লেখিকাঃ আশা রোজমেরি
মেনান এর ডাইনী রুপে ঘুরাঘুরি দেখে বিত্তরা বিভ্রান্ত হয়ে ভাবলো, আমাদের রানী তো ঠিকই আছে।আমরা বরং ঘুমিয়ে পরি।তারপর তারা একে একে সবাই ঘুমিয়ে পরতে লাগলো।
অন্যদিকে,আন্দ্রেয়া যাদু দ্বারা আ*গুনের গোলাকার বৃত্ত নিক্ষেপ করছে এলাইসাদের দিকে।তার আ*গুনের গোলার কাছে এলাইসাদের তীর পরজিত হয়ে বার বার ফিরে যাচ্ছে উল্টো দিকে।তাই দেখে এলাইসা সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
----এভাবে আমরা পারবো না।আমাদের ঝাপিয়ে পরতে হবে ওর উপর।আমরা চারজন আক্র*মন করলে ও কিছুতেই আমাদের সাথে পারবেনা।তাছাড়া, মায়াপরীর যাদু কাঠিও তো দেখতে পাচ্ছিনা।হয়তো আন্দ্রেয়া, অদৃশ্য করে রেখেছে।আগে শয়*তানটাকে ধ্বংস করতে হবে।তারপর মায়া পরীর কাঠি আমরা পাবো।এছাড়া এ বন থেকে বেরোবার পথ নেই।
"সবাই সম্মতি জানালো, এলাইসার কথাকে।তারপর তারা আন্দ্রেয়াকে চতুর্দিক থেকে ঘেরাও করে ফেললো।এক পর্যায়ে এলাইসাকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো, ডা*ইনী।বৃত্তাকারে নিজের জন্য সুরক্ষা দাগ টেনে নিলো।তারপর তার ধা*রালো দাঁত বের করলো।
এলিন,এডমাইন,এট্রেসি যখন সব আশা ভরসা ছেড়ে দিলো তখনই একটা আশার আলো উদয় হলো নিরাশার বুক বেধ করে।এনথা, উড়ে এসে উপর থেকে ডা*ইনীর প্রান ভ্রমরা লাঠিটা ছিনিয়ে নিলো।আর নিজের শক্তি দ্বারা লাঠিটা ভেঙে গুড়িয়ে দিলো।মূহুর্তেই ডাইনী ছাই হয়ে বাতাসে মিলিয়ে গেলো।ডা*ইনীর মৃ*ত্যুতে মায়া পরীর যাদু কাঠি দৃশ্যমান হয়ে গাছের গোড়ায় পরে রইলো।
আর এনথা, এলাইসার কাঁধে গিয়ে বসলো।তাকে খুব প্রফুল্ল দেখালো এলাইসাকে কাছে পেতেই সেই সাথে এলাইসাকেও।ক্যাথান আর এলিন এর আনা আস্তাবলের ঘোড়াটি ও এলাইসার কাছ ঘেঁষে দাড়ালো।আস্তাবলে এলাইসা রোজ রোজ যাওয়া আসা করে।সেজন্য সব ঘোড়াই এলাইসাকে চিনে এবং ভালবাসে।
"এলিন, গিয়ে যাদু কাঠি তুলে নিলো।মানুষের ছোঁয়া পেতেই অদৃশ্য কুঠুরি দৃশ্যমান হয়ে গেলো।মেনান ও নিজের রুপে ফিরে এলো।তারপর তারা মায়া পরীর কাছে ছুটে গেলো।যাদু কাঠি তার হাতে দিতেই, সে নিজেকে মুক্ত করে নিলো।তারপর পাথর করা সকল মানুষ আর প্রানীদের জীবন ফিরিয়ে দিলো।পাথর থেকে জীবন ফিরে পেতেই সবাই নিজেদের বার বার দেখতে লাগলো।আমরা পরিবারের কাছে ফিরতে পারবো।"
"তবে এতো রাতে তারা ফিরতে পারবেনা।তাই আজ রাতে পরীর দায়িত্বে থাকবে এই বনে।কাল ভোরের আলো ফুটতেই বাড়ি রওনা দিবে।"
এনথা বনে প্রবেশ করার জন্য বন যাদুমুক্ত করেছিলো।কিন্তু বের হওয়ার জন্য নয়।।মায়া পরী সেটা বুঝতে পেরে যাদু কেটে দিলো, সবাইকে বন থেকে বের হওয়ার জন্য।আর এলাইসাদের উদ্দেশ্যে বললো,
---কৃতজ্ঞতা আমাকে উদ্ধার করার জন্য।তোমাদের যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে স্মরণ করলেই আমি হাজির হয়ে যাবো।সকলের পাশে দাঁড়াবো।আর এখন থেকে এ বন আবার উন্মুক্ত।
"এলাইসারাও পরীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিদায় নিলো মেনানকে সাথে দিয়ে।সকালের মধ্যে তাদের ফিরতে হবে।নাহলে রাজকার্য বন্ধ থাকবে।প্রজাদের সমস্যা হবে।বাবা আর মেরিটাও চিন্তা করছে নিশ্চয়ই।"
"মায়াবন পেরোতেই আদিবাসীদের পাহাড়ি এলাকা এসে গেলো।এডমাইন আর এট্রেসিকে নামিয়ে দিয়ে বিদায় জানালো।সকলের চোখেই জল চিকচিক করছে।রাতের আঁধারে কেউ কারোরটা দেখতে পেলোনা।যার যার জায়গা থেকে সে সে ভাবলো,হয়তো তারই কষ্ট হচ্ছে।মন কেমনের পাত্তা না দিয়ে এলাইসা আর এলিন দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে জঙ্গল দিয়ে এগিয়ে চললো রাজ্যের দিকে।এডমাইন আর এট্রেসি পা বাড়ালো পাহাড়ি জীবনে।
রাত অনেক বেড়েছে,মধ্য রাত পার হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু মহারাজ এখনো কিছু মুখে তুলেননি।মেরিটা অনেক বুঝিয়েও রাজা এডিডাসকে কিছু খাওয়াতে পারলো না।মহারাজ মেরিটাকে বললো,
--আমার এলাইসা মা হারা একমাত্র মেয়ে,বয়স অল্প।সে এখনই কতোটা পরিশ্রম করছে।আর আমি পিতা হয়ে এই বয়সে শয্যাশায়ী হয়ে আছি।
মেরিটা নিজেও একথা জানে,এলাইসা কতোটা পরিশ্রমী।এজন্য তারও খুব মায়া হয়।মেরিটা যত্ন আত্তি করে ছোট থেকে এলাইসাকে বড় করেছে।মায়ার টান যে তারও আছে।
তাদের কথার মাঝখানে দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে অন্দরে প্রবেশের জন্য অনুমতি জ্ঞাপন করলো, মন্ত্রী এডওয়াড।তাকে অনুমতি প্রদান করতেই তড়িঘড়ি করে অন্দরে প্রবেশ করলো।এবং খুশির সাথে জানালো, রাজকন্যা এলাইসা কিছু ক্ষনের মধ্যেই রাজ্যে প্রবেশ করছেন।সৈন্যরা তাকে এই ব্যাপারে নিশ্চিত করেছে।
মহারাজ আচমকা শোয়া থেকে উঠে বসলেন,খাটের পাখায় মাথা ঠেকিয়ে।মেরিটা এবং এডওয়াড দুজনেই অবাক হলো, এইটকু খুশির সংবাদে রাজার এতোটা উন্নতি দেখে।রাজা এডিডাস বললেন, আমাকে বাইরে নিয়ে যাও।আমার কন্যাকে আমি নিজের হাতে বিজয়ীনীর মালা পরাবো।তিনি বসতে পারলেও উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা পাননি।তাই তাকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো এবং সিং*হদরজার সামনে চেয়ারে বসানো হলো।রাজার আদেশে রাজ্যে ঢোল,বাদ্য-বাজনা বেজে উঠলো।রাতের আঁধারের বুকে আলোর রোশনাই দেখা গেলো।উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হলো।সকল প্রজারা ভিড় করলো।
এলাইসা, ফিরে আসার পথে মেনানকে তার বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে এসেছে।তারপর নিজের বাসবভবনে এসে যাত্রা পথের ইতি টানলো।সবাই এসে এলাইসাকে অভ্যর্থনা জানালো।তার সাথে সাথে, এলিনকেও যোগ্য অভ্যর্থনা জানালো হলো।বরণ পর্ব শেষ হলে এলাইসা এবং এলিন প্রসাদে প্রবেশ করলো।মেরিটা নিজ হাতে তাদের জন্য তাদের প্রিয় খাবার রান্না করেছে।ডিউটি আর এঞ্জি আরো কিছু বিদেশি আইটেম করেছে।
আস্তাবল রক্ষক এসে ঘোড়া দুটিকে আস্তাবলে নিয়ে গেছে।ওদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রসাদের বাইরে সুন্দর করে সাজানো।সেখানে প্রজাদের জন্য হরেক রকম খাবারের আয়োজন রয়েছে।সবাই পছন্দসই খাবার খাচ্ছে।
রাত গড়াতে গড়াতে শেষ প্রহরে এসেছে।রাজা এডিডাস বলেছেন,কাল রাত পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে প্রজাদের জন্য।তাই প্রত্যেকে সুন্দর ভোরের অপেক্ষায় সারাদিনের ক্লান্তি কাটাতে ঘুমাতে চলে গেলো।রাজ্যের কোল জুড়ে ঘুমের ঘোর।
0 Comments