Ad Code

আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ৩

লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার

কিশোর বয়সী এক ছেলে চেয়ারে বসে কান্না করছে। সামনে থাকা ব্যাক্তিটি গম্ভীর স্বরে বলে " কি হলো জিসান?,,, তুমি কি হার মেনে নিচ্ছো?"

: নাহ!,,,আমি হারতে শিখি নি,,,,

: তাহলে তুমি এখন কি করবে?

: আমার আত্মার বিসর্জন করবো,,,পাপ মুক্তি চাই আমি,,,পাপ মুক্তি,,,,,,,,

: হুম্ম,,,তাহলে যে তোমায় খুব তাড়াতাড়ি আত্মা কে উৎসর্গ করতে হবে,,,,

: আমি প্রস্তুত,,,,

--------------------

Facebook

আলভি ড্রাইভার কে কোনমতে বুঝিয়ে জংগলের কাচা পথে যেতে রাজি করায়। সুক্ষ্মদর্শী দৃষ্টিতে সে চারপাশ দেখছিলো কিন্তু সন্দেহজনক কোন কিছু ধরা পরে না। প্রায় মিনিট পয়তাল্লিশের পরে তারা পাচুলিয়া প্রধান সড়কে এসে পৌছায়।

ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে " কোনদিকে যাবো স্যার?,,,"

: আপাতত গাড়ি সাইড করো,,,,আমি আসছি,,,বলে আলভি নেমে যায় কার থেকে।

মাথা ঘুরিয়ে কি যেন খোঁজে দেখে রাস্তার অপর পার্শ্বে একটা জুয়েলারি শপে ভিতরে প্রবেশ করে।

: বলুন স্যার!!! আপনি কেমন ওরনামেন্ট'স চাচ্ছেন?

: আপাতত সি.সি. ক্যামেরার ফুটেজ দেখালেই চলবে,,,

: সরি স্যার??,,,

: ম্যানেজার কি আপনি?

: নো স্যার,,,আমি ডেকে দিচ্ছি,,,,,বলে ছেলে টি দোকানের ভিতরের রুমে যায়। খানিক বাদে ম্যানেজার কে সাথে নিয়ে ফিরে আসে।

: জ্বী স্যার বলুন,,,,কি বলছিলেন,,,

আলভি তার অনুমতি পত্র দেখায় এরপরে বলে " আমার এক টা তারিখের ফুটেজ লাগবে,,, সেভ থাকে তো,,,,,? "

: জ্বি,,,জ্বি,,, স্যার,,,,কোন ক্যামেরার টা লাগবে?

: জংগলের জংশন বরাবর যেটা,,,,

: তারিখ?

: ১৯ শে এপ্রিল,, সন্ধ্যা ছ'টা থেকে,,,

ম্যানেরজার কম্পিউটার স্ক্রিনে বেশ কিছুক্ষণ খোজাখুজির পরে অবশেষে পেয়ে যায় ফুটেজ। আলভির দিকে মনিটর ঘুরিয়ে বলেন "এই যে স্যার,,,,,নিন,,,,,"

ভ্রু কোচকে ফুটেজ পজ জুম করে বারবার দেখছিলো। এরমাঝে শপের ছেলে টা এক কাপ কফি দিয়ে যায়। প্রায় মিনিট ত্রিশ পর আলভি ফুটেজ টা তার পেনড্রাইভে কপি করে নেয়।

: ধন্যবাদ,,,, হেল্প করার জন্য,,,,বলে বিদায় জানায় আলভি।

: ওয়েলকাম স্যার,,,

YouTube

কারের কাছে ফিরে এসে দেখে ড্রাইভার ছেলে টা মুখ গোমরা করে তার ফোন টিপছিলো।

: কিহে বৎস!!,,,, বিরক্ত বুঝি??

: না স্যার,,,,বলুন,,,এবার কোথায় যাবেন,,,,ফিকে হেসে বলে ছেলেটা।

আলভি তার ঘড়িটায় সময় দেখে বলে, "এখন তো চার'টে বাজে,,,,তুমি কি ফিরে যেতে পারবে?,,, "

: এখন যেতে পারবো কিন্তু,,, আর কিছুক্ষণ দেরি করলে রাস্তা টা অন্ধকার হয়ে যাবে,,,,,

: বেশ,,,,তাহলে ভাড়া টা নাও,,,

: আপনি যাবেন না স্যার?

: নাহ আজ রাত টা এখানেই কাটাবো,,,,,বলে ভাড়া এগিয়ে দেয় আলভি।

অতিরিক্ত পাচ'শ টাকা পাওয়াতে ছেলেটা হাসি মুখে সালাম জানায় বিদায় নেয়।

পাচুলিয়া শহরের এক আবাসিক হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয় আলভি। হোটেল বয় এসে খাবার সার্ভ করে যায়। সারাদিন কিছুই খাওয়া হয়নি। ক্ষুধায় পেট চো চো করছিল আলভি'র তাই সব কাজ বাদ দিয়ে খাবার নিয়ে বসে যায়। খাওয়ার পর শরীর টা যেন ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়েছে। বিছানায় গা লাগাতেই রাজ্যের ঘুম এসে জমে যায় ঘন পাপড়ির ডাগর আঁখি জোড়ায়।

--------------------

TikTok

টুং টিং টাং

ফোন কলের শব্দে আলভির ঘুম ভাংগে। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে

: হ,,,হ্যালো,,,,

: আলভি!!!,,,বাব্বাহ বন্ধু,,,,ক'টা বাজে হ্যাঁ?,,,

একবার কলও দিলেনা,,,,,

: ক,,, ক'টা বাজে,,,,

: আট'টা,,,

: হ্যাঁ???,,,,আমি এতক্ষণ ঘুমিয়েছি,,,

: কোথায় আছো?

: পাচুলিয়া'র একটা হোটেলে,,,,

: কিহ???,,,,

: হুম,,,ম্যাজিক,,,বুঝলে রবিন,,,,

: উফফফ,,,,,আচ্ছা উঠো ফ্রেশ হয়ে নাও,,,,আমি আবার কল দিচ্ছি,,,,

আলভি'র মাথা টা খুব ধরেছে, ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে হোটেলের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে শহরের চারিদিক টা দেখছিলো।

প্রতিটা উচু বিল্ডিং যেন এক একটা রহস্য, ইট পাথর গুলো যেন চিৎকার করে সাক্ষ্য দিচ্ছে তারা সব জানে, দেখেছে তারা অসমাপ্ত গল্পের শুরুর ঘটনা গুলো। আলভির মনেহয় চারিদিকের এই রহস্যের ভেদ করতে পারে শুধু একটি বিষয় আর তাহলো সত্য। তাকে সত্যের অন্বেষণ করতে হবে তবেই তার এই গোয়েন্দা জীবন সার্থক।

জুয়েলারি শপে থেকে পাওয়া ফুটেজের পেনড্রাইভ ল্যাপটপে যুক্ত করে আবারো মন দিয়ে দেখতে থাকে। কত শত মানুষ এই রাস্তা পার করেছে কিন্তু তার চোখ জোড়া যেন শুধু এক জনকেই খুজছে। হঠাৎ সে লক্ষ করে একটা ছেলে হাতে ওই রকমেরই একটা কন্টেইনার নিয়ে জুয়েলারি শপের সামনে দিয়ে চলে যায়। ফুটেজে দেখা যায় ছেলেটি কিছুক্ষণ আগেই খালি হাতে রাস্তার অপর পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো আর এখন ফিরে আসছে একটি কন্টেইনার হাতে। আলভি'র ছেলেটির চালাকি বুঝতে দেরি হয় না। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় এখন খোঁজতে বের হলেও খুব একটা সুবিধা হবে না বিধায় সে সব ঘটনা গুলোর একটি ছক বানায়।

Threads

শিপন রায় > বয়স ২২ > ১৬ ই সেপ্টেম্বর > হোস্টেল রুমে গলায় ফাস দেয় > চিরকুট > পাচুলিয়া শহর

সাত মাস পরে,,,,,,,

ফারজানা > বয়স ১৭ > ২৯শে এপ্রিল > নিজ বাড়িতে এসিড ঢেলে > চিরকুট > হুলিয়া শহর

আলভি গভীর দৃষ্টিতে ছক টা দেখছিলো। কিছু একটা অনুমান করে চমকে ওঠে তড়িঘড়ি ইন্সপেক্টর বাবুলাল কে কল দেয়

: আদাব ইন্সপেক্টর বাবু,,,,

: আদাব,,,জ্বি বলুন,,,গোয়েন্দা বাবু,,,,

: আমি কিছু লিড পেয়েছি বুঝলেন??

: হুম,,,হুম,,,হাসেমপুরে কি হয়েছে?

: না,,,,না,,,, আমি এখন পাচুলিয়াতে,,,

: মানে কি আ,,,আপনি হাসেম পুর জাননি?

: হ্যাঁ গেছিলাম,,,ওখানেই এক অদ্ভুত ঘটনা হয়,,,ল্যাবের যাওয়ার পথে মেইন রোডের সাথে জংগলের রাস্তায় একটা কাচা পথ পাই,,,,

: হ্যাঁ হ্যাঁ,,,,তারপর?

