Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ১৯

লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

বাবার কথায় হকচকিয়ে ওঠে মোহ। কেন যেন তার বাবা তটিনীকে যেমন ভালোবাসেন তাকে তেমন ভালোবাসেন না। প্রায়ই তাকে অবহেলা করেন। এতদিন মোহ ভেবেছিল সে বড় বলে তার বাবা তার সাথে এমন করেন। কিন্তু আজ তার বাবার এমন সিদ্ধান্তে সে একমত হতে পারলো না। তৌফিক ইসলাম কখনোই তার মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না।

মোহ রেগে তৌফিক ইসলাম কে উদ্দেশ্য করে বলে,
“বাবা, তুমি আমার সাথে এমন কেন করো? কখনো আমার কোনো মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করো না। আজ আমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে কিন্তু আমার মতামত ছাড়াই। কেন বাবা? আমি কী তোমার মেয়ে না?”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে হাপিয়ে ওঠে মোহ। তটিনী তার আপার পাশে দাঁড়িয়ে সব টা দেখছে। খারাপ লাগলেও বাবার ভয়ে কিছু বলতে পারছে না। তার বাবার রাগ সম্পর্কে অবগত সে।
মোহ'র কথা শুনে তৌফিক ইসলামের রক্ত গরম হয়ে যায়। মুখে মুখে তর্ক সহ্য করতে পারেন না তিনি। তার উপর মোহ'র এতো বড় বড় কথায় যেন তৌফিক ইসলামের মাথায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি উঠে মোহ'র গালে সজোরে একটা থাপ্পড় মারেন। আরিফা বেগম ও তটিনী কেঁপে ওঠে। মোহ'র চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
তৌফিক ইসলাম রেগে মোহ'র উদ্দেশ্যে বলেন,
“না তুই আমার মেয়ে না। শুনেছিস? তুই আমার মেয়ে না। আর তোর মতামতের কী দরকার। তোকে এতবছর খাইয়েছি, পড়িয়েছি আর কী লাগবে? তোর ব্যাপারে সমস্ত সিদ্ধান্ত আমিই নেব। তোর কোনো কথা গ্রহনযোগ্য হবে না। আর এখন থেকে আমি তোকে এই বাড়িতে থাকতে দেবো না। আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যা তুই।”
কথাগুলো বলেই হনহন করে চলে যান তিনি। মোহ সেখানে দাঁড়িয়েই অশ্রুজল ফেলতে থাকে। আরিফা বেগম মোহ'র কাছে আসেন। মোহ কে জড়িয়ে ধরে বলে,
“মোহ, কেন করলি এমন? তুই জানিস না তোর বাবা সব থেকে বেশি তার রাগ আর অহংকার কেই প্রাধান্য দেয়। এখন কী হবে মা?”
পাশ থেকে তটিনী কাঁদতে কাঁদতে বলে, “মা, বাবা তো আপাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বললো। এখন আপা কোথায় যাবে?”
মোহ তাদের কথা শুনে কান্না থামায়। দুজনকেই উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি থাকবো না এখানে। বাবা যখন বলেছে আমাকে চলে যেতে তখন আমিও এখানে আর থাকতে পারবো না?”
আরিফা বেগম মোহ'র কথা শুনে রেগে যান। কপট রাগ দেখিয়ে তিনি বলেন, “কোথায় যাবি তুই? তুই যুবতী মেয়ে। একা একা কোথায় থাকবি? না না, তোর কোথাও যেতে হবে না। এখানেই থাকবি তুই।”
মোহ উল্টো রাগ দেখিয়ে বলে, “আর না মা। তোমার স্বামী আমায় কথায় কথায় অপমান করে। গায়ে হাত তোলে। আমার কোনো কথা গ্রাহ্য করে না। আর আজ তো বাড়ি থেকেই বের হয়ে যেতে বললো। আমি যাবোই। আমি আর এসব সহ্য করতে পারবো না।”
আরিফা বেগম মোহ'র পানে টলটলে চোখে তাকায়। “আমার কথা শুনবি না তুই?”
মোহ জোড়ে শ্বাস ছাড়ে। কোনো কথা না বলে দৌড়ে উপরে চলে যায়। আরিফা বেগম আর তটিনী কাঁদতে থাকে। কিছুক্ষন পর মোহ নিচে আসে। হাতে দুটো ব্যাগ। আরিফা বেগম আর তটিনী দৌড়ে যায় মোহ কে আটকাতে। তবে মোহ শোনে না। মা ও বোন কে শান্তনা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
____________
মোহ তার বান্ধবী টিনা'র বাড়িতে গিয়ে ওঠে। টিনা'র মা বাবার ব্যবহার টা অনেক ভালো ছিল যা মোহ কে মুগ্ধ করে। আজ দু'দিন মোহ টিনা'র বাড়িতে। টিনা আর মোহ একসাথে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বের হয়। মাঝরাস্তায় যাওয়ার পর পিছন থেকে কারো ডাক শুনে থামে মোহ। তাকিয়ে দেখে প্রহর ডাকছে তাকে। প্রহর মোহ কে থামতে দেখে দৌড়ে তার কাছে আসে।
“ভার্সিটিতে যাচ্ছো তোমরা?”
মোহ কিছু বলে না। তবে টিনা হেসে বলে, “হ্যাঁ। ভার্সিটিতেই যাচ্ছিলাম, আপনি যাবেন আমাদের সাথে?”
মোহ মনে মনে টিনার কাজে বিরক্ত হয়। তবে তা মুখে প্রকাশ করে না। প্রহর টিনার কথায় মৃদু হাসে। যাক, মোহ'র সাথে একটু সময় কাটানো যাবে। প্রহর মোহ ও টিনার পিছন পিছন হাটতে থাকে।
____________
ক্লাসে বসে ফোনটা হাতে নিতেই প্রহরের ফোনে একটা নোটিফিকেশন আসে। যেটাতে ক্লিক করতেই প্রহর হতভম্ব হয়ে যায়। আনিকা..! আনিকা'র ভি'ডিও..! সেটা আর কেউ না তার বন্ধু মাহির ভাইরাল করেছে....।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu