লেখিকাঃ আবিদা সুলতানা


কঠোরভাবে কপি করা নিষিদ্ধ। যাদের অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ, তাদের জন্য এই গল্প নয়। অনুগ্রহ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। পুরো গল্প জুড়ে থাকবে ধোঁয়াশা, যা উদঘাটন করতে সত্যিকারের ধৈর্য প্রয়োজন। শুধুমাত্র রহস্যভেদে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।


——— "পাখি? কোথায় লুকায়েছিস, এই পাখি? পাখি?"
সতেরো বছর বয়সের রুদ্র হাত আইস্ক্রিম নিয়ে ব্যগ্র চিত্তে সমগ্র বাড়ি খুজে যাচ্ছে। পরিশেষে, গমন করল তার কক্ষে; দেখল শয্যার চাদরের তলে আবৃত এক ক্ষুদ্র মানবী। রুদ্রের কপালে ভাঁজ পড়ল, নীরবে গমন করে চাদর সরিয়ে দিল এক টানে। অপসারিত চাদরের অন্তরালে প্রগাঢ় জ্যোতিহীন মস্তক! শূন্য কেশশোভিত টাক্কু!
তখন সেই ক্ষুদ্র ছয় বৎসরের মানবী, কান্নাবিধুর চক্ষু মেলে, বিদীর্ণ স্বরে ক্রন্দিত করে উঠল,
——— " চমক ভাই, দেখো দেখো, আম্মু আমায় টাক্কু করে দিছে!"
এহেন কথার পর সেই ক্ষুদ্র কন্যা পুনরায় নাসিকা, ওষ্ঠ কুঁচকে আক্ষেপ করতে লাগল, যেন জগৎ তার শূন্য মস্তক দেখে নি'র্দয় প্রহাস্য করছে। রুদ্র, সপ্তদশ বর্ষীয় তার হৃদয়ে হাসির ঢেউ ঠেকাতে ব্যর্থ, হাস্যসংবরণে প্রবল উদ্যম করল। পকেট হতে ফোন বের করে তার কয়েকটা কান্নারত অবস্থা বন্দি করল এক অনুরণিত চিত্রে। পরে রুদ্র ধীরে ধীরে বসে পড়ল, টাক্কু মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কোমল স্বরে বলল,
——— " আমার পাখির চুল কেটে ফেলার দুঃসাহস করল? হুঁহ্! এহেন স্পর্ধা! কাল তোর জন্মদিনে তোকে অনেক অনেক উপহার আনব, দেখিস! এখন কান্না থামা! আর দেখ তোর জন্য কি এনেছি! "
হাতে বরফমিশ্রিত মিষ্টির শীতল শলাকা বাড়িয়ে দিলো শিশুটির পানে। অতঃপর কণ্ঠে গম্ভীরতার ছায়া বিস্তার করে বলল,
——— " কিন্তু এই শেষ! আর কক্ষনো এই শীতল বি'ষা'ক্ত মিষ্টি জিহ্বায় তুলবি না! বেশি খেলে দাতে পোকা হবে! "
এবার মেয়েটা ক্ষুদ্র ওষ্ঠাধরের কোণে একরাশ অভিমান বেঁধে কাঁদতে আরম্ভ করল পূণরায়। রুদ্রের কঠোর মুখে এবার মৃদু স্নেহের ছোঁয়া আসল; কোমল অঙ্গুলি দিয়ে তার লালাভ গাল স্পর্শ করে বলল,
——— " বেশি খেলে কি হয় জানিস? দাঁতের মর্মে পীড়ার বি'ষ ঢুকবে, গহ্বরে জন্ম নেবে ক্ষুদ্র পোকা! তখন কি করে অন্য মজার মজার খাবার খাবি? ওই পোকারা দাঁতের মূলে গর্ত খুঁড়ে ক্ষ'ত সৃষ্টি করবে; য'ন্ত্র'ণায় আর্তস্বরে কাঁদবি, র'ক্তা'ক্ত হবে মুখ!"
এ কথা শুনে টাক্কুবতী কন্যার অন্তরে ভয়ের ছায়া প্রতিভাত হল। আতঙ্কে কেঁপে উঠল সে। রুদ্র এক ঝলক মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,
———" তবে ঠিক আছে, এখন থেকে একটু পরিমাণে, পরিমিতভাবে আইসক্রিম খাবি, ঠিক আছে?"
সে মাথা ঝাঁকাল, তার সম্মতি যদিও মুখে ফুটে উঠল না। রুদ্র একবার চেয়ে দেখল, কিভাবে সে নিষেধের বাধা ভেঙে প্যাকেট খুলে আঠালো বরফমিশ্রিত মিষ্টি খেয়ে নিলো । মুখমণ্ডলে আইসক্রিম লেপ্টে ছড়িয়ে ফেলেছে । রুদ্র ধীরভাবে পকেট হতে রুমাল বাহির করে তার মুখের লেগে থাকা আইস্ক্রিম মুছে দিলো আলতোভাবে।
অত:পর স্নিগ্ধ চুম্বনে তার কপালে আদর রেখে দিয়ে রুদ্র উঠে যেতে উদ্যত হল। কিন্তু ক্ষুদ্র কন্যাটি আকস্মাৎ শার্টের কিনারা খপ করে ধরে ফেলল, চোখে জলভরা করুণ দৃষ্টি। কাতর স্বরে বলে উঠল,
——— " তুমি তাড়াতাড়ি আসবে তো চমক ভাই?"
রুদ্র মুখে মৃদু হাসির আভা এনে বলল,
——— " খুব তাড়াতাড়ি! "
__________________
——— " আগুন! হায় হায় রে! পুড়ে গেল সব! ম'রি গেলো রে! পানি আনো, পানি ঢালো! তাড়াতাড়ি, পানি দাও!
এমনই চিৎকারে আকাশ বিদীর্ণ করছে চতুর্দিকের লোকজন। হঠাৎ করেই একটি গৃহে আগুন ধরেছে, কেউই জানে না কী প্রকারে এ অগ্নিকাণ্ড ঘটল। ফায়ার সার্ভিস নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াস করছে প্রলয়ের শিখা নির্বাপণের। এমত অবস্থায় রুদ্র আসছে হাতে ব্যাগভর্তি উপহারসামগ্রী। বাজারের উৎকৃষ্ট সব দ্রব্যাদি সে কিনে আনছে; আজ তাহার প্রিয় পাখির জন্মদিন। রুদ্রর বাবা বারবার ফোন দিচ্ছে আসার জন্য! সকলে অপেক্ষা করছে রুদ্রর জন্য.! অত:পর বিরক্তি নিয়েই ফোন বন্ধ করে রেখেছে রুদ্র! রাত বেরেছে, বড্ড বিলম্ব হয়েছে তার, কলেজ পর্বান্তে টিউশন শেষ করতে করতে দিন গড়িয়ে গিয়েছে। এরপর সে গিয়েছে বাজারে উপহার কিনতে! হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পাখির আনন্দদানের তৃষ্ণায় ব্যাকুল, সে অগ্রসর হতে লাগল।
কিন্তু সামনে যেতে যেতে দৃশ্যপট আর সহ্য করা যাচ্ছে না; কেন এই বিরাট জনতার ভীড়? কেনই বা আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী, কান্নার অবিরাম ধ্বনি, চিৎকারের রোল? লোকজন কিসের জন্য দৌড়াচ্ছে? রুদ্রের হৃৎপিণ্ড বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। ত্বরণ বাড়িয়ে সেও দৌড়াতে লাগল। নিকটবর্তী হতে তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট হল বিভীষিকা। যেন মর্মভেদী বজ্রপাত; তার প্রিয় পাখির গৃহটিই জ্বলছে! অগ্নিদগ্ধ হয়ত সে, তার আঙ্কেল, আন্টি, বাবা-মা সকলেই। উপহারসজ্জি ব্যাগ গুলে পরে গেলো হাত হতে আনমনেই!
রুদ্র একদম স্তব্ধ, বাক্যবিহ্বল, আকস্মিক উদ্দাম চিৎকারে অগ্নিগর্ভে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু জনতার বেষ্টনির মধ্যেও কেউই তাকে ছাড়তে চাইল না। যেতে দিলো না ভেতরে! সে তখনো বিদীর্ণ চিত্তে আর্তনাদ করছে,
——— " ছাড়ো আমায়! ওখানে আমার পরিবার! আমার সমস্ত সত্তা ওখানে! ছেড়ে দাও.,,, যেতে দাও আমায়! "
তাকে কেউই মুক্ত করল না। আর রুদ্র অবশেষে ধপ করে মাটিতে শয়ন করল, যেন মৃ'ত'দেহ। অগ্নি নির্বাপণ সমাপন হল, এবং তার গৃহ হতে চারটি দগ্ধ লা'শ বের করল। শিরশির করে উঠল দৃশ্যাবলী; অঙ্গসর্বস্ব পুড়ে ছাই। রুদ্র তথাপি মাটিতে নিশ্চল, অচেতনপ্রায়। কেউ ফিসফিস করে বলছে,
——— " আরেকটি লা'শ কই? আরেকটি দেহ হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না!"
তখন এক মহিলা ; মায়ের বয়সী! মুখে আঁচল গুজে কান্নারত এগিয়ে গেলো শুয়ে থাকা রুদ্রর দিকে। এক রাতের ভেতর সর্বস্ব হারিয়ে আজ সে এতিম! হঠাৎ করেই ধপ করে রুদ্রর পায়ের কাছে বসে পড়লো সে। হাওমাও করে কান্না করতে করতে পায়ে ধরে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে লাগল, অর্ধমৃ'তপ্রায় কান্নায় নিমজ্জিত। রুদ্র অজ্ঞ, মহিলাটি কেন ক্ষমা চাইছে, তা বুঝতে পারল না। তবুও মাটিতেই সে স্থির রইল। সেই মহিলা, প্রতিবেশিনী, আপন কেঁপে কেঁপে অশ্রুভেজা কণ্ঠে বলল,
——— " মাফ কর বাপ! বুঝতে পারি নাই, মাফ কর!"
রুদ্র তবু অবিচল, অথর্ব। নড়লো না এক বিন্দু! শুধু অশ্রুঝরে দেখছে পলকহীন তার বাবা-মা তার আংকেল-আন্টির দগ্ধ হয়ে যাওয়া বি'শ্রি লা'শগুলো!
_________________
রুদ্রের চোখ খুলল, আবার সেই বিভীষিকা দৃশ্য তার মস্তিষ্কে স্পষ্ট হল! শ্বাসাঘাত চলছে দ্রুত, যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি তাকে নিমজ্জিত করছিল গভীর পানিতে। বাহিরে প্রবল বর্ষণের তা'ণ্ডব ধ্বনি শোনা যাচ্ছে, আর সেই শব্দের প্রতিধ্বনি যেন তার অন্তরে প্রকম্পিত। বিছানা হতে ধীরে উঠে দাঁড়াল রুদ্র, তারপর ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় স্বীয় প্রতিচ্ছবি নিরীক্ষণ করল। অস্ফুট কণ্ঠে বলে উঠল,
——— "তোর চমক ভাই তোকে খুজে পাচ্ছে না! কোথায় তুই! আমি কি তোকে খুজে পাবো না? "
হঠাৎ দরজার সম্মুখে কোন এক ছায়ামূর্তির উপস্থিতি অনুভব করল রুদ্র। মস্তিষ্ক মুহূর্তে ইঙ্গিত করল, কে সেই ব্যক্তি। গম্ভীর স্বরে নির্দেশ দিল,
——— "চোরের মত দাঁড়িয়ে না থেকে, ভেতরে আসো!"
প্রিয়া ধীর পদক্ষেপে ঘরে প্রবেশ করল। রুদ্র ঘুরে তার দিকে দৃঢ় দৃষ্টিতে তাকাল। দীর্ঘদেহী মেয়ে, দেখতে অতি পরিচিত মনে হয়; কিন্তু রহস্যময় কিছু যেন ছায়ার মত তার চারিপাশে রয়েছে; অচেনা, অথচ সুগভীরভাবে চেনা । প্রিয়া মৃদু স্বরে বলল,
——— " ও এখনো জীবিত আছে!"
——— " কে? "
——— " তোমার পাখি!"
রুদ্র স্তম্ভিত হয়ে তাকিয়ে রইল প্রিয়ার দিকে। এই অজ্ঞাত মেয়ে পাখির কথা কিরূপে জানে? পাখি তো শুধু সে ডাকত ভালোবেসে! ডাকনাম হিসেবে! এটা রুদ্রর পরিবার ছাড়া কেও জানত না! প্রিয়া ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে যেতে লাগল। কিন্তু রুদ্র তাকে থামিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করল,
——— "কে তুমি? তোমার আসল পরিচয় কি.? "
প্রিয়া মনে মনে স্বগতোক্তি করল,
——— " আমি এমন একজন, যার প্রকৃত পরিচয় জানলে তুই সহ্য করতে পারবি না, পাখির চমক ভাই! "WhatsApp
_____________
মোশারফ সাহেব মায়ের সামনে অবনত হয়ে বসেছেন। আম্বিয়া বেগম ছেলের মাথায় স্নেহশীলা হাতে সঁপে দিয়েছেন। হোক বয়সের ভারে জর্জরিত, কিন্তু মাতৃস্নেহের শীতল ছায়া ছাড়া জীবন যেন শূন্যতার সমুদ্রে নিমজ্জিত। যতবারই মন ব্যথিত হয়, মায়ের কাছে কথার আড়ালে হৃদয়ের ভার হালকা হয়। মুগ্ধ দীর্ঘ এক মাসের অন্তর্ধানের পর ফিরে এসেছে। আগমনেই প্রথমে তার মাতার শরণ নিয়েছে। সুহানা বেগমের হৃদয় যেন সন্তানকে পেয়ে আকুল ভালোবাসায় মথিত। নিঃশব্দে অশ্রু ঝরাতে ঝরাতে তিনি পুত্রকে বক্ষে আবদ্ধ করে রেখেছেন। মুগ্ধ মায়ের স্বাস্থ্য, ওষুধপথ্য সবকিছুর প্রতিই গভীর দৃষ্টি রেখেছে। কিন্তু মোশারফ সাহেবের প্রতি সে ক্রো'ধে নিঃশব্দ, মুখে কোনো বাক্য উচ্চারণ করছে না। সেই এক আগুন—শিকদার পরিবারের কন্যাকেই সে চায়!
