লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
হাসপাতালের কেবিনে ঘুমন্ত তটিনীর পাশে বসে আছে তৌফিক ইসলাম ও আরিফা বেগম। আরিফা বেগম কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে তৌফিক ইসলামের অশান্ত চোখজোড়ায় কোনো ক্লান্তির ছাপ নেই। দৃষ্টি তটিনীর মলিন আদলের দিকে। চোখজোড়া যতবারই তটিনীর চেহারার পানে যাচ্চে ততবারই ততবারই মস্তিষ্কে মোহ'র মুখজোড়া ভেষে উঠছে।
“দোয়া করি মা, তুই সুস্থ হয়ে যা।”
তিনি তটিনীর মাথায় আলতো হাত বুলিয়ে দেয়। তৌফিক ইসলাম চোখ বন্ধ করে। চোখে ভেষে ওঠে চব্বিশ বছর আগের স্মৃতি।
“মেয়েটা দেখতে একদম পুতুলের মতো হয়েছে তাই না? ছোট্ট একটা ফুল।”
আরিফা বেগম স্বামীর কথা শুনে তার দিকে তাকান।
“হুম, তা ঠিক বলেছেন।”
কোলে থাকা নবজাতকের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হেসে ওঠে এক দম্পতি।
“আচ্ছা? ওর নাম কী দেবো?”
“মোহ!”
স্ত্রী'র কথা শুনে তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকান তৌফিক ইসলাম।
“মোহ? মোহ কেন?”
“মোহ অর্থ বিভ্রম। আর ও এতটাই সুন্দর যে ওকে দেখে যে কারোর বিভ্রম হবে। দেখুন না, মনে হচ্ছে আমার কোলে একটা চাঁদ শুয়ে আছে। কেমন পিটপিট করে তাকাচ্ছে।”
স্ত্রীর এমন কথা শুনে তৌফিক ইসলাম হেসে দেয়।
“ঠিকাছে। আমরা ওর নাম মোহ'ই রাখবো।”
আরিফা বেগম তার কোলে থাকা নবজাতকের কপালে আলতো চুমু খায়।
মধ্যরাত। হাতে কফির কাপ নিয়ে বেলকনি তে বসে আছে মোহ। মাথায় চিন্তা একটাই। তার বোন কেমন আছে? এতো চাপ একসাথে না নিতে পেরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
“সহদোরা..; ক্ষমা করিস। তোর জন্য মনে হয় কিছুই করতে পারলাম না।”
মোহ একটা শুকনো হাসি দেয়। যে হাসিতে কোনো প্রাণ ছিলো না। শুধু ছিলো হতাশা।
_________YouTube
ঘুম নেই উষ্ণের চোখেও। চোখে ভাসছে তটিনীর রক্তাক্ত শরীরটা। এমন সময়ে হূট করে কল আসে উষ্ণের সহপাঠী শাওনের। উষ্ণ কল রিসিভ করে।
“কিছু বলবি?”
“আজব তো? আমি তোর বন্ধু। আমি তোকে কল করেছি। তুই আমাকে জিজ্ঞেস করবি, কেমন আছি? ভালো আছি কিনা? তা না। তুই উলটো জিজ্ঞেস করছিস কিছু বলবো কিনা? হেব্বি শয়তান তো তুই।”
শাওনের এমন কথা শুনে আপনা আপনি ভ্রু কুঁচকে যায় উষ্ণের।
“বাজে কথা না বলে কী বলবি বল।”
“আজকে ভার্সিটির সামনে যেই এক্সিডেন্ট টা হয়েছিল সেটা নাকি একটা বাচ্চা মেয়ের। সবে এসএসসি দেবে নাকি।”
“হ্যাঁ তো?”
“আমাদের ভার্সিটির ওই সুমন ভাই আছে না? নেতা? তার নাকি ওই মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে। আর সে চতুর্থ বর্ষের মোহ এবং প্রভাকেও এক রাতের জন্য কিডন্যাপ করবে বলছিল।”
“তুই কিভাবে জানলি?”
“আমি ওদের হলের সামনে বসে সিগারেট খাচ্ছিলাম। তখন শুনলাম।”
উষ্ণের চেহারায় চিন্তার ছাপ পড়ে যায়।
“আচ্ছা তুই রাখ।”
ফোন টা রেখে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে।
0 Comments