Ad Code

শ্যামকন্যার মায়াবী চোখ - পর্ব ১৭

 লেখিকাঃ আবিদা সুলতানা

🚫🚫
কঠোরভাবে কপি করা নিষিদ্ধ। যাদের অতিরিক্ত রোমান্টিক গল্প পছন্দ, তাদের জন্য এই গল্প নয়। অনুগ্রহ করে মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। পুরো গল্প জুড়ে থাকবে ধোঁয়াশা, যা উদঘাটন করতে সত্যিকারের ধৈর্য প্রয়োজন। শুধুমাত্র রহস্যভেদে আগ্রহী পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত।
🚫🚫
(
⛔⚠️
এই পর্বে কিছু স'হিংস'তার চিত্র রয়েছে শুধু প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত
⚠️⛔
)
*
*
কালো কোট পরিহিত লোকটি নিঃশব্দে তার তীক্ষ্ণ নিশানার জন্য বিখ্যাত 357 ম্যা'গনা'ম রিভ'ল'ভার উত্তোলন করল !! ২৫ ডিগ্রি কোণে হাত বাঁকিয়ে নিশানা করে সে ফা'য়া'র করল।
ধাঁইই!
প্রায় ১১০০ ফুট প্রতি সেকেন্ডে বেগে গু'লি ছুটে গিয়ে এক গার্ডের কপাল ভেদ করে গেঁথে গেল, গার্ডের দেহ এক মুহূর্তে নিথর হয়ে ভূমিতে লুটিয়ে পরলো। রি'ভলভা'রটি তখন ধীরে ধীরে নামিয়ে আনল কালো কোটের সেই হিং'স্র লোকটি। চারপাশের গার্ডরা হতভম্ব, ভ'য়ে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, যেন পরবর্তী গুলির নিশানা কে হতে পারে, সেই আশঙ্কায়।
তাদের বস সেই মৃ'ত র'ক্তা'ক্ত গার্ডের বুকের ওপর পা রেখে হিং'স্র দৃষ্টিতে বলল,
——— "আমি ওকে চাই যে কোনো মূল্যে!"
কণ্ঠে অশান্ত ঝড়ের মতো এক তীব্র ক্রো'ধ।
তৎপর মৃ'ত'দে'হটিকে লা'থি দিয়ে সরিয়ে রা'গে ফুঁ'সতে ফুঁ'সতে সে স্থান ত্যাগ করতে উদ্যতি হলো। পেছনে দাঁড়ানো গার্ডদের মধ্যে ফিসফিসানি শুরু হলো,
——— "স্যার সামান্য একটা মেয়ের জন্য এমন পা'গ'লা'মি করছে কেন? এতোদিন তো নিজে কিছুই করতে পারল না, এখন আমাদের উপর চাপ দিচ্ছে!"
পাশের জন তৎক্ষণাৎ চুপ করিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
——— "শশশ! চুপ থাক! বস শুনে ফেললে তোকে মে'রে ফেলবে!"
বলতে দেরি এই আলাপের মাত্র কয়েক মুহূর্ত পরে কালো কোটের লোকটি পেছনে না তাকিয়েই তার .357 ম্যাগনাম রি'ভল'ভা'রকে দক্ষ হাতে ৪৫ ডিগ্রি কোণে ঘুরিয়ে নির্ভুল গু'লি চালাতে দেরি হলো না! সেই গার্ড, যিনি "সামান্য" বলার স্পর্ধা দেখিয়েছিল, তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গু'লি লাগল। গু'লি'র আ'ঘা'তে তার দেহ সঙ্গে সঙ্গে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ল। অন্য গার্ডরা আতঙ্কিত হয়ে পিছু হটল।
লোকটি তখন কিঞ্চিৎ বাঁ দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে গ'র্জে উঠল,
——— "ওকে সামান্য বলার সাহস কে দিল? যেই ওকে তুচ্ছ বলবে , তার অবস্থা এর থেকেও ভ'য়া'নক হবে!"
ততক্ষণে আরো এক কালো পোশাক পরিহিত এক বডিগার্ড ছুটে এলো, শরীর ঘামে ভিজে, শ্বাস-প্রশ্বাসেও কষ্ট স্প'ষ্ট। বসের দিকে তাকিয়ে ভ'য়া'র্ত কণ্ঠে বলল,
——— "স্যার,
——— "কি খবর এনেছিস?"
