লেখিকাঃ ফাতেহাতুন নিলা
*★*
"কিছু বলবে মামি মা। এত রাতে যে এখানে। " বলল নিদ্রিতা।
" কেন এত রাতে আসা কি নিষেধ আমার মেয়েটার কাছে।"
" না মামিমা তেমন নই, কিছু বলবে।"
"হুম" তুই কি আমার ছেলে মেহরাবকে ভালোবাসিস নিদ্রিতা? "
হুট করে মুনিরা চৌধুরীর এমন প্রশ্নে নিদ্রিতা অনেকটা অবাক হয়ে যায়। নিদ্রিতাকে চুপ থাকতে দেখে মুনিরা চৌধুরী পুনরায় বলেন," আমি কিছু জানতে চাচ্ছি নিদ্রিতা। "
"হুট করে এমন প্রশ্ন কেন মামিমা?"
"আমি যেটা বলেছি তার উওর দেও নিদ্রিতা।"
" হ্যাঁ,আমি ভালোবাসি মেহরাব ভাইকে। "
" মেহরাবকে ভুলে যাও নিদ্রিতা। "
" মামি মা। এটা সম্ভব নই। "
" আচ্ছা নিদ্রিতা তুমি যে মেহরাবকে ভালোবাসো তা কি মেহরাব জানে? "
" হুম "
" মেহরাব কি তোমাকে কোনোদিন বলেছে সে তোমাকে ভালোবাসে? " মুনিরা বেগমের এবারের কথায় নিদ্রিতার আঁটকে রাখা চোখের পানিটা আর বাঁধ মানল না। গড়িয়ে পড়ল দুই গাল বেয়ে। মাথা ঝাকিয়ে উওর দিল,
" না।"
" তাহলে কোন ভরসা নিয়ে তুমি থাকবে এখানে? "
" মামি মা, বাবা মার যখন বিচ্ছেদ হয়ে যায় সেই তখন থেকে আমি তোমাদের কাছে আছি। তোমাদের নিজ হাতে এতটা বড় করেছো আমাকে। মামি মা আমি কি এতটাই অযোগ্য তোমার ছেলের বউ হতে? ছোট থেকেতো তোমরাই বড় করে তুলেছে মামি মা। তাহলে তোমার ছেলের বউ হিসেবে চাও না কেন? "
" আমি তোমাকে আমার মেয়ে হিসেবে মনে করি।আশা করব আমি যা বলব তা বুঝবে। আমি চাইনা তুমি মেহরাবের সামনে পিছনে ঘুরঘুর করো।মেহরাবের সাথে শ্রেয়ার বিয়ে ঠিক করেছি।সামনে মাসেই সেটা।শ্রেয়াকে আমার ছেলের বউ হিসেবে চাই। তাই শেষ বারের মতো বলছি মেহরাবের থেকে দূরে থাকো। "
রাগমিশ্রিত কথাগুলো বলেই পা বারান রুম ত্যাগ করার জন্য মুনিরা বেগম।
" তুমি এতটা কঠোর ছিলে না মামি মা। "
নিদ্রিতার কথাটা শুনে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন।পিছনে না ফেরেই বলেন,
" সময়ের সাথে সাথে এমনটা হতে হয়েছে। "
" মামি মা, আমি সত্যি মেহরাব ভাইকে ভালোবাসি। মেহরাব ভাইকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না মামি মা।আমি জানি মেহরাব ভাই আমাকে ভালোবাসে না। কিন্তু তুমি বললে মেহরাব ভাই আমাকে ঠিক চাইবে।একটা সময় আমাকে ভালোবাসবে মামি মা।"
" কিন্তু আমি এটা চাই না " কথাটি বলেই ঘুরে নিদ্রিতার দিকে ফিরে তাকায়।পুনরায় বলে," ওই যে বললাম না আমার ছেলের বউ হিসেবে শ্রেয়াকে চাই। মেহরাব কে ভুলে যাও নিদ্রিতা ওর আশেপাশে আসবে না আর।ওর কাছ থেকে দূরে চলে যাও তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আশা করি আমার কথাটা মানবে কারণ তুমি আমাকে সম্মান করো। " কথাটা বলেই তিনি রুম ছেড়ে চলে যান। পিছনে রেখে যান এক অশ্রুসিক্ত মেয়েকে। যাকে মাএই বাধ্য করা হলো তার ভালোবাসার মানুষগুলোর কাছ থেকে দূরে চলে যেতে।ভুলে যেতে প্রিয় মানুষটাকে। আসলেই কি পারবে সে এমনটা করতে নাকি নিজেই মুছে যাবে এই ধরণি থেকে।
এদিকে মুনিরা বেগম মনে মনে বলেন, " আমাকে ক্ষমা করে দিস নিদ্রিতা। আজকের পর থেকে হয়তো আমাকে সারাজীবন ভুল বুঝে যাবি। হয়তো ঘৃণা হয়ে থাকবো তোদের চোখে। কিন্তু কি করব বল এমনটা না করলে যে পরিবারটা ধ্বংস হয়ে যাবে।এখন তোরা দুইজন কষ্ট পাবি পরে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।আর তোদের যদি এক করে দেয় তাহলে মনিরুল পুরো পরিবারটা শেষ করে দিবে।আমাকে ভুল বুঝিস না তোরা। " কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই তার চোখের কর্নিশ বেয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে। আলতো হাতে পানিটা মুছে তিনি তাদের রুমের দিকে অগ্রসর হন।
***★***Threads
" আমাকে তাড়াতাড়ি কিছু করতে হবে সায়ান। কালকে রাতে আম্মু আব্বু ডেকে নিয়ে বলল সামনের মাসে শ্রেয়া আর আমার বিয়ে দিবে যদিও আমি না করেছি। এদিকে এখনো আমার মনের কথা নিদ্রিতাকে জানানো হয়নি আম্মু আব্বুর মত নিয়ে বলব বলে। " এক দমে কথাগুলো বলে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দারায় মেহরাব। চোখে মুখে ক্লান্তিতে ভরপুর তার। লাল হয়ে আছে দুই চোখ হয়তো রাতে ঘুমাতে পারেনি।
" কিছু বলছিস না কেন সায়ান? আমার কি করা উচিত। "
" নিদ্রিতাকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যা। "
" তোর কি মনে হয় এটা ঠিক হবে। ওই মনিরুল বাবা মা উভয়ের মাথা খাবে। "
" তাহলে কি করবি এখন? "
" পেয়ে গেছি উত্তর। কালকে যে শপিংমলে আমি একটা ছেলেকে কিছু ইশারা করেছিলাম মনে আছে সায়ান।ছেলেটা শ্রেয়ার এক্স বয়ফ্রেন্ড হয়। নাম আলভি। আলভির সাথে শ্রেয়ার কিছু ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। যার মাধ্যমে আলভি এখনো শ্রেয়াকে ভয় দেখায়।যদিও তাদের দুজনের সম্পর্কটা আলভি নিজ হাতেই শেষ করেছিল। এখন আলভি বুঝতে পেরেছে সে শ্রেয়াকে ভালোবাসে কিন্তু শ্রেয়া তাকে ঘৃণা করে। "
" তাহলে তো হলোই। কিন্তু শ্রেয়াতো তোর প্রতি ছোট থেকেই দূর্বল ছিল তাহলে এই আলভি কেমনে কি? "Instagram
" শ্রেয়া আমার প্রতি দূর্বল ছিল কিন্তু আমি তাকে পাত্তা দিতাম না। যখন শ্রেয়া আমাদের থেকে দূরে চলে যায় তখন সে আলভির সাথে বন্ধুত্ব করে।এই বন্ধুত্ব থেকে রিলেশনে যায়।পরে আলভি যখন তার থেকে দূরে চলে যায় তখন সে ডিপ্রেশনে চলে যায় কিছুটা।তারপর থেকেই মনিরুল ইসলাম ওঠে পড়ে লাগেন আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার।এটা শ্রেয়াকেও বলা হয়। তারপর থেকেই শ্রেয়াকে নিয়ে এইসব।"
" আলভির দেখা পেলি কি করে? "
" কিছুদিন আগে আলভি আমাদের কোম্পানিতে এসেছিল একটা কাজের জন্য। তখনই সে আমার পাশে শ্রেয়াকে দেখতে পেয়ে অবাক হয়েছিল সাথে খুশিও কিন্তু শ্রেয়াও আলভিকে দেখে অনেকটা অবাক হয়েছিল। তাদের একে অপরের চাওনি দেখে আমি কিছুটা আচঁ করতে পেরেছিলাম। পরে আমি আলভিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম সে শ্রেয়াকে চিনে কিনা। তারপর আলভি আমাকে সমস্ত কিছু বলে আর এটাও বলে তার সাথে যেন শ্রেয়াকে এক হতে সাহায্য করি।"
" ব্যাস তাহলে আর চিন্তা কিসের।সবতো ঠিকি আছে। এবার তোর মা বাবার কথা মতো চলতে থাক। বিয়ের আগে সমস্ত প্রমাণ আর আলভিকে নিয়ে যাবি।তারপর সব খেলা শেষ আর নিদ্রিতা তোর।"
" হুম"
" আজকে রাতে নিদ্রিতাকে তোর মনের কথা বলে দে। আর সমস্ত ঘটনা। নয়তো দেখবি নিদ্রিতা কিছু করে ফেলেছে।খুব ভালোবাসে যে তোরে।"
" হুম, আজকেই বলে দিব। "
**********
তপ্ত দুপুরে নিদ্রিতা মেহরাবের কিনে দেওয়া লাল শাড়িটা পড়ে সুন্দর করে সেজেগুজে মেহরাবের অফিসে আসে। এই সময়ে নিদ্রিতাকে এই রুপে দেখে থমকে দাঁড়ায় সাথে অনেকটা অবাক হয়ে বলে, " হঠাৎ এই সময়ে এখানে এই আগুন রুপে মহারাণীর আগমন যে। মহারাণী কি জানে তার এই আগুন রুপে যে আমি জলসে যাচ্ছি। "
মেহরাবের এমন কথা শুনে নিদ্রিতা ঠোঁটের কোনে একটি তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে,
" হুট করে মনে হলো ভালোবাসার মানুষটার দেওয়া শাড়িটা পড়ে তাঁকেই ঝালিয়ে দিতে।যেন সে এই আমি বাদে অন্য কারো না হয়।কিন্তু আফসোস এমন কিছুই হবে না।"
" তাই বুঝি।কিন্তু হতে কতক্ষণ আর। যাইহোক রাতে তোমার জন্য একটা স্পেশাল সাপ্রাইজ আছে। তৈরি থেকো মহারাণী। "
" আমাকে কি একটি বার আপনাকে জড়িয়ে ধরতে দিবেন মেহরাব ভাই?"
নিদ্রিতার এই বাক্যে মেহরাবের সমস্ত শরীর শিউরে ওঠে। ভাবতে থাকে,'এ কেমন বাক্য! কি মেশানো আছে এই বাক্যে! এতটা ধারালো কেন এই বাক্য! কি আশ্চর্য এটা।নিদ্রিতা যখন ভালোবাসি ভালোবাসি বলে তখনও তো এমনটা হয় না। হৃদযন্ত্র টা এতটা লাফিয়ে ওঠে না।'
এদিকে মেহরাবকে চুপ করে তার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিদ্রিতা এগিয়ে যায় মেহরাবের দিকে।মেহরাবের কাছে এগিয়ে গিয়ে তার হাতে একটা ভাজ করা কাগজ ধরিয়ে দেয়। হঠাৎ স্পর্শে মেহরাবের হুঁশ আসে। তার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ভাজ করা কাগজ। জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে নিদ্রিতার দিকে তাকালে নিদ্রিতা বলে,
" আমি এখান থেকে বের হবার পাঁচ মিনিট পরে আপনার হাতের এই কাগজটা খুলবেন মেহরাব ভাই। তার আগে না। "
কথাটি বলেই নিদ্রিতা মেহরাবকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে তারপর তার চোখ বরাবর তাকায়। আজ নিদ্রিতার চোখ দুইটি হাজার কথা বলতে চাইছে।বার বার বলতে চাইছে মেহরাব ভাই আমাকে আটকান নয়তো অনেক দূরে চলে যাবো চাইলেও আর পাবেন না। কিন্তু এই কথাগুলো যে নিতান্তই হাস্যকর। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নিদ্রিতা মনে মনে বলতে থাকে এই সুদর্শন পুরুষ টা আমার হয়ে গেলে কি বেশি ক্ষতি হতো।কি এমন হতো যদি এই গল্পের পূর্ণতা পেত।না নিদ্রিতা আর কিছু ভাবল না। আরেকবার মেহরাবকে মন ভরে দেখে কিছু না বলে অফিস রুম থেকে বের হয়ে যায়। এদিকে নিদ্রিতার এমন কর্মকান্ড দেখে অনেকটা অবাক হয়ে যায় মেহরাব। সাথে কিছুটা ভয় হয় তার মনে।
নিদ্রিতা বের হয়ে যাবার পরপরই মেহরাব নিদ্রিতার ভাজ করে দেওয়া কাগজটা খুলে পড়তে থাকে। কাগজের মধ্যে থাকা লিখাগুলো পড়ার মধ্যেই হাত থেকে কাগজটা পড়ে যায় টেবিলের উপরে। সমস্ত শরীর ঘেমে উঠে তার।ভয়ে সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে থাকে।এক মুহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে বের হয়ে যায় মেহরাব। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে যায়।তার থেকে অনেকটা দূরে নিদ্রিতা রাস্তার মাঝে দিয়ে বেখেয়ালি হেঁটে চলছে। এই পাশ ওই পাশ গাড়ি চলছে অথচ তার কোনো খেয়ালই নেই। এদিকে নিদ্রিতার পিছন দিক থেকে ধেয়ে আসা বড় ট্রাকটি দেখে মেহরাব জোড়ে চিৎকার সাইট হতে বলে নিদ্রিতাকে।আশেপাশে থাকা লোকজন তাকে সাইট হতে বলছে। সবার শব্দ আর মেহরাবের জোড়ে চিৎকারের শব্দে যেই নিদ্রিতা ঘুরে মেহরাবের দিকে তাকিয়েছে অমনি ট্রাকটি নিদ্রিতাকে ধাক্কা মেরে চলে যাই।। এত বড় চলতি ট্রাকের ধাক্কায় নিদ্রিতা দূরে ছিটকে পড়ে। এদিকে এই দৃশ্য দেখে সবাই থমকে যায়। এটা দেখার পরে মেহরাবের পা দুইটা যেন সেখানে থেমে যায়।জোড়ে চিৎকার করে বলে, "নি........ধ "।
0 Comments