Ad Code

অসমাপ্ত অনুভূতি পর্ব - ১৩

 লেখিকাঃ সাবিহা জান্নাত

পর্বঃ ১৩
~ ব্যস! অনেক হয়েছে বাবা। এসব নোংরা টিকস্ খেলা বন্ধ করে। এসব ড্রামা আর দেখতে ইচ্ছে করে না ।এসব ড্রামা দেখতে দেখতে আমার বিরক্তি চলে এসেছে। আমাকে আমার মতো করে থাকতে দাও প্লিজ। বলেই বিভোর নিজের রুমের দিকে চলে যায়।
শ্রুতি শুধু অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। বিভোর যে খুব বেশি রেগে আছে তার মুখেই স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল। কিন্তু কেন রেগে আছে , এই টুকু সময়ের মাঝে কি এমন হলো।
আর বিভোর ই বা কেন সব সময় সব রাগ তার আম্মুকে দেখায়। সবকিছুর জন্য তার আম্মুকে কেন দায়ী করে সে। কেনই বা তার আম্মু কে সে সহ্য করতে পারে না।
এসব নানান প্রশ্ন শ্রুতির মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু তার কোনো উত্তর নেই।
শ্রুতি রুমে গিয়ে দেখে বিভোর নেই। বেলকোনিতে গিয়ে খুঁজে চলে কিন্তু তার কোথাও দেখা নেই। শ্রুতি আর কিছু না ভেবে বিছানায় একটু গা এলিয়ে দেয়।
ওয়াশ রুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনেই শ্রুতি ফিরে তাকিয়ে দেখে বিভোর। এখন পড়নে তার তোয়ালে নেই। একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার পড়ে রয়েছে সে।
চুলগুলো এসে কপালে বিঁধেছে তার।চুলগুলো থেকে মুক্তোর দানার মতো টপটপ করে পানি পড়ছে। পুরুষ মানুষের সৌন্দর্য এটা লাবণ্যময় হয় শ্রুতি কখনো দেখেনি। বিভোর সত্যি কি এতো সুন্দর নাকি শ্রুতির চোখে তার সৌন্দর্য গুলো প্রকাশ পেয়েছে।
ভালোবাসলে নাকি তার দোষ গুণ সবকিছুই ভালো লাগে। শ্রুতির বেলায় ও কি সেটাই হয়েছে।শ্রুতির ভাবনার ছেদ ঘটে বিভোরের তার পাশে শুয়ে পড়ায়।
শ্রুতি কিঞ্চিত কপাল ভাঁজ করে , চোখ মুখ কুঁচকে আসে তার। শোয়া থেকে উঠে বিছানায় বসে পড়ে সে।
~ আপনি বিছানায় শুয়ে পড়লেন কেন হ্যা। আপনি দেখতে পাচ্ছেন না আমি শুয়ে আছি।
~ ভালো না লাগলে এখানে থেকে চলে যাও। আমি ঘুমাবো আমাকে বিরক্ত করো না। বলেই বিভোর বিছানার একপাশে শুয়ে পড়ে।
বিভোরের কথা শুনে শ্রুতি হতভম্ব হয়ে যায়। বিভোর এই প্রথম তার সাথে রাগান্বিত হয়ে কথা বললো।কার রাগ কার উপর ঝাড়ছে সে।
শ্রুতি বিভোরের সঙ্গে আর কথা না বাড়িয়ে অপরপাশ হয়ে শুয়ে পড়ে। একে অপরের সাথে কেউ কোনো কথা বলে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখ লাগিয়ে আসতেই শ্রুতি গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
গরম নিঃশ্বাস ঘাড়ে আছরে পড়তেই শ্রুতির অসস্তিবোধ হতে থাকে। আঁখি দুটি খুলে ফেলে নিমিষেই। চোখ খুলেই থমকে যায় শ্রুতির আঁখি দুটি।
বিভোর শ্রুতির ঘাড়ে মুখ গুজিয়ে রেখেছে। সে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। যেন তার সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে। সে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে শ্রুতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে।
শ্রুতি বিভোরের হাত তার পেটের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। সে যেন হাফ ছাড়ে। মনে হচ্ছিল কোনো বোঝা বইছে সে। বিভোর লম্বা বলিষ্ঠের দেহের ব্যাক্তি।
শ্রুতি বিভোরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে চলে যাবে এমন সময় বিভোরের হাতে টান পড়তেই বিভোরের উপরে গিয়ে পড়ে।বিভোর শ্রুতিকে আষ্টেপৃষ্ঠে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়।
শ্রুতি চোখ বুজে সবটা অনুভব করছে। বিভোরের খুব কাছাকাছি সে এখন। তাদের মাঝে কিঞ্চিত দূরত্ব নেই। বিভোর ঘুমের মাঝেই শ্রুতিকে নিজের সাথে আবদ্ধ করে রেখেছে।
নিজের অজান্তেই শ্রুতির মুখে হাঁসির রেখা ফুটে উঠে। ঘুমন্ত অবস্থায় বিভোর কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। চুলগুলো কপালে বিঁধে আছে। টানা টানা চোখ, ঠোঁট হালকা গোলাপি, মসৃণ গাল- চোখ ফেরানো দায়।
শ্রুতি সমস্ত মান অভিমান ভুলে গিয়ে তাকিয়ে রয়েছে বিভোরের দিকে। বিভোর ঘুমিয়ে থাকুক অনন্তকাল ধরে, যেন শ্রুতি তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে অনন্তকাল ধরে।
সেখানে থাকবে না বিভোর কে কখনো হারানোর ভয়, তার মনে জমে থাকা সুক্ষ্ম অনুভূতি গুলো সে প্রকাশ করতে পারবে ঘুমন্ত বিভোরের কাছে , থাকবে না কোনো দুঃখ, কষ্ট। থাকবে না তাদের মাঝে মান অভিমানের দেওয়াল । শুধু থাকবে একে অপরের প্রতি অসীম ভালোবাসা।
থাকবে না কোনো আক্ষেপ। একে অপরকে পেয়েও তাদের মাঝে কোনো দূরত্বের সৃষ্টি হবে না, যা এখন হয়েছে। খুব কাছাকাছি থেকে তারা নিজেদের থেকে গুটিয়ে নিচ্ছে।
কিসের আক্ষেপ তার, প্রিয় মানুষ টাকে হারিয়ে ফেলার আক্ষেপ, সেই মানুষটি তো ফিরে এসেছে তাহলে তাকে কাছে টেনে নিতে কিসের বাঁধা।
ভাগ্যে থাকলে দিনশেষে নীড়ে ফেরা পাখির মতো নাকি প্রিয় মানুষগুলোও ফিরে আসে । তাহলে কেন সেই নীড়ে ফেরা পাখিকে মনে স্থান করে দিতে বাধা দিচ্ছে মন। চাইছে না আর তাকে, যদি আবারও নীড় ছেড়ে চলে যায়।
~ ও সরি। ঘুমের মাঝে তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম। আইএম এক্সট্রিমলি সরি।
বিভোরের ঘুম থেকে শ্রুতিকে তার বুকের উপর শুয়ে থাকতে দেখেই ও শ্রুতি কে ছেড়ে দিয়ে কথা গুলো বলে উঠে।
বিভোরের কথা শুনে শ্রুতি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। কথা গুলো ভাবতে ভাবতে শ্রুতির মন খারাপ গুলো ভর করেছে।শ্রুতি বিভোরের থেকে ছাড়া পেয়ে গুটি গুটি পায়ে সে ওয়াশ রুমে চলে যায়। ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে সে তোয়ালে দিয়ে হাত মুখ মুছে তোয়ালেটা বেলকোনিতে মেলে দেয়।
সে রুম থেকে বেরিয়ে নিচের রুমের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। বিভোরের কথা কর্নগোচর হতেই সে থেমে যায়।
~ আমার জন্য কড়া করে এককাপ কফি নিয়ে আসবে প্লিজ, মাথা টা খুব চড়ে আসে।
~ ঠিক আছে।
শ্রুতি ইশারায় কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।শ্রুতি রান্নাঘরে এসে দেখে রান্নাঘরে বিভোরের আম্মু, কাকিমনি এবং কাজের মেয়ে মিলে রান্না করছে।
বাসা এখন প্রায় ফাকা। অতিথিরা চলে গেছে বিয়ের পরের দিন ই। সায়নী এবং তার দিদুন সোফায় বসে গল্প করছে। শ্রুতিকে দেখেই ওর ছোট কাকি মুনি বলে উঠে ,,,
~ তুমি রান্নাঘরে, কিছু লাগবে ।আমাকে বলো আমি করে দিচ্ছি।
~ না। কফি বানাতে এসেছিলাম। সমস্যা নেই আমি করে নিচ্ছি।বলেই শ্রুতি কফি বানানোর কার্যক্রম শুরু করে।
তার শাশুড়ি মা অর্থাৎ বিভোরের আম্মু এই বিয়েতে সমর্থন করলেও সে এখনো তার সাথে কোনো কথা বলেনি।আর বলার চেষ্টা ও করবে না সে। পুরোনো আঘাত সে সহজেই ভুলে যায়নি।
প্রকৃতির নিয়ম বড়ই অদ্ভুত, যাদের সঙ্গে সে সারাজীবন দুরত্ব বজায় রাখতে চেয়েছিল আজ তাদের সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে। সে চেয়েছিল অন্যটা কিন্তু ভাগ্য অন্যকিছু পরিকল্পনা করে রেখেছে।তাই তো আজ না চাইতেও বিভোরের স্ত্রী সে।
শ্রুতি কারো সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ কফি বানিয়ে নিয়ে রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রুমের ভেতরে গিয়ে বিভোর কে কফিটা দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
শ্রুতি ছাদের দোলনায় বসে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।ছাদের চারিপাশে ফুলের গাছ লাগানো। ছাদের চারি পাশে তিন বছর আগেও যেমন ছিল এখনো তেমন ই আছে। শুধু বদলে গেছে কিছু সময় আর পরিস্থিতি।
✨
সকালের নাস্তা শেষ করে শ্রুতি এবং বিভোর বেরিয়েছে কলেজ এবং অফিসের উদ্দেশ্যে।
~ কলেজে গিয়ে ছেলে ফ্রেন্ডদের সাথে মিশবে না তুমি। কথাটা বলেই বিভোর শ্রুতিকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
~ শ্রুতি কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করা মাত্রই ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে দেখা হয়। এই কয়েকদিনে কলেজে না আসার কারন জিজ্ঞেসা করায় সে " কিছু হয়নি " বলেই বিষয়টি নিয়ে আর কথা বাড়ায় না ফ্রেন্ডদের সাথে।
বিভোরের সাথে তার বিয়ের ঘটনা টা শুধুমাত্র বিভোরের ফ্রেন্ড সার্কেল ছাড়া আর কেউ জানে না। শ্রুতি তার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে বিষয়টাকে জানাজানি করতে চায় না বলেই কাউকে সে বলেনি।
এভাবে দিন , মাস কেটে যায়। বিভোর এবং শ্রুতির বিয়ের ছয় মাস পদার্পন করেছে। শ্রুতি এবং বিভোরের সম্পর্ক স্বাভাবিক তবে গাঢ় নয়। কারন শ্রুতির পরিবার থেকে তাদের সম্পর্কটা এখনো মেনে নেয়নি তার আম্মু।যার ফলশ্রুতিতে শ্রুতি বিভোরকে মানতে নারাজ।
আজ সবাই মিলে বিভোরের নানু বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে। তাদের নানু বাড়ি টা শহর থেকে দূরে একটা গ্রামের ভেতরে।
কয়েক ঘন্টা জার্নি করে তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছে যায়। নানু বাড়িতে বছর শেষে সবাই মিলে বেড়াতে যাওয়া হয় এবার ও তার ব্যাতিক্রম নয়।
বিভোরের পরিবার সেখানে পৌঁছানোর পর দেখতে পান বিভোরের খালামুনিরাও সেখানে পৌঁছে গেছে। তাদের মনমালিন্যের কারনে দুই পরিবারের মধ্যে কোনো সংযোগ ছিল না কিন্তু এখানে আসার পর কিছু সময় পর তাদের নানু সব ঝামেলা মিটিয়ে দেয়।
শ্রুতি বিছানায় বসে রাগে গজগজ করছে। তার রাগান্বিত হওয়ার মূলত কারন হলো ইরার সব সময় বিভোরের লেগে থাকা। সম্পর্কটা যেই ভালো হয়েছে তখনই আবার অন্য জনের আগমন।
শ্রুতি বিছানায় বসে আছে। বিভোরের আগমনে শ্রুতি তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না । বিভোরকে দেখেও তার সাথে না দেখার ভান করছে। বিভোরের কথায় তার কোনো পাত্তা নেই।
~ কি ব্যাপার এমন মুখ গোমড়া করে রেখেছো কেন?

~ আমার সাথে কেন কথা বলতে বলে কথা বলার অনেক মানুষ তো আছেই । যে আপনার সব সময় খেয়াল রাখবে, আপনার সাথে কথা বলবে, আপনার কি লাগবে না লাগবে সেই খোঁজ খবর রাখবে।তার কাছেই যান না ।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu