লেখিকাঃ সাদিয়া আকতার
আলভির প্রশ্নের জবাবে এমপি জামশেদ বলেন
: দেখুন.... আমাকে
তো রাজনীতির কাজে বাইরে থাকতে হয় বেশি.... তাই আমি তেমন কিছু বলতে পারবো না... তবে...
: তবে??..
: কাল রাতে আমার
মিসেস বলেছিলো ছেলের কোন কারণে মন ভালো নেই......
: আপনি কথা বলেছিলেন??...
: নাহ!! মি. আলভি....
আমার আজকেও একটা জরুরি মিটিং ছিলো তাই আর ছেলের সাথে..... মি. জামশেদ চুপ হয়ে যান তার
গাল বেয়ে গড়িয়ে পরছে অশ্রু।
: আপনারা জিসান কে
সুইমিংপুলে কিভাবে পেলেন??
: ও খুব ভোরে ঘুম
থেকে ওঠে.... আজকে বের হচ্ছিলোনা দেখে.... আমার মিসেস জিসান কে ডাকতে যায় রুমে....আহ!!!...
কিন্তু জিসান রুমে ছিলো না....সবাই খোজাখুজি শুরু করলে দেখি ও ওই পুলের ভিতরে ভেসে....আর
পরে তো সিসি ক্যামেরা তে নিজের ছেলে টা কে ছটফটিয়ে....... ওহহো!!...
: এত ছোট শিকল ও
কোথায় পেল??...
একটু ইতস্তত করে
এম.পি জামশেদ বললেন " আ... আসলে রাজনৈতিক কারণে...
: হুম্ম...টর্চার
সেল... বুঝেছি.. কিন্তু মি. জামশেদ আমরা তো শুনলাম আপনার ছেলের পানির ভীতি ছিলো....
: এই উত্তর তো আমারও
অজানা মি. আলভি!!...
: আচ্ছা.... আসলে
বিষয় টা খুবই জটিল হয়ে যাচ্ছে.... যদি আমরা একবার আপনার মিসেস এর সাথে কথা বলতে পারতাম...
খুবই ভালো হয়....
মি. জামশেদ কলিং
বেলের বোতামে চাপ দিতে একজন সার্ভেন্ট কক্ষে উপস্থিত হয়। তাকে বলেন " তোমার ম্যামের
সাথে উনারা দেখা করবেন.... একটু দেখে আসো ভিতরে..."
দশ মিনিটের মাঝে
সবাই কে ভিতরে যাওয়ার জন্য ডাকা হয়। আলভি ধীর পায়ে ড্রইংরুমে একটি চেয়ারে এসে বসে।
তার সম্মুখে এলোমেলো হয়ে ছোট ছেলে কে বুকে জরিয়ে মিসেস জামশেদ। তিনি যেন তার নিজের
অস্তিত্বের মাঝে আর নেই হারিয়ে ফেলেছেন নিজের নাড়ি ছেড়া ধন। কান্না করেও যেন তার স্বস্তি
মিলছে না। আলভি নিজেও বিব্রতবোধ করছিলো কিন্তু তদন্তের জন্য তাকে অবশেষে মুখ খুলতেই
হলো
: ম্যাম!!.... হৃদয়
কে শান্ত করুন... এখন যে আপনাকে মনের সাহস যোগাতে হবে...
: হ্যাঁ??.... মনের
সাহস??... কিভাবে??.... কে কেড়ে নিলো আমার.... আমার জিসু কে... আমার বাবা সোনা টা....
আমি যে ওকে রোজ সকালে এই... এই টেবিলে খাবার দিই.... আমার জিসান কেন আসলো না আজকে??.......
আমার জিসান!!!!..... বলে আবার হাউমাউ করে কান্না করে দেন।
মি. জামশেদ পাশেই
ছিলেন স্ত্রী কে ধরে, তিনি নিজেও সন্তানহারা বাবা, আর কি শান্তনা দিবেন।
: ম্যাম!!....সবই
বুঝতে পারছি... কোন শান্তনাই যথেষ্ট হবে না.... কিন্তু আপনি যদি আমাদের সহায়তা করেন....
তবে হয়ত আরো মায়ের বুক খালি হওয়া কে আমরা রোধ করতে পারি.......
: জ্বিহ!!.... বলেন
কি করবো... কি বলবো??...
: আপনার ছেলের পরিবর্তন
ঠিক কবে থেকে?...
: পরিবর্তন!!...
এই... হয়ত দিন দশেক হবে....
: হুম্মম.... কেমন?
: আসলে এখনকার যুগের
ছেলে মেয়ে তো ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে..... কিন্তু জিসান কেমন যেন সব কিছু থেকেই দূরে
ছিলো....না ফোন... না খাবার... না কলেজ.... শুধু রুমেই থাকতো....
: আপনাকে কিছু বলতো
কি?
: পরশু দিনের কথা.....
বলে আবার কান্না করে দেন।
: জ্বি... প্লিজ....
: জ্বিহ!!..... আমি
কিচেনে ছিলাম.... ছেলে হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে বলে.... মা আমি তোমাকে...... অ...অনেক...ভ...ভালোবাসি..মা....আমি
যদি দূরে চ...চলে যাই...তুমি...কস্ট পেওনা....
: হুম.. হুম... এরপর?...
: জিজ্ঞেস করেছিলাম
এসব কথার ম..মানে কি...ব..বলে পাপমুক্তি....সবাইকেই পাপ মুক্ত করতে হবে.....
: আচ্ছা.... আর কোন
বিশেষ কিছু যেটা এর আগে কখনো জিসান করে নি....
: এক্টিভিটি বলতে
ও এই মাস খানেক হলো সাতার শিখার ট্রাই করছিলো....
: কিন্তু ও তো পানি
কে ভয় পায়!!...
: আমারাতো আর জানতাম
না এটাই কাল হবে.... খুশিই তো ছিলাম ছেলের সাতার শিখতে চাওয়ায়...
: হুম্মম্ম.... আর
অন্য কিছু??...
: জানিনা.... আসলে
এটা অন্য কিছু কিনা...
: বলুন না!.... আপনি
বলুন!...
: জিসান কিছুদিন
হলো এ...একটা অদ্ভুত গেম খেলতো ওর ফোনে....খুব আসক্ত ছিলো ওই গেমে....
: গেম?!!... কেমন??!....
: ও... ওই যে ট্রুথ
এন্ড ডেয়ার এরকমই কিছু.....
: এক সেকেন্ড!!!....
কি বললেন আপনি!!.... মানে আ...আপনি কি ওকে দেখেছেন.... মানে...ও কি আপনার সামনে.....
: হ্যাঁ.... আমিও
তো খেলেছি.... একটু ইতস্তত করে বলেন মিসেস জামশেদ।
ফোনের স্ক্রিনে কিছু
খুজে মিসেস জামশেদ কে দেখিয়ে আলভি বলে "এই... লোগো টা মন দিয়ে দেখুন তো... এরকম
কিছু কি ছিলো ওই গেমে...."
: হ্যাঁ.... হ্যাঁ....
এটাই তো....
: ব্রাভো আলভি!!....খুশিতে
নিজেই নিজেকে বলে আলভি।
" ইন্সপেক্টর
শাহীন!!! খুনের হাতিয়ার পাওয়া গেছে....এই যে... এই লোগোর অ্যাপ....."
আলভি'র কথায় যেন
ইন্সপেক্টর বাবুলাল, শাহীন দু জনেই চমকে যায়।
ইন্সপেক্টর শাহীন
বলেন "একটি অ্যাপ মানুষ কে খুন করবে কিভাবে?.... "
: শীঘ্রই প্রকাশ্য!!!.....
বলছিলাম আমি একটু জিসানের ফোন চেক করবো....
একজন ফোন আনতে চলে
গেলে আলভি ইন্সপেক্টর শাহীন কে ফিসফিসিয়ে বলে "দেখবেন ফোন একদম ক্লিয়ার!!....
কোন ইনফরমেশন পাবেন না...."
দেখা যায় আলভির অনুমানই
সঠিক হয়। ফারজানার মত জিসানের ফোনেও তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
: আচ্ছা ম্যাম!!....
আপনি দয়া করে বলবেন গেমের ধরন কেমন ছিলো.... মানে কিভাবে খেলতে হয়??...জিজ্ঞেস করে
আলভি।
: একটা রোবটিক্স
ভয়েস এর সাথে কয়েন টস করতে হয়.... এরপরে স্ক্রিনে ট্রুথ অর ডেয়ার যেটা আসে সেটা করতে
হয়...কথাও বলা যায়... মানে একদম রিয়েল ফিল আসবে....
: হুম্মম.... তো
ওই অ্যাপ এর যদি ডেয়ার আসে তাহলে??
: হ্যাঁ সেও করতে
পারে.... আসলে ডেয়ার গুলোতে পিক সেন্ড করতে হয়.....
: হাহাহাহাহা.....
সরি.... সরি... বুঝেছি... আচ্ছা মি. জামশেদ আমরা আসছি....
: দেখুন স্যার!!....
আমার ছেলে কে যে খু**ন করেছে সে যেন কোন ভাবেই পালাতে না পারে...... কোন ভাবেই না...
: আমরা সর্বোচ্চ
চেষ্টা করবো... হতাশ হবেন না.....
বেরিয়ে যাবার আগে
আলভি'র চোখ যায় দেয়ালে ঝুলানো একটা ছবির ফ্রেমে। সে কিছুক্ষণ মন দিয়ে ছবি টা দেখে।
এরপরে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে আসে তারা সবাই।
সবাই অস্বস্তি নিয়ে
বের হলেও আলভি আপন মনে কিছু ভেবে হেসেই যাচ্ছে।
: গোয়েন্দা বাবু!!....
আমাদের কেও কিছু বলুন....বলেন ইন্সপেক্টর বাবুলাল।
ইন্সপেক্টর শাহীন
ভ্রু কুঞ্চন করে বলে " মানলাম যে এই অ্যাপ তৈরি করেছে সে অনেক জিনিয়াস.... কিন্তু
একজন মানুষ কে কিভাবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করবে!!....."
দ্বীর্ঘশ্বাস নিয়ে
আলভি বলে "আমরা তো কেসের অর্ধেকের বেশি সূত্র পেয়ে গেছি.... এখন শুধু সঠিক ভাবে
জোড়া লাগাতে হবে......"
: অর্ধেকের বেশি
কিভাবে?!... বলেন ইন্সপেক্টর বাবুলাল।
: এখনিই কিছু বলতে
পারছি না কিন্তু আমাকে এখনই যেতে হবে..... বলে আলভি।
: কোথায় যাবেন??...
জানতে চান ইন্সপেক্টর শাহীন।
: পাচুলিয়া.... ইন্সপেক্টর
বাবুলাল.... আপনি শান্তানু কে থানায় ডেকে নিবেন.... সে যেন এই অ্যাপ যেকোন ভাবেই হোক
ওপেন করে দেয়.... বলে আলভি।
: আবার পাচুলিয়া??!!....
রহস্যময় হাসি দিয়ে
আলভি বলে " রহস্যের ঘ্রাণ ওদিক থেকেই আসছে..... বিদায়!!!"
আলভি চলে যেতে ইন্সপেক্টর
শাহীন এক দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বাবুলাল কে বলেন " দেখেছেন ইন্সপেক্টর বাবুলাল!!!...
মানুষের কর্মফল কত ভয়ানক হয়!!... এই মানুষটা তার ক্ষমতার প্রভাবে কতজনকে টর্চার করেছে.......অথচ.....
ইন্সপেক্টর বাবুলাল
মাথা ঝুঁকিয়ে বলেন " অথচ আজ তার টর্চার সেলেই... নিজের সন্তানের প্রাণ হারিয়ে
গেল!!!......... "
-----------------------------
রবিন একটু ব্যস্ত
হয়ে হাত ঘড়িটা দেখে নেয়। দ্রুত শেষ রোগী কে ভিতরে পাঠানোর জন্য বলে।
পাতলা গড়নের চোখে
চশমা পরিহিত যুবক সালাম দিয়ে সামনে রাখা চেয়ারে এসে বসে।
: নাম?...
: সারোয়ার....
: হুম... কি সমস্যা??
: স্যার আ...আসলে
আমার কেন যেন মনে হয়.... আ... আমি যদি সেচ্ছায় মৃত্যুকে গ্রহণ করি তা.... তাহলে হয়ত
আ.... আমার পাপ মুক্তি হবে.....
"পাপমুক্তি"
শব্দ টা রবিনের কর্ণকুহরে যেতেই সে আচম্বিত হয়ে যুবকের দিকে তাকায়।
: ক.... কি বললে
তুমি??
: আত্মার বিসর্জন.....
: আচ্ছা... তার আগে
বলো... আত্মহত্যা কে আমাদের ধর্মে কি বলা হয়??
: মহাপাপ....
: তাহলে মহাপাপের
মত কাজ দিয়ে.... তুমি কি কখনো স্রষ্টার সন্তুষ্টি পাবে??
: আপনি হয়ত আমার
কথা বোঝেন নি....
: আচ্ছা!!!.....
তো বুঝিয়ে বল...
: দেখুন ডক্টর!!
যারা আত্মহত্যা করে.... ওরা কিন্তু কোনভাবে কষ্ট পেয়ে... তবেই নিজের জীবন কে ত্যাগ
করে.....
: হুম্মম তো??....
: কিন্তু যাদের কোন
কষ্ট নাই... স্রষ্টা সব দিয়েছে.... সুখি মানুষ...সে যদি সেচ্ছায় নিজের জীবন টাকে স্রষ্টাকে
দিয়ে দেয়... তবে সেটা কি মহাপাপ হয়???
যুবকের কথার এমন
যুক্তিতে রবিন যেন স্তম্ভিত হয়ে যায়।
বেশ কিছুক্ষণ ভেবে
রবিন বলে " হ্যাঁ হয়!!..."
: ক... কেন??...
: কারণ স্রষ্টার
আদেশ অমান্য করাই হলো পাপ.... আর তুমি এমন একটা পাপ কে বৈধ বলছো.... যেই পাপ করার পরে
দ্বিতীয় বার পাপমোচনের জন্য স্রষ্টাকে বলার কোন উপায় থাকে না....
: ত...তবে কি.. আ...
আমি ভুল!!!
: হয়ত!!... দেখ আমি
একজন সাইকাইট্রিস্ট... তোমার ধারণা সঠিক মনে হলে নিশ্চয় তুমি আমার কাছে আসতে না!!!......
: জানিনা!!.... তবে
আমার ধারণা ভুল কেন হবে?....
: আচ্ছা... বেশ...
আমি কিছুদিন তোমাকে পর্যবেক্ষণ করবো..... এরপরে তোমার যেটা মনে হবে সেটা করবে...........
চলমান.....
( গোয়েন্দা আলভি তো বললেন অর্ধেক সুত্র তিনি পেয়ে গেছেন। আপনারাও কি পেয়েছেন?? কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ)
0 Comments