Ad Code

সেই তুমি (সিজন - ২) পর্ব - ৩

 লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা

ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো তুর্য হীরের গালে। চড়ের মাত্রা টা এতোটাই তীব্র ছিল যে হীর ছিটকে নিচে পড়ে যায়। এই মুহূর্তে তুর্যর কোনো হুশ নেই। হীরের ঠোঁটের কাটা জায়গা থেকে রক্ত ঝড়ছে সেটা তুর্যর চোখে পরছে না। রাগে তার কপালের রগ ফুলে গেছে। হীরের চুলের মুঠি ধরে নিচে থেকে উঠিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো তুর্য। সে কি করছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না। এক মিনিট আগে সে হীরকে চড় মেরেছে আর এখন হীরকে বুকে জরিয়ে ধরে আছে।
এমন একটা কান্ড ঘটে যাবে সেটা আমার চিন্তা ধারার বাইরে ছিল।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,,
বৃষ্টি শুরু হলে, প্রতিবারের মতো ছাদে চলে আসি ভেজার জন্য। বৃষ্টির সময় কেউ ছাদে আসে না। এজন্যই মনের সুখে ভিজতে পারি। কিন্তু আজ যখন ভিজছিলাম তখন হঠাত পিছনে ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া একদম আমার গা ঘেসে দাড়িয়ে আছেন। এভাবে আচমকা ভাইয়াকে দেখে আমি ভয় পেয়ে যাই। নিজেকে সামলাতে না পেরে পিছন দিকে পরে যেতে নিলে ভাইয়া আমার কোমড় আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
ভাইয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে আছি আমি। ওই চোখ দুটোয় কেমন যেনো একটা নেশা লেগে আছে। নেশার ঘোর আমাকে তার দিকে টানছে। নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে দিলাম আমি।
অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি ভাইয়ার সামনে। একটু আগে যেই কাজটা করেছি তার জন্য যেরা করা হচ্ছে আমাকে। জানি না আমার কি হয়েছিল কেনো করলাম এই কাজটা। লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে।
তুর্য ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আমাকে প্রশ্ন শুরু করলো,
-- কি ছিল ওটা?
ভাইয়ার কন্ঠ শুনেই আমার পা কাঁপা শুরু হয়ে গেছে। কোনোরকম কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দিলাম,
-- সরি আসলে কিভাবে কি হলো বুঝতেই পারলাম না।
-- এটা কি ছিল হীর!
-- সে কি তুমি মানে আপনি জানেন না! ওটা চুমু ছিল।
-- সেটা আমিও জানি যে চুমু ছিল। কিন্তু কারণটা জানতে চাই।
কি উত্তর দেবো বুঝতে পারছি না। আমার এমনটা করার পিছনে যে কোনো কারণ ছিল না সেটা কি সে মানবে? আচ্ছা আমি যদি ভাইয়াকে আমার বয়ফ্রেন্ড হতে বলি কেমন হবে! রাগ করবে না তো! না না রাগ করবে কেনো। আমি কি কোনো অংশে কম নাকি! যথেষ্ট সুন্দরী আমি। সাহস করে বলেই দেখি।
-- তুর্য ভাইয়া!
-- বল।
-- আপনি,, আপনি কি,, আপ,,
-- এতো ভনিতা না করে বলতো।
-- আপনি কি আমার বয়ফ্রেন্ড হবেন? আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড হলে আমার সব বান্ধবীরা জ্বলে পুরে মরে যাবে।
কথাটা বলতে দেরি হয়েছে কিন্তু তুর্য ভাইয়ার আমাকে চড় মারতে দেরি হয় নি।
বর্তমান,,,,
পরম আবেশে তার বুকে আগলে রেখেছেন আমাকে। এখন আমার খুশি হওয়া উচিত নাকি কষ্ট পাওয়া উচিত বুঝতে পারছি না। ব্যাপারটা অনেকটা জুতা মেরে গরু দানের মতো লাগছে। অনেকটা অভিমান নিয়ে ভাইয়াকে নিজের কাছে থেকে সরিয়ে দিলাম
-- আপনি আমাকে চড় কেনো মারলেন! আমি কি দেখতে খারাপ! আমি দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। এজন্য আমি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করি। আমি আপনাকে আমার বয়ফ্রেন্ড হওয়ার প্রপোজাল দিতাম না। আজকে আপনি আমাকে কলেজে দিয়ে আসাতে আমার সব ফ্রেন্ডরা ভেবে নিয়েছে আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড। তাই আমিও ভাবলাম হলে ক্ষতি কোথায়! কাজিন কি বফ হতে পারে না!
-- আমাকে কবে বুঝতে পারবি বল তো তুই? তুই আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানাতে চাইছিস শুধুমাত্র শো অফ করার জন্য। ভালোবাসে কাছে এলে ঠিকই আপন করে নিতাম। আমাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে শো অফ করতে পারবি। কিন্তু এসবকিছুর মাঝে আমার মনটা কতোটা কষ্ট পাবে ধারণা আছে তোর?
-- এখানে কষ্ট পাওয়ার কি আছে! আমিও তো আপনার গার্লফ্রেন্ড হবো তাই না। আর আমাকে ভালোমতো দেখেছেন কখনও? হিয়ার থেকেও বেশি সুন্দর আমি আব্বু বলে।
-- সব ছেলেরা বাইরের সৌন্দর্য চায় না হীর। অনেকের কাছে ভালোবাসাটাই সব।
-- হুম বুঝলাম। এখন উত্তর কি হ্যাঁ নাকি না?
-- যেদিন ভালোবেসে আমার কাছে আসবি সেদিন ঠিকই আপন করে নেবো। আপাতত দশ হাত দূরে থাকবি আমার।
কথাটা বলে ভাইয়া সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি এখনও ভেবে পাচ্ছি না আমি ভুলটা কোথায় করলাম। আমার সব বান্ধবীদের রিলেশন তো এভাবেই শুরু হয়েছিল। ভালোবেসে কাছে কিভাবে আসে সেটা তো আমার জানা নেই!!!
ছাদ থেকে নেমে সোজা বাসায় চলে গেলাম। সেখানে গিয়েও শান্তি নেই হিয়া চেচামেচি শুরু করে দিয়েছে মেঝে ভিজে যাওয়াতে। আমি নিশ্চিত এই মেয়েটা আমার বোন হতেই পারে না। হিয়ার বকবক কানে না তুলে সোজা রুমে চলে গেলাম। এখন ভেজা কাপড় না ছাড়লে জ্বর নিশ্চিত।
🍁
🍁
ব্যলকোনিতে দাড়িয়ে স্মোক করছে তুর্য। এখনও ভেজা অবস্থাতেই আছে। সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে কষ্টগুলো উড়িয়ে দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। বুকের বা পাশটা ভীষণ ব্যথা করছে। আজ হীর নিজ থেকে তার কাছে এসেছিল আর সে ফিরিয়ে দিয়েছে। নিজের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সে তো এটাই চাইতো হীর তার কাছে আসুক, তাকে আপন করে নিক।
কিন্তু এভাবে তো চাইতো না। আপনমনেই হেসে ফেলে তুর্য। হীর আসলেই একটা পিচ্ছি। ভালোবাসার মতো জটিল সমীকরণ সে বুঝবে না। তুর্যর এটা আশা করাও ঠিক না। তুর্যর ভালোবাসা কি আদোও হীর কখনও বুঝবে না!!
সিগারেটে শেষ টান দিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো তুর্য।
বিছানায় বসে চকোলেট খাচ্ছি আর ভাইয়ার কথার মানে খুঁজছি। কি বললেন কিছুই বুঝি নি আমি। বড় হয়েছে তাই বলে এতো জটিল কথা বলতে হবে কেনো! একটু সহজ ভাবেও বোঝাতে পারতো বিষয়টা। ভালোবেসে ধরা দেওয়ার অর্থ কি! ভালোবাসা তো বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সম্পর্ক। এতোটুকু বিষয়কে এতো জটিল বানানোর কি দরকার।
রাতে সবাই ছাদে আড্ডা বসিয়েছে। আড্ডার মধ্যমণি তুর্য ভাইয়া। আমি চুপচাপ এক কোনায় বসে আছি। বিকেলের কাজের জন্য লজ্জা লাগছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে ভাইয়াকে ওভাবে বলাতে সে কষ্ট পেয়েছে। আমার নিজেরও খারাপ লাগছে। ভাইয়াকে সরি বলা উচিত। যেই ভাবা সেই কাজ। আড্ডা শেষে ভাইয়াকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! সরি! প্লিজ ক্ষমা করে দিন! আমার ওসব বলা ঠিক হয় নি।
-- Its ok. আর আমিও সরি তোকে ওভাবে চড় মারা উচিত হয় নি।
-- হ্যাঁ।
-- কি বললি!
-- না মানে আমি শুধু নিজের স্বার্থটাই দেখেছিলাম। আপনার দিকটাও ভাবা উচিত ছিল আমার।
-- যা ঘুমিয়ে পড়।
ভাইয়ার ব্যবহার আসলেই উদ্ভট। আমার কথার উত্তর না দিয়ে চলে গেলেন।
🍂
রাতে,,
হীর এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে আর তুর্য নেশা লাগানো চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যালকোনি দিয়েই হীরের ঘরে ঢুকেছে সে। হীরের মাথার কাছে বসে এক দৃষ্টিতে দেখছে তার ঘুমন্ত পরীর মুখখানা। আস্তে করে হীরের গালে হাত রাখতেই দেখলো গালে এখনও কালচে দাগ পরে আছে। থাপ্পড়টা দেওয়াতে হীর অনেক ব্যথা পেয়েছে বুঝতে পারছে সে। ঠোঁট টাও ফুলে গেছে। হীরের গালে আর ঠোঁটে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে হীরকে জরিয়ে ধরলো তুর্য।
-- তুই কেনো বুঝতে পারিস না তোকে কতোটা ভালোবাসি। এতো বছর পর যেদিন তোকে প্রথম দেখলাম ইচ্ছে হয়েছিল তোকে কলিজার ভিতর ঢুকিয়ে রাখি। কিন্তু তুই তো আমাকে বুঝতেই পারিস না। তোর মনে কি একবারের জন্যও আমার চিন্তা আসে না? সবকিছু তোকে খুলে বলতেও পারি না। কিভাবে তোকে সব বলবো আমি যে নিরুপায়। তুই কি একবারের জন্যও আমাকে ভালোবাসতে পারিস নি!
কথাগুলো বলতে বলতে দুচোখ বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পরে তুর্যর। হীরের কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। এই মুখটার দিকে সারাজীবন তাকিয়ে থাকলেও হয়তো তার পিপাসা মিটবে না। হীরকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরলো তুর্য।
🍁
ঘুমের মধ্যে বারবার মনে হয়েছে কেউ আমাকে জরিয়ে ধরে রেখেছে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর কাউকেই খুঁজে পাই নি। জানি না কি হচ্ছে আমার সাথে এসব। সবসময় মনে হয় কেউ আমার উপর নজর রাখছে।
কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হচ্ছিলাম তখন আম্মু ঘরে এলো।
-- হীর! তুর্যদের বাসায় একটু কম যাবি এখন থেকে। তাফসির সাথে দরকার হলে ফোন করে ডেকে আনিস। ওদের বাসায় যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
কথাটা বলে আম্মু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমাকে আর প্রশ্ন করার সুযোগ দিলেন না। কিন্তু তুর্য ভাইয়াদের বাসায় যেতে মানা করলো কেনো? ভাবতে ভাবতে বাসা থেকে বের হলাম। এখন রিকশার জন্য দাড়িয়ে থাকতে হবে। তখন সেখানে তুর্য ভাইয়া বাইক নিয়ে হাজির হলেন। আমাকে বললেন তিনি কলেজে নামিয়ে দিবেন। আর আমিও কি মনে করে যেনো উঠে পরলাম।
-- ধরে বস ভালোমতো।
-- ধরেছি তো।
-- কালকের মতো পরে গেলে খবর আছে।
ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে বসলাম। কিন্তু ভাইয়া বাইক কবে কিনলেন!
-- বাইকটা কার ভাইয়া?
-- কার মানে কি! আমার বাইক।
-- আপনি তো তাফসি আপুর বিয়ের পর চলে যাবেন তাহলে কেনো কিনলেন?
-- কে বলেছে চলে যাবো? এখন থেকে দেশেই থাকবো। খুব শীঘ্রই বিজনেস দেশে সেট করে ফেলবো।
-- ওহ। হুম ভালোই হবে। ভাইয়া! আপনি কি এখনও কালকের জন্য রাগ করে আছেন?
-- রাগ করে থাকলে তোকে নিয়ে এতোদূর আসতাম না। রাস্তার মাঝে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতাম।
ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ কপালে উঠে গেছে। এই লোক বলে কি!
