Ad Code

আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ১১ (অন্তিম পর্ব - শেষ খণ্ড)

লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার

আলভি গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করে " কি হয়েছিল তোমার বাবা-মায়ের সাথে??!!...... "

শান্তানু বলতে শুরু করে " আমি তখন সবেমাত্র ক্লাস ওয়ানের ছাত্র... মায়ের সাথে নানা বাড়ি থাকতাম...বাবা'র তখনও চাকরি কনফার্ম হয়নি তাই....পরের বছর চাকরিসূত্রে বাবা মাকে নিয়ে পাচুলিয়া শিফট করেন.....আমাদের কোয়ার্টার ছিল একটু জঙ্গলের সাইডে....মানে ঘন গাছপালায় ঘেরা.... আমি পাচুলিয়া তে এসে দ্বিতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হই.... বয়স তখন আট.....তো এখানে আসার পরে দেখতাম..... বেশ অনেক আন্টিরা মায়ের সাথে দেখা করতে আসতো...... ছোট ছিলাম তখন অত বেশি বুঝিনি.... এতটুকু ঠিকই বুঝতাম তারা আমার মায়ের চেহারার অনেক প্রশংসা করতেন.....সত্যি বলতে মা আমার অনেক সুন্দরী ছিলেন... বড় বড় চুল ছিল.... দেখতেও রূপবতী....... কিন্তু জানেন স্যার!!.....আমি তখন বুঝিনি আমার মায়ের এই রূপই তার জন্য কাল হয়ে যাবে..... বছরখানেক বেশ ভালোই কাটল আমাদের.... মা একটু নিরিবিলি জায়গা বেশি পছন্দ করতেন.... সব ঠিকই চলছিল.....সেখানে যাওয়ার পরে জানতে পারি... বাবার নাকি এক বন্ধু সেখানকার স্থানীয়.... এক রাতে... ওই নিকৃষ্ট মানুষটাকে বাবা ভোজের জন্য ডেকেছিল.... সেদিন ঠিক কি হয়েছিল এটা আমি জানি না.... তবে এইটুকু দেখেছিলাম মা বিপন নামের ওই অমানুষটাকে চড় দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল..... আলভি স্যার!! সেদিন প্রথম দেখেছিলাম আমার মাকে অসহায়ের মত কান্না করতে.... বাবা ফিরলে মা বিষয়টা বাবাকে জানান.....এটা নিয়ে ওই লোকের সাথে বাবার কিছু ঝামেলাও হয়.... পরে কিভাবে কি মিটমাট হয়েছে তা জানি না আমি..... এরপর আরো বেশ কিছুদিন কেটে যায়.... বাবাকে দেখতাম মাকে নিয়ে খুব চিন্তা করতেন..... পরে তিনি দুজন গার্ড রাখেন বাড়িতে.... আমি তো তাদের একটাই সন্তান ছিলাম.... আস্তে আস্তে সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে এলো.....বাবা মাকে নিয়ে বেশ ভালোই দিন কাটিয়েছি.....দেখতে দেখতে পাচুলিয়াতে আমাদের দেড় বছর থাকা হয়ে যায়......সেই দিনটা আমার জন্মদিন ছিল..... গিফট হিসেবে বাবা আমাকে একটা ক্যামেরা কিনে দেন..... আমি প্রকৃতি খুব ভালবাসি স্যার.... আমি যেন মনের ইচ্ছেমতো ছবি ভিডিও সেভ করতে পারি.... তাই আমাকে বাবা ওটা উপহার দিয়েছিলেন................... একনাগারে কথাগুলো বলে শান্তানু ডুকরে কেঁদে ওঠে।

Facebook

ইন্সপেক্টর সামস এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন " হুম্মম...এরপর??....."

দম নিয়ে শান্তানু আবার বলতে শুরু করে,,," এরপরে আসে স্যার এক ভয়ংকর দিন....আমার জন্মদিনে বাবা তার বন্ধুদের নিমন্ত্রণ করেছিলেন...... তারাও এসেছিল.... কিছুদিন পাচুলিয়া শহর ঘুরে দেখবে বলে একটা রেস্ট হাউজ ভাড়া করে.......একদিন দুপুরে স্কুল থেকে ফেরার পথে আমি কিছু ছবি তুলি ওই ক্যামেরা দিয়ে..... বাড়ির সামনে এসে দেখি দরজা খোলা সাধারণত মা এমনটা করেন না...... একটু খেয়াল করতে বুঝতে পারি ভেতর থেকে মায়ের আত্মচিৎকার..... আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই..... ভিতরে কি হয়েছে দেখার জন্য.... পা টিপে বাড়ির পেছন দিয়ে.... মায়ের রুমের জানালার সামনে এসে দাঁড়াই...... এরপর.....এরপর যা দেখি তা বর্ণনা করা যাবে না.... আমি পারবো না... পারবো না আমি সেই নৃ*শং*স*তার বর্ণনা করতে..... আমি পারবো না.... আমি পারবো না স্যার!!!.......... বলতে বলতে শান্তানু দুলে পড়ে টেবিলের ওপর।

দ্রুত রবিনকে ভেতরে ডাকা হয়। সে এসে স্ট্রেস কমানোর ইনজেকশন পুশ করলে ধীরে ধীরে শান্তানুর জ্ঞান ফিরে আবার স্বাভাবিক হয়ে বসে। শান্তানু নিজেই জানায় সে এখন জবানবন্দি দিতে পারবে।

মিনিট দশের মত সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে কান্না ভেজা গলায় শান্তনু পুনরায় বলা শুরু করে,,,,,

" ওই জা*নো*য়া*র*গুলো সেদিন আমার মায়ের সাথে অন্যায়ই করেনি.... বরং নৃ*শং*স ভাবে... তীব্র যন্ত্রণা দিয়ে বাবা মা... দুজনকেই হ**ত্যা করেছিল...... আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম স্যার!!!.... আমি শুধু বুঝতে পারছিলাম তারা আমার মায়ের সাথে অন্যায় করছে.... তাই....তাই বাবাকে জানাবো বলে প্রচন্ড ভয় নিয়ে...চুপ করে আমার ক্যামেরাটা অন করি.... ভিডিও করেছিলাম সেদিনের প্রত্যেকটা ঘটনা... আর ওই জা*নো*য়া*র*গুলার মুখ.... ওই নোংরা মুখ দিয়ে তারা যে শব্দগুলো উচ্চারণ করেছে... তার প্রত্যেকটা এখনো আমার কানে বাজে..... আমি এইরকমই বারবার জ্ঞান হারাই.... অস্থির হয়ে যাই ওই দিনের কথাগুলো মনে পড়লে.... শুনবেন স্যার অমানুষ গুলো কি করেছিল এরপর??..... ওরা অন্যায় করার পরও শান্তি পায়নি.... ওই অ*মা*নু*ষ ফারহাদ আমার মায়ের চেহারায় এসিড ঢেলে দিয়েছিল.... যাতে যেকোনোভাবে বাবা-মা দুজনেই চুপ থাকে.... কিন্তু আমার মা সেদিন আর যন্ত্রণা নিতে পারেনি..... তার প্রাণ বায়ুটা ওই নি*কৃ*ষ্ট মানুষ গুলোর সামনেই বের হয়ে যায়.... আমি দেখছিলাম আমার মা নিথর হয়ে পড়ে আছে..... কিন্তু তখন ওই শ*য়*তা*নগুলো... অ*মা*নু*ষের রূপ নিয়েছিল.... তারা চেষ্টা করছিল কোন ভাবে সবকিছুকে দুর্ঘটনা প্রমাণ করবে.... কিন্তু কিভাবে তারা না চাইতেও.... আমার মা তাদের হাতে খু**ন হয়ে যায়..... 

YouTube

এরপর বাবা আসার সময় হয় সন্ধ্যায়..... আমি তখনো ভয়ে চুপসে সেখানেই লুকিয়ে থাকি.... দেখি অন্ধকার ঘনিয়ে আসলে বাবা বাড়িতে ফিরেন... মায়ের নাম করে যেই ডাক দিলেন.... তখন বিপন জা*নো*য়া*রটা পেছন থেকে বাবার গলা পেঁচিয়ে ধরে কাপড় দিয়ে....সবাই তার পরিচিত ছিল বাবা হতবিহ্বল হয়ে যান... শুধু চারিদিকে তাকান আর ছটফট করতে থাকেন একটু বাঁচার আশায়..... বাবাকে যখন মায়ের রুমে নিয়ে আসা হয়.... এক বুক ফাটা চিৎকারে বাবা অস্থির হয়ে যাচ্ছিলেন....কিন্তু ওই শ*য়*তা*ন জামশেদ বালতি ভর্তি পানিতে বাবার মাথা ডুবিয়ে চেপে রাখে.... তারা চিৎকার করে বারবার বলছিল বাবা যেন কাউকে না বলে এ কথার স্বীকারোক্তি দিক..... কিন্তু বাবা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদেরকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলেন..... তখন ওই অ*মা*নু*ষ শাহাবুদ্দিন বাবার মাথায় ব্যাট দিয়ে প্রচন্ড আঘাত করে..... রক্তাক্ত শরীরে আমার চোখের সামনে বাবাকে লুটিয়ে পড়তে দেখি...... আমার কিচ্ছু করার ছিল না সেদিন... কিচ্ছু না.... আমি পাথর বনে গেছিলাম.... একদিকে প্রচন্ড ভয়.... চোখের সামনে নৃ*শং*স*তা দেখা... আরেক দিকে বাবা-মা দুজন কেই মৃত্যু-মুখে ঢলে পড়া.....আমি পাথরের মত দাড়িয়ে দেখি..... তারা রান্নাঘর থেকে কেরোসিন এনে.... পুরো বাড়িটা আগুনে জ্বালিয়ে দেয়..... আগুনের লেলিহান শিখায় আমার কোনমতে হুঁশ ফিরে.... ওই ক্যামেরাটা বুকে আঁকড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে যাই আমার এক বন্ধুর বাড়ি.................

শ্বাসরুদ্ধকর এক নৃ*শং*স ঘটনার বর্ণনা শুনে সকলে যেন পাথর বনে গেছে। শান্তানু থামলে ইন্সপেক্টর বাবুলাল, সামস, আলভি শুধু একবার পরস্পরের চোখ চাওয়া চায়ি করেন। জীবনে কিছু ঘটনার সম্মুখীন আমরা হই যার বর্ণনা আমাদের মুখের ভাষা কে কেড়ে নেয়। শান্তানু তখনও টেবিলে মাথা রেখে আপন মনে কেঁদে যাচ্ছে।

আলভি গলা খাকারি দিয়ে জানতে চায় " তাদের অন্যায় করার উদ্দেশ্যটা কি ছিল?? "

শান্তানু মুখ তুলে আলভির দিকে চায়, গালে হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ধরা গলায় বলে,,,,, " প্রতিশোধ..... আর নোংরা চরিত্রের ইচ্ছাকে চরিতার্থ করা..... ওই যে মা বিপন কে চড় মেরেছিল.... ওইটা থেকে একটা জেদ ছিল... যেভাবেই হোক আমার মায়ের এই রূপের অহংকারকে তারা ধূলিসাৎ করবে......কিন্তু সত্যি বলতে আমার মায়ের কোন রূপের অহংকার ছিল না..... তার কাছে তো তার নিজের পবিত্রতাই সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল.....

TikTok

: হুম্মম্মম.....এরপর তোমায় যতিনের বাবার সস্নেহে লালন পালন করেন..... তাইতো??.... বলে আলভি।

আলভির মুখে যতিনের নাম শোনে শান্তানু খানিকটা চমকে ওঠে বলে, " আ... আপনি.... যতিনকে.....

: হুম... যতিন পুলিশ কাস্টাডিতে.... প্ল্যান তুমি ভালই সাজিয়েছিলে.... কিন্তু যতিন এক জায়গায় ছোট্ট একটু ভুল করে.... সে যাই হোক.... এখন তোমার নিজের অ*প*ক*র্মের বর্ণনা দাও........

অসহায়ত্বের হাসি হেসে শান্তানু বলে, " অ*প*ক*র্ম!!.... স্যার আমি তো এমন করতে চাইনি!... সেদিন যখন পালিয়ে যতিনের বাড়িতে এসেছিলাম.... আঙ্কেল আমার প্রাণের আশঙ্কা করেন... কিছুদিন বাড়িতেই লুকিয়ে রাখেন.... তার সন্দেহ অমূলক ছিল না....ওরা ঠিকই আমাকে খুঁজে ছিল পায়নি.... ওই ঘটনায় পুলিশ এসেছিল... ইনভেস্টিগেশনও হয়েছিল.... কিন্তু রিপোর্ট কি ছিল জানেন??....নিতান্তই দুর্ঘটনা.... ভুল রিপোর্ট বানানোর একমাত্র কারণ ছিল রাজনীতিবিদের নোংরা সন্তান ওই জামশেদ.... ওরাই পুরো ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল..... আমার কানে সবই আসতো....সবকিছুর খোজ রাখতাম.... কিন্তু আঙ্কেল আমায় সব সময় বুঝাতেন.....লড়াইয়ের আসল সময় এখনো আসেনি..... এরপরে তিনি আমাকে অনাথের স্কুলে ভর্তি করে দেন.... বোর্ডিং এ থাকতাম.... প্রাণের আশঙ্কায় পাচুলিয়াতে আর যাওয়া হয় না..... এরপর লেখাপড়া করি আইটি ডিপার্টমেন্ট থেকে..... আইটি এক্সপার্ট হয়ে পুলিশ ডিপার্টমেন্টেই আমার জব হয়..... কিন্তু যেটা হয় না সেটা হল ন্যায়বিচার..... জাস্টিস... আমি কোন জাস্টিস পাইনি স্যার!!.... আমি উকিলের কাছেও গিয়েছি.....বিশ বছরের পুরনো ক্যামেরার কিছু ঝাপসা তথ্যচিত্র..... তাদের কাছে প্রমাণ বলে মনে হয় না.... আসলে বিষয় সেটা না.... তারা মূলত বড় কারো সাথে লড়াই করতে হবে.... সে ভয়ে পিছিয়ে গেছে..... এরপরে আমি সিদ্ধান্ত নেই.... যা করার আমাকেই করতে হবে..... ঠান্ডা মাথায় অনেক চিন্তা করি অনেক ভাবি কিন্তু দিনশেষে কিছুতেই বুঝেছিলাম না তাদেরকে কিভাবে শিক্ষা দেব...... দিন দিন আমি আরো অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম..... একদিন আমার এক বন্ধুর সাথে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার মজার ছলে খেলছিলাম..... সেটা থেকে হঠাৎ আমার মাথায় আসে..... যদি এমন কোন প্রাইভেট অ্যাপ্লিকেশন আমি বানাতে পারি...... যা ভাবা তাই কাজ..... এক বছর সময় নিয়ে আমি ওই অ্যাপ্লিকেশনের সেটআপ করি..... এর মাঝে আমি ওদের চারজনের সকলের ইনফরমেশন কালেক্ট করতে থাকি..... এরপরে চলে আসে আমার কাঙ্খিত দিন..... প্রথম টার্গেট ছিল শিপন রায়.... কলেজ মাঠে আমি একদিন.... ঐ অ্যাপের কথা জানাই.... ইমপ্রেস করে ওর ফোনে ইনস্টল করিয়ে দিই....আমার কাছে সব কন্ট্রোল ছিল বিধায় আমার ইচ্ছা মতো আমি ওকে ডেয়ার দিতাম...... এভাবে আস্তে আস্তে আমি ওকে বিভিন্ন কথার জালে ফাসাই.....যখন সে এই গেমটার প্রতি আসক্ত হয়ে যায়...... তখন আমি আমার টাস্ক কমপ্লিট করি.... আমি ওকে জাস্ট সেই অংশটুকুর ভিডিও দেখাই যতটুকুতে তার বাবা ছিল..... এরপর তাকে এভাবে ট্রমাটাইজ করি যে... তোমার বাবার করা অপকর্ম কে শুধরে দিতে চাইলে... নিজের জীবন দিয়ে দাও..... অন্যথায় এসব কিছু ফাঁস হবে..... সে চাইলেও আমার কাছ থেকে পালাতে পারত না... কারণ আমি তাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিলাম...... গেমে না আসলে যে কোন সময় এসব কিছু লোকে জেনে যাবে..... খুব বেশি দিন লাগেনি.... বাবার এত বড় এক অপকর্মের সত্য জানার পর.... আস্তে আস্তে শিপন মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে..... প্রথমে বিশ্বাস না করলেও পরবর্তীতে সে বিশ্বাস করে.....এরপর আমার শেখানো কথা মতই..... সমস্ত ইনফরমেশন ডিলিট করে নিজ হোস্টেল রুমে সুইসাইড করে.........

ইন্সপেক্টর সামস জিজ্ঞেস করেন " শিপন তোমার কথা বিশ্বাস করলো কেন??!! "

Threads

: ওকে বলেছিলাম.... ওর বাবাকে যেন জিজ্ঞেস করে আমাদের কোয়ার্টার হাউস সম্পর্কে.... দেখা যায় ওর বাবা ঘাবড়ে ছিল এ প্রশ্নে.... শিপন তো ছোট বাচ্চা ছিল না.....বুঝতে পারে আসল ঘটনা কি...... ব্যাস!!!.....

আলভি এবার জিজ্ঞেস করে " তাহলে শিপনের মা?.... "

: ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল..... আমি শুধু আন্টিকে বারবার ভয় দেখাতাম... বলতাম ভিডিওর কথা সবাইকে জানিয়ে দিব..... আর পাপ মুক্তির সে কথাগুলো.... কিন্তু আমি জানতাম না... আন্টি নিজেকে এভাবে সত্যিই শেষ করে দিবেন.... এক নোংরা লোকের সম্মান বাঁচানোর জন্য.......

ইন্সপেক্টর বাবুলাল এবার জিজ্ঞেস করলেন " আর ফারজানা?!!.... ফারজানা কে তো তুমি হিপনোটাইজও করেছ?!!...... "

: বাধ্য হয়েছিলাম.... মেয়েটাকে একদিন কলেজের এক ফাংশনে.....ডেকোরেটার এর বয় সেজে.... প্রথমে ওর ফোনে গেম টা ইন্সটল করাই.... কিন্তু ও বাবার বড্ড ভক্ত ছিল.... সেই উলটা আমাকে হুমকি দিচ্ছিল.... তার বাবা নাকি এমন করতেই পারে না.... এরপর যতিন আমাকে জানায়... মেয়েটি নাকি কাকে যেন অ্যাসিড মারা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়েছিল..... তখন আমি আমার প্ল্যান একটু ভিন্ন প্লটে সাজাই.... ওকে গেম এর প্রতি অনেক এডিক্টেড করে নিই... বিভিন্ন মজার মজার টাস্ক দিয়ে.... এরপর ওকে প্রতিদিন গিফট পাঠাই চকলেট.... যেটা ওর বাড়ির ফুল বাগানে পাইতো..... শর্ত ছিল চকলেট খাবে আর আমার সাথে কথা বলবে গেমে.....সেও সরলমনে কিছুদিন তাই করে....সময় বুঝে একদিন আমি তাকে তার বাবার সেই ভিডিওটা দেখায়..... ধীরে ধীরে সেও ট্রমাটাইজড হয়ে যায়.... পাপ মুক্তির কথা বলে কনভেন্স করি... তবে ফারজানার ব্যাপারে আমার কাজটা একটু রিস্কি ছিল.....চেক করতে হয়েছিলো সবটা.... আমি ওকে এটা জানাই ওর বাড়ির সামনে এসিডের কনটেইনার রেখে আসবো...... আর ওই দিন রাতেই ওকে সবকিছু ডিলিট দিয়ে.... নিজেকেও শেষ করে দিতে হবে..... নয়তো আমি ওর বাবার ভিডিও ছেড়ে দেব..... ব্যাস সেও মেনে নেয়!!....

আলভি এবার গম্ভীর স্বরে জানতে চায় " আর জিসান?! "

: জিসানের বিষয়টা খুব একটা কঠিন ছিল না.... ছেলেটা বেশ সহজ সরল মনের ছিল....তাকেও একইভাবে কনভেন্স করে গেম ইন্সটল করাই.... এরপর টাস্ক স্বরূপ সাঁতার কাটা আমি নিজে ছদ্মবেশে গাইড করে ওকে শেখাই..... কারণ ছেলেটা একটু ঝামেলা করে দেয়.... ও ওর মায়ের সামনেও গেম খেলতো..... যেটা আমার প্রাইভেসির জন্য সমস্যা ছিল..... যখন সাঁতারের ট্রেনিং দিই... তখনই ওকে বিভিন্ন কথার মাধ্যমে ধীরে ধীরে ট্রমাটাইজ করি....পাপমুক্তি এসব কথা বোঝাই...... এরপরে তো ওর বাবার ভিডিও দেখেন সে খুব দ্রুত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যায়...... তবে এরা সবাই এত দ্রুত আমার কথায় কনভেন্স হইতো না..... আমি তাদের সবাইকে বলেছিলাম... আমাদের কোয়ার্টার হাউস সম্পর্কে নিরিবিলিতে তাদের বাবাকে প্রশ্ন করতে..... জানা কথা তাদের বাবারা অপ্রস্তুত ছিল........

সব ঘটনা শুনে আলভি প্রশ্ন করে " কি লাভ হল তোমার ??...."

Instagram

তাচ্ছিলের হাসি দিয়ে শান্তানু বলে " স্যার!!... লাভ লসের হিসেবে হয়তো আমার ক্ষতি হয়েছে..... কিন্তু কোথাও আমি তো বিচার ঠিকই পেয়েছি..... আপনারাই বলুন এতদিন আমি কেন জাস্টিস পেলাম না....."

: এখনো তুমি জাস্টিস পাওনি!!...... তুমি এতটাই বিবেকহীন মানুষে পরিণত হয়েছ...... নিজেকে ট্রমা থেকে মুক্ত না করতে পেরে.... উলটা নিজেই পরপর তিনটা নিষ্পাপ প্রাণ কেড়ে নিলে!!!!...... শান্তনু আমি তো ছিলাম!!.... আমাকে একবার খুলে বলতে!!!.......আফসোস নিয়েই কথাগুলো বলে আলভি।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে সবাই যখন বের হয়ে যাচ্ছিল শান্তানু আলভিকে প্রশ্ন করে " স্যার!! আপনি আমার কাছে কিভাবে পৌঁছলেন??...... "

ক্লেষ্ট হাসি হেসে আলভি বলে, " আমরা জানতে পেরেছিলাম.... পুরো হ*ত্যা*কা*ন্ড কোন অ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছে..... আহ!!....আর তোমার সাথে আমার যেদিন প্রথম সাক্ষাৎ হয়.... সেদিন আমি তোমার ওই তিল'টার খুব প্রশংসা করেছিলাম মনে আছে শান্তানু?!!!........ "

শান্তানু কোন জবাব দেয় না শুধু মৃদু হেসে মাথা নাড়ায়।

: আর কিছু জানতে চাও?....

: যতিনের কি ভুল ছিল?!!....

: হুম্মম্ম.... হাসেমপুর কেমিস্ট্রি শপে তুমি যখন ফেক আইডেন্টিটি নিয়ে ড্রাইভার ছিলে..... আমি সেটার ডিটেলস বের করি... আর তাতে স্পষ্ট লেখা আছে.... কনটেইনার যেদিন চুরি যায়...পরের দিন তুমি ব্যাক করে..... শপ থেকে সকাল দশটায় বের হও....কিন্তু যতিন বলেছিল ভোরবেলাতেই কেউ একজন এসে..... তার কন্টেইনার নিয়ে যায়.....

: আঙ্কেল নিশ্চয় আপনাকে সব বলে দিয়েছিল??

: হুম যতিন কে কাস্টাডিতে নেওয়ার পর...... তিনি যা জানেন সবকিছুই আমাকে বলেন..... এছাড়া ছদ্মবেশের ছবি আমার খুব চেনা চেনা লাগছিলো....

মাথা নিচু করে শান্তানু বলে, " জানি স্যার!!... মুখোশ পরিহিত এই সমাজের কাছে আমি একজন খু***নি!!!..... তবে আমি যখন জাস্টিস চেয়েছিলাম.... এই আইনের লোকেরাই আমাকে সহায়তা দেয়নি!!!........... "

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ইন্টারোগেশন রুম থেকে আলভি বেরিয়ে আসে।

WhatsApp

থানার বাইরে থেকে প্রচন্ড শোরগোল শোনা যাচ্ছে। মিডিয়ার লোকেরা নিজেদের মতো করে মুখরোচক সংবাদ সংগ্রহে ব্যস্ত। আলভি কিছুক্ষণ চিন্তিত চেহারায় সেদিকে আপন মনে তাকিয়ে রয়। এরপর মন্থর পায়ে থানার লকআপের সামনে এসে ওদের চারজনের উদ্দেশ্যে বলে,,,,,,

" নিজেদের ভালো মানুষের এই মুখোশটাকে যদি খুলে ফেলতেন...... তাহলে সমাজের জন্য বড্ড উপকার হয়!!......... "

আলভি অল্পস্বল্প কথাবার্তা শেষ করে ইন্সপেক্টর বাবুলাল ও সামস কে বিদায় জানিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়ায়। মাথা নিচু করে ধীর পদে হেঁটে চলেছে আলভি পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে যাচ্ছে রবিন। পুরোটা রাস্তা আলভি একদম নিশ্চুপ হয়েছিলো।

বাড়ির সামনে এসে পৌঁছতে রবিন জিজ্ঞেস করে " আলভি!!....কেস তো সল্ভ হলো....কিন্তু তোমাকে এমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে কেন?? "

স্মীত হেসে আলভি জবাব দেয় " হুম্মম্ম.... সে তো বটেই.... কিন্তু জাস্টিসের অভাবে আজ শান্তানুর মতো আইটি এক্সপার্ট ক্রিমিনাল হয়ে গেল!!!!.......অথচ শান্তানু ছিলো দেশ সমাজের অমূল্য সম্পদ!!.................."

আলভি নিরবে মাথা নিচু করে চলে যায় নিজের কক্ষে। রবিনও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর চলে যাওয়ার পানে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়।

ডিটেকটিভ পেশা মূলত সত্যান্বেষণ হলেও কখনো কখনো কিছু সত্যের প্রকাশ বুকের ভেতর কষ্টের বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে যায়।

সমাপ্ত

( গল্প টি কেমন ছিলো কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)

লেখিকার অন্যান্য গল্প

মুহূর্ত

Post a Comment

0 Comments

Close Menu