লেখিকাঃ তাবাসসুম কথা
পরদিন সকালে কলেজে যাওয়া জন্য রাস্তায় বের হতেই দেখি তুর্য ভাইয়া বাইক দাঁড় করিয়ে বসে আছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে বাইকে তার পিছনে বসে পরলাম। আজকে তুর্য ভাইয়া বলার আগেই তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে বসলাম। ভাইয়া পিছন দিকে ঘুরে ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকালেন। আজ তার তাকানো দেখে ভয় করছে না বরং লজ্জা লাগছে। আমি লজ্জামিশ্রিত হাসি দিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম। ভাইয়া কিছু না বলে বাইক স্টার্ট দিলেন।
বাইক চলছে আপনগতিতে অজানার পথে। এই খোলা আকাশের নিচে দমকা বাতাস গায়ে লাগিয়ে এভাবে উড়ে যাওয়ার সুখ আজকে প্রথম পেলাম। মনের কোনে ভালোলাগা গুলো দোলা দিচ্ছে।
ভাইয়া আমাকে নিয়ে শহর থেকে অনেকটা দূরে একটা নদীর তীরে নিয়ে গেলেন। পরিবেশটা এতো মনোরম যে দেখেই আমার মন ভরে গেলো। জীবনের বেষ্ট সারপ্রাইজ হয়তো এটা। আমার জন্য যে আরো সারপ্রাইজ ওয়েট করছিল সেটা আমি বুঝতেই পারি নি।
ভাইয়ার হাত ধরে কিছুদূর আগাতেই একটা ছোট্ট কুঁড়ে ঘর দেখতে পেলাম। ঘরটা ঠিক আমার স্বপ্নের বাড়ির মতো ফুল আর সবুজ গাছপালা দিয়ে সাজানো। ভাইয়া আমাকে ঘরের ভিতর বসিয়ে কোথাও চলে গেলেন। আর আমি আশে পাশে সব দেখছি। আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না ভাইয়া আমার জন্য এতো কিছু করেছেন। কিছুক্ষণ বাদে ভাইয়া একটা ব্যাগ হাতে ফিরে এলেন। ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে চেঞ্জ করতে বললেন। ব্যাগে একটা নীল শাড়ি আর নীল কাঁচের চুড়ি ছিল।
শাড়িটা পরে বাইরে বের হতেই আমার চোখ ছানাবড়া। ভাইয়া একটা নীল পাঞ্জাবী পরে রান্না করছেন। আমি অবাকের শেষ সীমায় পৌঁছৈ গেছি ভাইয়ার এই রূপ দেখে। পাঞ্জাবীতে ভাইয়াকে অসম্ভব সুদর্শন লাগছে। আমি গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। নাহ আজকে আর নিজেকে ধরে রাখা যাবে না। আজকে আমি তার উপর ক্রাশ খেয়ে নিয়েছি। লোকটা এতো সুদর্শন কেনো! পুরোই চকোলেট এর মতো। ইচ্ছে করে খেয়ে ফেলি।
-- ওভাবে কি দেখছিস? খেয়ে ফেলবি নাকি! নজর লাগাস না আমার উপর।
ভাইয়ার কথায় ভীষণ লজ্জা লাগছে।
-- আপনি রান্না করছেন! আর পাঞ্জাবি!
-- কেনো পাঞ্জাবী ছাড়া থাকলে ভালো লাগতো বুঝি!
-- আমি কি সেটা বলেছি নাকি!
-- আজকে আমরা ছোট খাটো একটা পিকনিক করবো। তাই রান্না করছি।
-- সত্যি!!! জানো আমি আগে কখনও পিকনিক করি নি। না মানে জানেন। সরি এক্সাইটমেন্টে তুমি বলে ফেলেছি।
-- Its ok Puchki.
-- ভাইয়া আমি কিন্তু মোটেও পুচকি নই। আমি বড় হয়ে গেছি আর সব বুঝি।
-- যেটা বোঝাতে চাই সেটা বাদে সবই বুঝিস।
-- কি!
-- কিছু না। আয় একটু হেল্প কর আমার।
-- হেল্প তাও আবার আমি! আমি তো রান্না করতে পারি না।
-- এই তো বললি বড় হয়েছিস আর রান্না করতে পারিস না!
-- আমি না পারি তো কি হয়েছে আপনি তো পারেন। আপনি করেন রান্না।
-- সব কাজ আমি একা করবো আর তুই কি করবি? কাজ ভাগ করতে হবে।
-- আপনি রান্না করেন আমি না হয় আপনাকে খাইয়ে দেবো।
কথাটা বলতেই তুর্য ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন। এতোক্ষণে বুঝলাম আমি কি বলেছি। বারবার যে কেনো এমন করি বুঝি না।
ভাইয়া একাই সব রান্না শেষ করে আমাকে খেতে দিলেন। খেয়াল করলাম ভাইয়া আবারো তার সেই বিশ্ব বিখ্যাত লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।
-- তুই না বলেছিলি কাজ ভাগ করবি। তো এখন খাইয়ে দে আমাকে।
আমি এক নজর ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে খাবার নিয়ে তার সামনে বসে পরলাম। এই প্রথম কাউকে খাইয়ে দিচ্ছি তাও আবার তুর্য ভাইয়াকে। আমি নিজেও ভাবতে পারছি না আমার মতো অলস কিনা নিজে থেকে খাইয়ে দিচ্ছে। আমি ভাইয়াকে খাইয়ে দিচ্ছি আর ভাইয়া এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। তার দুচোখের কোনায় পানি টলমল করছে। ভাইয়াকে আমি হাসতে দেখেছি, রাগ করতে দেখেছি কিন্তু তার চোখে পানি দেখিনি কখনও। তার চোখের পানি দেখে আমার ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে তাকে বুকে জরিয়ে নেই।
।
।
।
খাওয়া শেষে নদীর পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছি আমি আর ভাইয়া। ভাইয়া মনের সুখে বাদাম চিবুচ্ছে আর আমি তার দিকে তাকিয়ে থেকে চোখের তৃষ্ণা মিটাচ্ছি। আজ ভাইয়ার প্রতি এক অন্য ধরনের ভালোলাগা কাজ করছে। আচ্ছা ভাইয়ার প্রতি আমি এতো আকৃষ্ট হচ্ছি কেনো? আমি কি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি!! শুরুতে এই লোকটার প্রতি বিরক্তি আসতো। এখন তাকে দেখলে লজ্জা লাগে। যতোক্ষণ তার সাথে থাকি এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে। হয়তো সত্যি তার প্রেমে পরে গেছি।

আকাশে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হবে। আজকের এই বৃষ্টি আমার ভালোবাসার সাক্ষী হবে। আমার ভালোবাসার হাত ধরে আজকে এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটার স্বাদ নিবো। আপনমনে কথাগুলো বলতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। ভাইয়া আমার হাত ধরে টানছে ঘরে যাওয়ার জন্য। আমি নিজেকে তার বুকে মিশিয়ে দিলাম। বৃষ্টির ধারা আমাদের দুজনকে ভিজিয়ে একাকার করে দিচ্ছে। আমি তাকে জরিয়ে ধরে রেখেছি। কিন্তু সে এখনও আমাকে ধরে নি। যাক না ধরলো আমিই ধরে রাখবো তাকে। সারাজীবনের জন্য তাকে এভাবেই আমার বুকে আগলে রাখবো। তিনি চাইলেও ছাড়বো না হুহ।
-- হীর!
-- হুম।
-- জ্বর আসবে তোর। ছাড় আমাকে। ভিতরে চল।
-- আরেকটু থাকি না প্লিজ।
-- এভাবে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে থেকে কি লাভ হচ্ছে।
-- লাভ লোকসান না খুঁজে বৃষ্টি টা উপভোগ করেন না।
-- শরীরের সাথে চিপকে আছিস উপভোগ কি ছাই করবো।
-- ধূর আপনি একটুও রোমান্টিক না।
-- এখানে রোমান্স এলো কোথা থেকে।
-- জানি না। আরেকটু থাকতে দিন। ডিস্টার্ব করবেন না।
তুর্য মুচকি হেসে হীরকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। এভাবে তারা কতোক্ষণ ছিল জানা নেই। অনেকটা সময় পর তুর্য হীরকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে দিলো।
-- চল ঘরে চল।
-- কোলে তুলে নিয়ে যান।
-- নিজেকে আয়নায় দেখেছিস তুই? আমার কোমড়টা সালামত থাকবে নাকি তোকে কোলে তুললে?
-- আপনি আমাকে মোটা বললেন! আমার ইগো পাখিটাকে আবারো আহত করলেন আপনি।
-- ইগো পাখি টা আবার কোন পাখি আর কখন আহত করলাম!
-- আপনার জানতে হবে না। আমি যাচ্ছি।
হীর যেতে নিলে তুর্য পিছন থেকে হীরকে কোলে তুলে ঘরের ভিতর নিয়ে গেলো। হীরকে নামিয়ে দিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে হীর তুর্যর হাত টেনে ধরে পিছন থেকে। তুর্য একটু এগিয়ে এসে হীরের মুখোমুখী হয়ে দাড়ায়। হীর তুর্যর হাত দুটো নিয়ে তার কোমড়ে রাখে। সিচুয়েশনটাই এমন যে তারা নিজেও বুঝতে পারছে না কি করছে। হীর নিজের মুখটা তুর্যর সামনে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। তুর্য কিছুক্ষণ হীরের দিকে তাকিয়ে থেকে হীরকে ছেড়ে দেয়। তুর্যর কাজে হীর অনেকটাই অবাক হয়।
-- শাড়িটা পাল্টে নে জলদি। জ্বর এসে পরবে তোর।
-- আপনি চেঞ্জ করবেন না? জ্বর তো আপনারও আসতে পারে।
-- আমার চিন্তা তোর করতে হবে না। তুই নিজে চেঞ্জ কর আগে।
ভাইয়া আমাকে চেঞ্জ করতে দিয়ে নিজে বাইরে বৃষ্টিতে দাড়িয়ে রইলেন। আমি মুগ্ধ নয়নে শুধু তাকে দেখছি। মানুষটা এতো ভালো সত্যি জানা ছিল না।
আমি চেঞ্জ করতে করতে বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। ভাইয়া চেঞ্জ করে এসে আমাকে বাইকে বসতে বললেন। বাসায় যেতে হবে, কেউ জানলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ভাইয়া বাইক চালাচ্ছেন আর আমি লুকিং গ্লাসে তাকে দেখছি। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে বাসায় ফিরে যেতে। বাসায় যাওয়ার সাথে সাথেই আমরা আবার আলাদা হয়ে যাবো।
বাড়ির গেইটের সামনে আমাকে নামিয়ে দিয়ে ভাইয়া চলে গেলেন। আমি একরাশ মন খারাপ নিয়ে বাসায় চলে এলাম। রাতে শরীর কাপিয়ে প্রচন্ড জ্বর এলো আমার। এই প্রথম হিয়ার চোখে আমার জন্য মায়া দেখতে পেলাম আমি। শাকচুন্নিটা রাত প্রায় ১ টা পর্যন্ত আমার মাথার কাছে বসে ছিল। জ্বর টা একটু ছাড়ার পর হিয়া ওর ঘরে গেলো। কিন্তু আমার অন্য চিন্তা হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে আমার জ্বর হয়েছে, ভাইয়া তো আরো বেশিক্ষণ ভিজেছে। তার মানে কি তারও জ্বর হয়েছে।
বিছানায় থেকে লাফ দিয়ে উঠে পরলাম। অনেক চিন্তা হচ্ছে। ভাইয়া সুস্থ আছে তো! আমার কাছে তো ভাইয়ার নাম্বারও নেই যে ফোন করবো। চুপি চুপি গিয়ে হিয়ার ফোন থেকে ভাইয়ার নাম্বার টা টুকে নিলাম। দুই-তিন বার ফোন করলাম কিন্তু ভাইয়া ফোন ধরছেন না। আমার টেনশন আরো বেরে গেলো। উপায়ন্তর না পেয়ে ব্যালকোনিতে শাড়ি বেঁধে বহুকষ্টে নিচে নামলাম। ভাগ্যিস ভাইয়ার ব্যালকোনির গ্লাস টা ফাঁকা ছিল।
ভাইয়ার কপালে হাত রাখতেই কেঁপে উঠলাম আমি। শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে। কি করবো কিছু মাথায় আসছে না। দরজা টা খুলে পা টিপে টিপে কিচনে গিয়ে পানি নিয়ে এলাম। ভাইয়ার মাথায় জল পট্টি দিতে থাকলাম আর একটু পর পর শরীর মুছিয়ে দিলাম। জ্বরের তীব্রতা কমার কোনো লক্ষণই নেই। কি করবো ভেবে না পেয়ে ভাইয়াকে জরিয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলাম। জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। আমার দুচোখ ভিজে যাচ্ছে বার বার ভাইয়ার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী।আমি জেদ না করলে আজকে সে সুস্থ থাকতেন।
সারা রাত হীর তুর্যকে নিজের সাথে মিশিয়ে তার মাথায় ভেজানো কাপড় দেয়। ভোরের দিকে তুর্যর জ্বর কমলে হীর তুর্যকে বুকে নিয়েই ঘুমিয়ে পরে।
সকালে তুর্যর ঘুম ভাঙতেই খেয়াল করে সে কারো উপর শুয়ে আছে। একটু খেয়াল করতেই দেখে একটা মেয়ের উপর শুয়ে আছে সে। মেয়েটার মুখ চুল দিয়ে ঢেকে আছে যার জন্য তুর্য তার মুখ দেখতে পারছে না। চুল গুলো সরাতেই তুর্যর চোখ কপালে উঠে যায়। মেয়েটা আর কেউ না বরং হীর। তুর্য উঠে বসে মাথায় হাত দিয়ে হীরকে দেখতে থাকে। মেয়েটা এলোমেলো ভাবে ঘুমিয়ে আছে। পাজু হাটুর উপরে উঠে আছে। টিশার্ট টাও জায়গা মতো নেই। আর তুর্যর গায়েও তার টি শার্ট নেই। কাল রাতে কি হয়েছে তার কিছু মনেও নেই। উল্টা পাল্টা কিছু হয়েছে কি না সেই চিন্তায় তুর্য মরে যাচ্ছে।
তুর্য হীরকে আস্তে আস্তে ডাকতে থাকে, যাতে বাইরের কেউ জানতে না পারে সে আর হীর রাতে এক ঘরে ছিল। হীর ঘুম জরানো চোখে তুর্যকে এভাবে দেখে চিত্কার দেয়। শব্দ যাতে বাইরে না যায় তার জন্য তুর্য হীরের মুখ চেপে ধরে।
-- তুই আমার ঘরে কি করে এলি? আর আমার এই অবস্থা কেনো? তুই কি করেছিস আমার সাথে? আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমার ইজ্জতে হাত দিস নি তো?
-- আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন? কি যা তা বলছেন! আমি আপনার ইজ্জতে হাত কিভাবে দেবো!
-- তুই আমার ঘরে কিভাবে এলি আর আমার টিশার্ট কই?
-- রাতে আপনার টিশার্ট খুলে দিয়েছিলাম।
-- কেনো!!
-- শরীর মুছিয়ে দেওয়ার জন্য।
-- মানে!
-- আরেহ রাতে আপনার প্রচন্ড জ্বর হয়েছিল। কাপড় ভিজিয়ে মাথায় দিয়েছি আর শরীর মুছিয়ে দিয়েছিলাম তাই টিশার্ট টা খুলেছিলাম।
-- তাহলে আমি তো উপরে কিভাবে এলাম!
-- আমাকে ধরেই তো শুয়ে ছিলেন।
-- ওহ আচ্ছা। কিন্তু তুই আমার ঘরে কি করে এলি রাতে?
-- ব্যালকোনি দিয়ে। ভাগ্যিস গ্লাসটা খোলা ছিল।
-- আমাদের মধ্যে কিছু হয় নি তাই না! জ্বরের ঘোরে আমি কিছু করি নি তো!
-- করেছো তো।
-- কিহ! কি বলছিস এসব।
-- হ্যাঁ তুমি জ্বরের ঘোরে হীর মানে আমাকে ডাকছিলে। আর আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়েছো। (লজ্জা পেয়ে)
-- একটা চড় দিয়ে দাত ফেলে দেবো। এমনভাবে বলেছিস যে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-- কিসের ভয়?
-- কিছু না তুই এখনি এখান থেকে যা। যেভাবে এসেছিস সেভাবেই বিদায় হ।
ভাইয়া আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উপরে মানে আমার ঘরে পাঠিয়ে দিলেন।
আজ থেকে বিয়ের কেনা-কাটা আর যাবতীয় সব কাজ শুরু হয়ে যাবে। দুদিন পর হলুদ সন্ধ্যা। বিকেলে সবাই শপিং এ গেলাম। এর আগে ভাইয়ার সাথে আর একবারও দেখা হয় নি। অনেকবার নানারকম বাহানা দিয়ে বড় চাচিদের বাসায় যেতে চেয়েছি কিন্তু আম্মু একবারও যেতে দেয় নি। আমাদের সাথে রায়ান ভাইয়াও যাচ্ছেন তাফসি আপুর জন্য শাড়ি পছন্দ করতে। তাফসি আপু, রায়ান ভাইয়া, তুর্য ভাইয়া এক গাড়িতে যাচ্ছেন। গাড়িতে একজনের বসার জায়গা এখনও আছে। আমি ভাইয়ার সাথে বসতে গেলে ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দেয়।
-- হীর তুই নিলি-মিলি, আর হিয়ার সাথে আয়।
-- কেনো? এই গাড়িতে তো এখনও জায়গা আছে তাহলে আমি কেনো বসতে পারবো না?
-- তোকে যা বলছি তাই কর।
-- কেনো?
-- কারণ আমার সাথে রুহি বসবে। তুই অন্য গাড়িতে আয়।
ভাইয়াকে আর কিছু বলার আগেই ভাইয়া রুহি আপুকে তার পাশের ফ্রন্ট সীটে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট করলেন। ভাইয়ার ব্যবহারে আমি একটু কষ্ট পেলেও মাথা না ঘামিয়ে অন্য গাড়িতে বসে পরলাম। সারা রাস্তা আমি আর একটু শান্তিও পেলাম না। খুব ইচ্ছে ছিল সারাদিন পর ভাইয়ার সাথে একটু সময় কাটানোর কিন্তু আমার সে গুড়ে বালি।
শপিং মলে যাওয়ার পর সবাই নিজেদের পছন্দ মতো কেনা কাটা করছে। কিন্তু আমার চোখ দুটো শুধু ভাইয়াকে খুঁজছে। আসার পর থেকে একবারের জন্যও তাকে দেখি নি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করানোর পর ভাইয়া ভিতরে এলেন যদিও সাথে রুহি আপু ছিল। কিন্তু তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি ভাইয়ার সাথে কথা বলতে চাই। ভাইয়া আর রুহি আপু ট্রায়াল সেকশনের দিকে যাচ্ছেন দেখে আমি একটা ড্রেস হাতে নিয়ে সেদিকে ছুটলাম। ট্রায়াল রুমের সামনে গিয়ে আমার পা দুটো থমকে গেলো। তুর্য ভাইয়া রুহি আপুর সাথে ট্রায়াল রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আমার দুচোখ বেয়ে পানি পরছে। আমি এতোটাও ছোট নই যে বুঝতে পারবো না বন্ধ দরজার আড়ালে কি হয় বা হতে পারে।
তারা ভিতরে ঢুকেছে প্রায় ১০ মিনিট হয়ে গেছে। আমি এখনও ঠায় দাড়িয়ে আছি। আমি সবটা দেখতে চাই। আরো ৫ মিনিট পর ভাইয়া বেরিয়ে এলেন। আমি চোখে পানি নিয়ে ভাইয়ার ঠিক সামনে দাড়ানো। ভাইয়া আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে সেখান থেকে চলে গেলেন। ভাইয়ার এই ব্যবহারে আমার মনে হলো কেউ আমার বুকে ধারালো ছুড়ি দিয়ে আঘাত করছে। তবুও বেহায়ার মতো ভাইয়ার পিছু পিছু গেলাম, উদ্দেশ্য একটা বার ভাইয়ার সাথে কথা বলা। নিজের মনের অবস্থাটা তাকে বুঝিয়ে বলা খুব প্রয়োজন। ফুপি আম্মু আমাকে সেখান থেকে নিয়ে একটা কলাপাতা রঙের শাড়ি দিলেন। শাড়িটা সুন্দর কিন্ত এই মুহূর্তে সবকিছু আমার কাছে বিষের মতো লাগছে। ফুপি আম্মু আমাকে শাড়ির কথা জিজ্ঞেস করলে আমি হ্যাঁ বলে দিলাম। কিন্তু ভাইয়া সেই শাড়িটা নিয়ে রুহি আপুর গায়ে জরিয়ে দিলেন।
-- ফুপি আম্মু তুমিও যে কি করো না! এই শাড়িটা শুধুমাত্র রুহির জন্য বানানো হয়েছে। হীরের জন্য এটা না। হীর তো এখনও ছোট ওর জন্য অন্য কিছু দেখো। দেখলে রুহিকে কি সুন্দর মানিয়েছে।
-- তা ঠিক বলেছিস। তাহলে হীরের জন্য অন্য শাড়ি দেখি। (ফুপি আম্মু)
-- আরেহ হীরের কি শাড়ি পড়ার বয়স হয়েছে? ওকে সালওয়ার স্যুট নাইলে জিন্স টপস্ ওগুলো কিনে দাও।
-- আমার কিছু লাগবে না ভাইয়া। আপনার চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। ফুপি আম্মু আমার শাড়ি লাগবে না। এমনিতেও শাড়ি পড়ার বয়স হয় নি আমার। আমি অন্য কিছু নিয়ে নেবো।
-- হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। শাড়ি তো শুধু রুহির জন্য।
ভাইয়া আরো কয়েকটা শাড়ি নিয়ে রুহি আপুর উপর ট্রাই করতে লাগলেন। আমি যদি এতোই ছোট হই তাহলে কালকে আমার জন্য শাড়ি কেনো এনেছিলেন? এতোকিছু করার মানে কি ছিল? সে কি বুঝতে পারে না তার এই অবহেলা গুলো আমাকে কতোটা কষ্ট দেয়!!
বিয়ের কোনো ফাংশনের জন্যই কিছু কিনি নি আমি। শুধু হলুদের জন্য একটা শাড়ি হিয়া কিনে দিয়েছে। কিছু লাগবে না আমার। যাবোও না বিয়েতে।রুহি তো আছেই বিয়েতে তাহলেই হবে। আমি না থাকলে কেউর কিছু আসবে যাবে না। রাতে না খেয়েই শুয়ে পরেছি। কিন্তু দুচোখে ঘুম নেই। খুব কষ্ট হচ্ছে। হঠাত্ ভাইয়া এমন কেনো করছেন? যখন আমি তাকে কাছে চাইছি তখন কেনো সে অন্য কারো কাছে যাচ্ছে? সে কি বুঝে না রুহির সাথে তাকে দেখলে আমার ভিতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
0 Comments