাম?
: প্রিন্সিপাল কে
বললেই হতো!!....
: হাহা... রবিন!!
মাথা কাজে লাগাও হে বন্ধু!!...এই যে এমপি মি. জামশেদ....উনার বন্ধু ওই প্রিন্সিপাল...
এবার তুমিই বলো কারেক্ট এন্সার আদৌ পাইতাম কি?!....
: হুম্মম... সেটাও...
: আর যদিও বা ইনফরমেশন
দিতো.... সব খবর কিন্তু জানিয়ে দিতো সবাই কে....ফলে....
: ফলে... ওরা সর্তক
হয়ে যেত...
: একদম!!...এরা রাজনীতির
লোক....
: তারমানে.... কিছুতো
আছে!...
: হুম্মম... আচ্ছা
রবিন তুমি বরং একটা ট্রিক্সস ফলো করতো!!....
: কেমন?!!.....
আলভি উঠে এসে রবিনের
পাশের চেয়ারে বসে ওকে সব বুঝিয়ে দিয়ে বলে " মনে থাকবে?!..."
: হুম্মম... হাতের
তিল!...
" কোন তিলের
কথা হচ্ছে মি. রবিন?!...." ইন্সপেক্টর সামস বাড়িতে প্রবেশ করে বললেন।
: ওহহো!!.... মি.
সামস এসেছেন!... আমি তবে এক কাপ গরম চা নিয়ে আসি...
: না... না... ধন্যবাদ!!...
আমি খেয়েছি!.... বলছি কার তিলের কথা বলছিলেন?!...
রবিন আলভি'র দিকে তাকায় চোখের ইশারায় অনুমতি পেয়ে রবিন বলে " সারোয়ার নামের...একজন পেশেন্ট এসেছিল আমার কাছে... আলভি ধারণা করছে....এই হ****ত্যাকাণ্ডের সাথে সে কোনোভাবে জড়িত....তাই...
ইন্সপেক্টর সামস
এবার বিস্মিত হয়ে আলভির দিকে ফিরে বলে " কিন্তু মি. আলভি!!.... আমরা সারোয়ারের
হাতে এরকম কোন তিল পাইনি.... "
আলভি মাথা ঝাঁকিয়ে
মুচকি হেসে সংক্ষিপ্ত জবাব দেয় " জানতাম... "
রবিন বিস্ময় প্রকাশ
করে বলে " সারোয়ার... মানে প্রিন্সিপালের ছেলে সে কি এ..খ..ন......
: জ্বি!...মি. রবিন!....
সে এখন আমাদের কাস্টডিতে আছে....
: হুয়াট!... কেন?!...
: উনিই ভালো জানেন...
বলে ইন্সপেক্টর সামস আলভি'র দিকে ইশারা করে।
ভারি গলায় আলভি বলে
" খু***নির নেক্সট টার্গেট সারোয়ার!!...."
কাল বিলম্ব না করে
লম্বা হাই তুলে আলভি চলে যায় শোবার ঘরে। থানার দায়িত্ব পালন করে ইন্সপেক্টর সামসও
অনেক ক্লান্ত ছিলেন বিধায় তিনিও রবিন কে বিদায় জানিয়ে তার কক্ষে চলে যান। রবিন এবার
ঠান্ডা মাথায় অ্যাপ ওপেন করে তাতে ব্যাস্ত হয়ে যায়।
-------------------------
রাত দুটো।
রবিনের হাকডাকে আলভি
ইন্সপেক্টর সামস নিজদের কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে আসে হন্তদন্ত হয়ে। ইতোমধ্যে ধৃত লোকটিও ভয়
পেয়ে সেও দরজায় করাঘাত করতে শুরু করে। ইন্সপেক্টর সামস কিছুটা ধমকে বলেন " আরে
থাম!!.... তোর মুরগী হারাইছে?.....ঘুমা!!....."
আর কোন সাড়াশব্দ
হয়না।
আলভি হাই তুলে বলে
" কি বন্ধু!.... এভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছো কেন?....."
: এই যে!!.... কাংখিত
তিল!!..... বলে ফোনের স্ক্রিন আলভি'র দিকে ঘুরিয়ে ধরে।
মুহুর্তে সব ঘুম
যেন আলভি আর ইন্সপেক্টর সামসের চোখ থেকে উধাও..........
চলমান......
( গল্প টি আপনার
কেমন লাগছে কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)
আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ১০ (প্রথম খন্ড)
0 Comments