——— ও..ওরা আ...আমাদের দুজন লোক কে মে'রে ফেলেছে!"
বস তখন চোখে তীব্র ক্রোধ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
——— "তুই বেঁ'চে আছিস কেন?"
ধাই, ধাই, ধাই!!
দক্ষ হাতে ১.৫ মিটার দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডের বুক বরাবর নিখুঁতভাবে তিনটি শ'ট নিশানা করে, তার ডান হাত অল্প বাঁকিয়ে এবং কনুই থেকে সামান্য উঁচু করে ২৫ ডিগ্রি কোণে নিখুঁত অ্যাঙ্গেলে গু'লি চালাল। সঙ্গে সঙ্গে শেষ নিশ্বা'স ত্যাগ করে, দুনিয়ার মায়া ছেড়ে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। বুক থেকে ভল'ভ'লিয়ে র'ক্ত বের হয়ে ফ্লোর ভিজিয়ে দিল। অন্য গার্ডরা আত'ঙ্কে কেঁ'পে উঠল।
রিভলবার নামিয়ে আগন্তুক বস হিং'স্র হয়ে রা'গে গিজগিজ করতে করতে বলল,
——— "তোকে কিভাবে আয়ত্তে আনতে হবে এটা আমি বেশ ভালো করে জানি! জীবনের শেষ দিনগুলো ভালো করে কাটিয়ে নে! তোর মৃ'ত্যু খুব সন্নিকটে!"
_____________
শাহারিয়াজ ভবনের ড্রয়িং রুমে অবস্থান আছে মোশারফ সাহেব এবং সাজ্জাদ সাহেব। তাদের সাথে আলাপ করতে এসেছেন তাদের কর্মচারী জলিল সাহেব, সঙ্গে আছেন তার পুত্র জীবন। শাহারিয়াজ পরিবারের ব্যাবসাগুলোর মাঝে বৃহৎ কাপড় ব্যবসা রয়েছে, যা দিনাজপুর শহরে অবস্থিত। সেখানেই দেশের সেরা কাপড় বিক্রয় হয় । জলিল সাহেব চান যে, তাঁর পুত্রকে সেখানে কাজ করানো হোক; এই প্রসঙ্গেই মোশারফ এবং সাজ্জাদ সাহেবের সঙ্গে আলোচনা চলছে। জীবন কলেজ পর্যন্ত শিক্ষা লাভ করার পর আর পড়ে নি, দরিদ্র পরিবারে একমাত্র সন্তান হওয়ায় বাবার সহিত কাজ করতে বাধ্য হয়েছে সে.!
চায়ে চুমুক দিয়ে মোশারফ সাহেব বললেন,
——— "আচ্ছা, ঠিক আছে! তাহলে কাল থেকে আপনার ছেলেকে কাজে নিযুক্ত করব।"
——— "আপনার প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতা, কর্তাসাহেব! আপনার ঋণ কখনো ভুলব না আমরা !"
এদিকে হন্তদন্ত হয়ে আছিয়া ট্রেতে পানি নিয়ে প্রবেশ করে চিৎকার করল,
——— "মা পানি পাঠিয়েছে, পানি খান চাচা!"
মোশারফ সাহেব চমকিত, চা খাওয়ার পর পানি পাঠানো হয় কি? সাজ্জাদ সাহেব স্ত্রীর উপর রু'ষ্ট। স্ত্রী যে এমন হিতা'হিতজ্ঞা'নশূন্য হয়েছে, তা তার জানা ছিল না। জলিল সাহেব হেসে বললেন,
——— "না, না মা, তার প্রয়োজন নেই!"
——— "নাহ, চাচা, আমি এনেছি! আপনাকে খেতেই হবে পানি! "
সাজ্জাদ সাহেব ধ'ম'ক দিয়ে বললেন,
——— "এসব কি ছেলেমানুষী, আছিয়া?'
——— "চুপ করো, বাবা! মা বলেছে পানি দিতে!"
——— "আমি আবার কখন পানি দিতে বলেছি?"
শাড়ির আঁচল দিয়ে মুখের ঘাম মুছতে মুছতে নিসা বেগম ভ্রু কুচকে বললেন। জীবন নিচের দিকে তাকিয়ে। আছিয়া জীবনের দিকে একপলক চেয়ে ধরা পড়া চোরের ন্যয় হেসে বলল,
——— "আরে, মা, তুমি কবে থেকে ভোলাক্কার হলে? তুমিই তো বললে, দিতে!"
——— "কখন বললাম, আমার তো মনে পড়ছে না!"
মোশারফ সাহেব হেসে বললেন,
——— "হ্যাঁ, বুঝেছি, আজ পানি না খাইয়ে ছাড়বে না! তবে কেবল পানি কেন, নাস্তা কে আনবে?"
আছিয়া চটপট বলল,
——— "আমি আনছি, আমি আনছি!"
হাতের ট্রেটা টেবিলে রাখতে গিয়ে আছিয়ার সাথে চোখাচোখি হলো জীবনের! আছিয়া টুস করে চোখ মেরে দিল। জীবন হতভম্ব হয়ে গোলগোল চোখে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নিলো । আছিয়া হেসে দৌড়ে গেল রান্নাঘরে। বাকিরা আছিয়ার কান্ড দেখে বিস্মিত। যে নিজের জন্য এক গ্লাস পানি নিতেও কাতর, সে অতিথি আপ্যায়ন করছে?
নিসা বেগম মেয়েকে দেখতে পিছু পিছু গেলেন। জীবন তার বাবাকে বলল,
——— "বাবা, তুমি থাকো, আমি আসছি!"
——— "আরে, কোথায় যাবে? বসো বসো!! আমার ছোট মেয়ে এই প্রথম অতিথি আপ্যায়ন করছে। খেয়ে যাও! আমাদেরও তো এত ভাগ্য হয়নি! হাহাহাহ!! "
জীবন জোরপূর্বক হেসে বলল,
——— "একটু কাজ ছিল চাচা! "
জলিল সাহেব ধ'ম'কে বললেন,
——— "চাচা কি? স্যার বলে ডাক! আর এবাড়ির সবাইকে স্যার বলে ডাকবি!"
মোশারফ সাহেব বললেন,
——— "আরে জলিল সাহেব! চাচাই বলুক না! স্যার বলতে হবে না! আপনারা তো আমার নিজের মানুষ!"
——— "আসলে কর্তামশাই, নিজের স্থান মনে করার জন্য বলছি।"
মোশারফ সাহেব জীবনের দিকে তাকিয়ে বললেন,
——— "তুমি আমায় চাচা বলেই ডেকো কেমন?"
——— " সমস্যা নেই আমার স্যার ডাকতে অসুবিধে হবে না! "
জীবন জোরপূর্বক হেসে পুনরায় অপ্রত্যাশিতভাবে বসে পড়ল। তখন আছিয়া দৌড়ে নাস্তা নিয়ে উপস্থিত হলো। আছিয়াকে নাস্তা বহন করে আনতে দেখে সুহানা বেগমও দ্রুত পা চালালেন, যে কখনোই রান্নাঘরে পদার্পণ করে না। আজ কোন বিশেষ প্রীতির বশবর্তী হয়ে সে এল, তা অবলোকন করার জন্য আছিয়ার পশ্চাদ্ধাবন করলেন। আছিয়া এক প্রসন্ন হাস্যবদনে নিজ হস্তে নাস্তা টেবিলে স্থাপন করল। নিসা বেগম ততক্ষণে বিষ্মিত, আজ কি সূর্য কোন ভিন্ন দিকে উদিত হয়েছে? জীবন তখনও মস্তক অবনত রেখেছে। আছিয়া ধপ করে জীবনের সম্মুখে আসীন হলো।
নিসা বেগম ক্রোধাভিভূত স্বরে বললেন,
——— " এই অ'স'ভ্য মেয়ে!! বড়দের মাঝে বসলি কেন? যা রুমে যা! "
মোশারফ সাহেব তাঁকে বাধা দিয়ে বললেন,
——— "আহা, বসেছে তো কি হয়েছে? ওর যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবে!"
আর কোনো বাক্য ব্যয় না করেই তিনি নীরব হলেন। অত:পর নিসা বেগম রো'ষে ফুঁ'সতে ফুঁ'সতে চলে গেলেন, মেয়ের এমন হেয়া'লিপ'না তার অপছন্দ। অতিরিক্ত আদরে কন্যাটি যে একেবারে বে'য়া'ড়া হয়ে উঠেছে! কিছু বললেই সকলে তাঁর বিরুদ্ধে হা'ম'লা চালায়। সুহানা বেগম হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে। ভাগ্যিস এখানে আম্বিয়া বেগম উপস্থিত নেই! থাকলে গোটা গৃহকে হট্টগোলে পূর্ণ করতেন। যতই আদরে নাতনিকে বেষ্টন করুন না কেন, পূর্বকালের মানুষজন এমন আচরণ কোনোভাবেই প্রশ্রয় দিতেন না।
সুহানা বেগম বিস্মিত নেত্রে তাকিয়ে থাকলে মোশারফ সাহেব গলা খাঁকারি দিয়ে বললেন,
——— " তোমার মাস্তান ছেলে কোথায়? বাড়ির বড় ছেলে হয়েও তার কোনো কর্তব্যজ্ঞান নেই? সারাদিন তো শুধু মারামারি করে! ছোট ভাইয়ের থেকে কিছু শিক্ষা নিতে বলবে! কীভাবে পরিবারের ভার গ্রহণ করতে হয়! একজন পরিবারের ব্যবসা জমিজমা সামলাচ্ছে, আর আরেকজন শুধু গুন্ডা'মী করে বেরাচ্ছে! সত্যিই বলো তো, ও কি আমার ছেলে? "
এভাবে বাহিরের লোকদের সম্মুখে নিজের পুত্রের নি'ন্দা সুহানা বেগম সহ্য করতে পারলেন না। তেলে বেগুনে জ্ব'লে উঠলেন এবং বললেন,
——— "আমার ছেলে নিঃসন্দেহে তোমার মতোই হয়েছে!’
মোশারফ সাহেব বুঝলেন, স্ত্রী রু'ষ্ট হয়েছেন। অধিকক্ষণ থাকলে বাহিরের লোকদের সামনেই অপ'মা'নিত হবেন! তাই দ্রুত কেশে বললেন,
——— "হ্যাঁ, হ্যাঁ, ছেলের প্রশংসা আর করতে হবে না! এখান থেকে বিদায় হও এখন। "
সুহানা বেগম ক্রু'দ্ধ পায়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে চলে গেলেন, আর মোশারফ সাহেব একটি দী'র্ঘ'শ্বাস ফেলে স্ব'স্তি পেলেন। পাশে সাজ্জাদ সাহেব মৃদু হাসলেন। আজ নিশ্চয়ই ভাইয়ের কিছু শা'স্তি নির্ধা'রি'ত ! পুরুষ মানুষ যত কঠোরই হোক, নারীর অর্থাৎ স্ত্রীর সামনে সবসময়ই তারা দুর্বল। সে প্রাক্তন চেয়ারম্যান হোক কিংবা বৃহৎ ব্যবসায়ী— এটাই চিরন্তন সত্য।
এমন সময় মুগ্ধ গৃহে প্রবেশ করল। আছিয়া তখন জীবনের দিকে চাহনি নিক্ষেপ করছিল, ল'জ্জায় রাঙা হয়ে মৃদু হাস্য করছিল বারংবার। কিন্তু মুগ্ধকে আসতে দেখে তার চেহারায় ভী'তির ছাপ ফুটে উঠল। চোরের মতো দৃষ্টিপাত করতে করতে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগল। মুগ্ধর মুখ রা'গে র'ক্তি'ম, এমনকি শীতল আবহাওয়াতেও তার শরীর ঘামে ভিজে একাকার। কাউকে কিছু না বলে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠল। ঘাড় ফিরিয়ে একবার সোফায় বসে থাকা ব্যক্তিদের দিকে তাকাল। একপলক ছোট বোন আছিয়ার দিকে এবং মস্তক অবনত করে বসে থাকা জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করল। সঙ্গে সঙ্গে চোয়াল শ'ক্ত হয়ে উঠল, হাতের মুঠো দৃঢ় করল। পকেট হতে মোবাইল ফোন বের করে কাঙ্ক্ষিত নম্বরে কল দিল। সঙ্গে সঙ্গে জীবনের ফোন বেজে উঠল। জীবন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে সিড়ির মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা মুগ্ধকে দেখল। ফোন রিসিভ করতেই মুগ্ধ ধীর, কিন্তু গম্ভীর স্বরে বলল,
——— "আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি, Come fast!"
ফোন কেটে দিয়ে মুগ্ধ পুনরায় নিচে নেমে গৃহ ত্যাগ করল। মোশারফ সাহেব ভ্রুকুটি করলেন, এই দুই সেকেন্ড সময়ের জন্য গৃহে প্রবেশের কারণ কী? জীবন চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল, এখন কীভাবে এখান থেকে প্রস্থান করবে.? এদিকে আছিয়ার ব্যবহারে জীবন মাটির তলে ঢুকবার উপক্রম। আছিয়া ঘোরে বিড়বিড় করে বলল,
——— "আমাকে আর কতদিন এড়িয়ে চলবেন জীবন ভাই?"
সাজ্জাদ সাহেব পাশে বসে থাকা মেয়েকে বললেন,
——— "কি বিড়বিড় করছিস?"
——— "কিছু না! বাবা, আমি আজকে বিরিয়ানি রান্না করব! জলিল চাচাকে বলো খেয়ে যেতে।"
জীবন সবে পানি মুখে তুলে নিয়েছিল, এক ঢোক গিলতেই আছিয়ার কথা শুনে মুখ থেকে পানি ছিটকে বের করে শব্দ করে কাশতে লাগল। জীবনকে এভাবে কাশতে দেখে আছিয়া চিন্তিত হয়ে উঠে জীবনের পিঠে মৃদু হাত বুলিয়ে বলল,
——— "আপনি ঠিক আছেন, ভাইয়া?"
জীবন ঠাস করে উঠে দাঁড়িয়ে আছিয়াকে এড়িয়ে বলল,
——— "আমার একটু কাজ আছে স্যার! আমি আসছি!"
আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে, গটগট করে বাহিরে চলে গেল। যেন পালিয়ে বাঁচল। চারজনই হতবাক।
চট করে আছিয়ার মাথায় শয়'তা'নি বুদ্ধি এলো। বলল,
——— "আরে জীবন ভাই, আপনি আপনার ওয়ালেট ফেলে যাচ্ছেন!"
বলিয়া মিছিমিছি সোফায় হাত দিয়ে ওরনার তলে হাত গুঁজে দৌড়ে গেল জীবনের পিছু। মোশারফ সাহেব, সাজ্জাদ সাহেব, জলিল— সকলেই হতবাক।
পুনরায় মোশারফ সাহেব বলিলেন,
——— "বাদ দিন, এবার কাজের কথায় আসি!"
তারা আবার নিজেদের ব্যবসা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে লাগল। এদিকে জীবন জোরে জোরে পদক্ষেপ নিয়ে চলছে। শাহারিয়াজ ভবনের গেইটের সম্মুখে আসতেই আছিয়া চিৎকার করে ডাকল,
——— "জীবন ভাইইইই!"
জীবন থেমে গেল। পশ্চাতে ফিরে দেখল আছিয়া দৌড়ে আসছে। আছিয়াকে দৌড়ে আসতে দেখে মালি ও গাড়ি পরিষ্কারকারী লোক চিন্তিত হয়ে বলল,
——— "পরে যবেন তো ছোট আম্মা! আস্তে যান !"
——— "পরেছি তো বটেই, কিন্তু অন্য কিছুতে!"
ভ্রু কুচকালো প্রত্যেকে, কেউ কিছু বুঝল না। আছিয়া কি বলছে? জীবন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছিয়াকে আসতে দেখছে। আছিয়া জীবনের সম্মুখে দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে। জীবন অন্যদিকে ফিরে বলল,
——— "ডাকলে কেন?"
——— "কথা ছিল।"
——— "আমার সাথে কিসের কথা?"
——— "আছে তো বহু কথা! কিন্তু আপনি শুনছেন না।"
জীবন আছিয়ার দিকে তাকালো! এক গাল হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছিয়ে যেন ফুলের মতই ফুটে উঠেছে। আছিয়া দেখছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শ্যামকালো ছেলেটির পানে! জীবন কঠোর স্বরে বলল,
———" জীবনের কিছু দেখোনি। এখনো তুমি ছোট, নিজের ভবিষ্যতের প্রতি মনোনিবেশ করো! আশেপাশের অবাঞ্চিত বিষয়সমূহে মন না দিয়ে, নিজের প্রতি মন দাও! অপ্রয়োজনীয় জিনিসে নিজের সময়, মন, জীবন, ভবিষ্যত নষ্ট করো না!"
——— "আপনার এত কথার ভীরে শুধু একটি শব্দই কানে আসে, তা হলো জীবন!"
জীবন হতবাক, উপলব্ধি করল, একে বলে কোনো কাজ নেই, লাভ নাই। ফোঁস করে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে চলতে লাগল। আছিয়া পুনরায় চিৎকার করে বলল,
——— "এই প্রথম কাউকে পানি নিজে দিয়েছি! আমার হাতের দেওয়া পানি কেমন ছিল, জীবন ভাই?"
পেছনে না ঘুরেই, নির্লিপ্ত কন্ঠে জীবন বলল,
——— "আমার মতোই স্বাদহীন!"
----------------
চার দিন পর শান্তকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। ডাক্তাররা বলেছেন, তার শরীর ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠবে, তবে সম্পূর্ণ বিশ্রামের প্রয়োজন। শান্ত এখনো দুর্বল, হাঁটা-চলাও কঠিন। শরীরে এখনও মৌমাছির কা'ম'ড়ের দা'গ স্পষ্ট, কিছু জায়গায় ক্ষ'ত শুকালেও ব্যথা রয়ে গেছে।
বাড়িতে নিয়মিত তার সেবা করতে হবে। ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে—বিশেষ করে স্যুপ, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার, আর প্রচুর পানি, যাতে শরীরের শক্তি ফিরে আসে। ওষুধ সঠিক সময়ে খাওয়ানো হচ্ছে, সঙ্গে অ্যান্টিসেপ্টিক মলম দিয়ে ক্ষতগুলোতে যত্ন নেওয়া হচ্ছে।
আফিয়া বেগম কা'ন্নাকাটি করে অ'সুস্থ প্রায়! মায়ের মন যে কখনো ভুল নয় আরো একবার প্রমাণিত। শান্তকে সময়মতো চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হবে, যাতে কোনো জ'টি'লতা তৈরি না হয়।
শান্ত এখন ঘরে বসে আছে! মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার সাথে কে এমন করতে পারে? কে তার এত বড় শ'ত্রু? যে তাকে এমন শা'স্তি দিল? যেভাবেই হোক জানতে হবে তাকে! একটু সুস্থ হোক তারপর সে দেখে দিবে! শান্তর গায়ে হাত দেওয়ার ফল বুঝিয়ে দিবে! তখনই কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে নাঈম প্রবেশ করল নাকে ব্যান্ডেজ নিয়ে! কথা নেই বার্তা নেই ধাম করে বিছানায় শুয়ে থাকা শান্তকে একটা কি'ল দিয়ে বলল,
———" তুই এখনো ম'র'স নাই??"
শান্ত দাত কটমটিয়ে শুয়া থেকে উঠে বলল,
——— "তোকে মা'রা'র জন্য এখনো বেঁচে আছি!"
——— "হাহাহাহা! তা এক্সপেরিয়েন্স কেমন রে ভাই??"
——— "কিসের?"
——— "মৌমাছির চু'ম্মা'হ! কেমন???"
শান্ত ক্রো'ধে বলল,
——— "মৌমাছির চাকের নিচে ঢিল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস তখন বুঝবি!"
——— "আমার এত শখ নেই মৌমাছির চু'ম্মাহ খাবো! কিন্তু এইসব কিভাবে হলো?? কে করেছে তোর সাথে এমন?? এখন সব খুলে বল তো?'
——— "আমি কি জানি,, হঠাৎ ইয়াসিন আমায় ফোন দিয়ে ডাকল! আমিও গেলাম! গিয়ে দেখি নাই! পরে রে'গে আমি আসতে নিলাম! আর কোন শু***য়রের বাচ্চা যেন ধুম করে মাথায় বাড়ি দিল! পরে জ্ঞান যখন ফিরল তখন অনুভব করলাম অ'ন্ধকা'র ঘরে আমার হাত-পা, চোখ-মুখ, সব বে'ধে রাখছে.! তারপর অনুভব করলাম আমার শরীরে কোনো কা'প'র নেই! মনে হচ্ছিল খাটি মধু আমার শরীরে কেও ঢেলে দিয়েছিল! আর তারপর কেমন যেন ভনভন আওয়াজ পেলাম! তারপরেই তো আমার উপর হা'ম'লা করলো !"
——— "কে করেছে টের পাস নি??"
——— "গা'ধা'র মতো কথা বলস কেন? বললাম না যে হাত পা চোখ মুখ বাধা ছিল!"
——— "আরে গা'ধা,, কান তো বাধা ছিল না! কারো কথা শুনস নাই??"
——— "কি জানি কোন মাদা***দে এমন করছে! খালি পেয়ে নেই! ফা'লা ফা'লা করে ফেলমু! কিন্তু কানে কানে কিসের যেন থ্রেড দিয়েছে!"
সঙ্গে সঙ্গে নাঈম বাকা হেসে জিজ্ঞেস করল,
——— "কি থ্রেড??"
——— "তোর এত জানার সখ কেন??"
শান্ত ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলো! নাঈম হেসে বলল,
——— "আরে আরে আমার ভাইরে কেও মা'র'লো আর আমি জানতে চাব না? বড় আব্বু তো অলরেডি লোক লাগিয়ে দিয়েছে খোজার জন্য!! ওহ আরেকটা কথা! তোর কি মনে হয় ইয়াসিন এমন করেছে?"
——— "আরে ধুর ওর সাহস আছে এগুলা করার?"
——— "বন্ধুরাই কিন্তু শেষে বা'শ দেয়!"
——— "ও আমার বন্ধু তোরে কে বলছে? ও আমার চা'ম'চা যে আমার চা'ম'চা'মি করে!"
নাঈম ফোস করে শাস ছেড়ে বলল,
——— "সেসব বাদ দে! কি যেন থ্রেড দিয়েছে? ওটা বল,,"
———" কি জানি. মৌমাছির কামরের জালায় মনে হচ্ছিল ম'রে যাচ্ছিলাম! কি যে ব্যা'থা জানস না!! মনে হচ্ছিল ওটাই আমার জীবনের শে'ষ দিন! ওই সময় কোন শা'লা'র বেটা এসে কি যেন বলল, ব্যা'থার জা'লায় কন্ঠও চিনতে পারি নি! কিন্তু চিনা চিনা লেগেছে! কোথাও তো শুনেছি ওই কন্ঠ, যাক গে কানে কানে বলল,
——— "ওকে মা'রা'র অধিকার আমার, অন্য কারো না! অন্য কেও কিছু করতে চাইলে গলা কে'টে মাথা দিয়ে ফুটবল খেলব! তোর শা'স্তি তুই পাবি! ক'ঠি'ন শা'স্তি!"
নাঈম ফের ঠোটের কোণে কুটিল হাসি এনে, মনে মনে বলল,
——— "বা'ঘের গুহায় হাত দিয়েছিস! তুই যে এখনো বেঁ'চে আছিস! এটা তোর ভাগ্য!"
মুহুর্তেই নাঈমের চোয়াল শক্ত করে, মুখ ক'ঠিন হয়ে গেলো! হঠাৎ নাঈমের এমন চেহারার পরিবর্তন হতে দেখে শান্ত ভ্রু কুচকে বলল,
——— "তোর আবার কি হলো?"
——— "তুই থাক, আমার কাজ আছে!"
শান্ত নাঈমকে থামিয়ে বলল,
——— "এই দাড়া দাড়া,, তোর নাক ফাটল কিভাবে?"
——— বুঝবি না!
——— "মানে? "
——— "জানতে চাস না.! "
শান্ত হতভম্ব সত্যিই কিছু বোধগম্য হচ্ছে না! নাঈম কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে! ঠিক সে মুহুর্তে বাহির থেকে ভেসে এলো চিৎ'কা'র, হুং'কা'র,,,,,


Post a Comment

0 Comments

Close Menu