Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ৮

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

 ছেলেটির আতংকিত কণ্ঠে বলা কথাগুলো গুলো শুনে শাওন এবং উষ্ণ দুজনেই অবাক হয়। নেতা হওয়ার কারণে যে সুমন ভাইয়ের সাথে ক্যাম্পাসের কেউই ঠিকঠাক কথা বলতে পারে না সেই সুমন ভাই কে আবার কোন ছেলে মারবে। দুজনের হতভম্ব চাহনি দেখে ছেলেটি তাদের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।

“আপনাদের আবার কী হলো?”
ছেলেটির কথা শুনে শাওন ব্যতিব্যস্ত হয়ে বলে,
“কোন ছেলে?”
ছেলেটি এবার হুশে আসে।
“জানি না ভাই।”
উষ্ণ বিরক্তিমাখা মুখে কথা বলে ওঠে,
“এখানে কোন ছেলে কোন ছেলে না করে গিয়ে দেখলেই তো হয়।”
শাওন উষ্ণের দিকে গর্বের সহিত তাকায়।
“আরেহ ব্রো, কী মাথা তোমার। আমার তো তোমার মাথায় চুমু খেতে মন চাচ্ছে।”
শাওনের কথা শুনে উষ্ণের মন চাচ্ছে দেয়ালে নিজের মাথা ঠুকতে। এই ছেলের সামনে কোনো কথা বলা মানেই বিপদ। ছি: কি কথা, তাকে নাকি চুমু খাবে।
“হ্যাঁ হ্যাঁ চল।”
_____________Facebook
তিনজন মিলে ক্যাম্পাসে যায়। চারিপাশে প্রচুর ভীড় ছিলো। সবাই দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে। কেউ কেউ তো আবার ভিডিও করছে। উষ্ণরা ভীড়ের ভিতর প্রবেশ করে। কয়েকটা ছেলে হকিস্টিক হাতে সুমনের সাঙ্গপাঙ্গদের বারোটা বাজাচ্ছে। সবার মাঝে একটা ছেলে সুমন কে এলোপাতাড়ি পেটাচ্ছে। এমন মুহুর্তে সুমন অজ্ঞান হয়ে যায়। নিজের শরীরের উপর এতো চাপ সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারায় সে। ছেলেটিও এবার মাথা তুলে তাকায়। ছেলেটির পরণে সাধারণ একটা সাদা পাঞ্জাবি। চুলগুলো আধুনিক ভাবেই স্টাইল করা। ছেলেটি উপস্থিৎ সবার দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। চারিদিকে অনেক গুঞ্জন হচ্ছে। সব কিছু ভেদ করে ছেলেটি সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“স্টুডেন্টস, আমি তোমাদের ভার্সিটির নতুন ভিপি। ভার্সিটির শৃঙ্খলা লন্ঘ করার জন্য আমি দুঃখিত। ইতিমধ্যে হয়তো অনেকে জেনে গেছো যে এই ছেলেকে আমি কেন মেরেছি। তবুও যারা জানো না তাদের উদ্দেশ্যে আমি বিষয়টি ক্লিয়ার করে দিচ্ছি। এই ছেলেটি ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভার্সিটির পিছনে ঝোপের ভিতর আমার বোনকে ধ*র্ষ*ন করার চেষ্টা করছিলো। আমি সময়মতো না পৌছালে আজ আমার বোনটার জীবন শেষ হয়ে যেতো। সেখানে শুধু আমার বোন না অন্য কোনো মেয়ে হলেও এটা অন্যায়ই থাকতো। ওর মতো ছেলের কাছে ভার্সিটি ও শহরের মেয়েরা নিরাপদ নয় তাই আজ পৌরসভার সাবেক সভাপতি হিসাবে আমি প্রহর শাহরিয়ার এই সুমন আহমেদ এর নেতৃত্ব বাতিল করলাম।”
ছেলেটির কথা শেষ হওয়া মাত্রই আবারও চারিপাশে গুঞ্জন শুরু হয়। তবে সবার মাঝে শাওন ও উষ্ণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। এখন তটিনী, প্রভা এবং মোহ কিছুটা হলেও নিরাপদ। তবে প্রহর কে দেখে উষ্ণের কিছুটা চেনা চেনা লাগে। কোথায় যেনো দেখেছে মনে হচ্ছে। উষ্ণকে প্রহরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে শাওন ভ্রু কুঁচকায়।
“ব্রো, তুই কী আমাদের ভার্সিটির নতুন ভিপির উপর ক্রাস খেয়েছিস? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
শাওনের কথা কর্ণে পৌছানো মাত্রই উষ্ণের কপাল কুঁচকে যায়। এই ছেলের কাছে কী সব উল্টা-পাল্টা কথায় আছে?
উষ্ণ চোখ গরম করে শাওনের দিকে তাকায়। শাওন ভয় পাওয়ার ভঙ্গিমা করে অন্য দিকে মুখ ফেরায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে উষ্ণ। যাক এবার একটু শান্তি পাওয়া যাবে।
নিজের ঘরে একভাবে চোখের পানি ফেলে যাচ্ছে প্রভা। আর মোহ তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“প্রভা, সব ঠিক আছে তো। তাহলে কাদঁছো কেন? বরং শুকরিয়া আদায় করো এতো বড় বিপদ থেকে বেঁচে ফিরেছো বলে।”
প্রভা মোহ'র দিকে ফেরে। চোখে তখনো পানি টলমল করছে।
“তখন যদি ভাই না আসতো তাহলে ওই শয়তান গুলো আমার জীবন শেষ করে দিত তাই না?”
“এভাবে বলে না প্রভা। নিজেকে এতো দুর্বল ভাবতে হয় না।”
“আহ জীবন। আমরা এতো অসহায় কেন? ধ*র্ষ*ক রা যখন ইচ্ছা আমাদের ছিড়ে খায় কিন্তু আমরা কিছুই বলতে পারি না।”
প্রভার কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোহ। সত্যিই তো, এমন কথার ভিত্তিতে আর কীই বা বলার আছে তার।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu