Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ১৭

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

 প্রহর আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মলিন হাসি দিয়ে বলা শুরু করে,

“তিন বছর আগে, এক বৃষ্টিস্নাত সকাল। আমি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বের হলাম। আকাশে সেদিন অনেক মেঘ ছিল। মজিদ স্যার এর ক্লাস থাকায় সেদিন ভার্সিটি তে যাওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। হঠাৎ বৃষ্টি নামে। আমি পাশের একটা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়াই। হটাৎ আমার চোখ যায় রাস্তার পাশ দিয়ে দৌড়াতে থাকা এক রমনীর দিকে। বাতাসে খোপা করা কোকড়া চুলগুলো খুলে গেছিল। সে দৌড়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। আমি তখনও তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। শ্যামবর্ণা রমনীটি আমাকে গভীরভাবে ঘায়েল করে দিয়েছিল। সে যতক্ষন আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ততক্ষণ আমি তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এক সময় বৃষ্টি থামে। মেয়েটি আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আমিও তাকে রাস্তায় খুঁজতে খুঁজতে ভার্সিটি তে যাই।”
থামে প্রহর। বুকের ভিতর অদ্ভুতভাবে কম্পিত হচ্ছে। প্রভা প্রহরের দিকে তাকিয়ে ছিল। পুরোটা শুনতে চায় সে। মুখে হাত দিয়ে আরাম করে বসে প্রভা।
“থামলে কেন? বলো।”
প্রহর ভ্রুযুগল কুঁচকায়। প্রভার পানে সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“তুই না একটু আগে কাঁদছিলি?”
প্রভা খিলখিল করে হেসে ওঠে। প্রহরের বোকা বোকা চাহনি দেখে বলে,
“আমি কাঁদছিলাম না। তোমার মোহ'র দিকে অদ্ভুতভাবে তাকানো আর মোহ'র তোমাকে ইগনোর করা দেখেই বুঝেছিলাম যে তোমাদের মধ্যে কিছু ঝামেলা আছে। সেটা বের করতেই এতক্ষন নাটক করছিলাম।”
প্রহর ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে। তার বোন যে এক নম্বরের ফাজিল সেটা সে ভুলে গিয়েছিল। পরক্ষনেই চটে যাওয়া মেজাজ নিয়ে প্রহর প্রভার উদ্দেশ্যে বললো,
“যা এখান থেকে, তোকে আর কিছু বলবো না।”
প্রভা এবার কাঁদো কাঁদো মুখ করে প্রহরের দিকে তাকায়। ন্যাকা গলায় প্রহর কে বলে,
“ভাইয়া, তুমি না আমার ভালো ভাইয়া। বলো না আমাকে সব। তোমাদের কাহিনী খুব ইন্টারেস্টিং।”
প্রহর এবার প্রভার উপর মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“মজা নিচ্ছিস প্রভা? পুরোটা না জেনেই মজা নিচ্ছিস? তুই জানিস মোহ আমার কে? মোহ আমার স্ত্রী প্রভা। আমার বিবাহিত স্ত্রী।”
প্রভা চমকে ওঠে। মোহ প্রহরের স্ত্রী? স্বাভাবিক হয় সে। তবে মুখে তখনও ছিল হতভম্বতার ছাপ। নিচু স্বরে প্রহরের উদ্দেশ্যে সে বলে,
“মানে? মোহ তোমার স্ত্রী কিভাবে হয়? ভাইয়া? সব কিছু ক্লিয়ার করো।”
প্রহরের হুশ ফেরে। বুঝতে পারে প্রভার সামনে সে কী বলে ফেলেছে। মাথা নিচু করে ফেলে সে। প্রভা তখনও তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে। প্রহর মাথা নিচু করেই বলতে থাকে,
“ভার্সিটি তে গিয়ে দেখি ওই মেয়েটি নাহিরা ম্যামের সাথে কথা বলছিল। আমি চমকায়। মেয়েটি কী ভার্সিটির স্টুডেন্ট? পরে ফার্স্ট ইয়ারের একটা ছেলেকে বলি তার খোঁজ নিতে। ছেলেটি আমায় বলে সে নাকি ফার্স্ট ইয়ারের ই ছাত্রী। নতুন এসেছে এখানে। ছেলেটি আমায় তার সব তথ্য দেয়। মেয়েটির নাম ছিল 'তোর্সা আহিন মোহ'। আমার মোহ। আমি বুঝতে পারছিলাম না সামান্য কিছু সময়ের দেখাতে আমি কেন মেয়েটাকে নিয়ে এতো ভাবছি। দুই তিন মাস চলে যায়। আমি তবুও তাকে ভুলতে পারছিলাম না। একটা সময় আমি বুঝি আমি তার প্রেমে পড়েছি। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়েছি। একদিন সাহস করে মেয়েটির কাছে যাই। তারপর...
_____________
ডিপার্টমেন্টের ছাদে বসে আছে প্রহর ও তার দুই বন্ধু। নাহিদ ও মাহির। ক্লাস না থাকায় তিন বন্ধু ছাদে বসে গল্প করছে আর সিগারেট খাচ্ছে। গল্প করতে করতে প্রহরের হটাৎই চোখ যায় নিচে। বুকের ভিতর ধ্বক করে ওঠে তার। গাড় খয়েরি রঙের সেলোয়ার কামিজ পরে নিজের ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছে মোহ। হাতের সিগারেট টা নিচে পড়ে যায়। সেই রমণী..! তিন মাস আগে এক বৃষ্টিস্নাত সকালে যার প্রেমে পড়েছিল। আজ তাকে এমন গাড় রঙে নিজেকে রাঙাতে দেখে যেন নতুন করে প্রেমে পড়ে প্রহর। প্রহরের দৃষ্টি অনুসরণ করে নাহিদ আর মাহির ও নিচে তাকায়। মোহ কে দেখে তার দিকে কামুক দৃষ্টি ছুড়ে দেয় তারা। নাহিদ ইশারা করে মাহির কে। দুজনেই হেসে ওঠে। তাদের হাসির শব্দে প্রহরের হুশ আসে। দুই বন্ধুর দিকে তাকাতেই তারা তাকে ভ্রু উঁচুয়ে জিজ্ঞাসা করে 'কী'। প্রহর লজ্জা পায়। নাহিদ প্রহরের লজ্জা পাওয়া দেখে বলে,
“কী রে? এতক্ষন তো চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলি, এখন লজ্জা পাচ্ছিস কেন?”
নাহিদের কথায় স্পষ্ট অশ্লীলতার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। তবে বন্ধু বলে কথা বাড়ায় না প্রহর। শুধু হাসে। মাহির প্রহরের কাঁধে চাপড় মেরে বলে,
“মামা, এভাবে না দেখে কথা বল যা।”
প্রহর মাথা নিচু করে ফেলে। কিছুটা লজ্জায় আর কিছুটা সংকোচবোধে।
“আমি পারবো?”
মাহির হাসে। প্রহরের কাঁধে হাত দিয়ে বলে,
“পারবি পারবি। আমার বন্ধু বলে কথা। পারবি না কেন? চল আমরাও যাই।”
বন্ধুর কথায় প্রহর আর কিছু বলতে পারে না। অগত্যা তার ও যেতে হয় ওদের সাথে।
পিছন থেকে কেউ ডেকে ওঠায় ঘুরে তাকায় মোহ। একজন সুদর্শন যুবক ডেকেছে তাকে। দেখে সিনিয়র মনে হচ্ছে। সৌজন্যের খাতিরে প্রহরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মোহ। পিছনে আরো দুটো ছেলে আছে। লালসার দৃষ্টি তাক করে রেখেছে তার দিকে। অস্বস্তি হয় মোহ'র। তবুও কিছু বলে না। প্রহর মোহ কে দেখে বলে,
“তুমি প্রথম বর্ষের মোহ না?”
মোহ ইতস্তত করে হাসে। প্রহরের কথার প্রেক্ষিতে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ, কিছু বলবেন?”
প্রহর হেসে বলে, “আমি প্রহর। প্রহর শাহরিয়ার। চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তোমাকে একদিন দেখেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে, তাই আজ কথা বলতে এলাম।”
মোহ সৌজন্যমূলক হাসে। 'এক ভার্সিটি তে পড়লে দেখা হওয়া স্বাভাবিক। তাই বলে এমন ছেচড়ার মতো কথা বলতে আসতে হবে নাকি।' মনে মনে বলে মোহ। মুখে কিছুই প্রকাশ করে না। প্রহরের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,
“একটু পর আমার ক্লাস শুরু হবে। আমি কী যেতে পারি?”
প্রহর হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে। “ভালো থেকো।”
মোহ মুচকি হেসে চলে যায়। আর প্রহর তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu