লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
হাতে গিটার নিয়ে বান্ধবীর পাশে বসে মোহ। বান্ধবীদের অনুরোধে এখন গান গাবে সে। মোহ'র বান্ধবীরা তার দিকে উৎসুকভাব নিয়ে তাকিয়ে আছে। মোহ মৃদু হেসে গান ধরে,
“তুমি বলো যদি, নামি দামি কবি,
ঘাম ফালাবে মাথা থেকে পায়ে।
তুমি বলো যদি ট্রুডো আর মোদী
চিঠি দিবে রোজ সন্ধায়।
তুমি যদি বলো এতো অগোছালো,
পৃথিবী সোজা হয়ে যায়,
তুমি যদি বলো তবে ফ্রিডা কাহলো,
রঙ-ঢং ছেড়ে ছুড়ে সন্যাসী হয়ে যায়..
-------Facebook
ক্লাসরুমের ভিতর থেকে সুরেলা কণ্ঠে গান শুনে থেমে যায় প্রহর। ভালো লাগছিল না বলে দুই বন্ধু কে নিয়ে ভার্সিটি টা ঘুরে বেরাচ্ছিল সে। হঠাৎ একটা ক্লাসরুমের ভিতর থেকে এমন গান শুনে আর পা বাড়াতে পারে না প্রহর। সে জানে এটা কার কণ্ঠ। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকায় সে। তার ভৃঙ্গলতা গাইছে এই গান। ভৃঙ্গলতা! হেসে ফেলে প্রহর। সুন্দর একটা নাম পেয়েছে মোহ'র জন্য। তাকে এভাবে থেমে যেতে দেখে নাহিদ ও মাহির বিরক্ত হয়। সত্যি বলতে তাদের প্রহর কে একদম পছন্দ না। শুধুমাত্র প্রহরের টাকার জন্য তার সাথে মেশে। নাহিদ প্রহরের কাঁধে হাত রাখে। প্রহর চমকে পিছন ফিরে তাকায়। দেখে নাহিদ তার কাঁধে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। প্রহর মৃদু হেসে ভ্রু উঁচিয়ে নাহিদ কে জিজ্ঞাসা করে 'কী হয়েছে'? নাহিদ বিরক্তির সহিত বলে,
“কী দেখছিলি এভাবে?”
প্রহর কিছুটা লজ্জা নিয়ে বলে, “মোহ কে দেখছিলাম। গান টা ওই গাইছে।”
নাহিদ চোখ মুখ স্বাভাবিক করে ভিতরে তাকায়। মোহ গান গাইছে..
♪সময় বৃথা, তুমি বললে না, বোকা ভেবে গেলে আমারে..
পরিনীতা, তুমি একা, আমি ঠিকই ভাবি তোমারে...♪
নাহিদ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। মোহ ও তার পাশে থাকা মেয়ের আপত্তিকর যায়গায় চোখ বুলায়। প্রহর সেসবের কিছুই খেয়াল করে না। তার চোখজোড়া শুধুই মোহ'র দিকে। আচমকা ডাকে তাদের দুজনেরই হুশ ফেরে। ভিতর থেকে একটা মেয়ে তাকে ডাকছে। মেয়েটা ফার্স্ট ইয়ারের না। সেকেন্ড ইয়ারের। পরণে একটা টপস আর শর্টস। প্রহর ও নাহিদ পিছনে তাকিয়ে দেখে মাহির অনেক আগেই চকে গেছে। তারা ভিতরে যায়। মোহ অবাক দৃষ্টিতে প্রহরের দিকে তাকিয়ে। প্রহরও মোহ'র দিকে তাকিয়ে থাকে। তাদেরকে ডাক দেওয়া মেয়েটি উঠে প্রহর ও নাহিদ কে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। মেয়েটা প্রহরের ডিপার্টমেন্টেরই একটা ছেলের গার্লফ্রেন্ড। যার কারণে তারা একে অপরকে চেনে। নাহিদ হেসে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আনিকা, তুমি হঠাৎ জুনিয়র দের সাথে যে?”
আনিকা নামক মেয়েটিও হাসে, “তেমন কিছু না ভাই, শুনেছিলাম এখানে একটা মেয়ে ভাল গান করে তাই তার গান শোনার জন্য এখানে আসা।
প্রহর জানা সত্বেও জিজ্ঞাসা করে, “কে?”
আনিকা প্রহরের কথায় একটু ঢং করে মোহ কে আঙুলের ইশারায় দেখিয়ে বলে, “ওই যে ও। ওর নাম মোহ।”
প্রহর মোহ'র দিকে প্রেমময় দৃষ্টিতে তাকায়।
“ভালোই গান গাও তুমি।”
প্রহরের কথায় মোহ মিষ্টি করে হাসে। “ধন্যবাদ।”
নাহিদ মোহ'কে উদ্দেশ্য করে বলে, “আমাদের একটা গান শোনাতে পারবে?”
মোহ প্রথমে কিছুটা ইতস্তত করে। পরে রাজি হয়। নাহিদ ও প্রহর বেঞ্চিতে বসে। মোহ আমারো একটা গান ধরায়,
“তুই আরেকটু আনমনে থাক..
উড়ে যাক তোর কবিতা মাখা চুল।
এ শহরের হাজারো, বোকা প্রেমিকেরা তোর,
ভালো চায় বলে তাই,
উপন্যাসের বন্যা দিয়ে মিছিল করে যায়। আমি অলস তাই পিছে পড়ে রই..
দিশেহারা তুই, আর আমি মিলে দুই, আমার নীলাকাশ ছিড়ে উড়ে গেলি তুই।..
আচমকা পুরুষালী কন্ঠে গান শুনে চকিতে তাকায় মোহ। প্রহর গাচ্ছে গান। মোহ একপলক প্রহরের দিকে তাকিয়ে আবার শুরু করে।
'আমার বোকা অভিমান, তাসে হেরে যাওয়া গান,
তোর পুরোনো কাগজে আমি মাথা গুজে শুই..
রা রা রা রা রা,
দীর্ঘ তেপান্তরে বাধ ভেঙে যায়, কোনো এক আকাশ শুধু তোকে পেতে চায়।
তোর প্রেমে বুদ হয়ে এতো আয়োজন, মন খারাপের রাতে তোকে প্রয়োজন..
তাই এতো আয়োজন..
খুব তোকে প্রয়োজন।”
সবাই হাতে তালি দেয়। আনিকা নামের মেয়েটা উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আরেহ বাহ। প্রহর ভাই আর মোহ, তোমরা তো অনেক সুন্দর গান গাও। আমরা কিন্তু মাঝে মাঝে তোমাদের গান শুনবো।”
মোহ সামান্য লজ্জা পায়। প্রহর হেসে আনিকা কে বলে, “আচ্ছা শুনবে। এখন চলো। বাইরে থেকে ঘুরে আসি।”
নাহিদ প্রহরের সাথে তাল মিলিয়ে বলে, “হ্যাঁ, ট্রিট আমার তরফ থেকে।”
আনিকা ও মোহ'র বান্ধবীরা তাদের কথায় সায় দেয়। মোহ নাকচ করলে তার বান্ধবীরা তাকে নানাভাবে রাজি করায়। তারা চলে যায় নাহিদ ও প্রহরের সাথে।
__________Email
মোহ বাড়ি ফেরে। ব্যাগ টা কাঁধ থেকে রাখতেই তটিনী এসে জড়িয়ে ধরে তাকে। মোহও জড়িয়ে ধরে তার আদরের বোন কে।
“আপা, তুমি ভার্সিটি তে চলে গেলে খুব মিস করি তোমায়।”
তটিনীর কথায় হেসে ওঠে মোহ। বোন কে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তাই নাকি? তাহলে আমার যখন বিয়ে হয়ে যাবে তখন কী করবি?”
তটিনী মুখ গোমড়া করে বলে, “যেতে দেবো না শশুরবাড়ি। আর গেলেও আমি সাথে গিয়ে থাকবো।”
মোহ কিছু বলার আগেই ডাক আসে আরিফা বেগমের। তাদের দুজন কে খেতে ডাকছেন তিনি। মোহও আর কথা না বাড়িয়ে তটিনীকে নিয়ে নিচে চলে যায়।
তৌফিক ইসলাম তার দুই মেয়ের আসার অপেক্ষায় ছিলেন। তারা আসতেই তিনি মুখ গম্ভীর করে মোহ'র দিকে তাকান। সরাসরি বলে ওঠেন,
“মোহ, তুমি এখন যথেষ্ট বড় হয়েছো। আমি তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করতে চাই।”
0 Comments