লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার
রাত ১০টার ব্রেকিং নিউজ।
" পুলিশ সূত্রে
জানানো হয়েছে যে , দেশের বিভিন্ন শহরে কিশোর বয়সী ছেলে মেয়ে'রা টার্গেট কিলিংয়ের শিকার
হচ্ছে।,,,,,,,,,,,,, "
ড্রইংরুমে মি.জামশেদ
ও তার স্ত্রী রাতের খাবার শেষে টিভি তে খবর দেখছিলেন। খবরের বিস্তারিত শুনে মিসেস জামশেদ
কেমন যেন বিবর্ণ মুখে তার স্বামীর দিকে তাকান। আসলে তাদেরও বছর উনিশের একটি ছেলে রয়েছে
যার নাম জিসান।
: কি হলো জিসানের
আম্মা?... মুখ এমন ফেকাশে কেন?
: আমার জিসান কে
নিয়ে খুব ভয় হচ্ছে গো...
: আরে কি বলছো তুমি
এসব বলতো?.... তুমি কি ভুলে গেছ তুমি একজন এমপি'র ওয়াইফ!!!.... সারাক্ষণ তোমরা সিকিউরিটির
মধ্যে থাকো...
: শোন না... ছেলেটা
আমার কেমন যেন হয়ে আছে কিছুদিন...
: কিছু হয়েছে হয়ত
কলেজে... কথা বলে দেখ...
: তুমিও তো ওর বাবা!!!....
সারাদিন বাইরে বাইরে থাকো রাতের বেলা তো একটু কথা বলতে পারো নাকি??...
: আচ্ছা.... আচ্ছা...
এত উত্তেজিত হয়ো না আমি কথা বল নেবো....
----------------------
আলভি ভোরে উঠেই হালকা
কিছু নাস্তা করে বেরিয়ে পরে প্রাতভ্রমণে, উদ্দেশ্য ফুটেজে দেখা ছেলেটার তথ্য বের করা।
ছবি দেখিয়ে আশেপাশের লোকজন কে, বিভিন্ন দোকানে, ফার্মেসিতে, হোটেলে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
খোঁজ করতে করতে বেলা দশ টা বেজে যায় কিন্তু তেমন কোন কিছু বের করা যায় না। এক প্রকার
হতাশ হয়েই রাস্তার এক চা'য়ের টং এর বেঞ্চিতে এসে বসে আলভি।
: বাবু কি নতুন নাকি
এ শহরে??...বলে চা'য়ের দোকানি
: নতুন না.... তবে
স্থানীয়ও না...
উত্তর শুনে দোকানি
বাকা চোখে আলভি কে দেখে নিয়ে বলে," আইচ্ছা... চা.. পুরি.. বিস্কুট কিছু নেবেন?"
: হুম্মম...কড়া লিকার
চা দাও... মাথা টা ধরেছে খুব......
: এই.... এই যে নিন
বাবু..
: আচ্ছা শোন... তুমি
তো এই শহরের?
: হ্যাঁ বাবু...
আমি এইখানেই জন্মেছি... বাপ দাদা'র ভিটেমাটি এখানেই....
: আচ্ছা... বেশ....
এই ছবিটা তবে দেখ তো.... চিনতে পার??... কে?...
: ওহো বাবু... এ
যে আমাদের যতিন!!...
: তুমি চিনো একে!!...
: হ্যাঁ বাবু....
এই যে রাস্তার বাম দিকে যে গলি টা ওখানেই একটা দোকান আছে.... সাইকেল মেকারের কাজ করে...
: তোমাকে কি বলে
যে ধন্যবাদ দিবো.... নাও এটা রাখো... বখশিশ!!.....
দোকানি কে আর কিছু
বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত প্রস্থান করে আলভি।
গলির শেষ দিকে একটা
দোকান দেখা যাচ্ছে। উবু হয়ে একটা ছেলে কাজ করছিলো আলভি তাকে পেছন থেকে জিজ্ঞেস করে
" যতিন আছে?..."
: কে? আমিই যতিন....
: হুম্ম...দেখ তো
ছবি টা... কিছু মনে পরে কিনা....
ছবি দেখেই যতিন আৎকে
ওঠে হাতের যন্ত্রপাতি ছুড়ে ফেলে দেয় ছুট। আলভিও তাকে তাড়া করে, পিছন থেকে চিৎকার করে
বলে " য.. তি...ন.... পালায় লাভ... নাই....সত্যি টা বলে... দাও... কিছু হবে না..."
কে শুনে কার কথা
যতিন প্রাণ হাতে নিয়ে ছুটছে তো ছুটছেই পিছনে আলভিও তেড়ে আসছে। অবশেষে সে এক গলিতে ঢুকে
গেলে আলভি চট করে অন্য একটা গলিতে ঢুকে যতিনের সামনে এসে পথ আটকায়। যতিন কিছু বুঝে
ওঠার আগেই আলভি যতিনের কলার ধরে কষে এক চড় বসিয়ে দেয়, ধমকে বলে " বল... কেন খু**ন
করেছিস মেয়ে টা কে??"
হাতজোড় করে কাঁদো
কাঁদো হয়ে যতিন বল " স..স্য.. স্যার ... আমাকে মারেন কিন্তু বিশ্বাস করেন ওই খু**ন
টা আমি করিনি...."
আলভি চোখ বড় বড় করে
জানতে চায় " তাইলে কোন খু**ন টা তুই করেছিস...."
: স্যার... আমি কোন
খু**নই করিনি...
: বাহ!!...তাহলে
ওই কন্টেইনার নিয়ে কোথায় যাচ্ছিলি?...
: স্যার... ও...
ওই দিন ভোরে এক লোক আসে দোকানে... আমাকে পা...চ হাজার টাকা দিবে বলে য... যদি আমি তার
কাজ করে দিই...
: হুম্ম... তারপর??
যতিন ঢোক গিলে আবার
বলে " ও.. ওই জংশন রোডের জংলের একটু ভিতরে.. একটা বড় বোতল থাকবে ওটা এনে দোকানে
রাখতে হবে... আমি সেটাই করেছি স্যার... আমি অনেক গরীব মানুষ... উপার্জন কম আমার...
বাড়িতে বুড়া বাপ আর ছোট বোন আছে....
: হুম্মম.... সবই
তো ঠিক আছে...তাহলে তুই....ছবি দেখে পালালি কেন?
: আ.. আসলে স্যার
লোক টা কে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম... যে পানির বোতলের জ... জন্য আমাকে পাঁচ হাজা...র
টাকা দিলো..... ত.. তখন ওই লোকটা বলেছিলো... এটা তে ন... নাকি এসিড আছে....
: হুম্মম...লোক টা
দেখতে কেমন ছিলো?...
: চেহারা দেখিনি
স্যার...
: কন্টেইনার টা কখন
নিয়ে যায়?
: প.. পরের ভোরেই
এসেছিলো....
: ঠিক আছে যা....
আর শোন কোন উলটা পালটা করবি না.... যাহ...
: সালাম স্যার....
বলে যতিন চলে যায়।
আলভি গলির পাশে বসেই
মাথার চুল টানছিলো আর ঘটনা গুলো পরপর মনে করছিলো। ফোন কলের শব্দে চিন্তায় বেঘাত ঘটলে
এক প্রকার বিরক্তি নিয়ে ফোন টা বের করে। স্ক্রিনে ইন্সপেক্টর বাবু'র নাম্বার দেখে আলভির
প্রসারিত ভ্রু তে কুঞ্চন হয়,,,
: হ্যাঁ ইন্সপেক্টর
সাহেব বলুন...
: গোয়েন্দা বাবু!!!!....
কিছু শুনেছেন??
: ক..কই...কি??
: ওই যে এম.পি. হিজল
পুরের মি. জামশেদ....
: হ্যাঁ.... হ্যাঁ....
কি হয়েছে??!!
: কাল রাতে উনার
ছেলেও পানিতে ডুবে আত্মহত্যা করেছে!!!...
: পানিতে ডুবে আত্মহত্যা!!!....
নাকি কেউ ডুবিয়েছে??
: না... না... কেউ
ডুবাই নি ছেলে টা নিজেই নিজেকে শিকল দিয়ে আটকিয়েছে.... সেম ওই রকম আত্মহত্যার মতো....
: উফফফফ.... শীট!!!....
আপনি কিভাবে খবর পেলেন?
: ওই যে সব থানা
গুলোয় ইনফার্ম করেছিলাম... ওই ছেলেও নাকি পাপ মুক্তি এসব কি যেন বলত....
: আমার তো এখান থেকে
হিজলপুর যেতে চার ঘন্টা লেগে যাবে....
: জলদি বের হন....
আমরাও বের হচ্ছি...
: রাখছি...
"উফফফ আল্লাহ!!"
বলে আলভি কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করে নেয় পানি পড়ছে গাল বেয়ে। সে চেষ্টা করেও পারলো
না আরেক টা প্রাণ ঝরে গেল অবলিলায়।
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে
পা বাড়ায় হোটেলের দিকে। রুমে ফিরে দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে পরে হিজলপুরের উদ্দেশ্যে।
----------------------
বিকাল ৪ টা।
বাস স্ট্যান্ড থেকে
সোজা এম.পি'র বাড়ির সামনে এসে রিক্সা নামিয়ে দেয় আলভি কে। শহরের সব চেয়ে চাঞ্চল্যকর
খবর এখন এম.পি'র ছেলের মৃত্যু। সাংবাদিক আর দলীয় নেতা কর্মী এর ওপর উৎসুক জনতার ভীড়
ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করাই যেন দুস্কর হয়ে যায় আলভি'র জন্য। অবশেষে পুলিশ কে তার কার্ড
দেখিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছায়। ইন্সপেক্টর বাবুলাল তার টিম কে নিয়ে আগেই পৌছে গেছেন। আলভি
কে দেখে এগিয়ে এসে কর্মর্দন করে হিজলপুরের তরুণ ইন্সপেক্টর শাহীনের সাথে পরিচয় করিয়ে
দেন। অল্প কিছু কুশল বিনিময় করে কেসের বিস্তারিত জানতে চায় আলভি।
ইন্সপেক্টর মি. শাহীন
জানান " ছেলে টা প্রায় মধ্যরাতের পর এই সুইমিং পুলে এসে নিজের পায়ে শিকল বেধে
ডুব দেয়.... সাতার না জানায় নিজেকে আর বাচাতে পারেনি..."
মাথা নেড়ে আলভি বলে
" কিন্তু কেউ
এমন টা কেন করবে নিজের সাথে?....উফফ!!..."
ধীর পায়ে লাশের কাছে
এসে দাঁড়ায় আলভি। পানিতে থাকার ফলে লাশ টা অনেকাংশে ফুলে গেছে, ভয়ার্ত দৃষ্টি নিয়ে
তাকিয়ে আছে নিথর দেহ।
: স্যার... ফরেনসিক
টীম লাশ নিয়ে যেতে চাচ্ছে.... বলে এক পুলিশ সদস্য।
: হ্যাঁ... হ্যাঁ....
নিয়ে যাক.... বডি অনেক ফুলে গেছে... বলে আলভি।
: ইন্সপেক্টর বাবু!....
: জ্বি গোয়েন্দা
বাবু বলুন...
: এই বডিতেও তেমন
কিছু দেখলাম না....
: হ্যাঁ আমরাও দেখেছি
বাইরে থেকে তো কোন চিহ্ন পেলাম না....
: বলছি.... মি.জামশেদের
সাথে কি দেখা করা যাবে....
: দেখছি আমি... একটু
ওয়েট করুন...বলে ইন্সপেক্টর শাহীন বাড়ির ভিতরে চলে যান।
কিছুক্ষণ পরে আবার
ফিরে আসেন ওদের কে নিতে। আলভি ইন্সপেক্টর শাহীন আর বাবুলাল এক সাথে বাড়ির সদরে প্রবেশ
করেন।
বিলাশ বহুল কক্ষ।
পুরো ঘরটাতেই আধুনিকতার
ছোয়া। দলের নেতা কর্মীদের মাঝে মুখ ভারী করে ছোফায় বসে আছেন মি. জামশেদ।
সালাম বিনিময় করেন
ইন্সপেক্টর শাহীন পরিচয় করিয়ে দেন আলভি কে সাথে এটাও বলেন এই পুরো কেস'টাই মূলত তিনিই
ইনভেস্টিগেশন করছেন প্রথম থেকে।
: স্যার.... আমরা
সত্যিই অত্যন্ত দুখিত যে এসময় আপনাদের বিরক্ত করছি.... বলে আলভি।
দীর্ঘশ্বাস নিয়ে
মি. জামশেদ বলেন " সমস্যা নেই... বলুন.."
: স্যার... আপনি
হয়ত জানেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হয়েছে কিশোর বয়সী ছেলে মেয়ে'রা.....
: হুম্ম... কাল রাতেই
তো নিউজ টা দেখলাম...
: আমরা আপনার সাথে
পার্সোনাল ভাবে কথা বলতে চাই....
মি. জামশেদ চোখে
কিছু ইশারা করতে ধীরে ধীরে সব নেতা কর্মীরা উঠে বাইরে চলে যায়।
: হুম্ম বলেন...
কি বলবেন...
: আপনার ছেলের মৃত্যু
তো আনইউজুয়াল এটা মানেন?
: অবশ্যই আনইউজুয়াল!!....
কোন ভাবেই আমার ছেলে সুইসাইড করতে পারে না.....
: তাহলে একটু খুলে
বলুন... কিছুদিন আগে থেকে ছেলের আচরণে কোন পরিবর্তন ছিলো কিনা?
: দেখুন.... আমাকে
তো রাজনীতির কাজে বাইরে থাকতে হয় বেশি.... তাই আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না... তবে...
: তবে??..
: কাল রাতে আমার
মিসেস বলেছিলো ছেলের কোন কারণে মন ভালো নেই......
চলমান....
( গল্প টি আপনার
কেমন লাগছে কিংবা এর প্লটের কোন ভুল ত্রুটি থাকলে কমেন্ট বক্সে জানানোর অনুরোধ রইলো)
0 Comments