আমাকে কলেজের গেইটে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া চুল ঠিক করছেন। কালকের মতো আজকেও মেয়েরা ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েগুলোও না মাত্রাতিরিক্ত ছ্যাঁচড়া। কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই চোখ দিয়ে গিলে খায়। কেনো যেনো খুব হিংসা হচ্ছে মেয়েগুলোর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে।
আচমকা আমার গালে চুমু বসিয়ে দিলেন তুর্য ভাইয়া। এভাবে সবার সামনে এমন কাজটা করায় আমি থ মেরে দাড়িয়ে আছি। ঘটনা এখানেই শেষ হলে পারতো। কিন্তু না ঘটনা ঘটা আরো বাকি ছিল। বাইক থেকে নেমে ভাইয়া আমার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গেলেন। আমি পিছন থেকে আমার হাত টেনে ধরছি কিন্তু ভাইয়া সজোড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বান্ধবীদের সামনে নিয়ে আমাকে দাড় করিয়ে দিলেন।
নিশ্চিত সবাইকে বলে দেবেন তিনি আমার বফ নয় বরং কাজিন। সবার সামনে আমার এতোটুকু সম্মাণ আর থাকবে না। চোখমুখ খিচে ধরে বার বার দোআ করছি যাতে ভাইয়া হাটে হাড়ি না ভাঙে। কিন্তু ভাইয়া যা করলেন তাতে আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলাম। ভাইয়া সবার সামনে আমাকে হাটুতে বসে প্রপোজ করলেন।
এখনও ভাইয়া আগের পজিশনেই বসে আছেন আর আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পুরো কলেজ থ মেরে দাড়িয়ে আমাদের দেখছে। আমিও ফ্রিজ হয়ে সবটা দেখছি।
-- জান হাতটা দাও না!
ভাইয়ার মুখে জান কথাটা শুনে আমার জান গলা অব্দি এসে পরেছে। যেকোনো সময় বেরিয়ে যাবে। আমি হাত দিচ্ছি না দেখে ভাইয়া নিজেই আমার হাত টা নিয়ে একটা রিং পরিয়ে দিলেন। রিং পরানো অব্দিও মানা যেতো কিন্তু এর পর ভাইয়া আমার হাতে একটা চুমু খেলেন। আমি এখনও মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি। আমার বান্ধবীরা সবাই তুর্য ভাইয়ার সাথে ভাব জমাচ্ছে কিন্তু এখন আমি সেটা দেখছি না। আমি শুধু ভাবছি হলো টা কি।
ভাইয়া সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে আমাকে সেখান থেকে নিয়ে চলে এলেন। বাইক চলছে আপন গতিতে। আর আমি পিছনে চিন্তামনির মতো বসে আছি।
একটা রেষ্টুরেন্টের সামনে এসে ভাইয়া বাইক থামালেন। এবারো হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গেলেন। লোকটা কি করতে চাইছেন বুঝতে পারছি না। একটা টেবিলে আমাকে বসিয়ে খাবার অর্ডার করলেন। আমার ফেভারেট বিরিয়ানি অর্ডার করেছেন। আচ্ছা সে কিভাবে জানলো বিরিয়ানি আমার পছন্দ!!
-- আপনি কিভাবে জানলেন আমার বিরিয়ানি পছন্দ?
-- নিজেকে আয়নায় দেখেছিস? কেমন গোলটুশি তুই! দেখলেই বোঝা যায় রিচ ফুড পছন্দ করিস।
ভাইয়া আমার ইগো নামক পাখিটাকে আহত করেছেন। একটু স্বাস্থ্য ভালো আমার তাই বলে এভাবে বলতে পারে না সে।
-- কলেজে ওগুলো কি ছিল হ্যাঁ! আপনি না বললেন বয়ফ্রেন্ড হবেন না তাহলে এখন কেনো হ্যাঁ করলেন?
-- আমি হ্যাঁ কখন করলাম! ওগুলো তো অভিনয় ছিল।
-- মানে!
-- মানে তোকে তো আর সবার সামনে অপমানিত হতে দিতে পারি না তাই না। তাই একটা নাটক ছিল এটা। এখন সবাইকে বলবি তোরও বফ আছে।
ভাইয়ার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এই লোকটা আসলেই উদ্ভট। কখন কি করে কেউ বুঝতে পারে না। আমি তো একদমই না। তখনই সেখানে বিরিয়ানি চলে এলো। আর আমি দীন দুনিয়া ভুলে বিরিয়ানির উপর হামলে পরলাম।
পেট ভরে খাওয়া শেষে আবার শুরু হলো বাইক রাইড। ভাইয়ার সাথে আজকে কাটানো দিনটা আমার সবসময় মনে থাকবে। হয়তো এতোটা খুশি আমি আগে কখনও হই নি। বাসায় সবাই আমাকে আদর করে। কিন্তু একমাত্র আব্বু ছাড়া তেমন কেউ একটা করে না। বড় চাচি, আম্মু, ছোট চাচা-চাচি সবাই আমার থেকে একটু দুরত্ব বজায় রাখে। এই জিনিসটা আমায় ভীষণ কষ্ট দেয়। কিন্তু আমি এর কারণ জানি না। খুব ভালো লাগছে আজ ভাইয়ার সাথে। মনে হচ্ছে আমি খোলা আকাশের কোনো মুক্ত পাখি।
তুর্য ভাইয়ার মায়ায় পরে যাচ্ছি আমি। তার উদ্ভট কাজ গুলোও এখন আমাকে তার দিকে টানে। আচ্ছা এই মানুষটা কি সারাজীবন এভাবেই আমাকে সুখে রাখবে?
কলেজ আওয়ার শেষ হওয়ার সময়ে ভাইয়া আমাকে বাড়ির গেইটে নামিয়ে দিলেন। ভাইয়া বাইক ঘুরিয়ে চলে যেতে নিলে আমি পিছন থেকে ডাক দিলাম।
-- ভাইয়া! কালকেও কি এভাবে ঘুরতে নিয়ে যাবেন?
-- কেনো ক্লাস নেই তোর?
-- আছে। কিন্তু এভাবে কেউ কখনও আমাকে সময় দেয় নি। আপনার সাথে কাটানো আজকের দিনটা আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন ছিল। আমি কি আপনার কাছে আরেকটা দিন চাইতে পারি?
হীরের আকুতি ভরা কন্ঠে তুর্যর চোখ ভরে এসেছে। কিন্তু সে তার চোখের পানি হীরকে দেখাতে চায় না। তাই হু হা কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। হীর তুর্যর যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। নিজের অজান্তেই এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো হীরের চোখ দিয়ে।
বিকেলে কোনো কারণ ছাড়াই বেশ কিছুক্ষণ কান্না করলাম আমি। মাঝে মাঝেই আমার সাথে এমন হয়। কোনো কারণ ছাড়াই চোখে পানি এসে পরে।
সন্ধ্যার পর তুর্য ভাইয়াদের বাসায় সবাই বিয়ে নিয়ে আলোচনা করছে। আম্মু আগেই আমাকে মানা করে দিয়েছে সেখানে যেতে। খুব কষ্ট হচ্ছে। বরাবরের মতো এবারো আমাকে বাড়ির সবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হলো। ছাদের এক কোনায় দাড়িয়ে আছি, চোখ দিয়ে আপনা আপনিই পানি পরছে। হঠাত কেউ একজন একটা কফি মগ এগিয়ে দিলেন। সেদিক ঘুরতেই দেখি তুর্য ভাইয়া হাতে দুইটা কফি নিয়ে দাড়িয়ে আছেন।
-- এভাবে চোখের পানি ফেললে তো শরীরে লবন কমে যাবে। কফি খেয়ে মুডটা ঠিক কর।
-- আপনি এমন উদ্ভট কথা কেনো বলেন সবসময়?
-- আমার উদ্ভট কথায় তুই বিরক্ত হয়ে যাস যে তাই বলি।
-- কফিটা ভালো হয়েছে কে বানিয়েছে।
-- আমি।
-- আপনি এতো ভালো কফি বানাতে পারেন জানা ছিল না।
-- এমন অনেক কিছু আছে যা তুই জানিস না।
-- মানে!
-- এখানে কি করছিলি?
-- নাচছিলাম।
-- তাই নাকি আমাকে একটু নেচে দেখা তো।
-- আপনি সত্যি উদ্ভট একটা মানুষ।
-- হীর!
-- হুম!
-- আমাকে ভালোবাসিস?
-- এটা কেমন প্রশ্ন?
-- বাসিস না তো! মগটা দে নিচে যাবো।
তুর্য ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন। আমি তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি এক দৃষ্টিতে। তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমার কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা ভাইয়া কি আমাকে ভালোবাসেন? এজন্যই কি আমার এতো কেয়ার করছেন? না না সে আমার কেয়ার করে না। সে তো,,, তাকে তো আমি বুঝতেই পারি না। তার সবকাজ উল্টো আমাকে কনফিউজ করে দেয়।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu