লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

উত্তরের জঙ্গল পেরোলে পাহাড়ি এলাকা। পাহাড় ধরে পশ্চিমে চলে গেলে একটা সুন্দর বন রয়েছে।সব ধরনের ফুল আর ফল পাওয়া যায়।মেনান,কাঠ কেটে সেখানেই যেতো প্রতিদিন।বাড়ির জন্য ফলমূল নিয়ে ফিরতো।

কাল মেনান যখন পৌঁছালো,তখন দেখলো ফল গুলো সব উঁচুতে।যতই লাফিয়ে ধরতে চাচ্ছে,ততোই উপরে উঠে যাচ্ছে।মেনান,খানিকটা ভয় পেতে লাগলো।এসব কি হচ্ছে।ঘাম দেখা দিলো মুখয়াবব জুড়ে।কানের দু পাশ দিয়ে চিকন ঘাম গড়িয়ে পরতে লাগলো।মাটিতে ধপাস করে বসে পরলো।কুঠারটাও পাশে ফেলে রাখলো।এমন সময় একটা ডাই*নি এলো।ভ*য়ংকর, বি*চ্ছিরি দেখতে।
--"কতো বড় সাহস! আমার রাজ্য থেকে ফলমূল ছিঁড়ে নেওয়া।দেখাচ্ছি তোকে মজা।তুই আর কি করে বাড়ি যাস, সেটা দেখবো।"
ডাই*নিটা হা হা করে দাঁত বের করে হাসতে লাগলো।পুরো বন প্রতিধ্বনিত হলো।তারপর যাদু করে মেনাননে একটা বড় খাঁচায় বন্দি করে নিলো।
হাত জোর করে মেনান বলতে লাগলো,
--দয়া করুন বনের রানী, আমাকে ছেড়ে দিন।আমি আর কখনো আসবো না এই বনে।
ডাইনি কোনো কথা শুনলো না।মেনানকে একটা বন্ধ কুঠুরিতে খাঁচা বন্দী অবস্থায় আটকে রেখে যাদু দ্বারা বৃত্তাকারে আবৃত করে দিলো।তারপর আবার যাদু প্রয়োগ করে কুঠুরিটা অদৃশ্য করে ফেললো।সেই সাথে মেনান এর চিৎকার অদৃশ্য কুঠুরির মতো অদৃশ্য হয়ে গেলো।
~~~~~~~~~~~~
পাহাড়ি বন্ধুর পথ দিয়ে হাঁটা খুব মুশকিল।জঙ্গলে ঘোরা রেখে যাওয়া সমীচীন নয়।বনের হিংস্র প্রানী আক্রমন করতে পারে।তাহলে তাদের ফিরতে অসুবিধা হবে।
এডমাইন বুঝতে পেরে বললো,
--নদীর পাশটা খুব পরিষ্কার।মানুষের আনাগোনা রয়েছে।গাছপালা ও রয়েছে।সেখানে রেখে গেলে তেমন সমস্যা হবেনা।
"তাই রাজকন্যা এলাইসার ঘোড়া "ক্যাথান" আর সহযোগী এলিন এর ঘোড়া, তারা নদীর পাড়টায় মোটা গাছের সাথে বেধে রেখে গেলো।কিছু মানুষকে বলে গেলো দেখার জন্য।
পাহাড়ি ঢালু জায়গায় পা ফেলতে খুব অসুবিধা হচ্ছে দেখে, এডমাইন বললো-
--রাজকন্যা এলাইসা, আপনার আপত্তি না থাকলে আমি আপনাকে সাহায্য করতে পারি।
এলাইসা হাত বাড়িয়ে দিলো।প্রথম কোনো যুবকের সাথে এভাবে পথ চলা তার।এক প্রকার ভালো লাগা কাজ করলো, সাথে কিছুটা ভয়।এলিনকে অন্য হাতে ধরে রেখেছিলো, এলাইসা।
এভাবে তারা পৌঁছে গেলো এডমাইন এর বাড়ি।পাহাড় কেটে উঁচুতে বাঁশ, পাহাড়ি লতাপাতা দিয়ে বাড়ি বানানো হয়েছে।সাধারণ এর মাঝে অসম্ভব সুন্দর।বড় প্রাসাদে থেকেও, এই সাধারণ বাড়িটা এলাইসার খুব পছন্দ হলো।তাদের বসার
ব্যবস্থা করা হলো।তারা এরকম পরিবেশে খুব উৎফুল্ল ছিলো।
কিছু সময়ের মধ্যেই এডমাইন এর মা হেনরি, তাদের বাহারি খাবার থালায় সাজিয়ে নিয়ে গেলেন।এলাইসাকে দেখেই বললেন,
--কি সুন্দর মুখশ্রী।এডমাইন এর কাছ থেকে শুনলাম, আপনি রাজকন্যা।আপনার মা-বাবা কেমন আছেন রাজকন্যা?
এমন সুশ্রী ব্যবহার দেখে এলাইসার নিজের মা এর কথা মনে পরলো।চোখ জলে ভরে গেলো।কোনো রকম আটকিয়ে বললো,
--আমি আপনার মেয়ের মতো।আমাকে তুমি করে বলতে পারেন।আর আমার মা নেই।বাবা অসুস্থ।তিনি শয্যাশায়ী।আপনি ভালো আছেন?
--হ্যা, ভালো আছি মা।
"হেনরি,আবেগাপ্লুত হয়ে পরলেন।রাজার মেয়ে এতো মহানুভব।তারা তো ভাবতেন, রাজ-রাজরার ব্যাপার অনেক বড়লোকী।সাধারণ মানুষকে হয়তো মুল্যায়ন করবে না।ভাবতে ভাবতে আনমনে তিনি নিজের হাতে এলাইসাকে খাইয়ে দিলেন।এলাইসা যেনো মা'এর স্নেহ,ভালবাসা পেলো।এলিনও সুস্বাদু খাবার পেট পুরে খেলো।
তারপর তারা ঐ কাঠুরেকে দেখতে চাইলো।খুব আশা রাখলো, এটাই যেনো মেনান হয়।কিন্তু এটা অন্য একজন ব্যাক্তি।তাদের মন ভেঙে গেলো।
প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে।মেনানকে খুঁজতে জঙ্গলের দিকে পা বাড়াতে হবে।তার আগে এডমাইন এর ঐ আত্নীয়কে দেখতে চাইলো, এলাইসা।
এডমাইন, ওদেরকে ঝর্নার কাছে নিয়ে গেলো।পেছন থেকে দেখলো,এক সুন্দরী নারী কিছু বাচ্চাকে যুদ্ধ কৌশল শিখাচ্ছে ঝর্নার পাশের একটা জায়গা জুড়ে।এক গোছা চুল পাহাড়ি ঐতিহ্যে বাঁধা।নিশ্চয়ই সামনে থেকে আরও সুন্দর হবে তিনি।এডমাইন তাকে ডাকলো,
--এট্রেসি, তোমার হলো।সন্ধ্যা পরে গেলো তো।দেখো তোমাকে দেখার জন্য কারা এসেছে।