লেখিকাঃ আবিদা সুলতানা

🚫🚫
কঠোরভাবে কপি করা নিষিদ্ধ। যাদের অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ, তাদের জন্য এই গল্প নয়। অনুগ্রহ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। পুরো গল্প জুড়ে থাকবে ধোঁয়াশা, যা উদঘাটন করতে সত্যিকারের ধৈর্য প্রয়োজন। শুধুমাত্র রহস্যভেদে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
🚫🚫
রাত্রির তমসাচ্ছন্ন আকাশে বি'ক্ষু'ব্ধ মেঘ বি'কট চিৎ'কারে প্রতিধ্বনি তুলছে, আর ঝরঝর ধারায় বৃষ্টির প্রবল ক'শা'ঘা'তে প্রকৃতি কাঁ'পছে! এমনই এক ভ'য়াব'হ মুহূর্তে, হাসপাতালের চৌকাঠে বসে, বৃষ্টির জলসে ভিজে ক্লি'ষ্ট দেহে ত্রা'সে কাঁপছে ইয়াসিন! তার নিকটেই সিয়াম অধীর উন্মা'দনায় জ্ব'লন্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বারংবার একই প্রশ্ন করেই যাচ্ছে, অথচ ইয়াসিন নিশ্চুপ! নীরবতার গহন অ'ন্ধকা'রে তার অন্তর নিম'জ্জিত, আর ভী'তির শৃঙ্খলে আবদ্ধ দেহটি শি'হ'রিত হচ্ছে! সিয়াম অধীরতা সহকারে ইয়াসিনের কাঁধে হস্তার্পণ করে জোরে ঝাকিয়ে বলল,
— "বল ইয়াসিন, বল, শান্তর এমন অবস্থা কিভাবে হলো???"
ইয়াসিন সঙ্কো'চমিশ্রিত দৃষ্টিতে চোখ তুলে সিয়ামের দিকে তাকালো; লা'ল হয়ে উঠেছে তার চোখ, যেন র'ক্ত'শী'র্ণ, আ'ত'ঙ্কের প্রাচুর্যে বা'কশ'ক্তি হতে বঞ্চিত যেন ছেলেটা ! এমন সময়ে ইমার্জেন্সি কক্ষ হতে, মহাসম্ভ্রমে, চিকিৎসক বের হলেন। সিয়াম ইয়াসিনকে ফেলে তীব্র উৎকণ্ঠায় দৌড়ে গমন করল চিকিৎসকের নিকট! আ'তঙ্কে ব্যাকুল কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল,
— "আমার বন্ধু, স্যার, আমার বন্ধু এখন কেমন আছে?"
চিকিৎসক গম্ভীরতায় আবদ্ধ মুখে তার দিকে তাকালো। মুখে একরকম কঠোরতা দেখা গেল, যেন ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঢেকে গেছে। গভীরতর কণ্ঠে বললেন,
— "আমি আগে পু'লি'শকে জানাবো, এরপর যা হওয়ার হবে! '
ডাক্তারের এমন কথা শুনে মুহূর্তেই সিয়াম আর ইয়াসিনের আ'ত্মা যেন শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইল! দুজনেই চোখ বড় বড় করে ভ'য়ে তাকিয়ে থাকল, যেন তাদের সব শেষ হয়ে যাচ্ছে! ইয়াসিনের হাত কাঁ'পছিল, বুকের ভেতর ধু'ক'পু'ক করছিল, এবং চোখের কোটরে ভ'য়ের ছাপ স্পষ্ট ছিল। পুলিশ! তাহলে তো শেষ! সব শেষ! সিয়াম ডাক্তারকে আকুতি মিনতির সুরে বলল,
— "না, না স্যার, এমনটা করবেন না! আমরা তো শেষ হয়ে যাবো! আমাদের ক্যারিয়ার, আমাদের ভবিষ্যৎ সব শেষ হয়ে যাবে স্যার! সত্যিই বলছি স্যার, আমরা কিছু জানি না! প্লিজ, স্যার, বলুন আসলে কী হয়েছে?"
ডাক্তার সিয়ামের আকুতির পর ঠান্ডা গলায় বললেন,
— "আমি যা বলার তা বলেই দিয়েছি। পেশেন্টের অবস্থা অত্যন্ত গু'রু'ত'র, এবং এটা যে পরিকল্পিত নি'র্যা'ত'ন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পু'লি'শকে না জানিয়ে কিছুতেই পারব না। এটা একটা অ'প:রাধের মা'মলা, এবং আমি আমার পেশাগত দায়িত্বের বাইরে কিছু করতে পারব না। তোমাদের কথা পরে শুনব, কিন্তু সবার আগে পু'লি'শ'কে ডাকতেই হবে।"
ডাক্তারের এই নির্লিপ্ত ও সোজাসাপ্টা কথায় সিয়াম আর ইয়াসিনের মনে যেন ব'জ্র'পাত হলো! ইয়াসিন আতঙ্কগ্রস্ত দেহে দৌড়ে আসল । দু'জনের চেহারায় ভী'তির ছাপ স্পষ্ট, স্নায়ু যেন শূন্যতায় নিমজ্জিত। তবুও দুইজন ডাক্তারকে অনুনয়-বিনয় করতে লাগল, যেন পু'লি'শ'কে এটা জানানো না হয়। কণ্ঠে করুণ আকুতি এবং অস্থিরতা প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। বারংবার চেষ্টাতেও ডাক্তারকে মন গলানো যাচ্ছিল না।। কিছুক্ষণ এইরূপ অনুনয়ের পর, ডাক্তার খানিকটা প্রশমিত হলেন। বাহিরের প্র'ল'য়ং'করী ঝড়ের রাত্রিতে পু'লি'শ ডেকে আদৌ কোন কার্যকর হবে কি না, তাতেও ডাক্তার সংশয়বশত চিন্তামগ্ন হলেন।
সিয়াম শেষ বারের মতো সাহস করে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করল। সেই মুহূর্তে ডাক্তার, অতুল রোষা'ন্বিত কণ্ঠে বললেন,
— কে এমন হিং'স্র আচরণ করেছে ছেলেটার সঙ্গে? ওকে ধীরে ধীরে শে'ষ করার ষ'ড়'যন্ত্র করা হয়েছে! ছেলেটাকে তি'লে তি'লে য'ন্ত্র'ণা দিয়ে মৃ'ত্যু'র মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে!! তাকানো যাচ্ছে না!
ডাক্তারের কথায় সিয়ামের অন্তর সহসাই আ'ত'ঙ্কে আলোড়িত হল, আর ইয়াসিন আরও ভ'য়ে কুঁকড়িয়ে গেল, যেন তার দেহ সতত শীতল শঙ্কায় কাঁপছে। অবশেষে, ভ'গ্ন'দ'শায় ভিজে চোখে ইয়াসিন চিকিৎসকের সম্মুখে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে আকুল প্রার্থনা করে বলল,
——"স্যার, স্যার, যে ভাবেই হক, আমার বন্ধুকে বাঁচিয়ে দিন স্যার!"
সিয়াম তখন ভ'য়ে ভ'য়ে ক'ম্পিত কণ্ঠে পুনরায় জিজ্ঞাসা করল,
—— "শ-শান্তর কি হয়েছে স্যার? সব খুলে বলুন আমাদের, প্লিজ!"
ডাক্তার তার চোখের কোণায় অস্বস্তি নিয়ে শান্তর রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করলেন,
— "পেশেন্টের শারীরিক অবস্থাটা ভ'য়া'নক। যে ধরনের আ'ঘা'ত তার শরীরে রয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে এটা পরিকল্পিত নির্যাতন। এটা নিঃসন্দেহে অত্যন্ত নি'র্ম'ম ও ভ'য়া'ন'ক নির্যাতন। কেউ এমনটা পরিকল্পিতভাবে করতে পারে, ভাবলেই শরীর শি'উ'রে ওঠছে আমার! না মানে এভাবেও কাওকে য'ন্ত্র'ণা দেওয়া যায়! টানা দু'দিন ধরে উ'ল'ঙ্গ করে মধু ঢেলে মৌমাছি দিয়ে কামড় খাওয়ানোর নি'র্ম'মতা কোনো সাধারণ মানুষের কাজ হতে পারে না। এ ধরণের অ'ত্যা'চা'রের শি'কা'র হওয়া একজন মানুষের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা যে কতটা বি'প'র্য'স্ত হতে পারে, তা বর্ণনা করা কঠিন। দুদিন ধরে পেশেন্টের শরীরে না কোনো খাবার গেছে, না এক ফোঁটা পানি। তীব্র য'ন্ত্র'ণা ও ভয়ের কারণে ছেলেটার প্রস্রাবও বের হয়ে গেছে; এটা ভয়ের প্রতিক্রিয়া থেকেই হয়েছে! আর এরপরেও তোমরা বলছ আমি পু'লি'শ ডাকব না?
প্রত্যেকটা অঙ্গ প্রতঙ্গে মৌমাছির কা'ম'ড়ে'র দাগ আছে, এমনকি গোপন অঙ্গে, স্পর্শকাতর স্থানগুলোতেও। এধরণের নি'র্যা'ত'ন থেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সেরে ওঠা অত্যন্ত ক'ঠি'ন হবে। আমার মনে হচ্ছে কেও এরকমটা প্র'তি'শো'ধ নিতেই করেছে! ছ'ট'ফ'টা'নি নিজের চোখে দেখতে চেয়েছে! মা'রা'র হলে অন্য ভাবেও মা'রা যেত! কিন্তু এই ঘটনা দেখে এটা ক্লিয়ার যে মূল লক্ষ ছিল তিল তিল করে য'ন্ত্র'ণা দেওয়া! {দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে একটু থেমে} মৌমাছির কা'ম'ড়ে'র বি'ষ সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সেটা অ্যানাফাইল্যাক্সিস (অত্যন্ত বিপজ্জনক এলার্জিক শক) সৃষ্টি করেছে। প্রথমে পেশেন্টের ত্বক ফুলে উঠেছে, এরপর র্যা'শ (চ'র্মক্ষ'ত), চু'ল'কা'নি, এবং অত্যন্ত তীব্র প্রদাহ হয়েছে। শরীর বি'ষে'র বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে, যাকে বলা হয় 'সিস্টেমিক ইনফ্ল্যামেটরি রিএ্যাকশন' (সার্বিক প্রদাহ প্রতিক্রিয়া)। এই প্রতিক্রিয়ায় ইমিউন সিস্টেম (রো'গ প্রতিরোধ ক্ষমতা) বি'ষ'কে প্রতিহত করতে গিয়ে নিজের কোষের ওপর আক্রমণ শুরু করেছে, যার ফলে আরও ক্ষ'তি হচ্ছে। ত্বকের কিছু অংশে নেক্রোসিস (কোষের মৃ'ত্যু) শুরু হয়েছে, যার অর্থ কোষের মৃ'ত্যু ঘটছে। পেশেন্টের ত্বক গলে যাচ্ছে বলতে পারেন। তার হার্টবিট (হৃদস্পন্দন) অনিয়মিত এবং রক্তচাপ অত্যন্ত কম; এমন শকিং কন্ডিশন (আ'ঘা'ত'জনিত অবস্থা) যে তাকে স্টেবিল (স্থিতিশীল) রাখতে খুব ক'ষ্ট হচ্ছে। [পূণরায় দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ] মধু প্রলেপ দেওয়ায় মৌমাছির আকর্ষণ আরও বেড়েছিল, আর নির্দিষ্ট স্থানে কামড়গুলো আরও গভীর হয়েছে। মৌমাছির বি'ষে'র ফলে তার পুরো স্নায়ুতন্ত্র আ'ক্রা'ন্ত হয়েছে। আমরা এখন এপিনেফ্রিন (শ্বাসনালী খোলার ঔষধ) ইনজেকশন দিয়ে তার শ্বাসনালী খোলার চেষ্টা করছি, তবে শ্বাসকষ্ট এত মা'রা'ত্ম'ক যে আমরা ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) প্রস্তুত করছি।
এদিকে তার শরীরে ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড (শিরায় তরল প্রয়োগ) এবং স্টেরয়েড (প্রদাহরোধী ঔষধ) দেওয়া হচ্ছে, যাতে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা একটু হলেও স্বাভাবিক হয়ে আসে। কিন্তু সবচেয়ে ভ'য়ং'ক'র ব্যাপার হলো, এই নৃ'শং'স নি'র্যা'তনের পরিণামে তার মানসিক অবস্থাও গুরুতরভাবে ক্ষ'তি'গ্র'স্ত হয়েছে। টানা দুইদিন ধরে তাকে এই অ'মা'ন'বিক য'ন্ত্র'ণা সহ্য করতে হয়েছে, আর তাতে তার মা'ন'সি'ক ভা'র'সাম্য হারানোর আ'শঙ্কা প্রবল। এই ধরণের পদ্ধতিগত নি'র্যা'তন কখনই সুস্থ মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না। একজন মনস্তাত্ত্বিকভাবে বি'কৃত ব্যক্তিরই কাজ বলে মনে হচ্ছে। "
ডাক্তার প্রস্থান করবে তখন পূনরায় সিয়াম কাপান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,
— "শ-শান্তর জ্ঞান কবে ফিরবে স্যার? "
ডাক্তার কিছুক্ষণ শান্তভাবে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে, গভীরভাবে চিন্তা করেন। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বলেন,
—— "শরীরের এই অবস্থায় নির্দিষ্ট করে কিছু বলা মুশকিল। মৌমাছির বি'ষ শরীরে মা'রা'ত্ম'ক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এটা আমি বলেছি! এবং এর জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে সে চরম দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, কিন্তু তার স্না'য়ুত'ন্ত্র এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের অবস্থা খুবই সং'ক'টাপন্ন।
যদি সে শারীরিকভাবে স্থিতিশীল হয় এবং তার শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়, তাহলে কয়েক ঘণ্টা বা একদিনের মধ্যে জ্ঞান ফিরতে পারে। তবে পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় লাগবে। এখনই কিছু বলা খুব কঠিন। তবে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন, কারণ এই অবস্থায় সবকিছুই অনিশ্চিত।"
আর অধিকতর বিলম্ব না করে, দ্রুতগতি পদক্ষেপে ডাক্তার প্রস্থান করলেন। সিয়াম ও ইয়াসিন একে অপরের দৃষ্টি সংলগ্ন করে, আতঙ্কিত নেত্রে চাইল। ইয়াসিনের কণ্ঠস্বর কম্পমান হয়ে উঠল; তীব্র উৎকণ্ঠায় সে বলল,
— "এ…এ…এখন কি করব?? শা…শান্তর প…পরিবারকে ক-কি জ…জবাব দ…দিব?"
————
অরণ্যধূলির মধ্যে হিং'স্র যুদ্ধের সঘনতা যেনো প্রকৃতিরই প্র'ল'য়। ছাত্রবর্গ গোলবদ্ধভাবে স্তুপীকৃত, কিন্তু সাহসীর নামগন্ধমাত্র নাই যে ভীষণ ক্রো'ধা'বেশে বিধৃত মুগ্ধকে থামাবে। ভার্সিটির মধ্যে দাঁড়ানো মুগ্ধের অনলস ভঙ্গি ত'প্ত অ'গ্নিরূ'পী বাঘ, তিন প্রতিপক্ষকে তাড়িত করছে নিতান্ত প্র'ল'য়'তু'ল্য আ'ঘা'তে। মুগ্ধের বলিষ্ঠ হাতের মু'ষ্টি কঠিন যেন শি'লা'খ'ণ্ড, প্রতিটি আ'ঘা'তে শ'ত্রু'দের দেহ কেঁপে উঠছে শঙ্কা'তুর।
মুগ্ধের দুই নয়ন অ'গ্নি'বর্ণ, ক্রো'ধের আ'গু'নে র'ক্তি'ম, আর তার কপালের শিরাগুলো যেন উদ্গত হওয়া প্রবল নদীর স্রোতধারা হয়ে ফুলছে। এখন যে কোন মুহূর্তে সম্মুখে দাঁড়ানো যে কাওকে ছি'ন্নভি'ন্ন করে টু'ক'রো টু'ক'রো করে ফেলবে, এই ভ'য় আশেপাশের সকলকে শি'ক'লবদ্ধ করছে।
তিনিটা ছেলে মাটিতে লুটিয়ে, আর শ'ক্তি নেই কারো মাঝে! এখন শুধু বাঁ'চার আশা করছে তিনজন! কিন্তু এতেও শান্তি পায় নি মুগ্ধ! ক্রো'ধে প্রথম ছেলেটাকে তুলে মাটিতে আ'ছা'ড় মেরে তীব্র মু'ষ্ট্যা'ঘা'তে তাকে একেবারে র'ক্তা'ক্ত করে ফেলল। ছেলেটার মুখ হতে র'ক্তে'র ঝাঁপটা ফিনকি দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বের হয়ে গেলো, ঠোঁট বিদীর্ণ হল, দাঁতসমূহ যেন মাড়ি হতে উপড়ে আসল মুগ্ধর রুক্ষ বলিষ্ঠ শক্তপোক্ত কি'লে'র তীব্রতায়। কিন্তু মুগ্ধ থামল না, পুনরায় আ'ঘা'তে ছেলেটার মুখ বা দিকে ঘুরিয়ে ফেলল। দাঁতসমূহ যেন ক্ষীয়মাণ বৃক্ষের ফলের ন্যায় দুলছে ছেলেটার, অবিলম্বে পরেই বুঝি যাবে এমনতরো!
এরপর মুগ্ধ হু'স'হুস করে দ্বিতীয় পরে থাকা ছেলেটার কাছে গিয়ে ওকেও এক হাত দিয়ে তুলে আবারো ছিটকে মারলো মাটিতে!!! হিং'স্র হয়ে পাঁজরে একের পর এক তীব্র লা'থি মা'র'তে থাকল, যেন প্রতিটি আঘাত ছেলেটার শি'রদাঁড়া বেষ্টিত হাড়গুলিকে গুঁড়িয়ে ফেলছে, যেন শরীরের ভেতর থেকে হাড়ের টুকরো বের করে দিচ্ছে। মুগ্ধর ফর্সা মুখমন্ডল র'ক্তি'ম বর্ণ ধারণ করেছে, কপালের এলিয়ে থাকা চুল দুলছে মুগ্ধর নড়নচড়নে, খোচা খোচা দাড়ি সমেত চোয়াল শক্ত করে মেরে যাচ্ছে ছেলেটাকে!
ওকে ছেরে দিয়ে তৃতীয়জন আধমরা ছেলেটাকে মুগ্ধ পাঁজর হতে গলা চেপে ধরে শ্বা'স'রো'ধের মাধ্যমে তাকে ধীরে ধীরে মৃ'ত্যু'র নিকটে আনতে চাচ্ছে। এই মুহুর্তে মুগ্ধর হিতচেতনা প্রায় লু'প্ত'প্রায়, রো'ষের তীব্রতায় কাঁপছে সে, দাতে দাত পিষে তার গুরুগম্ভীর পুরুষালি কণ্ঠ হতে ভয়ানক গর্জন নির্গত হলো,
— "How dare you interfere in my matters? You have no fear? No fear of death? Don’t you know death has another name is Mugdha? You don’t know that? Fine, I’ll make sure you know it... and you’ll know it forever!"
ছেলেটা নয়ন ভয়ে বিম্বিত কেঁদে চলেছে, মুখ হতে র'ক্তের বমির ন্যায় বেদনার উচ্ছ্বাস আসতে লাগল। মুগ্ধের প্রতিটি আ'ঘাত যেন একটি অবধারিত মৃ'ত্যু অপেক্ষা করছে, ছেলেগুলোর দেহ মাটিতে পতিত হয়ে ক্রমে ভেঙে আসছে।
চারিদিকে নিস্তব্ধতা; জনতা শ্বাসরুদ্ধকর মৌনতা পালন করছে। মুগ্ধের নি'র্ম'মতা দেখে সকলে ভ'য়ে অবশ হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে!
----
— " Stop! "
কিছুক্ষণ আগের মুহুর্তে এক বলিষ্ঠ তীক্ষ্ণগম্ভীর পুরুষকণ্ঠে হঠাৎ পূর্বিকা থমকে দাঁড়ালো। পশ্চাৎদিকে ফিরে তাকালো, দেখল এক দীর্ঘদেহী বলিষ্ঠ সুদর্শন পুরুষ দাঁড়িয়ে, গৌড়বর্ণ দেহের পরিধানে সমুদ্র-সবুজ রঙের ফর্মাল শার্ট, ব্লাক জিন্স, পায়ে ব্লাক স্নিকার। দুই হাত পকেটে প্রবিষ্ট করে ভাবলেশহীন সে ভঙ্গি নিয়ে দাঁড়িয়ে । পূর্বিকার ভ্রু কুঞ্চিত হলো, এই লোক আবার এখানে এসেছে কেন? উনি এখানে কেন আসল? আর তাকেই বা ডাকল কেন?
একবার মুগ্ধর সুদর্শন মুখমণ্ডলে তাকিয়ে দেখল পূর্বিকা; সর্বদা যেমন, তেমন করেই কপালের উপরে এলোমেলো মেসি কেশরাশি, মুখমণ্ডলে সেই কঠোর, গম্ভীর অভিব্যক্তি। পূর্বিকার মনে উদয় হলো সংশয়; মুগ্ধ কি তার সাথে বিয়ে করার জন্য জোর করতে এসেছে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব ? পূর্বিকা তো আফ্রিদিকে ভালোবাসে! ম'রে গেলেও তো মুগ্ধকে বিয়ে করা সম্ভব না!! অত:পর, পূর্বিকা মনে মনে প্রস্তুতি নিতে লাগল, যদি মুগ্ধ তাকে কিছু বলে বা জো'র'জ'ব'র'দ'স্তি করে, তবে সে কীভাবে প্রতিউত্তর দিবে। আর সাথে সাথে আফ্রিদিকে মেসেজ করে মুগ্ধর কথা জানিয়ে দিল।
ইহতরফে,, রোহান দূর থেকে হাতে কালো লম্বা ঘটক ছাতা নিয়ে লুঙ্গির এক প্রান্ত শক্ত করে ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে আসছে! এসেই কোনোকিছু পার্তা না দিয়ে আগেই দাঁত কেলিয়ে লুঙ্গির প্রান্তটা আবার ঠিক করে হেলেদুলে বলল,
— " হেইই মধুউউ,, হুয়াই ইউ আর কাম ট্যু হেয়ার ইন দিস ভার্সিটি??
ইংরেজি ভালোভাবে জানে না, তবু ইংরেজি সে বলবেই! রোহান প্রথমে মুগ্ধর গৃহে গমন করেছিল, কেননা গত দুই দিবস ধরে বন্ধুর সম্যক সাক্ষাৎ পাচ্ছিল না। অতএব আজ প্রভাতে ত্বরায় বন্ধুর গৃহে যেতে হলো। কিন্তু গিয়ে দেখে মুগ্ধ নেই, এরপর ফোন করে জানতে পারলো, সে নাকি এই ভার্সিটি অর্থাৎ পূর্বিকার যেখানে পরে সেখানে এসেছে ! সুতরাং দৌড়ে আসল ! কিন্তু এসেও বন্ধুর দর্শন পেল না ! সমগ্র প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করার পর অবশেষে বন্ধুর সন্ধান পেলো রোহান!! মুগ্ধ গম্ভীর স্বরে উত্তর দিল,
— " কাজ বুঝে নিতে ।"
রোহান কৌতূহলভরে প্রশ্ন করল,
— "এখানে তোর আবার কিসের কাজ?"
রোহান এখনো অবগত নয় মুগ্ধ পূর্বিকাকে বিয়ে করতে চেয়েছে! দুইজনের কথার ফাকে পূর্বিকা দৌড়ে ক্লাসের ভেতর চলে গেলো, অপেক্ষা করতে লাগল আফ্রিদির আসার! পূর্বিকাকে চলে যেতে দেখে মুগ্ধের চোয়াল শক্ত হয়ে বলিষ্ঠ হাতের মুষ্টি বদ্ধ হলো! রোহান একবার লক্ষ্য করল যে, ভার্সিটির প্রাঙ্গণে উপস্থিত সকলেই কীভাবে তার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাস্যকৌতুক করছে! আবার মুগ্ধকে দেখে লজ্জায় নুয়িয়েও যাচ্ছে! আবার ফুসুরফাসুর গুজুরগুজুর করে কানে কানে কথোপকথনও চলছে। রোহানের আর বুঝতে বাকি নেই তার পরনের কালচে বেগুনি রঙা চেক ডিজাইনের প্রিমিয়াম সুতির লুঙ্গি পরিধান আর হাতে মস্ত বড় কালো ঘটক ছাতা দেখার কারণেই এবং তার বন্ধুর মতো বলিষ্ঠ লম্বা গৌড়বর্ণের সুদর্শনার জন্যই এসব ঘটছে! রোহান একবার বিদ্রূপমূলক ভঙ্গি প্রদর্শন করে সকলকে ভেঙচি কেটে মুগ্ধকে বলল,
— " মধু তুই বাইক আনিস নি জানলে তোর বাড়ি থেকে বাইকে চরেই আসতাম! উফফ! আজকে দৌড়ের উপর ছিলাম,, হাটতে আর ভালো লাগে না !"
মুগ্ধ বি'র'ক্তি'ভরে বলল,
— " এসবে বোর হয়ে গিয়েছি! এতবছর পর দেশের মাটিতে পা রাখলাম তাই হেটে আসলাম ।"
রোহান হাস্যরসে বলল,
— "তুই বোর হলে বাইক আমাকে দিয়া দে, আমি বোর হব না ভাই!"
মুগ্ধ ঠোঁটের কোণে একটুখানি বাঁকা হাসি ফুটিয়ে তুলল। রোহান পুনরায় বলল,
— "চল কিছু খাই।"
— " কাজ আছে ।"
রোহান বি'র'ক্ত হয়ে প্রশ্ন করল,
— "ধু'রর'রর তোর এত কিসের কাজ,,, ধু'র, ধু'র, ভালো লাগে নাহহ? ভাই, তোর এত কাজ কোথা থাকে আসে? এতদিন পর এসেছিস, চল ঘুরে আসি!"
মুগ্ধ ঠোঁটের কোণে মৃদু হেসে বলল,
— "যেমন চায়ের দোকানে তোর কাজ থাকে!"
রোহান তৎক্ষণাৎ বিস্ময়ে থমকে দাঁড়াল, চক্ষু বিস্ফারিত হল। যেন নতমুখে ধরা পড়ার আতঙ্কে আচ্ছন্ন। জোরপূর্বক হাসি দিয়ে, অস্থিরভাবে মুগ্ধের কাঁধে হাত রেখে বলল,
— " আহাহাহাহ! you funy boyy! "
মুগ্ধ এক ভ্রু তুলে তীক্ষ্ণস্বরে বলল,
— "আরবিন শাহারিয়াজ মুগ্ধর কাছে কিছুই লুকানো সম্ভব নয়!"
এই বলেই মুগ্ধ খেয়াল করল রোহানের হাতে মস্তবড় কালো ছাতা। মুগ্ধ ভ্রু কুচকে বলল,
—" ছাতা কিসের? "
রোহান দাত কেলিয়ে হেসে বলল,
——" আহহাহাহা! আরে মুগ্ধহ, আমি থাকতে তোর কিছু হবে না! এখন বর্ষা কাল, বুঝলি? কখন যে টুপটাপ করে বৃষ্টি নামবে, নামার সময় তো কোনো নোটিশ দিয়ে আসবে না! তুই আবার ভিজবি, তারপর হাসপাতালে শুয়ে পড়বি,,,, এইটা আমি থাকতে কোনোদিনই হবে না! আমি তো তোকে বাঁচানোর জন্য ছাতা নিয়ে এসেছি! আর দেখ, এই ছাতাটা স্রেফ ছাতা না; এইটা সেই পুরোনো দিনের ঘটক ছাতা, একদম টাইট! এত বড় আর মজবুত ছাতা যে বৃষ্টি তো দূরে থাক, বাতাসের দমকও তোকে ছুঁতে পারবে না! হেহেহে!! "
রোহানের কথা শুনে মুগ্ধ বি'র'ক্তিভরে ফো'স করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো! এত পা'গ'লামি কোথা থেকে শিখে আসে ছেলেটা? রোহান ফের মুগ্ধর পিট চাপরে বলল,
— "দেখলি তো, আমি আসলেই সুপারহিরো! এই বিশাল ছাতাটা নিয়ে তোর বৃষ্টি ভেজা বাঁচাতে হাজির হয়েছি! আর এই লুঙ্গিটা, একে বলা হয় স্টাইল! দাড়া এই খুশিতে একটা ছড়া শুনাই,, "
রোহান গলা খাঁকারি দিয়ে বুক ফুলিয়ে বলা শুরু করলো,
— "ডালিম গাছে ডালিম ধরে, আতা গাছে আতা, আমি হিরো এসেছি বাঁচাতে, হাতে ঘটক ছাতা! দেখলি, দেখলি? আমি কত সুন্দর বলতে পারি? তোর গর্ব করা উচিত আমার মতো টেলেন্টেড বন্ধু পেয়েছিস!"
মুগ্ধ বি'র'ক্ত হয়ে রোহানের ঘাড় চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— "তোর মেশিন কি এবার বন্ধ করবি, নাকি আমি বন্ধ করিয়ে দেব?"
— "হেহেহে! কোন মেশিন বন্ধু? মুখের নাকি এহেম এহেম!"
মুগ্ধ হতভম্ব হয়ে রইল; এই ছেলেটা তো এক সেকেন্ডের জন্যও সিরিয়াস হয় না! মুগ্ধের মে'জা'জ এখন তু'ঙ্গে। সে রোহানের ঘাড় ধরেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— "এখন চুপ না করলে, মুখ আর তোর এহেম এহেম দুটো মেশিনই ভেঙে ফেলব আমি! So, shhhh!"
বলেই মুগ্ধ রোহানকে ছেড়ে দিল। রোহানও সঙ্গে সঙ্গে মুখে আঙুল দিয়ে চুপ হয়ে রইল। ঠিক তখনই বাইকের ফুল স্পিডে হনহনিয়ে আফ্রিদি ঢুকল ভার্সিটিতে! আজ আফ্রিদির মে'জা'জও তু'ঙ্গে। হয় মরবে, না হয় বাঁচবে; এই মনোভাব নিয়ে এসেছে সে। এমনিতেই ইন্সপেক্টর নিয়াজ সাহেব ওকে অনেক কথা শুনিয়েছে। মুগ্ধকে জে'লে ভরার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেছে! ওর প্ল্যানে এক বালতি জল ঢেলে দিয়েছে মুগ্ধ। আর আজ? আজ ওর প্রেয়সীর ভার্সিটিতে চলে এসেছে মুগ্ধ! মাথা খা'রা'প হয়ে গেছে আফ্রিদির। বন্ধু যাক গোল্লায়! কিসের বন্ধু! কোনো বন্ধু মানে না আফ্রিদি! যদি সত্যিই বন্ধু হতো, তাহলে পূর্বিকার দিকে নজর দিত না! বাইক পার্কে রেখে হনহনিয়ে হেঁটে আসছে আফ্রিদি।
আফ্রিদিকে দেখে রোহান মুখ খুলে বলল,
— "কিরে শা'লা, তুই কোথা থেকে উদয় হইলি?"
সুদর্শন, লম্বা, দেহের শ্যামপুরুষ আফ্রিদির মাথা গর'ম। কথা বলার মুড নেই তার। র'ক্ত'চক্ষু করে তাকাল পার্তা না দেওয়া লম্বা, বলিষ্ঠ মুগ্ধর পানে। মুগ্ধ দাঁড়িয়ে, তার মুখমন্ডলে নেই কোনো চিন্তার ছাপ, একদম ভাবলেশহীন, পকেটে হাত গুঁজে। আজই আফ্রিদি, পূর্বিকা আর তার প্রেমের কথা জানাবে মুগ্ধকে, এই মুহূর্তেই জানাবে। এরপরও যদি মুগ্ধ না মানে, তাহলে আজ সে কিছু একটা হেনস্তা করেই ছাড়বে। এদিকে পূর্বিকা দূর থেকে ক্লাসে লুকিয়ে দেখছিল। আফ্রিদিকে দেখে সে দৌড়ে বেরিয়ে এলো, না জানি আজ কি হবে। এই ভ'য়ে সামনে এসে দাঁড়ালো।
চারজনই এখন মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে। পূর্বিকা ভ'য়ে কুকড়ে গেছে, কী হবে এখন? আফ্রিদি অ'গ্নি ঝ'রা রা'গ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে—তার প্রেয়সীর দিকে নজর দিয়েছে তারই বন্ধু! মুগ্ধ এক পলক পূর্বিকার পানে তাকাল—ভাবলেশহীন চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর রোহান? এইসবের কিছুই জানে না, বে'ক্ক'লের মতো তিনজনের মুখের দিকে চেয়ে আছে—একজন ভয়ে, একজন রাগে, আরেকজন সবসময়কার মতো গম্ভীর ভাবলেশহীন মুখে। এখন কী হবে?
🚫🚫
কঠোরভাবে কপি করা নিষিদ্ধ। যাদের অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ, তাদের জন্য এই গল্প নয়। অনুগ্রহ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। পুরো গল্প জুড়ে থাকবে ধোঁয়াশা, যা উদঘাটন করতে সত্যিকারের ধৈর্য প্রয়োজন। শুধুমাত্র রহস্যভেদে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
🚫🚫
*
*
কলেজে ক্লাসরুমে ক্লাস করছে আঁখি, আছিয়া, মিলি। হিসাববিজ্ঞান শিক্ষক অনুপস্থিত তাই এখন ক্লাসে শিক্ষক নেই। যে যার মত আড্ডা দিচ্ছে, খোশগল্পতে মজে উঠেছে! আঁখি আছিয়ার নিকট জানতে পেরেছে যে তার ভাই তীব্র অসুস্থতার জন্য হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল। এটা জানার পর থেকেই অন্তরে অ'প'রাধবোধ যেন তরতর করে বেরে গিয়েছে তার! কিন্তু নিজেকে দো'ষ দিয়ে লাভ নেই, সে কিছু করে নি অতএব অধিকতর কিছু বলতে কিংবা ভাবা থেকে সে বিরত রইল! কিন্তু আজকের দিবসে সমগ্র পাঠকাল জুড়েই মিলি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হাস্যে মুখশোভা করে রেখেছে! কিছু জিজ্ঞেস করলেও বলছে না, তদুপরি সেই মুচকি হাসিও থামাচ্ছে নাহ!
মিলির ফোলা ফোলা গাল দুটি টমেটোর মতো র'ক্তিম হয়ে উঠেছে। এদিকে আঁখি, আছিয়া দুজনে কিংকর্তব্যবিমূঢ়, মিলি কেন এত হাসছে? তার আবার কী হলো? আছিয়া তাকাল মিলির দিকে, যেন মেয়েটি ল'জ্জায় রাঙা হয়ে উঠেছে। আছিয়া তী'র্যক স্বরে বলল,
-——— "এই ফুটবল, এত হাসছিস কেন? "
-——— "এমনি!"
মুচকি হেসে হাত কচলে নিচের দিকে তাকিয়ে ল'জ্জায় রাঙা হয়ে উত্তর দিল মিলি। আঁখি বলল,
-——— "হুম, বুঝেছি! আর লুকাতে হবে না, এবার তাড়াতাড়ি বল, বইন, কী হয়েছে?"
-——— "একটা সুখবর আছে!"
-——— "হায় আল্লাহ! তুই প্রেগন্যান্ট হলি কবে?"
আঁখি একথা বলে আছিয়ার দিকে তাকাতেই দুজনেই একসাথে ফিক করে হেসে উঠল। মিলি নাক কুঁচকে বলতে যাচ্ছিল, কিন্তু আছিয়া হেসে হেসে বলল,
-——— "তা মিলি, কয় মাস? আমাদের না জানিয়ে এত বড় কাজ করলি? এই তুই আমাদের বান্ধবী?? মিষ্টি দিলে হবে না,, অন্য কিছু খাওয়াতে হবে আমাদের হুম! "
মিলি রাগ দেখিয়ে বলল,
-——— "দুইটা বিলাই আর ঝালমুড়ি!! , তোরা চুপ করবি? যাহ্, বলব না তোদের কিছু!"
আঁখি হেসে বলল,
-——— "আরে, আরে, রা'গ করিস না। মজা করলাম। আচ্ছা বল, কী হয়েছে? প্রেমে পড়েছিস নাকি?"
মিলি আবার ল'জ্জায় রাঙা মুখে মুচকি মুচকি হেসে বলল,
-——— "আরে, সেরকম কিছু না!"
-——— "তাহলে কেরকম কিছু, বইন?"
আছিয়া প্রশ্ন করল কথাটা। মিলি আমতা আমতা করে বলতে লাগল,
-——— "আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে..."
আঁখি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-———" কী ব্যাপার?"
-——— "আসলে আমার..."
-——— "কী তোর..."
-———"আসলে কালকে...'
-——— "কী কালকে??"
-——— "আসলে..."
আঁখি বি'রক্ত হয়ে আর জিজ্ঞেস করল না। এদিকে আছিয়া চিৎকার করে রে'গে বলল,
-——— "এইইই, কী 'আসলে আসলে' লাগিয়েছিস? বলবি কিনা বল?"
মিলি দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,
-———" হেহেহে! আমি তো পা'দ দিলেও তোদের বলি, আর এটা বলব না?"
মিলির কথা শুনে আঁখি আর আছিয়া নাক মুখ কুঁচকে তাকাল, আছিয়া নাকে হাত দিয়ে চোখ-মুখ কুঁচকে রইল। আঁখি নাক-মুখ কুঁচকে বলল,
-———" ছিঃহহ, তোর পা'দের খবর কে জানতে চেয়েছে, বইন? থাক, তোর বলার দরকার নেই! এমন জরুরি সংবাদ আমরা শুনতে চাই না!"
আছিয়া নাক ধরে বলল,
-——— "এই ফুটবল, তুই কি সত্যিই এখন পা'দ মারলি নাকি?"
মিলি বলল,
-——— "না, কিন্তু দিলে তোকে আগে বলব ঝালমুড়ি !"
-——— "ইয়াককক! সরে যা এখান থেকে! তোর পা'দ তুই মার! আমাকে বলতে আসলে দেখিস কি করি!!! ফুটবলের বাচ্চায়ায়া,,, হাওয়া ছাড়িস না কিন্তু!"
-——— "কেন, তুই না জানতে চাইলি... এই, এই, আমার এখন পাচ্ছে, হিহিহি!"
আঁখি, আছিয়া নাক চেপে ধরে, মুখমণ্ডল কুঁচকে নিলো। আছিয়া নাক-মুখ চেপে ধরে অস্পষ্ট স্বরে বলল,
-——— "ফুটবল, দূ'র হ বাথরুমে গিয়ে হাওয়া ছাড়! "
বলেই আছিয়া হাসিতে মগ্ন হলো। এরপর তিনজনেই পেট চেপে হাসিতে ফেটে পরল! দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম তিনজনের! তখন আঁখি অনেক কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে মজার সুরে আছিয়াকে তি'র'স্কারের ভঙ্গিতে বলল,
-———"একদম ফুটবল বলবি না! ও হলো রসগোল্লা!"
কথা শেষ করেই মিলির রসগোল্লার মতো নরম গাল টেনে দিল আঁখি। মিলি আবারো দাত কেলিয়ে হেসে বলল,
-———" হ্যাঁ হ্যাঁ, রসগোল্লা বললেও তো পারিস! খালি ফুটবলই বলস! কিন্তু এই, এই, এখন না, আমার রসগোল্লা খেতে ইচ্ছে করছে!"
আঁখি কপালে হাত রেখে মৃদু হাসিতে বলল,
-——— "এ কারণেই তো তোকে ফুটবল বলি! রসগোল্লা বললে তো সেকেন্ডে সেকেন্ডে তোর খেতে ইচ্ছা করবে!"
আবারো তিনজন খিলখিল করে হাসিতে মেতে উঠল। ঠিক তখনই আঁখি খেয়াল করল, তাদের ক্লাসের একজন যুবক বারবার এইদিকে তাকাচ্ছে। আঁখি তাকাতেই দুজনের দৃষ্টি একে অপরের সঙ্গে মিলল। তৎক্ষণাৎ ছেলেটি দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিল। সে আর কেউ নয়, সাব্বির । পড়াশোনায় সে বেশ মনোযোগী। কিন্তু আঁখি সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দিলো না, মেতে উঠল বান্ধুবিদের সাথে হাসিতে!
আঁখির হঠাৎ করেই কিছু স্মৃতিপথে উদ্ভাসিত হল, আর সঙ্গেই সঙ্গেই ব্যাগ হতে অতি সত্বর কিছু বের করল! আছিয়া ও মিলি উভয়ে ভ্রু কুঞ্চিত করে তাকিয়ে রইল। আঁখির হাতে এক শুভ্র বস্ত্রখণ্ড, যা আছিয়া ও মিলি পূর্বেও বহুবার অবলোকন করেছে। তবে আজকের বস্ত্রখণ্ড খানিক বৃহৎ, অতি যত্নে ভাঁজ করা। আঁখি তৎক্ষণাৎ সেই ভাঁজ খুলে উভয়কে প্রদর্শন করল, এবং সঙ্গেই বলল,
-——— "কেমন হয়েছে, বলতো?"
তৎক্ষণে উভয়ের নয়ন বিস্ময়ে বর্ধিত হয়ে উঠল! শুভ্র বস্ত্রে সুই-সুতার অপূর্ব কাজ, যাতে এক বৃহৎ সবুজ রঙা পটলের আকার উৎকীর্ণ এবং চতুর্দিকে লাল রঙের পুষ্পালঙ্কৃত কারুকার্য! এটা দেখেই উভয়ের আর বুঝতে বাকি নেই এটা তাদের একমাত্র চঞ্চল পটলফুল রূপার জন্য নির্মিত! আছিয়া তৎক্ষণাৎ সেই বস্ত্রখণ্ড চটপট হাতে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল,
- ———"এইইই! এটা তো অনেক অনেক সুন্দর হইছে, বিল্লি রাণী! তা আমাদের পটল রাণীর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নাকি ?"
- ———"হুমমম! আমাদের পটলফুলেরই জন্য! ইদানীং কলেজ আর এই বৃষ্টির কারণে পটল রাণীর সাথে দেখাও হয় না। হয়তো একা একা মন খারাপ করে বসে থাকে ! এটা দিলে রুপা নিশ্চয় অনেক খুশি হবে।"
বিগত কিছুদিন ধরেই আঁখি রাত্রিজাগরণ করে, অপার স্নেহ ও যত্নে, নিজের হাতে সুই-সুতার মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করছে, এটাই তো রূপার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসার প্রমাণ । উপহার লেনদেন মনুষ্য সমাজের একটি সাধারণ অনুষঙ্গ, যা পারস্পরিক স্নেহ ও সৌহার্দ্যের সমৃদ্ধিতে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। ইসলামের নিকটেও এর গুরুত্ব অপরিসীম, এটা পুণ্যময় কার্য বলে পরিগণিত হয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন, কারণ এটা জনমানসে পরস্পর স্নেহপ্রীতি ও ঐক্যবোধের সংযোগ স্থাপন করে।
এক্ষেত্রে আমাদের প্রিয় নবি রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে উপহার দাও, এতে তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।
’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং : ৫৯৪)
প্রিয় নবি রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘তোমরা একে অন্যকে হাদিয়া উপহার দাও। এটি মনের শত্রুতা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। ’ (তিরমিজি, হাদিস নং : ২১৩০)
উপহার শুধুমাত্র দামী বস্তু প্রদান করাতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সত্যিকারের উপহার সেই, যা ভালোবাসা ও যত্ন সহকারে দান করা হয়। সেটা যেকোনো কিছুই হতে পারে, স্বহস্তে নির্মিত কোনো সামান্য বস্তু, যা অর্থমূল্যে ক্ষুদ্র হতে পারে, তবে তার অন্তর্নিহিত স্নেহ ও শ্রমের তুলনা কোনো দামী বস্তুর সহিত হতে পারে না। তাইতো আঁখি বহু রাত্রি জাগ্রত থেকে সুই-সুতার কাজ করছে। এখনো একখানি ফুলের কাজ অবশিষ্ট রয়েছে; তা পূর্ণ হলেই আঁখি এটা রূপার নিকট অর্পণ করবে, এবং সেই স্নেহ-ভালোবাসাই উপহারের প্রকৃত মূল্য বহন করবে।
----------TikTok
———" I won't hurt you, if you don’t give me reason... "
ড্রয়িং রুমে সোফায় পা তুলে বসে মুগ্ধর বলা কথাটা মাথায় ঘুরপাক খেয়েই যাচ্ছে পূর্বিকার! আর তার নীল রঙের নেলপালিশে সজাগ হাতে যত্নে গড়ে তুলা বড় নখে লাগাচ্ছে। কিন্তু তখনকার সেই ঘটনার কথা মনে পরলে এখনও কেঁপে কেঁপে উঠছে পূর্বিকা! আজ কত বড় প্র'ল'য় নিজের চক্ষুতে দর্শন হয়ে গেলো! পূর্বিকা ভাবতে লাগলো সেই তখনকার ঘটনা! পূর্বিকার হৃদয়ে এখনও তো'ল'পাড় করছে । আজ যেন মহাপ্র'লয়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়ালো সে! তখনকার ঘটনাপ্রবাহ তার মনে ভাস্বর হলো।
--
ভার্সিটির প্রাঙ্গণে চার মানব মানবী পরস্পর সম্মুখীন, চারিপাশে যে যার আলাপনমগ্ন। আফ্রিদি ক্রো'ধশূন্য নয়নে মুগ্ধের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হানলো, আর মুগ্ধ, পার্তা না দিয়ে সোজা, পূর্বিকার উদ্দেশ্য এক নির্মোহ কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
——— “I need to talk to you.”
পূর্বিকা নির্বাক, কী বলবে কিছুই ভেবে পায় না। সে জানে মুগ্ধ ও আফ্রিদি শৈশবের বন্ধু। অথচ, পূর্বিকার হৃদয় যে আফ্রিদির জন্য অধীর ভালোবাসা ! কিন্তু মুগ্ধ কেনই বা তাকে বিবাহ করতে চায়, তা পূর্বিকার নিকট একেবারেই অজ্ঞাত। আজ অবধি মুগ্ধ তার সহিত বাক্যবিনিময় পর্যন্ত করে নাই দেখা তো দূর; এই আজকেই প্রথমবার কথা বলল, সামনে আসল পূর্বিকার । পূর্বিকার অন্তরাশয় ব্যাকুল, সে চায় না তার কারণে দুই বন্ধুর বন্ধুত্বের অটল প্রাচীর ভেঙে পড়ুক বা কোনও ক'ল'হের জন্ম হক। এই অনিবার্য পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দিবে, পূর্বিকা তা জানে না। এক পলকে চেয়ে দেখল আফ্রিদির মুখমণ্ডল, ক্রো'ধে উন্মত্ত। সে যে পূর্বিকাকে অন্তরের অন্তঃস্থল হতে ভালোবাসে, তা আর নিগূঢ় রইল না। এমন অবস্থায়, প্রিয়াকে অন্য কেউ আপন করতে চাচ্ছে, বিবাহ করতে চাচ্ছে; আফ্রিদি কিভাবে সহ্য করতে পারে?
মুগ্ধের বাক্য শুনে আফ্রিদি কঠোর স্বরে উত্তর দিল,
——— " আমি আজ তোকে কিছু জানাবো আর এখনই, যা আমার অনেক আগেই জানানো উচিত ছিল!"
মুগ্ধ তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে চেয়ে উত্তর দিল,
——— "সময়ের কাজ সময়েই করতে হয়। কাল অতিক্রান্ত হলে অনুশোচনাও নিরর্থক।"
——— "আমার এখনো ঢের সময় আছে ! কিন্তু তোকে আজই সব সত্য বলব।"
——— " এতদিন কি মিথ্যে বলেছিস ?"
——— "না, তোকে কোনো মিথ্যে বলিনি। শুধু কিছু কথা বলার প্রয়োজন মনে করিনি।"
——— "পৃথিবীও তো প্রয়োজনেই ঘুরছে, আর তুই
প্রয়োজনবোধ না করেও এখন প্রয়োজনেই বলতে এসেছিস!"
——— “হ্যাঁ, এসেছি। কখনো কখনো সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু আড়ালে রাখতে হয়, নজর লেগে যায়। সেই কারণেই লুকিয়ে রেখেছিলাম, আড়াল করেছিলাম, কিন্তু তবুও কোনও লাভ হলো না! আজ আমি সব প্রকাশ করব, যেন দ্বিতীয়বার কেওই আমার দামী মূল্যবান , শুধুমাত্র আমার, একান্তই আমার জিনিসে নজর তো দূর যেন কোনও চিন্তাও না করতে পারে।”
এহেন বাক্য উচ্চারণ করে আফ্রিদি এক পলক তাকালো পূর্বিকার পানে। মুগ্ধের ঠোঁটে দেখা দিল এক বাঁকা হাসি; এটাই তো সে চায়! অপরদিকে রোহান একবার আফ্রিদির মুখের দিকে, একবার মুগ্ধের মুখের দিকে তাকিয়ে সেই দুর্বোধ্য বাক্যালাপের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করছে । তার তীক্ষ্ণ অন্তর্দৃষ্টি বলছে যে এখানে কোন প্রেমের জটিল গাঁথা বিদ্যমান। পূর্বিকা যেহেতু সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে এবং আফ্রিদি বারংবার “আমার জিনিস” বলছে, তাতেই রোহান অনেককিছুই উপলব্ধি করল। আরও তার উপর মুগ্ধ এসেছে তার পিতার চিরশত্রুর কন্যার সহিত আলাপন করতে। তার মানে, ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে! কিন্তু এত বড় কথা তার দুই সতীর্থ কেউই রোহানকে জানায় নি। এটা ভেবেই রোহানের মুখ ভার হয়ে গেল।
সে ভাবল কিছু একটা বলবে, আগে এদের কথা থামানো উচিত, কারণ রোহানের ধারণা, এখন যা ঘটতে চলছে তা প্র'লয় সৃষ্টি করার পূর্বাভাস । কিন্তু, কিন্তু,, কথা বলার পূর্বেই আরেক বিপত্তি ঘটে গেল...
হঠাৎ করেই, পূর্বলক্ষণ ব্যতিরেকে, তিন জন ব'খাটে যুবক পূর্বিকার প্রতি পিছন থেকে অ'শ্লী:ল আচরণ করে বলল,
——— " ওহ হো, ওহ হো! একসাথে তিন তিনটা ছেলে! ভাবা যায়!! তা সোনামণি , আমাদেরও একটু সুযোগ দাও! আমরাও তো অনেক দিন ধরে তোমার পিছু লেগেছি সুন্দরী!! "
এরা ভার্সিটির অ'মা'র্জি'ত ব'খা'টে হিসেবে পরিচিত। সুন্দরী নারী দেখলেই এদের অ'শ্লী'ল প্রবৃত্তি উদিত হয়। পূর্বিকা অত্যন্ত সুন্দরী নারী; তার রুপের আ'গু'নেই হৃদস্পন্দন দ্রুতবেগে চলবে যে কারো। পূর্বিকা ভার্সিটি তেমন উপস্থিত না থাকায়, এই যুবকগণ এতদিন তার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে নি। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে, ক্লাসে প্রবেশের পথে যুবকগণ পূর্বিকার সম্মুখে পতিত হল এবং পূর্বিকার অতুলনীয় মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য দেখে অবাক হলো, তথাপি, পূর্বিকা চেয়ারম্যানের কন্যা বিধেয় ছেলেগুলো বেশি কিছু না বললেও কিন্তু যুবকগণের চোখে ধরেছে। পূর্বিকা এই বিষয়টি তেমন পার্তাও দেয় নি আর এমন কিছু ঘটেও নি যে পরিবারকে বলতে হবে! পরিবারকে জানাইতে চায় নি, কারণ জানালে বিয়ের জন্য জোর করতে পারে। আফ্রিদি এখনও কর্মহীন, বেকার দিন যাপন করছে! হঠাৎ বিয়ের কথা শুনলে ছেলেটা দি'শা'হারা হবে। অতএব, আফ্রিদিকেও এ বিষয়ে কিছু জানানো হয় নি, কারণ ছেলেটা সর্বদা পূর্বিকার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। এখন এই সমস্ত বিষয় জানালে ছেলেটা পা'গ'ল হয়ে যাবে। তখন দেখা যাবে, ট'য়লেটে গেলেও আফ্রিদিকে জানিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আজ, এই ব'খা'টে ছেলেগুলো ভ'য়ান'ক পরিস্থিতিতে, অকথ্য কথা বলে আ'গু'নে কেরোসিন ঢালল। পূর্বিকা পিছু ফিরে যুবকগণের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে সামনে আফ্রিদির দিকে তাকালো । আফ্রিদির মুষ্টি শক্ত হয়ে উঠেছে। ছেলেগুলোর মাঝে একজন মাথা চুলকে বি'শ্রি ভাবে পুনরায় বলল,
——— " তা চেয়ারম্যানের মেয়ের বুঝি একটা তে চলে না, তাই না? তো রেট কত মেডাম?? আমরাও সুযোগ চাই! ক'সম করে বলছি, দাম বেশি দিবো! কেও জানবে না, সম্পূর্ণ প্রোটেকশন নিয়ে করব।
আরেক যুবক হাত ডলতে ডলতে অ'শ্লী'ল ভঙ্গিতে বলল,
——— " তুই একা করবি নাকি ? আমি ওরে প্রথম দেখেছি, তাই প্রথম ভাগও আমার!"
তিনজন যুবক হাসিতে মুখরিত হলো! তৃতীয়জন চুলে বেক ব্রাশ করে বলল,
——— " উ'ফফ, কি চি'জজ মা'ইরি, যদি একবার পাই,..."
আর বলতে পারল না, শক্তিশালী ঘু'ষি একেবারে চোয়াল বরাবর আসল! আফ্রিদি ক্রো'ধে উ'ত্ত'প্ত হয়ে একের পর এক ঘু'ষি মারতে লাগল। আফ্রিদির শক্তির সাথে পেরে উঠল না ছেলেটা! অন্য যুবকটি যখন আফ্রিদির প্রতি আ'ঘা'ত হানতে উদ্যত হল, মুগ্ধ দুর্জয় করপল্লবের ন্যায় দৃঢ় হস্তে তার কলার ধরে ক্রু'দ্ধ কণ্ঠে বলল,
——— "Don't you dare touch my friend??? "
বলে সাথে সাথেই, অ'গ্নির ক্রো'ধে ঘু'ষি মারতে লাগল ছেলেটাকে, কোন বিরতির সুযোগ না দিয়েই। একের পর এক ঘু'ষি, ক্রো'ধে ভরা হয়ে চলছে। মুগ্ধ ও আফ্রিদি যখন দুই যুবককে পা'গ'লের মত মে'রে গুড়িয়ে দিচ্ছে, তৃতীয় ছেলেটা পরিস্থিতি ভ'য়াব'হ বুঝে ভ'য়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করার তৎপূর্বেই, রোহান দৌড়ে গিয়ে তার ঘটক ছাতা দ্বারা পা'ছা'য় এক ধম করে বাড়ি দিল। শুকনো দেহের রোহান, যদিও অত্যন্ত ক্ষীণ, তথাপি তাতে সুপ্ত শক্তির অম্লান ভাব বিদ্যমান। লুঙ্গি বেধে ঠিক করতে করতে চিল্লিয়ে বলে উঠল,
——— "শা'লা'র পু'ত যাস কই? তোরে তো আমি খা'ইছি! "
বলেই রোহান ছাতা দ্বারা ধুমধাম মারতে লাগল! নিমেষেই, তিনজন সুপুরুষ বাকি তিন কাপুরুষকে মে'রে জ'খম করে যাচ্ছে। পূর্বিকা ভ'য়ে সরে গেল, মুখে হাত চেপে দাঁড়িয়ে, ভয়ে কাঁপছে। কি হলো, কি হলো? মাঠের উপস্থিত সকলে চমকিত হয়ে দেখছে। পূর্বিকা কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে, হুট করেই দৌড় লাগালো । পরবর্তীতে হিসাব, কথা সকল পরে হবে; জীবিত থাকলে সব কিছু পরে হবে। পূর্বিকাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে মুগ্ধ, রোহান ও আফ্রিদি তিনজনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। কিন্তু সুদর্শণা শ্যামপুরুষ আফ্রিদি আ'গ্নেয়'গি'রি রুপ ধারণ করে ছেলেগুলোর সম্মুখে গিয়ে হু'মকি'র সুরে হুং'কার দিয়ে চিৎকার করে বলল,
——— " এইইইই! এইইই! কু''কু''রে''র বাচ্চারা! তোরা কাকে কি বলেছিস জানিসস? এইই তোরা কার দিকে ন'জর দিয়েছিসস.??? আজ আমি তোদের সকলকে পি''ষে ফেলব!! টু'ক'রো টু'ক'রো করে ফেলব!! "
এদিকে মুগ্ধ হঠাৎই নিজস্ব রূপ বদলে ফেলল, পূর্বিকার দৌড়ে যাওয়ার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকিয়ে রা'গে কাঁপছে। মুহূর্তেই তার ফর্সা মুখমণ্ডল আরো দ্বিগুণ লা'ল হয়ে উঠল, বলিষ্ঠ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কাঁপছে, সমস্ত শরীর কাঁপছে ক্রো'ধে। সে পূর্বিকার সাথে জরুরি কথা বলতে এসেছিল, কিন্তু এই ল'ম্প'ট'দের কারণে তা সম্ভব হলোনা । এতেই রা'গের পরিমাণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে মুগ্ধর । হুট করে মুগ্ধকে এমন দেখে রোহান আত'ঙ্কিত হলো, কারণ যখন মুগ্ধের হিতাহিতজ্ঞান শুন্য হয়, রা'গের সকল সীমা পার হয়ে যায়, তখন সে একদম হিং'স্র প'শু হয়ে যায়, আর সে মুহুর্তে মুগ্ধর শরীর কাঁপতে থাকে রা'গের জন্য। মুগ্ধ ছেলেগুলোর দিকে ঘুরে হিং'স্র প'শুর মতো তেড়ে যেতে যেতে চিৎকার করল,
——— " I won’t hurt you, if you don’t give me reason...."
দাতে দাত পিষে,
——— " All of youu just gave me the fu**ing reason I've been waiting for..... Noww,,,,, I'm gonna beat the sh**it out all of youu,,, and there's no turning back!!!!"
এরপর শুরু হল মুগ্ধের হিং'স্র প'শুর ন্যায় মা'রপি'ট। তখন আফ্রিদি ও রোহান ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল!! প্রত্যেকে দেখছিল! মুগ্ধ যখন প্রায় মা'রপি'ট করে ছেলেগুলোকে প্রায় শেষ করতে চলল, তখন রোহান দৌড়ে গিয়ে কোনোরকমে মুগ্ধকে থামালো। আফ্রিদি স্থির দাঁড়িয়ে অনুভূতিশুন্যর ন্যায় দেখছিল। এরপর, রোহান মুগ্ধকে নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসল এবং ছেলেগুলোকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করল। আর এত কিছুর পরেও মুগ্ধই ছেলেগুলোর হাসপাতালের সমস্ত খরচ দিয়েছে, ছেলেগুলোর জন্য নয়! তাদের জন্মদাত্রী, মমতাময়ী মায়ের জন্য!!
———————
- কী করছিস, পুরু আপু?
আঁখির ডাকে ধ্যান ভঙ্গ হলো পূর্বিকার। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আঁখি দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে। সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, নিজেকে স্বাভাবিক করে পূর্বিকা রা'গের ভঙ্গি করে বলল,
——— " এই, আমার এত সুন্দর নাম রেখে তোরা আমাকে পুরু কেন ডাকিস বল তো?"
আঁখি হাসতে হাসতে বড় বোনের পাশে গিয়ে সোফায় বসল, গাল ফুলিয়ে বলল,
——— " আমি কী করব? আমি তো ছোটবেলা থেকে দেখছি তোকে সবাই পুরু বলেই ডাকে! তাই আমিও ডাকি ।"
পূর্বিকার কাছে এ হলো এক দুঃখের বিষয়! এত সুন্দর নাম থাকা সত্ত্বেও সবাই কেন পুরু বলে ডাকবে? আচ্ছা, এমন উ'দ্ভট নামেই যখন ডাকবে , তখন তিন অক্ষরের পূর্বিকা নাম কেন রাখা হয়েছিল? অন্য ছোট নাম রাখলে কি হতো না! হুহহ!!! আঁখি হাসতে হাসতে বড় বোনের ফর্সা কোমল হাতের দিকে, যত্নে গড়া নখের দিকে লক্ষ্য করল। দেখে তার ভ্রু কুচকে গেল, অস্বস্তিতে মুখ কুঁচকে বলল,
-——— " এই, তুই এত বড় বড় নখ কেন রেখেছিস?"
——— " তাই কী হয়েছে? এটা আজকালকার ফ্যাশন! আর আমি সবসময় আমার নখ পরিষ্কার রাখি! বুঝলি, মুরগি?"
আঁখির তবুও ভালো লাগল না। বলতে লাগল ,
-——— " ইসলামে......"
পূর্বিকা তার কথায় বাধা দিয়ে বলল,
-——— "শুরু হলো তোর জ্ঞান দেওয়া! ইসলামে নখ বড় রাখা হা'রাম এমন কিছু নেই! বুঝলি?"
আঁখি কপাল চাপড়ে বলল,,
-——— " কিন্তু আমার কথা আগে শোন আপু, ইসলামে কিছু কাজ যা হারাম বা শুধু নিষিদ্ধ করে দেয়াই নয়, কিছু কাজকে মাকরুহ বা অপছন্দনীয় বলা হয়েছে, যেটা করা গু:না'হের কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নখ বড় রাখা এই ধরনেরই একটি বিষয়। ঠিক আছে, সরাসরি 'হারাম' লেখা নাই, কিন্তু হাত-পায়ের নখ কাটা প্রকৃতিগত সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফিতরাত (নবীদের পন্থা) হলো পাঁচটি বিষয়: ১)খাৎনা করা২)নাভির নিচের লো'ম পরিষ্কার করা। ৩)নখ কাটা ৪)ব'গলে'র প'শম উপড়ে ফেলা ৫)গোঁফ খাটো করা। (ইবনে মাজাহ : ২৯২)
অন্য হাদিসে এসেছে, ফিতরাত দশটি: এর মধ্যে নখ কাটাও রয়েছে। এজন্য ইসলাম মানুষের শরীরের অবাঞ্ছিত লোম ও নখ ইত্যাদি বিনা ওজরে চল্লিশদিন পর কাটাকে মাকরুহে তাহরিমি বা গু'না'হের কাজ বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সাহাবি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, গোঁফ ছোট রাখা, নখ কাঁটা, ব'গলে'র লো'ম উপড়ে ফেলা ও নাভীর নিচের লো'ম মুণ্ডিয়ে ফেলার জন্য আমাদের সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল; যেন আমরা এক্ষেত্রে চল্লিশ দিনের বেশি দেরি না করি। (মুসলিম : ২৫৮)
অতএব যেটা রাসুল (সা.) এর সুন্নত এবং সাহাবারা আমাদের দেখিয়েছেন, সেটাই আমাদের জন্য অনুসরণীয়। হাদিসে যা বলা হয়েছে, তা মূলত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অংশ, আর শরীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধরে রাখার মাধ্যম। ফিতরাতের মধ্যে যেগুলো আছে, তা আমাদের প্রাকৃতিক প্রবৃত্তি রক্ষা করার জন্যই বলা হয়েছে। এইভাবে, ইসলামে কিছু কিছু বিষয়কে 'হারাম' না বলা হলেও, সুন্নত ও মাকরুহ হিসেবে তাদের গুরুত্ব রয়েছে। তাই, তুই যখন নখ বড় রাখিস, তখন তোর উচিত ইসলামি নির্দেশনা অনুসরণ করে সেগুলো ছোট রাখা, যাতে তুই সুন্নত অনুযায়ী চলতে পারিস।"
পূর্বিকা বিমূ'ঢ়মতি হয়ে গেল, কি বলবে তা বুঝতে পারল না। তার এই ছোট মুরগি বোনটা শুধু জ্ঞান দিয়ে থাকে! তথাপি, উক্ত বাক্যসমূহ শ্রবণ করে পূর্বিকার অন্তর যেন তৃপ্তিতে পূর্ণ হলো!! ভেতরের এতক্ষনের খারাপ লাগাটা যেন নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো!! পূর্বিকার মনে আঁখির মুখ হতে অধিকতর কথা জানার অভিলাষ উদ্ভূত হলো । অতএব, করজোড় করে বলল,
- ——— " হয়েছে, হয়েছে মুরগি, আজকেই আমি নখ কেটে ফেলব! এবার খুশি ?
———— " উহুম! তুই আমার খুশির জন্য কেন করবি? আমি তো নিজেই এক পা'পি বান্দা! পা'প করছি ক্ষনে ক্ষনে, নেই কোনো হিসেব! মহান আল্লাহ তায়ালার খুশির জন্য কর! কোনো মানুষের খুশির জন্য নয়! "
পূর্বিকা মৃদু হেসে গাল টেনে বলল,
——— " আচ্ছা, আচ্ছা বুঝেছি!! এইবার বল তো, নেলপলিশ দিলেও কি পা'প হবে বা নিষেধাজ্ঞা আছে ? যদি হয়, তাইলে এটাও ফেলে দিব! "
আঁখি পূর্বিকার পা ধরে সোফা থেকে নামিয়ে দিয়ে বড় বোনের কোলের উপর মাথা রাখলো! পূর্বিকাও মৃদুমন্দ হাস্যবিকাশ করে তার ছোট বোনের চুলে বিলি কাটতে লাগল!! আঁখি নয়নযুগল বন্ধ করে বাক্যসমূহ উচ্চারণ করতে লাগল,
-——— "খুব সহজ প্রশ্ন আপু! তুই তো ফোন ব্যবহার করিস,, এখন ফোনেই সব পাওয়া যায়, জানা যায়। একটু ঘাটাঘাটি করলেই জানতে পারবি !! যাই হোক শোন, ইসলামে সাজসজ্জার অংশ হিসেবে নেইলপলিশ ব্যবহার করা জায়েজ। তবে যদি নেইলপলিশ এমন প্রলেপ তৈরি করে যা পানির জন্য প্রতিবন্ধক হয়, তাহলে অজু শুদ্ধ হবে না। অজু শুদ্ধ না হলে নামাজও হবে না। নামাজ পড়ার জন্য নেইলপলিশ রিমুভ করে অজু করতে হবে। যদি কেউ অজু করে নেইলপলিশ লাগায়, তাহলে যতক্ষণ অজু থাকবে, ততক্ষণ নেইলপলিশ লাগানো অবস্থায় নামাজ পড়তে পারবে, এতে কোনো সমস্যা নেই। মেহেদির মতো যেসব রঙ চামড়া বা নখের ওপর পানির জন্য প্রতিবন্ধক প্রলেপ তৈরি করে না, সেগুলি ব্যবহার করা উচিত। তাহলে অজুর জন্য বারবার ওঠানোর ঝামেলা হবে না। কোনো কারণে নেইলপলিশ রিমুভ করার সুযোগ না পাওয়া গেলে নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না। "
পূর্বিকার দূরভাষ ( ফোন) হঠাৎ করেই শব্দ করে বেজে উঠল। দৃষ্টিপাত করতেই দেখল, আফ্রিদির আহ্বান এসেছে। হায়! এটা কেমন ছেলে, একটুখানি সময়ও পূর্বিকার সঙ্গলাভ ব্যতিরেকে কাটাতে পারে না। পূর্বিকা আঁখির ললাটে স্নেহের স্পর্শ এঁকে, তাকে মস্তক তুলতে বললে, আঁখি ধীরে ধীরে উঠে বসল। পূর্বিকা, ত্বরিত গতি-সমেত দূরভাষ হস্তে দৌড়ে যেতে যেতে বলল,
-——— " একটু কাজ আছে, আমি আসছি! "
আঁখি কিছুক্ষণ নির্বাকদৃষ্টে চেয়ে রইল, পরে অধরে মৃদু হাস্য ফুটাল। পূর্বিকা! বড় অদ্ভুত ললনা! আঁখি এখন কি করবে আর? ভাবতে লাগল! তবে তখন হঠাৎ কোথা থেকে যেন নাঈম শ'রের ন্যায় তাঁর সম্মুখ দিয়ে ক্ষি'প্রগ'তিতে সঞ্চারিত হল। এক লঘু মুহূর্ত মাত্র, আঁখি একটুর জন্য তার সহিত ধাক্কা খেয়ে পড়ল না। কে এমন উন্মত্তভাবে ধাবমান হয়? আঁখি ক্রু'দ্ধ'ব'দ'নে দন্ত দৃঢ় করে নাঈমকে সম্বোধন করে বলল,
-——— " ওইই! পা'গ'লের মতো দৌড়াচ্ছিস কেন? একটুর জন্য তো তোর সাথে ধাক্কা খেয়ে উলটে পরতাম !
নাঈম মুখ হাত দিয়ে লুকিয়ে, পেছনে না ঘুরে, নিজ কক্ষে ধাবমান হতে হতে উচ্চারিল,
-——— " এই মুরগি বাইরে কি করছে রেহ ? এক্ষুনি মুরগির খোঁয়ারে রেখে আসছি !
এই বলে নাঈম অদৃশ্য ! তার চিহ্নমাত্র অবশিষ্ট রইল না। নাঈমের মুখ লুকানো দেখে আঁখি এক ভ্রু উচিয়ে তাকালো, কিন্তু নাঈমের কথা শুনে আঁখি মুখ বি'কৃত করে বলল,
-——— " হুহহ, কা'না!"
আঁখি আর বিলম্ব না করে নিজের কক্ষের উদ্দেশ্যে গমন করল! কক্ষে এসে দেখে ছোট বোন আলো বেশ মনোযোগ সহকারে হাত পা ছড়িয়ে বই পড়ছে নরম তুলতুলে বিছানায়! এ দেখে মৃদু হাসলো সে! ভাবলো তারও একটু বই পড়া উচিত। পড়াশোনা তো গো'ল্লায় গিয়েছে! যে ভাবা সেই কাজ! চলে গেলো পড়ার টেবিলে! বসে খুজতে লাগল কাঙ্খিত লেকচার পাবলিকেশন হিসাববিজ্ঞান প্রথম পত্র বই! এটি ব্যাগে নেই! টেবিলের থাকে সাজানো! সেখান থেকেই বের করে নিল! ব্যাগ থেকে মার্জিন বিহিন সাদা খাতা, সাথে স্কেল বের করতে হাত ঢুকালো ব্যাগের অন্ত:স্থলে! এরপর যা দেখলো, বিষ্মিত হলো আঁখির ডাগর আঁখিযুগল! হতবাক, বাকরুদ্ধ সপ্তদশী কিশোরী! পূণরায়? আঁখি দেখলো……