এইসব মানতে পারছেন না মোশারফ সাহেব। অবশেষে মায়ের সামনে নতজানু হয়ে সর্বস্ব উগড়ে দিলেন। আম্বিয়া বেগম নীরব, শুধু চোখের জল ঝরে পড়ছে, আর ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। মোশারফ সাহেব অবনতমস্তকে বললেন,
——— "মা, এখন আমি কী করব? তুমি-ই বলো! ছেলের এই অটল অভিপ্রায় আমি কীভাবে সহ্য করব? সেই অতীত,!! আহ! , সেই ভয়াল অতীত, যা এক রাতের মধ্যে আমাদের সবকিছু তছনছ করে দিয়েছিল। কেমন করে আমি সেই পরিবারের কন্যাকে আমার ঘরে আনব? তুমি বলো মা?"
আম্বিয়া বেগম গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ধীরে ধীরে বললেন,
——— "সবকিছুই ফিরে আসে, দিগুণ গতিতে ফিরে আসে। তুই যা করবি, কর্ম তোকে দ্বিগুণ প্রতিদান দিবে।
মোশারফ আজও সেই ভয়াল রাতটি কোনোদিন ভুলতে পারেনি। স্মৃতির গভীরে স্থির হয়ে থাকা সেই দিনগুলোর প্রতিচ্ছবি, আজও চোখ বুজলেই যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তার শৈশবের সবচেয়ে নিকট বন্ধু ছিল ইকরাম—দুইজনের হৃদ্যতা ছিল এত গভীর যে তা পুরো গ্রামের মুখে মুখে ফিরত। তারা একসঙ্গে বড় হয়েছে, এমনকি বড় হওয়ার পর ইকরামের সাথে মোশারফের বোন ফায়জা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
একদিন ইকরাম আলীর পিতা, রাশেদ আলী, বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। রাশেদ আলী তখন গ্রামের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি, চেয়ারম্যান পদে আসীন। তার কথাই ছিল গ্রামের আইন। শাহারিয়াজ পরিবারের কেউ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না, কিন্তু তাদের পূর্বপুরুষের ধন-সম্পদ এবং প্রতিপত্তি ছিল অপরিসীম। বিয়ের প্রস্তাব আসার পর, সবার মধ্যেই খুশির ঢেউ বয়ে যায়। দুই বন্ধুর সম্পর্ক যেন আরও দৃঢ় হলো, আর এই নিয়ে গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। বিয়ের তারিখ স্থির করা হলো, দিন ঘনিয়ে এলো।
শুভ মুহূর্ত যখন উপস্থিত, যখন 'কবুল' বলার অপেক্ষায় সবাই উৎকণ্ঠিত, তখনই হঠাৎ সবকিছু থমকে যায়। মোশারফের পিতা কাদের সাহেব অ'গ্নিমূর্তি ধারণ করে বিয়ের আসরে উপস্থিত হন। তিনি রাশেদ আলীকে টেনে দূরে নিয়ে গেলেন, গোপন কোনো বিষয়ে কথা বলতে লাগলেন। কাদের সাহেবের চোখে ক্রো'ধের ছায়া স্পষ্ট, এবং কথার সুর তীক্ষ্ণ হয়ে উঠল। একসময় তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় শুরু হয়ে গেল।
বিয়ের আসরে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এলো। উপস্থিত অতিথিরা চুপিসারে কানাকানি করতে লাগল। মোশারফের বুকের ভেতর অজানা এক আশঙ্কা জাগ্রত হলো, সে অস্থির হয়ে উঠল। অবশেষে সে নিজেই তাদের কাছে গেল—বাবা এবং রাশেদ আলীকে ফিরে আনতে।
মোশারফ সাহেব যখন উপস্থিত হলেন, তখন যা দর্শনে আসল, তাতে তিনি স্তম্ভিত হলেন। তার পিতা কাদের সাহেব এবং ইকরাম আলীর পিতা রাশেদ আলীর দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে উচ্চস্বরে বিবাদ করছেন । মোশারফ আগ্রহে অগ্রসর হলেন। কেবল শুনতে পেলেন রাশেদ আলী উত্তপ্ত কণ্ঠে বলছেন,
——— " রাজনীতি তে এসব ঘটেই থাকে! এত ভেবে কাজ নেই! আপনার মেয়েকে আমার ছেলের হাতে তুলে দিন.! আপনার মেয়ে অসুখী হবে না.! এটুকু গ্যারান্টি দিচ্ছি! "
কাদের সাহেব ক্রো'ধান্বিত কণ্ঠে প্রতিউত্তর করলেন,
——— "এমন পরিবারে আমি আমার মেয়ে বিয়ে দিবো না!"
