Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ২

 লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

পরপর দুটো টিউশনি করিয়ে বাড়িতে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় উষ্ণ। সিলিং এর দিকে মুখ করে ভাবতে থাকে গত রাতের কথা..
তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী ছিলো গিটার। মধ্যরাতে যখন চোখে ঘুম আসে না তখন গিটার টা নিয়েই সময় কাটায়। গানের মাধ্যমে মনের সব লুকানো কথা উড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝেই নিজের বিষাক্ত অতীত মনে আসলে একা একা ডুকরে কাঁদে। ঠিক গত রাতের মতো..। চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। উষ্ণ সেটা মুছে এক ক্ষীণ হাসি দিয়ে বিছানা থেকে উঠে যায়। কেন কাঁদবে সে?সে তো ছেলে। ছেলেদের যে কাঁদতে নেই।
__________Facebook
গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার তটিনী। এই ভ্যাপসা গরমে তার রান্না করার ইচ্ছা হয়েছে। মায়ের কয়েকশ ঝাড়ি খেয়েও সে তার সিদ্ধান্তে অটল। সে রান্না করবেই করবে।
“কী রে?তোর রান্না হলো?”
কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘামটুকু মুছে উত্তর দেয়,
“হ্যাঁ মা। হয়ে গেছে। আসছি।”
তটিনী নিজের রান্না করা খাবারের বাটিগুলো টেবিলে এনে রাখে।
“আমার আম্মুটার তাহলে রান্না করার শখ মিটলো।”
মৃদু হেসে বাবার কথার উত্তর দেয় সে,
“হ্যাঁ বাবা।”
তৌফিক ইসলাম ও আরিফা বেগমের দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে তটিনী আহিন মৌরি। ও বড় মেয়ে তোর্সা আহিন মোহ।
“বাহ্ আম্মাজান। তোমার রান্নাটা অনেক ভালো হয়েছে।”
“ধন্যবাদ বাবা।”
বাবা - মেয়ের কথার মাঝেই কথা বলে ওঠেন আরিফা বেগম।
“ইশ, আজ যদি আমার তোর্সা টা থাকতো তবে সেও হয়তো এভাবে হাসতো, খেলতো, হুটহাট আবদার করতো।”
বড় মেয়ের নাম কর্ণকুহর হওয়া মাত্রই তৌফিক ইসলামের হাসিমাখা আদল টা চুপসে যায়। কোনো এক শুন্যতা আকড়ে ধরে তাকে। স্বামীর চেহারার এহেন পরিবর্তন দেখে আরিফা বেগম তটস্থ হন। বোধ হয়, তার হয়তো বড় মেয়ের কথা টা উঠানো উচিৎ হয় নি। তিনি কিছুটা ইতস্তত করে প্রসঙ্গ পালটান। এতটা সময় যাবত নীরব শ্রোতা হয়েই বসে ছিলো তটিনী। সময়ের বিবর্তনে আজ তার সহোদরা বোন তার কাছে নেই। এ সমাজের নিম্ন মানুষিকতার লোকজন যে তার বোনের নামে বাজে কথা বলে, তারা কী জানে তার বোন হারিয়ে যাওয়ার পিছনে হৃদয়বিদারক কাহিনী?
~~~~~~~~~~TikTok
“এই তটিনী, শোন না বোন।”
“বলো আপা।”
“তোর এক মুঠো নীল চুড়ি আছে না, ওগুলো একটু দে না। এগুলো আমার শাড়ির সাথে যাচ্ছে না।”
“তুমি একটু অপেক্ষা করো, আমি নিয়ে আসছি।”
“আচ্ছা দে।”
তটিনী এক ছুটে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত চুড়িগুলো নিয়ে আসে।
“ধন্যবাদ বোন।”
উত্তরে মোহ কে সৌজন্যমূলক হাসি ফিরিয়ে দেয় তটিনী। ছোট থেকেই তটিনী তার বড় আপাকে ভীষণ ভালোবাসে। অন্য ছোট বোনদের মতো মা বাবার কাছে বড় বোনের নামে কখনোই বিচার দেয় নি সে। উলটে তার আপা কোনো ভুল করলে সে সব দোষ নিজের উপর নিয়ে নেয়। তার আপা ও তাকে কম ভালোবাসে নি। তার বড় আপার সৌন্দর্য্য, ব্যাক্তিত্ব তাকে বারংবার মুগ্ধ করে তোলে।
“কী হলো আম্মাজান? তুমি খাচ্ছো না কেন?”
বাবার ডাকে তটিনী নিজের সম্বিত ফিরে পায়। নীরব থেকেই বাকি খাবার শেষ করে উঠে যায়। যা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তটিনীর মা বাবা।
______________Threads
“শিকল দিয়ে কাউকেই বেঁধে রাখা হয় না। তারপরেও সব মানুষই কোনও – না – কোনও সময় অনুভব করে তার হাত – পায়ে কঠিন শিকল । শিকল ভাঙতে গিয়ে সংসার – বিরাগী গভীর রাতে গৃহত্যাগ করে। ভাবে, মুক্তি পাওয়া গেল। দশতলা বাড়ির ছাদ থেকে গৃহী মানুষ লাফিয়ে পরে ফুটপাতে। এরা ক্ষণিকের জন্য শিকল ভাঙার তৃপ্তি পায় ।”
লাইব্রেরিতে বসে এক ধ্যানে হুমায়ুন আহমেদ এর ❝মৃন্ময়ী❞ উপন্যাস টি পড়ছে উষ্ণ। হুমায়ুন আহমেদ এর বিখ্যাত উপন্যাসগুলোর ভিতরে মৃন্ময়ী একটি।
নিজের জন্য একটু অবসর সময় পেলেই উষ্ণ চলে আসে লাইব্রেরি তে। অথবা নিজ কক্ষেই শরীরচর্চা করে। এদুটো কাজ যেন তার কাছে নেশার মতো। সে এতেই শান্তি খুজে পায়। উষ্ক-খুষ্ক চুল। ঘামে ভেজা টি শার্ট, বলিষ্ঠ শ্যামরঙা শরীর ও অসম্ভব মায়াময় আদলের এই পুরুষটিকে এ মুহুর্তে কী বলা যায়? অদ্ভুৎ সুন্দর? তার ওই উজ্জ্বল বাদামী চোখের গভীরত্ব কতখানি? তার আঁখিযুগলের দিকে তাকিয়ে যেন কয়েক শতাব্দ কাটিয়ে দেওয়া যাবে। উপন্যাস টি কিছুটা পড়ে বাহিরের দিকে পা বাড়াতেই উষ্ণ ধাক্কা খায় কারো সাথে। মুখ থেকে বিরক্তিসূচক শব্দ বের হয়। উষ্ণ সামনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে। মেয়েটাকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় সে। বুকের ভিতর শুরু হয় এক অদ্ভুৎ কম্পন। কে এই মোহিনী নারী?
“দুঃখিত। আমি দেখতে পাই নি।”Instagram
মেয়েটির কণ্ঠ মস্তিষ্কে পৌছানো মাত্রই উষ্ণের ঘোর আসে।
সে এতোক্ষন নির্লজ্জের মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ছিলো? উষ্ণ মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয়। সে মেয়েটিকে আরেক পলক দেখে নেয়। গাড় নীল থ্রিপিস পরিহিতা এক রুপসী নারী বুকশেল্ফ থেকে পছন্দ অনুযায়ী বই খোজায় ব্যস্ত। মুখ ঘেমে নেয়ে একাকার। খোপায় বাধা কোকড়া চুলগুলো থেকে কিছু সংখ্যাক চুল বের হয়ে আছে। এ দৃশ্য দেখে উষ্ণের মনে এক অন্যরকম মুগ্ধতার সৃষ্টি হয়। মেয়েটি উষ্ণ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজে থেকেই এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,
“কিছু বলবেন?”
উষ্ণ মাথা নাড়িয়ে বোঝায়, না।
মেয়েটি উষ্ণ কে এক পলক দেখে মৃদু হাসি দিয়ে বলে বলে,

“আমি..মোহ। আপনি?”


Post a Comment

0 Comments

Close Menu