লেখিকাঃ তাহিনা আইরাত ইরা
“গল্প যদি কলঙ্কের হয় তবে প্রধান চরিত্রের যায়গায় আমাকেই বসিয়ো।”
মোহ'র আকস্মিক কথায় পিছন ফিরে তাকায় প্রভা। মন ভালো করার জন্য সে আজ লাইব্রেরিতে এসেছিল বই পড়তে। মন মতো একটা বই পড়ছিল। তখনই মোহ পিছন থেকে কথা বলে ওঠে।
“এসব কী ধরনের কথা মোহ? তুমি কেন কলঙ্কিত হতে যাবে?”
মোহ প্রভার মুখোমুখি চেয়ারটা টেনে বসে।
“কী শুনতে চাও?”
প্রভা মলিন দৃষ্টিতে মোহ'র পানে তাকায়।
“নিজেকে বারবার কলঙ্কিত কেন বলো? কীসের এতো দুঃখ তোমার? আমাকে কী বলা যায় না এসব?”
প্রভার কথায় মোহ'র ঠোঁটের হাসি উবে যায়। মেয়েটা পুরোটাই ভাইয়ের মতো; এমন এমন কথা বলে যার প্রেক্ষিতে কিছু প্রতুত্তর করা যায় না। প্রহরের কথা ভাবতেই মোহ'র মুখে অন্ধকার নেমে আসে। আহা! কী জীবন তার..!মোহ'র জীবন টা শেষ করে দিয়ে নিজে কত্ত সুন্দর জীবন কাটাচ্ছে। মোহ প্রভার পানে এক পলক তাকায়।
“জানতেই হবে? না জানলে হয় না?”
মোহ'র মলিন আর নিচু আওয়াজটা শুনে প্রভার খারাপ লাগে। বোধগম্য হয় তার এই কথা মোহ কে বলা উচিত হয় নি। মোহ প্রভার অভিপ্রায় দেখে। কথা ঘুরানোর জন্য বলে,
“কী বই পড়ছিলে প্রভা?”
প্রভা একবার মোহ'র দিকে তাকায় আরেকবার বই এর দিকে।
“আমার আর তোমার দুলাভাই এর প্রেমকাহিনী।”
প্রভার কথায় মোহ হাসে। প্রভা শুধু তাকিয়ে দেখে। এই শ্যামবর্ণা নারীর ভিতরে অনেক সৌন্দর্য আছে, অনেক। এই শ্যামল গায়ের রঙ, টানা টানা চোখ, হালকা গোলাপি ঠোঁট আর নিতম্ব সমান কোকড়া চুল। এতেই যেন অপরুপা লাগে মেয়েটিকে। প্রভার মনে ভয় জেঁকে বসে। মোহ'র সাথে তার মতো খারাপ কিছু না হোক। মেয়েটাকে দেখে ভীষন মায়া লাগে তার। মেয়েটি ভালো থাকুক, খুব ভালো থাকুক।
প্রভাকে এভাবে তাকাতে দেখে মোহ'র কিছুটা অস্বস্তি হয়।
“কী দেখছো এভাবে?”
প্রভা আবারো হাসে।
“তোমায় দেখছিলাম। খুব সুন্দর তুমি।”
মোহ কিছুটা লজ্জা পায়।
“আচ্ছা? তাই নাকি?”
“হুম।”
দুজনেই একসাথে হেসে ওঠে। হৃদয় যেন পরিতৃপ্ত।
___________TikTok
কাল মুষলধারে বৃষ্টি হলেও আজ মনে হচ্ছে গরমে মরে যাওয়ার অবস্থা। কাঠফাটা রোদে পার্কের একটা চেয়ারে বসে আছে উষ্ণ। চেয়ার টা বট গাছের তলায় হওয়ায় বেশ আরাম লাগছে তার। গাছের একটা ডালে দুটো চড়ুই পাখি কিচিরমিচির করছে। নিরিবিলি পরিবেশে তা শুনতে বেশ ভালোই লাগছে। উষ্ণ চোখ বন্ধ করে হেলান দিয়ে বসে ছিল। হটাৎ পাশে কারো উপস্থিতি অনুভব করে চোখ খোলে। দেখে, পাশে তার গুনধর বন্ধু শাওন বসে আছে। তার দিকে দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে।
“কী বন্ধু? এখানে বসে কার কথা ভাবো?”
উষ্ণ বিরক্ত হয়। বিরক্তিটাকে মুখে প্রকাশ করে সে বলে,
“যার কথাই ভাবি, তোর কী তাতে?”
উষ্ণের কপালের ভাঁজ দৃড় হয়। তবে কোনো প্রতুত্তর করে না। শাওন এবার স্বাভাবিক হয়।
“খেয়েছিস কিছু?” উষ্ণের পানে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে শাওন।
উষ্ণ ক্লান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়,
“না।”
শাওন আবারো জিজ্ঞাসা করে,
“এখনো খাস নি কেন?”
“খেতে ইচ্ছে হয় নি তাই।” উষ্ণের সরল অথচ ক্লান্ত কণ্ঠ।
শাওন বোঝে উষ্ণ কেন খায়নি। এই দুই বছরে উষ্ণকে ভালো ভাবেই চিনেছে শাওন। সে কিছু না বলে সেখান থেকে উঠে যায়। উষ্ণ শুধু তাকিয়েই থাকে, কিছু বলে না।
বেশ কিছুক্ষন পর শাওন দুটো বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে করে ফিরে আসে। উষ্ণ তখনও চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে ছিল।
“নে এটা খেয়ে নে।”
আকস্মিক আওয়াজে উষ্ণ চোখ খোলে। শাওন ততক্ষণে প্যাকেট খুলে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
“এসব আনলি কেন? আমি তো বললামই আমার ক্ষিদে নেই।”
শাওন খেতে খেতে জবাব দেয়,
“চুপচাপ খেয়ে নে। আমি জানি তুই বাড়িতে গিয়ে রান্না করবি না। প্রচুর অলস তুই।”
উষ্ণ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। যখনই তার কাছে কিছু খাওয়ার পর্যাপ্ত টাকা থাকে না তখনই শাওন এমন করে। তাই সেও আর কিছু না বলে খাওয়া শুরু করে। যা দেখে শাওন তৃপ্তির হাসি হাসে।
0 Comments