রাশেদ আলী আরও তেতে উঠে বললেন,
——— " কি! এত বড় স্পর্ধা ! আমার ছেলের জন্য কি মেয়ের আকাল পরেছে? তোমার মেয়ের চেয়েও শতগুণে সুন্দরী এবং গুণবতী লক্ষ্মী কন্যাকে পুত্রবধূ করে আনব! "
মোশারফ সাহেব নিস্তব্ধ হয়ে রইলেন। সেদিন রাশেদ আলী ক্রো'ধান্বিত অবস্থায় ইকরাম আলীকে বিয়ের মণ্ডপ হতে টেনে নিয়ে চললেন। একে একে বরপক্ষ বিয়ের আয়োজন ধ্বং'স করে প্রস্থান করল। মোশারফ সাহেবের আদরের একমাত্র বোনের বিবাহ ঠিক আগমুহূর্তে ভেঙে গেল। ফায়জার স্বপ্নগুলি চূর্ণ-বিচূর্ণ হল, যাকে হৃদয়ে ধারণ করল, তাকে পাবার সাধ অপূর্ণ রইল। ইকরাম আলী সে দিন যেতে চায় নি, কিন্তু রাশেদ আলী তাকে এক চ'ড় মে'রে বাধ্য করে নিয়ে গিয়েছিলেন। চারিদিকে অপবাদ এবং কটুক্তির বন্যা প্রবাহিত হল— কন্যার চরিত্রে নিশ্চয় ক'ল'ঙ্ক রয়েছে, হয়তো সে অন্যত্র রাত কাটিয়েছে; ধরা পড়ে গিয়েছে। এমনকি আরও নোং'রা কথাবার্তা উঠল শাহারিয়াজ বাড়ির আদরের কন্যাকে নিয়ে। কাদের সাহেব এইসব অপবাদ সহ্য করতে পারলেন না। তিনি হৃদ্রোগগ্রস্ত ছিলেন। আদরের একমাত্র কন্যার প্রতি এমন ঘৃ'ণ্য কথা, তার চরিত্রে আঙুল তুলার ন্যক্কারজনক ঘটনায় বিয়ের মণ্ডপেই হার্ট অ্যাটাক করে মৃ'ত্যুবরণ করেন তিনি ।
নিমেষমাত্রে যেন একরাত্রিতেই সকল কিছুর অন্ত ঘটে গেল! পরদিন জানাজার পূর্ব মুহূর্তে ইকরাম আলী তড়িঘড়ি করে মোশারফ সাহেবের পায়ে পড়ে কেঁদে ভিক্ষা চেয়ে বললেন,
——— " যা ঘটেছে, সব আমার বাবার কারণে! আমি তার পক্ষ হতে ক্ষমা প্রার্থনা করছি! আমি তো কিছু করি নি, বল? আমি ফায়জা'কে ভালোবাসি, ওকে ছাড়া অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারব না! আমি সমস্তকিছু ত্যাগ করে এসেছি; পরিবার, ক্ষমতা, ঐশ্বর্য, ধনসম্পদ— সব। আমাকে ফিরিয়ে দিস না! তোর বোনের হাত আমার হাতে তুলে দে, আমি প্রতিজ্ঞা করছি, কখনো তাকে অসুখী রাখব না! আমি তো তোর বন্ধু! তুই তো জানিস আমি কেমন, বল?"
মোশারফ সাহেব সরে দাড়ালেন ; কঠিন স্বরে বলি
লেন,
———" বন্ধু? কে বন্ধু? আমার বোনকে তোর হাতে তুলে দিবো, এটা কিভাবে কল্পনা করলি? তুই আমার বোনের যোগ্য নস! সুতরাং আমার বোনের থেকে দূরে থাকিস ! আর শুনে রাখ; আজ হতে আমাদের নতুন পরিচয়— শ'ত্রু! নিষ্ঠুর শ'ত্রু'তা!"
কাদের সাহেবের পরলোকগমনের অব্যবহিত পরই, সেই দিনেই নিদারুণ ক্রূরতার শেষ সীমায়, ফায়জাকে তার অতি পরিচিত এক শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করা হল। ইকরাম আলী যখন এ সংবাদ পেলেন; তখন তার চিত্ত একপ্রকার উন্মাদনার প্রান্তে উপনীত হল। তিনি অ'গ্নি'বৎ ক্রো'ধে মাতাল হয়ে শাহারিয়াজ বাড়ির প্রাঙ্গণে তা'ণ্ড'বের সূচনা করলেন। কিন্তু মোশারফ সাহেবের অনুগতগণ তাকে সেখান থেকে ঘাড় ধা'ক্কা দিয়ে বহির্গত করে দিয়েছিলেন!
ঠিক সেই মুহূর্ত হতেই দুই বন্ধুর মধ্যে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হল—একটি দ্বন্দ্বের অধ্যায়, যাতে এককালে যারা বন্ধু ছিল, আজ তারা শ'ত্রু নামে খ্যাত হল।
মোশারফ সাহেব সময়ের পরিক্রমায় রাজনীতির জটিল জালে ধীরে ধীরে নিজেকে আবদ্ধ করতে লাগলেন। তিনি ব্যাকুল চিত্তে জানতে চান, এমন কোন নিদারুণ কারণ ছিল ? কি এমন তথ্য উদঘাটিত হয়েছিল যে, তার পিতা সেই রাতে বিবাহ বন্ধন ভঙ্গ করতে বাধ্য হলেন? কে তাকে কি এমন সত্য বলেছিল, যে কারণে তার পিতার জীবন আজ নেই? তিনি সেই রহস্য উদঘাটন করার জন্য একাকী লড়ে গিয়েছেন। কিন্তু দিনান্তে, মৃ'ত্যু'র দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলেও, সেই সত্য তার করতলে অধরা রয়ে গেল।
অতএব, এত ঘটনা এবং ক্ষ'তির অব্যবহিত পরে, কিরূপে তিনি মুগ্ধর বিবাহ সেই শিকদার পরিবারের সহিত সম্পন্ন করতে রাজি হবেন? এমন সিদ্ধান্তে উপনীত হবার শক্তি কি আর তার রয়েছে?
আম্বিয়া বেগম নিঃশব্দে সোফায় আসীন, বেদনাভারে অবনত; আর ফ্লোরে বসে মোশারফ সাহেব, তার শির মায়ের কোলে নিবিষ্ট, যেন শৈশবের মতোই সান্ত্বনার প্রত্যাশায়। বুকের গভীরে আজও সেই ক্ষ'তের তীব্রতা বহমান, একটি মুহূর্তও যেন কমে নি। বেদনার স্রোত হৃদয়কে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, কেবল ব্যথার নীরব প্রতিধ্বনি শুনছে। মা হাত দিয়ে মোশারফ সাহেবের অশ্রু মোছাতে মোছাতে আম্বিয়া বেগম এক নিঃশ্বাসে শান্তনা দিচ্ছেন, কিন্তু তার চোখের জলও থামে না।
এমন মর্মভেদী মুহূর্তেই সিঁড়ি বেয়ে ধীরগতিতে নামতে শুরু করল মুগ্ধ। তার স্থির মুখমণ্ডলে এক বিরল গাম্ভীর্য, ব্লাক ফর্মাল শার্ট হাতা ফোল্ড করতে করতে ঠোঁটের কোণে এক বক্র হাসি ফুটিয়ে গম্ভীর অথচ তীক্ষ্ণ স্বরে উচ্চারণ করল,
——— “রাজনীতি, রাজনীতি, রাজনীতি! সবসময়ই খু'নখা'রাপি আর শ'ত্রু'তার দাবার গুটি চালিয়ে নয়, ঠান্ডা মাথায় বন্ধুত্বের চাল দিয়েও প্রতিপক্ষের গোপন রহস্য জানা যায়। এত বছর দাবার ছক কষে কিছু জানতে পেরেছো? এই বুড়ি তোমার ছেলে কে বলো, ওই বাড়ির রহস্য জানতে চাইলে আমার দাবার গুটি হোক ওই বাড়ির মেয়ে। রাণিকে হাতে পেলে তবেই না রাজা তার শেষ ছক কষবে?”
____________________________
নিস্তব্ধ রজনী; মহাপ্রলয়ের ন্যায় একটি নীরবতা গ্রাস করছে সমস্ত গৃহ জুড়ে। বিয়ের আর মাত্র চার দিবস অবশিষ্ট, অথচ মিলির চক্ষুতে ঘুমের লেশমাত্র নেই। শয্যায় এপাশ-ওপাশ ফিরিয়াও মনের ব্যাকুলতা প্রশমিত করিতে পারিতেছিল না.!
মিলিদের ছোট্ট বাড়িটি যেন আত্মীয়স্বজনের পদচারণায় গমগম করছে। একটু আগেই গানবাজনার আওয়াজ থেমেছে, কিন্তু বাড়ির প্রাণচাঞ্চল্য রয়ে গেছে সবার মাঝে। এ গত এক মাস ধরেই চলছে! সবাই নাচানাচি করে ক্লান্ত, বিশেষত মিলি। যদিও বাড়ি আত্মীয়দের ভিড়ে ঠাসা, মিলি নিজের ঘরেই একা শুয়েছে।
মিলির শোবার ধরনই আলাদা—স্বাস্থবতী শরীর, তার উপর হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস! পুরো খাট যেন একাই ভরে থাকে তার উপস্থিতিতে। কারও পক্ষে সেই খাটে তার সাথে জায়গা নেওয়া সম্ভব নয়। আর মিলি নিজেও কাওকে সে সুযোগ দিতে প্রস্তুত নয়। কারণ, কাল থেকে আঁখি আর আছিয়া তার সঙ্গী হবে এই ঘরে। নিজস্ব জায়গার স্বাধীনতাটুকু উপভোগ করার এইই শেষ কয়েক রাত!
শরীরের যত্ন চলছে অবিরাম গত একমাস ধরেই, যেন শরীরের ত্বকে রূপের কোনো ত্রুটি থাকতে না পারে। ফেসপ্যাকের শরণাপন্ন হয়ে কত কিছুই না প্রয়োগ করেছে সে! কিন্তু, এই মুহূর্তে বিয়ের শাড়িখানি পরে দেখবার তীব্র ইচ্ছা হচ্ছে তাহর।
——— "কেমন দেখাবে?"
মনে প্রশ্ন জাগিল।
——— "উনি দেখিলে কি খুশি হবে?"
স্বপ্ন দেখতে লাগল বিয়ের পর বাচ্চাদের নাম কি রাখা যাবে। চারটি সন্তান নেবার আশায় বিভোর মিলি,
——— "না কম, না বেশি, ঠিক চারটি!"
তবে এখন এইসব আকাশপাতাল ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে ঘুম তো আসছে না। ফাহাদের সহিত কথা বলার ইচ্ছা প্রবল, কিন্তু সে যদি জানতে পারে মিলি এখনো ঘুমায় নি, তবে নিশ্চয়ই ধমক দিবে। সেই ধমক খাবার ব্যাকুলতা বিদ্যমান মিলির হৃদয়ে। তথাপি মিলির তো কোনো ফোন নেই! অতএব, কথা বলতে হলে পিতামাতার শয়নকক্ষে যেতে হবে। মাঝরাতে তাদের বিরক্ত করা কি শোভন হবে? একবার ভাবল; "সকালে কথা বলা যাবে।"
তবুও মনকে নিয়ন্ত্রণ করা মিলির পক্ষে সম্ভব হল না। শয্যাত্যাগ করে সজীবতার সহিত উঠে দাঁড়াল সে। "বোধ হয় পিতা-মাতা এখনো নিদ্রায় নিমগ্ন হয় নি," এ ভেবে মনে করে ধীরে ধীরে তাদের শয়নকক্ষে গমন করতে লাগল।
অন্তরের উল্লাসে তার গতি শীঘ্র হল। মিলির ধারণা সঠিক—রজনীর মাত্র একপ্রহর অতিবাহিত, হাবিবুর রহমান এবং জবেদা বেগম তখনো কথোপকথনে রত। দরজা হালকা ভাজ করা—এমন দৃষ্টে মিলি খুশিতে ঝলকিত হল। দরজার দিকে হাত বাড়াল ধাক্কা দিবে বলে।
কিন্তু হঠাৎ,দরজা ধাক্কা দেওয়ার পূর্বেই তার হস্ত থেমে গেল। নিস্তব্ধতার কোলাহলে এক মুহূর্তে সমস্ত পৃথিবী যেন মিলির চারপাশে থেমে গেল। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে মিলি স্তব্ধ হয়ে শুনে গেলো পিতামাতার কথোপকথন। প্রতিটি শব্দ তার হৃদয় ভেদ করে শীতল শিখায় রূপান্তরিত হল, যেন মনের অন্ধকার কোণ থেকে সমস্ত আলো নিভে যাচ্ছে।
জবেদা বেগমের কণ্ঠস্বর আড়ম্বরহীন, অথচ সেই শূন্যতার মাঝে একটি মায়ের অপরিসীম যন্ত্রণা লুকানো,
——— "যেদিন মিলি জানতে পারবে ও মা হতে পারবে না... সেদিন কি হবে?"
হাবিবুর রহমান বিরক্ত কণ্ঠে প্রতিক্রিয়া দিলেন,
——— "আচ্ছা, সবসময় এসব কথা কেন বলো তুমি? অন্য কোনো কথা নেই?"
মায়ের গলা কম্পিত হয়ে উঠলো,
———"একটা মেয়ের জীবনে সবথেকে বড় পাওয়া হচ্ছে মা হওয়া! জীবনের সবথেকে সুখের সময় মা হওয়া! আমাদের মেয়ে তো বাচ্চা অনেক ভালোবাসে... কিন্তু যখন জানবে..."
গলার স্বর আটকে গেল জবেদা বেগমের। মনে হলো যেন তার হৃদয় ফেটে পড়েছে, কিন্তু সেই কষ্ট শব্দে প্রকাশ করতে পারছে না।
হাবিবুর রহমান পুনরায় বললেন,
——— "চুপ করো। কিচ্ছু হবে না! রাজপুত্র ছেলে পেয়েছি! এসব জেনেও সে রাজি হয়েছে মিলিকে বিয়ে করতে!"
জবেদা বেগম ধীরে ধীরে ফিসফিস করে বললেন,
——— "হ্যাঁ, সে রাজি হয়েছে কারণ তারো একটা মেয়ে আছে..."
হাবিবুর রহমান ঠোঁটে এক হাসি টেনে বললেন,
——— "তাতে ক্ষতি কী? মেয়েটাকে পেলে মিলি মায়ের মতই আদর করবে!"
——— "তা ঠিক আছে, "কিন্তু জামাইয়ের মেয়ের কথা গোপন রাখা ঠিক হয়নি। আমাদের মিলিকে জানানো উচিত ছিল!"
———"তুমি অবুঝের মত কথা বলছো, "মিলি যদি জানতো ফাহাদের একটা মেয়ে আছে, তাহলে কি সে বিয়েতে রাজি হতো? আর মিলির এই সত্য জানার পর কেউ কি তাকে বিয়ে করতে রাজি হতো? আমাদের মেয়ে যেমনই হোক সে সুন্দর! আল্লাহ দিয়েছে স্বাস্থ্য, কিন্তু সবার চোখে কি সেভাবে সুন্দর? তবুও ফাহাদের পুরো পরিবার; ওরা তো মেনে নিয়েছে। আর ফাহাদের মেয়েটার সাথে মিলির যে সম্পর্ক হবে, দেখো, মিলি নিজেই মেয়েটাকে কাছে টেনে নিবে।"
তবুও, জবেদা বেগমের মনের কষ্ট দূর হলো না,
——— "কিন্তু আমার কেন জানি ঠিক লাগছে না!"
——— "এখন মেয়েটা বিয়েতে কত খুশি! তোমার এসব চিন্তার জন্য ওর খুশি নষ্ট করো না! ঘুমাও। কাল সকালে উঠতে হবে।"
এসব শ্রবণে মিলির হৃদয় ভেঙে গেল। বিয়ের সমস্ত স্বপ্ন মুহূর্তে নিভে গেল, যেন শীতল অন্ধকারের মধ্যে ডুবে গেল তার সমস্ত আশা। কোনো শব্দ উচ্চারণ করলো না সে, বরফের ন্যায় শান্তভাবে ফিরে চলল নিজের কক্ষে।
শৈশবে এক প্রতিযোগিতায় মিলির নাম লেখানো যেন তার জন্য অশুভ সঙ্কেত হয়ে দেখা দিল। দেহের স্বাস্থ্যের ভারে সে সবসময়ই আলাদা ছিল, কিন্তু তবুও শিশুসুলভ শখের বশে সে অংশগ্রহণ করেছিল স্কুলের দৌড় প্রতিযোগিতায়। সেই সিদ্ধান্তই কাল হলো তার জন্য। দৌড়ানোর সময় ভারসাম্য হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল মিলি, তলপেটে প্রচণ্ড আঘাত নিল সে।
প্রথমে মিলি ও তার পরিবারের কাছে বিষয়টি তেমন গুরুতর মনে হয়নি। তবে ক'দিনের মধ্যেই পেটের যন্ত্র'ণায় তাকে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হলো। তখনই রিপোর্টের মাধ্যমে সামনে এলো সেই নির্মম সত্য। ডাক্তার ঠান্ডা অথচ গভীর চিন্তাপূর্ণ কণ্ঠে জানিয়েছিলেন,
——— "তলপেটে আঘাতের কারণে আপনার মেয়ের জ'রা'য়ুতে স্থায়ী ক্ষ'তি হয়েছে। আঘাতের ফলে পেলভিক অঞ্চলের নার্ভ ও টিস্যুগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষ'তিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারণে প্রজনন ক্ষমতা চিরতরে হারিয়েছে। অত্যন্ত দুঃখিত, কিন্তু ভবিষ্যতে সে আর কখনো সন্তান ধারণ করতে পারবে না।"
সেই এক ঝাপটা আঘাত যেন মিলির ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলোকে বি'নাশ করে দিয়েছিল, অথচ সে তখনো সেই ভ'য়ং'কর সত্যটা জানে না—সে কখনো মা হতে পারবে না। কিন্তু আজ সবটা পানির মত স্বচ্ছ তার নিকট!
0 Comments