: আসলে ওই রাস্তা টা হাসেমপুর আর পাচুলিয়ার জংশন,,, কার গাড়িও মোটামুটি ড্রাইভ করা যায়,,,,এই ধরেন পয়তাল্লিশ মিনিট লাগে,,,,

: বলেন কি মশাই!!!,,,,,আরেক টা বিষয় এই সব কিছু ঘুরেফিরে,,,, পাচুলিয়া তে কেন মিলছে,,,

Instagram

: হুম্ম,,,এটা ছাড়াও আরো ভয়ংকর কিছু বিষয় অনুমান করছি,,,,

: মানে??,,,,

: সামনে হয়তো আরো একটা খু**ন হতে পারে বা হয়ে গেছে,,,

: ক,,,কিভাবে,,,

: দেখুন মানিক মানে,,,, সকালে যার ডিটেইলস দিলাম,,,,সবটাই তো ফেক ছিল,,, মনে হয় এটা ওর আসল চেহারাও না,,,,

: হুম্মম,,,,হতেপারে,,,

: এই ছেলে টা কিন্তু শিপন রায় মারা যাবার ঠিক পরেই,,,,এইখানের এক ড্রাইভার কে জিম্মি করে চাকরি নেয়,,,,

: হুম হুম,,,

: এখন দেখেন,,,এসিডের কন্টেইনার চুরি গেছে ১৯শে এপ্রিল,,, আর ফারজানার খুন হয় কবে?

: ২৯শে এপ্রিল,,,,

: হুম আবার দু'জনের কাছেই ছিলো,,,

: চিরকুট,,, ত,,,, তারমানে,,,, খু**নি কি এখন নেক্সট টার্গেটের পিছনে ছুটছে??

: আমিও সেই ভয় টাই করছি,,,,,

: আবার ছেলে মেয়ে গুলো বয়স প্রায় কাছাকাছি,,,, কি করেছে এরা??,,,

: একটা তো মেইন লিংক থাকবেই,,,,

: এটা তো তাইলে সিরিয়াল কিলিংয়ের কেস!!!

: হুম্মম,,,,হলফ করে বলা যায়,,,,

: তাহলে মিডিয়াতে খবর দিই,,,, সবাই কে সর্তক করুক,,,,

: উম্মম্মহ,,,,একটু তো ঝামেলা হবে খু**নি যদি প্যাটার্ন বদলে দেয়,,,,,

: তাহলে উপায়??,,

: আচ্ছা,,,,বলে দেন,,,খু**নি কে একটা ভুল করার সুযোগ দেয়া হোক,,,

: হুম্মম,,,আমি তাহলে পাশের থানা গুলোতেও ইনফর্ম করে দিই,,,,

: হুম,,,,,

: আর কোন কিছু জানতে পেরেছেন?

: ওহ,,,,হ্যাঁ,,,, সিসিটিভি ফুটেজ কালেক্ট করেছি,,,,একটা ছেলের ছবি সেন্ড করবো,,,, একটু খুজে দেখতে হবে,,,,

: কে ছেলে টা?

: মনেহয় খু**নির দোসর,,,, আসলে ওই ছেলের হাতেই এসিডের ওই কন্টেইনার ছিলো,,,,

: তারমানে খু**নি কি পাচুলিয়া'র বাসিন্দা??,,,

: বোঝা যাচ্ছে না,,,,দেখি কাল একটু থানা ঘুরে আসবো,,,

: আচ্ছা বাবু,,,রাখছি তবে,,,

: আদাব,,,

-------------------

রাত ১০টার ব্রেকিং নিউজ।

Whatsapp

" পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে যে, দেশের বিভিন্ন শহরে কিশোর বয়সী ছেলে মেয়ে'রা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হচ্ছে।,,,,,,,,,,,,, "

ড্রইংরুমে মি.জামশেদ ও তার স্ত্রী রাতের খাবার শেষে টিভি তে খবর দেখছিলেন। খবরের বিস্তারিত শুনে মিসেস জামশেদ কেমন যেন বিবর্ণ মুখে তার স্বামীর দিকে তাকান। আসলে তাদেরও বছর উনিশের একটি ছেলে রয়েছে যার নাম জিসান,,,,,,,,,,,,,,,,,,

চলমান....

( গল্প টি আপনার কেমন লাগছে কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)

আত্মহত্যার নেপথ্যে পর্ব ৪

x

Post a Comment

0 Comments

Close Menu