Ad Code

ভালোবাসার দলিল পর্ব ১

লেখিকাঃ আশা রোজমেরি

রাতে খাবার টেবিলে রেহেনা প্রশ্ন তুললেন,

-মাহিরাদ তুমি ঠিক কি চাচ্ছো?
মাহিরাদ লোকমা তুলতে গিয়েও ভাত রেখে দিলো প্লেটে।
আলতাফ মির্জা একটু গর্জে উঠলেন,
-তুমি কাল থেকে এ বাসায় থাকবেনা।আমার ইনকামে খাবেনা।তোমার পিছনে টাকা না ঢেলে জলে ঢাললেও লাভ হবে।তোমাকে না খাইয়ে কু*কুরকে খাওয়াবো।বিশ্বস্ততা গাঢ় হবে।
কোনো রকম হাত ধুঁয়ে ছ্যাৎ করে উঠে,হনহন করে দুতলায় উঠে নিজের রুমে চলে গেলো, মাহিরাদ।প্রিয় গীটার নিয়ে টুংটাং শব্দে বাজাতে লাগলো নিজের লিখা গান,
"তোর পরশের জন্য আমার
হৃদয় ব্যাকুল,,,,,
কেনো দূরে থাকিস
আমায় আড়ালে রাখিস
ভালবাসা যায় কিনা বল?
সখি আমায় বলনা তুই বল
ভালবাসি একবার বল!"
এর মাঝেই মিনহা এলো খাবার নিয়ে।
-রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিও
-এই শুন,মিনহা
-হুম
-ভাইয়া বল
-বলবোনা
-কেনো বলবিনা?
-নিজের বরকে কেনো ভাইয়া বলবো
-আমি ভাই ছিলাম, ভাই-ই থাকবো।একটা বছর হোক।ডিভোর্স এর জন্য রেডি থাক।আর ভাইয়া বলতে না পারলে আদিক্ষেতা করে খাবার আনলি কেনো?
-গীটার রেখে খেয়ে নিও।নাহলে কাল রাস্তায় গিয়ে বাচ্চাদের দিয়ে আসবো।
-ভাগ আমার রুম থেকে।
দোতলায় তিনটে রুম পাশাপাশি।মাহিরাদ, পশ্চিমের কর্ণারের রুমটায় থাকে।মাঝখানের রুমটা খালি পরে থাকলেও মিনহার জন্য এটা নিষিদ্ধ রুম।নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মাহিরাদ।তাই পুর্ব দিকের কর্ণারের রুমটায় থাকে মিনহা।রাত বাড়তে লাগলো,বাড়তে লাগলো আঁধারের তিব্রতা।সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে মিনহার বিষাদ বেদনা।কেনো তাকে ভালবাসা যায়না।বউ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যায়না।চোখে ভরা বর্ষা নামে।তার মাঝেই ভেসে আসে গীটারের টুংটাং শব্দ,চির চেনা সুর।সেই সুর মন আরো উদাস করে।
সকাল হতেই মিনহা, ফুপা-ফুপিকে চা নাস্তা দিয়ে এলো।তারপর শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে পিরিচ এ করে এক কাপ চা নিয়ে হাজির হলো, মাহিরাদ এর রুমে।সকালে ডেকে ডেকে মাথা ব্যাথা করে দেওয়ার কারনে দরজা এখন আনলকই থাকে।মিনহার মাথায় দুষ্টমিরা এক্কা দোক্কা খেললো।ঘুমন্ত মাহিরাদকে কি ইনোসেন্ট লাগছে।কপালে আছড়ে পরা চুল গুলো হাতের আঙ্গুল গুজে পিছন দিকে ঢেলে দিলো।তারপর ডান হাতের শাহাদাত আঙুল গরম চা'য়ে খানিক ভিজালো।মাহিরাদ, ঘুম ভেঙে লাফিয়ে উঠার কারনে গরম চা গিয়ে পরলো মিনহার হাতে।
মাহিরাদ তাড়াতাড়ি ঠান্ডা পানিতে হাত ভিজালো।আলতো ফু দিতে লাগলো।মিনহা ভাবলো,এমন জ্বালা আজন্মকাল থাকুক।যে জ্বালাতে ভালবাসা আছে
----------★---------
বাবার কথা মনে পরতেই, মাহিরাদ গীটার নিয়ে বেরিয়ে গেলো সকাল সকাল।বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসলো।অনিক বললো,
-ভাবির কি খবর।আমরা কি চাচ্চু ডাক শুনবোনা আদো?
-ছোট থেকে ওরে কোলে নিছি।কতো হি*সু করে ভিজায় দিছে।বোনের আদরে কান্না থামিয়েছি।সে মিনহাকে অন্য রকম ভাবে ভাবতে পারবোনা আমি।
-আরে ভাই, তুই এই ভাবে ভাবতেছিস কেনো।মেয়ে মানুষ তো মেয়ে মানুষই হয়।আলাদা করে বোন ভাবার কি আছে।তুই বউ হিসেবে দেখ, সব ঠিক হয়ে যাবে।
বন্ধুদের সিল্লি আর সব শেষে কিছু গুড এডভাইস নিয়ে বাসায় ফিরলো রাত করে।রজনী গন্ধার সাথে লাল গোলাপ এর তোড়া আর বেলীর মালা এনেছে।সাথে কিছু কিটকাট,ক্যাট বেরি,লেয়ার চকোলেটস ও এনেছে।মিনহা তার অপেক্ষায় ডাইনিং এই বসা ছিলো।সিড়ি ভেঙে উঠে যেতে যেতে বললো,
-গেইট লক করে একবার রুমে আসিস
মিনহার কেনো জানি লাজুক স্বভাবের মিষ্টি অনুভূতির ভয় হলো।আজকে মাহিরাদ এর কন্ঠে আবদার মিশানো ছিলো,তাই হয়তো।
উপরে যেতেই হুকুম এলো, "দরজা আটকে আসিস"।মিনহা দরজা আটকে গুটি গুটি পায়ে এগোলো।
-এই নে তোর জন্য চকোলেট এনেছি
এবার মিনহা সহজ হয়ে গেলো।অহ, এই ব্যাপার,
-আমি কি বাচ্চা নাকি যে,চকোলেট দিতে হচ্ছে
-কেনো আর কিছু লাগবে
মিনহার এবার অস্বস্তি হলো।"না, আমি গেলাম।পা বাড়াতেই মাহিরাদ আবার ডাকলো",
-শোন
মিনহার পা স্থগিত হলো।না তাকিয়েই বললো,
-কি বলবা বলো
-লাল রঙ তোর কেমন লাগে?
-খারাপ না।বাট আমি ব্লাক লাভার
-বাট, ব্লাক রোজ পেলাম না
মিনহার কানে কথাটা পৌঁছানো মাত্রই ফিরে তাকালো।আবদারের সুরে আল্হাদী হয়ে বললো, "গোলাপ এনেছো"।মাহিরাদ,গোলাপ আর রজনীগন্ধার তোড়া এগিয়ে দিলো।গোলাপে কাটা ছিলো খেয়াল হলোনা কারোরই।গোলাপটা হাতে নিতেই কা*টা ফুটে গেলো।মূহুর্তেই র*ক্ত গড়াতে লাগলো।কিন্তু তাও তোড়াটা ধরেই থাকলো।মাহিরাদ,ছোঁ মেরে হাতটা নিজের কাছে নিয়ে নিলো।তোড়াটা ফেলে, আঙুলটা শক্ত করে ধরলো কা*টা ফুটা জায়গায়।ড্রয়ার থেকে ওয়ান টাইম বের করে লাগিয়ে দিলো।পরপর বললো, "দেখে ধরবিনা।আচ্ছা কিছুখন বস।পরে ঘুমাতে যাস।গান শুনবি?
মিনহা আজকে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।শুধু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।মাহিরাদ,গাইতে শুরু করলো নিজের লিখা গান,,,
"একটি রাত থাকো
ভালবেসে কাছে ডাকো
আঙুল যাক আঙুল ছুঁয়ে...
ইচ্ছেরা গাঢ় হোক-
আরো কাছে আসার
দলিল হোক ভালবাসার....!"
মিনহা মুগ্ধ হয়ে যেমন গান শুনছে।তেমনি মুগ্ধ হয়ে দেখছে নিজের বরকে।ভাবছে, " গানে এতো ভালবাসার কথা।অথচো, আমাকে চাওনা!"
মাহিরাদ,গান শেষ করে জানতে চাইলো,
-কিরে গান কেমন লাগলো?
মিনহা এক ধ্যানে থাকার কারনে সাড়া দিচ্ছিলোনা।মাথায় টোকা খেয়ে বললো, "হ্যাঁ ,খুব সুন্দর।"
-কি ভাবছিলি এতোক্ষণ?
-কিছুনা
-আমাকে ভাবিসনি?
মিনহা এবার টাসকি খেলো।কিছু না বলে এক দৌড়ে দরজা ঢেলে নিজের রুমে গিয়ে থামলো।জোরে স্বাস ফেললো।নিজকে খানিক ধাতস্থ করে ভাবলো, "আমার বরটার আজ কি হয়েছে।" ভাবতেই এক রাশ লজ্জা তাকে গ্রাস করলো।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu