Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ২৫

 লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

তটিনীর মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয় উষ্ণ। মোহ কে কেন তার বাবা বাড়ি থেকে বের করে দেবে? আর কোন জা*নো*য়ারের কথা বলছে তটিনী।

- "তটিনী, তোমার মনে যা আছে। আজ সব আমায় বলো..।"
উষ্ণের এমন আদর মাখানো কথায় একটু একটু করে গলে যেতে থাকে তটিনী। প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে থাকার জন্য বাচ্চাদের মতো সব গড়গড় করে বলে দিতে থাকে।
- "আমার আপা..। আমার আপাকে বাবা কেন যেন পছন্দ করে না। বাবা সবসময় আপাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চাইতেন। আপা তা মানতো না। এটা নিয়ে একদিন বাবা আর আপার ভিতরে তুমুল ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে গিয়ে বাবা আপার গায়ে হাত তোলে আর বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলে। আপার আত্নসম্মান বোধ ছিল প্রখর। আপা ও বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।"
উষ্ণের মুখ হা হয়ে আছে। পরের ঘটনা জানার জন্য উদগ্রীব সে। তটিনী আবারো বলা শুরু করে..
- "আপার ভার্সিটিতে এক সিনিয়রের সাথে আপার প্রেম হয়। ওই ছেলেটির নাম ছিল প্রহর শাহরিয়ার। তার দু'জন জা*নো*য়ার বন্ধুও ছিল। মাহির ও নাহিদ। ওরা দু'জন মেয়েদের কে মানুষ মনে করতো না। তারা মেয়েদেরকে শুধুমাত্রই ভোগের পণ্য মনে করতো। এই ভ্রান্ত ধারণা নিয়েই ওরা আমার আপার..
কথা বলতে বলতে আবারো গলা ধরে আসে তটিনীর। নিজের আপার সম্পর্কে এতো কিছু বলতে পারছে না সে। কিন্তু আজ বলবেই, নিজের মনকে একটু শান্তি দিতে চায়।
- " ওরা আমার আপার আ*প*ত্তিকর ভিডিও এডিট করে। ওই ভিডিও আমার আপার ছিল না। ওদের এডিটকৃত ভিডিও ছিল ওটা। ওই ভিডিও ওরা প্রহর শাহরিয়ার কে দেখায়। প্রহরও বিশ্বাস করে নেয় ওটা আপা। আর তারপর...
উষ্ণ সহ্য করতে পারছে না। বার বার চোখের সামনে তটিনীর বলা কথা গুলোর চিত্র ভাসছে। কষ্ট হচ্ছে ভীষণ। তবুও সে শুনবে। মোহ কেন কলঙ্কিত তা সে জানবে।
- " প্রহর আপার সাথে ভালো ব্যবহার করতে থাকে। কিন্তু তার মনে ছিল অন্য কিছু। প্রায় এক বছরের প্রেমের পর প্রহর আপাকে বিয়ে করতে চায়। আপাও রাজি হয়। কিন্তু বিয়ের পর...
বিয়ের পর প্রহর আপাকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে বাকি দুই পশুর বাড়িতে নিয়ে যায়। আপা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে, তার মা কে জানানো হয়নি। তাই সেই রাতে তারা সেখানে থাকবে। কিন্তু তাদের বাসর রাতে প্রহর আর তার দুই বন্ধু আপাকে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দী করে রাখে। আপার চিৎকার, আপার আর্তনাদ তারা শুনেও শোনেনি। শুধু এটুকুই নয়। তারা আপাকে চাকরের মতো খাটাতো। সুযোগ পেলেই বাজে ভাবে ছুয়ে দিত। বেধে রেখে মারতো। খুব জঘন্য ভাবে মারতো তারা। আপার শরীরের বিভিন্ন অংশ উন্মুক্ত করে সেখানে ব্লেড দিয়ে কেটে মরিচ ডলে দিতো। আপার চোখেও যে কতবার মরিচ ডলে দিয়েছে তারা..। প্রহরও সব সহ্য করতো। ও এক প্রকার ধ*র্ষ*ন করতো আমার আপাকে। আমার আপা কত আকুতি করতো। তবুও ওদের মনে দয়া হতো না। চাবুক দিয়ে মেরে আমার আপার গায়ে হাজারো দাগ কেটেছে তারা। নখ দিয়ে কত আচড় দিয়েছে। ইশ..।"
তটিনীর চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়তে থাকে। উষ্ণ ও বাকরুদ্ধ। তার মোহ এতো কষ্ট সহ্য করেছে! এখনও হয়তো কষ্ট পায় সে। ওদের কী একটুও দয়া হয় নি? উষ্ণের ভাবনার মাঝেই তটিনী আবার বলতে থাকে।
- " এতকিছুর পরও ক্ষান্ত হয় নি তারা। আপার গর্ভের বাচ্চাটাকেও মেরে ফেলেছে। প্রহর ও আপার অন্ত*র*ঙ্গ মুহুর্তের ভিডিও তারা মা ও বাবাকে দেখায়। মা ও বাবা থেকে এই এলাকার সব মানুষ জেনে যায় সেই ভিডিওর কথা। আপা এরমধ্যে থেকে বের হতে পেরেছিল একবার। বের হয়ে সে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে চাইলে বাবা তাকে বাড়ির বাইরে থেকেই মারধোর করে ও গালিগালাজ করে। এলাকার সবাই সেই ঘটনা দেখেছিল। কত লোকে হাসি ঠাট্টা করেছিল..। ওরা আপাকে বাড়ির সামনে থেকেই তুলে নিয়ে যায়। আর..আর আপাকে প*তি*তালয়ে রেখে আসে। এক লোক আপাকে ভোগ করতে আসলে আপা ওই লোক কে মেরে প*তি*তালয় থেকে বেরিয়ে যায়। আর আসে না। এই এলাকার একটা ছেলে ওই ভার্সিটিতে পরতো। ওই ছেলে ভার্সিটিতে সবাইকে আপার ব্যাপারে বলে দেয়। যার কারণে ভার্সিটির কেউই আপাকে দেখতে পারে না।"
তটিনীর কথা শুনে উষ্ণ কী বলবে তা বুঝতে পারে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে তার। এসব কী শুনলো সে? তার মোহ! তার মোহ এতো কষ্ট সহ্য করে বেঁচে আছে?
- "স্যার?"
তটিনীর ডাকে তার পানে তাকায় উষ্ণ।
- "কী হয়েছে?"
ক্লান্ত কণ্ঠস্বর তার। কথা বলতেও যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।
- "স্যার, একটা কথা বলি?"
উষ্ণ মাথা নাড়ায়। আপাতত কথা বলতে ইচ্ছা করছে না তার।
- "স্যার, আমি আপনাকে পছন্দ করি।"
উষ্ণ অবাক হয় না। এ ব্যাপারে আগে থেকেই জানতো সে। তাই কিছু না বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তটিনী তাকিয়ে থাকে প্রেমিক পুরুষের চলে যাওয়ার পানে। ঠিক তখনই বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি আর উষ্ণের চোখের পানি একসাথে ঝড়তে থাকে।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu