Ad Code

বর্ষণ বিলাস পর্ব - ২৭

 লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা

- "শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করেছিস, তা একটু দাওয়াত ও দিলি না?"
ফোনের ওপার থেকে আসা শাওনের কথায় হাসে উষ্ণ। শাওনের উদ্দেশ্যে বলে,
- "আজ বাড়িতে আয়। দিচ্ছি দাওয়াত।"
শাওন হেসে বলে, "আচ্ছা।"
উষ্ণ ফোন টা নামিয়ে রাখে। বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে মোহ ঘুমিয়ে রয়েছে। জানালা থেকে সোনালি রোদ মোহ'র মুখে পড়ছে, যা তার ঘুমকে বিরক্ত করছে। সামনের কয়েকটা চুল মুখের ওপর এসে পড়েছে। দেখতে পুরো বাচ্চাদের মতো নিষ্পাপ লাগছে।
আচমকা উষ্ণের বুকের ভিতর কম্পন শুরু হয়। বার বার ভিতর থেকে কেউ একজন বলছে, "তাকাস না ওর দিকে, হারিয়ে ফেললে কষ্ট হবে।"
উষ্ণ চোখ সরিয়ে নেয়। বার বার এসব কেন মনে হচ্ছে বুঝতে পারছে না সে। নিজেকে স্বাভাবিক করে সে মোহ'র কাছে যায়। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয়।
মোহ আস্তে আস্তে চোখ খুলে উষ্ণের দিকে তাকায়। উষ্ণ হেসে বলে,
- "ঘুম ভেঙেছে আমার ঘুমরানী?"
মোহ ঘুম ঘুম চোখেই বলে,
- "হুম।"
উষ্ণ আবারো বলে,
- "আজ শাওন, প্রভা, তটিনী আর আমার কিছু ক্লাসমেট রা আসবে। উঠে পরো মোহ।"
মোহ উঠে বসে। কিছুক্ষণ নিচের দিকে তাকিয়ে সে উষ্ণের দিকে টলমলে চোখ নিয়ে তাকায়। উষ্ণ অবাক হয়। মোহ'র চোখের পানি মুছে দিতে চায়। কিন্তু মোহ আটকে দেয়।
- "আমায় একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে উষ্ণ?"
উষ্ণ না করতে পারে না। মোহ'র মাথাটা তার প্রশস্ত বুকে শক্ত করে চেপে ধরে। বেশ কিছুক্ষন তারা সেভাবে থাকে। মোহ উঠে যায়। চোখ মুছে বলে,
- "ভালো লাগছিল না তখন।"
উষ্ণ নির্বিঘ্নে বলে,
- "আমি কী কিছু বলেছি? যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।"
মোহ চলে যায়।
_________TikTok
আচমকা দরজায় ঠক ঠক শব্দ হওয়ায় উষ্ণ দরজা খুলতে যায়। খুলে দেখে তটিনী ও প্রভা এসেছে। উষ্ণ তাদেরকে ভিতরে নিয়ে আসে। প্রভা আনন্দিত স্বরে বলে,
- "উষ্ণ ভাই, আমি খুব খুশি আপনাদের নিয়ে। আমি কখনো ভাবিনি আমার বান্ধবী বিয়ে করতে রাজি হবে। তা সে কই?"
উষ্ণ হেসে বলে,
- "ঘরে আছে। যাও দেখে এসো।"
প্রভা চলে যায়। তটিনী তাকায় না উষ্ণের পানে। তাকালেই যে বুকের ভিতর চুরমার হয়ে যাবে। আজ এখানে আসার কারণ তার বোন কে শেষ বার দেখা। আর কোনোদিন দেখবে না মোহ'র মুখচ্ছবি। মোহ কে দেখলেই তার উষ্ণের কথা মনে পড়বে যে..।
- "তটিনী..? কী হয়েছে? মুখ নামিয়ে বসে আছো কেন? যাও, তোমার বোনের সাথে দেখা করে এসো।"
উষ্ণের কথায় কিছু বলে না তটিনী। তটিনী ও চলে যায়। তটিনীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে উষ্ণ। তটিনীর অনুভুতি সম্পর্কে সে জানে। তবে, তারও তো কিছু করার নেই..।
ইতিমধ্যে সবাই উপস্থিত। সবার মুখে হাসি থাকলেও তটিনীর মুখে কোনো হাসি ছিল না। তটিনী একদৃষ্টিতে শাওনের দিকে তাকিয়ে ছিল। শাওন তটিনীকে দেখেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল না। মোহ খাবার নিয়ে আসে। সবাইকে বসতে বললে তটিনী বাধা দেয়। সবাইকে উদ্দেশ্য করে সে বলে,
- "এই খাবার কেউ খাবেন না। এতে বিশ মেশানো।"
তটিনীর কথায় চমকে ওঠে সবাই। মোহ তটিনীকে উদ্দেশ্য করে বলে,
- "এসব কী উলটা পালটা বলছিস বনু? খাবারে বিশ কেন থাকতে যাবে?"
তটিনী মুখভঙ্গি শক্ত করে বলে ওঠে,
- "আমি কিছু বলতে চাই।"
সবাই তটিনীকে কথা বলার সুযোগ দেয়। উষ্ণ তখনও অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল তটিনীর পানে।
তটিনী বলতে শুরু করে,
- "মনে আছে? আপার উপর এক রাতে কে বা কারা হামলা করেছিল? সেই হামলা করিয়েছিল শাওন ভাই।"
তটিনীর কথায় সবাই যেন আকাশ থেকে পরে। শাওন কিছু বলতেই যাবে কিন্তু তটিনী তাকে থামিয়ে দেয়।
- "এছাড়াও আজ সবার অগচরে উষ্ণ স্যার আর আপা কে মারার জন্য খাবারে বিশ মিশিয়েছেন শাওন ভাই।"
কথা টা বলেই তটিনী সবার সামনে একটা ভিডিও ক্লিপ তুলে ধরে। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শাওন কী যেন একটা খাবারে মেশাচ্ছে।
- "আমি কাল রাতে কাজী অফিস থেকে একা একা বাড়ি যাচ্ছিলাম। সে সময় চৌরাস্তার কাছে এসে একটা মেয়ের চিৎকার শুনে আমি অবাক হই। সে সময় রাস্তায় কেউ ছিল না। একা একা যেতে ভয় ও করছিল। আমি সাহস করে মেয়েটির চিৎকার কোথা থেকে আসছে তা খোজার চেষ্টা করি। একটা গলির কাছে এসে আমি থমকে যাই। কারণ শাওন ভাই, ভিপি সুমন আর একটা ছেলে মিলে মেয়েটাকে নৃশংস ভাবে ধ*র্ষ*ন করছে।"
তটিনী আবারো একটা ভিডিও ক্লিপ সবাইকে দেখায়। যেখানে শাওন কে স্পষ্ট একটা মেয়েকে ধ*র্ষ*ন করতে দেখা যায়।
- "শাওন ভাই আমার মামাতো ভাই। তবে আপা তাকে চেনে না। এর একটা কারণ ও আছে। শাওন ভাই, ভিপি সুমন হলো সন্ত্রাসী। যারা নারীপাচার চক্রের একটা উৎস। বিভিন্ন যায়গা থেকে নারীদের তুলে তাদের পাচার করা এনাদের পেশা। মূলত প্রহর শাহরিয়ারের সাথে আপার বিবাহের সময় থেকেই আপার প্রতি তার নেশা। ভার্সিটি তেই দেখেছিল আপাকে। দেখে ভালো লাগায় অনেকবার প্রেমের প্রস্তাব দিতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রহর এর জন্য সে সুযোগ হয় নি। যখন তাদের বিয়ে হয় তখনই যেন শাওন ভাই এর মাথায় পাগলামি চেপে বসে, আপাকে মারতেই হবে! এজন্যই সেদিন আপাকে একটু ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে ওইভাবে মারধোর করে ফেলে রেখে যায়। আর আজ আপা আর উষ্ণ স্যার কে মারার উদ্দেশ্যেই সে এসেছিল। তবে তার আরও একটা উদ্দেশ্য ছিল, আমাকে ধ*র্ষ*ন করা! প্রথম থেকে ঘটা সব ঘটনাই শাওন ভাই এর পরিকল্পনা।"
তটিনীর কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে শাওনের দিকে তাকায়। শাওন মাথা নিচু করে বসে আছে। উষ্ণ শাওনের উদ্দেশ্যে বলে,
- "এসব কী সত্যি?"
শাওন মাথা নিচু করে রেখেই বলে, "হ্যাঁ।"
প্রভা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
- "কিন্তু মামাতো ভাই বোন হওয়া সত্বেও মোহ শাওন কে চিনতোনা কেন?"
মোহ বলে ওঠে,
- "এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিচ্ছি।"
সবাই আগ্রহ নিয়ে মোহ'র দিকে তাকায়।
- "আমি আর তটিনী আপন বোন না। আমি রাস্তায় পড়ে থাকা এক ধ*র্ষি*তা পাগলির মেয়ে। যাকে আমার বর্তমান বাবা ও মা পালন করার উদ্দেশ্যে তুলে নিয়ে এসেছিল। বাবা আমায় ছোটবেলায় ভালোবাসলেও তটিনীর জন্মের পর তিনি আমায় ঘৃণা করতেন। যার কারণ আমি এক ধ*র্ষি*তা পাগলির মেয়ে।"

মোহ'র কথা শেষ হতেই শাওন ছুড়ি দিয়ে তার পেটে আঘাত করে বসে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগে উষ্ণ পিছন থেকে শাওনের ঘাড় বরাবর আঘাত করে। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শাওনের জীবন সেখানেই শেষ হয়ে যায়।


Post a Comment

0 Comments

Close Menu